না_চাইলেও_তুমি_আমার
পর্বঃ ২৫
জাহান আরা
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্র,ফুল গাছে পানি দিচ্ছে।বাহিরে লোক চলাচল,উপরে-নিচে মৃদু শব্দ কথাবার্তার।চন্দ্র ঠিক করে দুপুরের পরে সবার ফ্ল্যাট দেখতে যাবে,পরিচিত হয়ে আসবে।
চন্দ্র হাসনাত সাহেবের কথা ভাবে।
হাসনাত সাহেব চন্দ্রকে নামিয়ে দিয়েই চলে গেছেন।যাবার সময় চন্দ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে গেছেন,”মা রে,মাঝেমাঝে আমাদের বুড়ো বুড়ি ‘কে একটু গিয়ে দেখে আসিস,আমি খুব শীঘ্রই তোদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাবো,ভয় পাস না।আমার নিশা কে কষ্ট দিস না,আমার ছেলেরা কতোটা পাগল স্বভাবের,ভালোবাসা দিয়ে পাগল করে দিবে,বিরক্ত হোস না কখনো।আমি আসি এখন।”
চন্দ্র সালাম করে বলেছিলো,”জ্বি আংকেল।”
চন্দ্রর কথা শুনে হাসনাত সাহেব থমকে দাঁড়ান,তারপর জিজ্ঞেস করেন,”মা,আমাকে কি বাবা বলে ডাকা যাবে না?”
হাসনাত সাহেবের কণ্ঠে এতো মায়া ছিলো এতো আদর ছিলো চন্দ্রর দুচোখ টলমল করে উঠে। এই লোকটি এতো বেশি ভালো কেনো?
তার বাবা তো কখনো এরকম আদর করে কথা বলে নি।মন ভরে বাবা ডাকতে ইচ্ছে করতো চন্দ্রর মাঝেমাঝে কিন্তু এক আকাশ দূরত্ব বাবা মেয়ের মধ্যে,চাইলেই চন্দ্র পারে নি বাবার গা ঘেঁষে বসে একবার বাবা বলতে।
চন্দ্র হাসনাত সাহেব কে বাবা বলে ডাকে,কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না।কান্নায় গলা বুঁজে আসে,বাবা বলে ডাকার কি ভীষণ আকুতি তার তা কাকে বুঝাবে সে?
অনেকক্ষণ পর চন্দ্র বাবা বলতে সক্ষম হয়।হাসনাত সাহেবের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠে।
এই মেয়েটা কে তার ভীষণ পছন্দ হয়ে গেছে এই কয়দিনের দেখায়।
চন্দ্রর চোখ মুছে দিয়ে বলে,”বাবারা কখনো সন্তানের চোখের পানি সহ্য করতে পারে না মা,কখনো কাঁদবি না আর।”
ছোট একটা বাক্য অথচ কি ভালোবাসা পূর্ণ!
চন্দ্র তো সারাজীবন এই ছোট ছোট আদর পেতে চেয়েছে তবে কেনো পায় নি চন্দ্র?
তবে কি এতোদিনের আক্ষেপ মুছে দিতেই আল্লাহ নিষাদ কে তার জীবনে পাঠিয়েছে!
চন্দ্র কি করবে কাজ খুঁজে পাচ্ছে না।কাল রাতে ঘুমাতে পারে নি ঠিক মতো তাই বিছানায় উঠে কম্বল মুড়িয়ে নেয় ভালো করে।একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক না হয়।
চন্দ্রর তন্দ্রা এসেছে সে সময় কলিং বেল বেজে উঠে।চন্দ্র কেমন চমকে উঠে শব্দ শুনে,পরক্ষণেই মনে পড়ে নিষাদের কথা।
কম্বল সরাতেই ঠান্ডা হাওয়ায় কেমন কেঁপে উঠে চন্দ্র।আশেপাশে কোথাও ওড়না খুঁজে পাচ্ছে না।
কলিং বেল বেজেই চলেছে দেখে চন্দ্র মেইন ডোরের দিকে যায়,পীপহোলে চোখ রাখতেই নিষাদকে দেখে।
দরজা খুলে দেয় চন্দ্র।নিষাদ বাসায় ঢুকে ২টা বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে।
ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকায় চন্দ্র নিষাদের দিকে,নিষাদ নিজে থেকেই বলে,”সব বাজার করে নিয়ে এলাম,সন্ধ্যায় রান্না করে ফেললেই হবে।”
“আমি কি পারবো ভালো করে রান্না করতে? ”
চন্দ্রর ভয়ার্ত চাহনি দেখে নিষাদের মুখ হাসিহাসি হয়ে যায়।বাজারের ব্যাগ কিচেনে রেখে এসে চন্দ্রকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,”তোমার জামাই কে কি মনে হয় তোমার,তোমার জামাই কি রান্না জানে না না-কি? ”
চন্দ্রর মনে পড়ে যায় মারিয়ার জন্য নিষাদ রান্না করাটাও শিখেছিলো।মন খারাপ হয়ে যায় চন্দ্রর আবার মারিয়ার কথা ভাবতেই।
নিষাদ চন্দ্রকে কোলে তুলে নেয়,তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চন্দের উপর উঠে যায়।চন্দ্রর ঘাড়ে মাথা গুঁজে দিয়ে বলে,”কেনো অযথা মন খারাপ করছো বউ,সব তো অতীত ছিলো,অতীতের কথা ভুলে যাও,চলো আমরা আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি।”
জবাব দেয় না চন্দ্র।তার যে আসলে ও উচিৎ হচ্ছে না অতীতের কথা ভাবা নিজেও বুঝতে পারে সে।
প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য নিষাদ বলে,”শুনো না।”
“বলেন।”
“আমাদের বিয়ে তো ভাইয়াদের বিয়ের আগেই হয়েছে,ওনাদের বাবু আসতে চলেছে,আমরা কেনো পিছিয়ে থাকবো বলো?”
মুহূর্তেই চন্দ্র লজ্জায় লাল হয়ে উঠে নিষাদের কথা শুনে।তারপর নিষাদের ঘাড়ে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।
চন্দ্রর কামড় নিষাদ কে প্রবল নাড়া দেয়।
ফিসফিস করে চন্দ্র কে জিজ্ঞেস করে নিষাদ,”চন্দ্র,তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?”
চন্দ্র চুপ করে থাকে,নিষাদ চন্দ্রর দিকে তাকায়।
মিনমিন করে চন্দ্র বলে,”পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হওয়ার আগে আমি চাই না ওসব কিছু হোক।”
নিষাদের হাসিমুখ মুহূর্তেই মলিন হয়ে যায়।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”জোর করবো না চন্দ্র,তবে এটা আমার প্রাপ্য,আমার হক,এটার জন্য তোমাকে জোর করার ক্ষমতা আমার আছে,তবুও তোমার উপর ছেড়ে দিলাম আমি।”
নিষাদ চন্দ্র কে ছেড়ে উঠতে নেয়,চন্দ্র পেছন থেকে টেনে ধরে আবার শুইয়ে দেয় নিষাদ কে নিজের উপর।তারপর খুব জোরে একটা কামড় বসায় নিষাদের ঘাড়ে।
“দুষ্টুমি করেছি আপনি এতো সিরিয়াস হয়ে গেলেন কেনো?
আমার লজ্জা করে না বুঝি নিজ মুখে বলতে?”
“ওরে আমার লজ্জাবতী রে,এটুকু বলতেই একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে,এতো লজ্জা কোথায় থাকে? ”
চন্দ্র জবাব দেয় না,চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।নিষাদ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।তারপর দুজনেই লিপ্ত হয়ে যায় ভালোবাসার খেলায়।
গোসল সেরে বারান্দায় বসে চন্দ্র,হেয়ার ড্রায়ার এনে নিষাদ চন্দ্রর চুল শুকিয়ে দেয়।
খানিকটা বিরক্তির ভঙ্গিতে চন্দ্র বলে,”এখানে রোদ আছে,রোদেই তো শুকিয়ে যেতো চুল।”
“হ্যাঁ,রোদে চুল শুকানোর জন্য আমি রেখে দিই আর শীত আমার বউ কে কাঁপাক,না?”
“তো শীতে কাঁপলে সমস্যা কি?
শীত তো মানুষের ই লাগে,আর মানুষ ই শীতে কাঁপে।”
“না হতে পারবে না,তোমার কোনোকিছু তে আমি কাউকে এলাউ করবো না,শীত কে ও না,বলেছিলাম না তোমাকে শুধু আমি কাঁপাবো,যেমন কাঁপিয়েছি কিছুক্ষণ আগে।”
বলেই নিষাদ চোখ মারে চন্দ্রকে।চন্দ্র নিষাদের কোমর জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলে,”আপনি খুব খারাপ মানুষ,খুব খুব খুব খারাপ,আমাকে শুধু শুধু লজ্জা দেন আপনি।”
সন্ধ্যায় নিষাদ রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দেয়,চন্দ্র গতরাতের মতো চেয়ারে বসে আছে,চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে নিষাদ চন্দ্রকে।
চন্দ্র হা করে তাকিয়ে দেখছে নিষাদ কি অবলীলায় রান্না করছে সব।এক মুহূর্তের জন্য ও মুখ বন্ধ হচ্ছে না নিষাদের।সারাক্ষণ কথা বলেই যাচ্ছে চন্দ্রর সাথে।
রান্না শেষ করে নিষাদ চন্দ্র কে কোলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে যায়,চন্দ্র বিরক্ত হয়ে বলে,”আমি তো নিজেই আসতে পারতাম,এতো কষ্ট কেনো করছেন?”
“মোটেও কষ্ট করছি না,দায়িত্ব পালন করছি আমার।যদি মরে টরে যাই,তুমি যেনো অন্যকারো হতে না পারো সেই ব্যবস্থা করছি বুঝলে,যাতে আমার মতো পাগল কাউকে না পাও,সবকিছুতে আমাকে মিস করো।”
চন্দ্রর চোখ ভিজে যায় নিষাদের কথা শুনে,এরকম অলক্ষুনে কথা নিষাদ কেনো বলছে?
চন্দ্রর চোখ মুছে দিয়ে নিষাদ বলে,”দেখেছো এইটুকুতেই চোখে জল,ভবিষ্যতে কি হবে তোমার আমাকে ছাড়া।”
কলিং বেল বেজে উঠতেই চন্দ্রকে ছেড়ে নিষাদ মেইন ডোর খোলে,শামসুজ্জামান খান দাঁড়িয়ে আছে,পরনে পাঞ্জাবি পাজামা,আজকে তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।
দরজা ছেড়ে নিষাদ সরে দাঁড়ায়,শামসুজ্জামান খান ভিতরে প্রবেশ করে।চন্দ্র উঠে দাঁড়াতে নেয়,তার আগেই নিষাদ চন্দ্রকে বসিয়ে দেয় টেনে।
চন্দ্রর কেমন লজ্জা লাগে,নিষাদ চন্দ্রর গা ঘেঁষে বসে।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর আস্তে আস্তে নিষাদ প্রসঙ্গ পালটায়।শামসুজ্জামান খান নিষাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে হেসে দেয়,তারপর বলে,”তুমি খুব ইন্টেলিজেন্ট নিষাদ,যার কারনে তোমাকে আমার এতো পছন্দ,কৌশলে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিতে জানো।তোমার জন্যই আমার কোম্পানি আজ টপে।”
নিষাদ কিছু বলে না।
চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে শামসুজ্জামান খান বলে,”এক সময় একজন কে ভীষণ ভালোবাসতাম,কিন্তু তখন আমি ছিলাম চালচুলোহীন,সবে অনার্স ফাইনাল ইয়ার,মেয়েটাও আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো,ঘর ছেড়ে চলে আসতেও রাজী ছিলো।কিন্তু নিয়ত ওকে আমার জন্য রাখে নি,আমি তাকে হারিয়ে ফেলি।
অনেক বছর পর তোমার স্ত্রীর মধ্যে তার ছায়া দেখতে পেয়ে পেলাম।”
“স্যার,কিছু মনে না করলে কি আমি জানতে পারি ওনার নাম কি ছিলো?”
চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শামসুজ্জামান খান।তারপর অস্ফুটে বলে,”রাশেদা ইয়াসমিন।”
চন্দ্র কেঁপে উঠে শুনে,রাশেদা!
তার মা’য়ের নাম?
নিষাদ আর কথা বাড়ায় না,উঠে খাবার পরিবেশন করতে ডাইনিং এ যায়,ওদের দুজনকে একা ছেড়ে দিয়ে।
খাবার টেবিলে বসে শামসুজ্জামান খান খেতে পারে না।নিষাদ চুপচাপ চন্দ্রকে খাইয়ে দেয়।বর্ষার অনবরত বৃষ্টির মতো শামসুজ্জামান খানের দুচোখ থেকে জল ঝরে।
চন্দ্রর অনুভূতি সব ভোঁতা হয়ে গেছে যেনো,বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে চন্দ্রর মায়ের কথা,তবে কি মা সংসার জীবনে অসুখী ছিলো!
এই মানুষ টা তার বাবা হওয়ার কথা ছিলো,কি ভীষণ ভালোবাসতো মা’কে তিনি!
বিদায় জানিয়ে শামসুজ্জামান খান চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর পর হাউমাউ করে কেঁদে উঠে চন্দ্র,বারবার জিজ্ঞেস করে,”আমার মা অসুখী ছিলো খুব,আমার মা কি এজন্যই অকালে চলে গেলো,ভালোবাসা এরকম করে কষ্ট দেয় মানুষ কে?
একজন মরে গেলো,আরেকজন আজীবনের জন্য নিঃস্ব হয়ে গেলো!”
জবাব দেয় না নিষাদ।
★
রাতে মারিয়ার মাথায় কেমন রাগ চেপে যায়,অনেক কষ্টে সব ভুলে ছিলো এই দুইদিন কিন্তু রাতে ঘুমাতে গিয়েই মারিয়া আর সহ্য করতে পারে না।বুক কেমন খাঁখাঁ করছে মারিয়ার।চন্দ্র নিশ্চয় নিষাদের বুকে শুয়ে আছে।
অথচ বুকে মারিয়া থাকতো আজ।
মানতে পারে না মারিয়া।
উঠে বসে আমিরকে কল দেয়,সে যদি নিষাদকে না পায়,চন্দ্রকে ও পেতে দিবে না।
আমির আর মাইনুল ইসলাম বসে নিউজ দেখছেন,তখনই আমিরের ফোন বেজে উঠে। ওপাশ থেকে এক দমে সব কথা বলে মারিয়া কল রেখে দেয়।চন্দ্র এখন নিষাদদের বাসায় না থাকলে কোথায় থাকতে পারে,ফ্ল্যাট নাম্বার কতো তাও বলে দেয় মারিয়া।
তারপর ফোন রেখে দেয়।ভিতরের জ্বালাপোড়া অনেক কমে গেছে এখন।
আমির টিভির রিমোট ছুঁড়ে মারে টিভিতে,তারপর উঠে গিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় টিভি ফ্লোরে।ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় টিভি।
সুরমা কে ডেকে বলে গাড়ির চাবি দিয়ে যেতে,কপালের রগ দপদপ রাগে,চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।
বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার ছোট মেয়েকে নিজের হাতে কুরবানি দিতে প্রস্তুত হও বাবা,তোমার মেয়ে রাত্রির দেবর কে বিয়ে করে নিয়েছে,যে ছেলে কি-না বিয়ের আগেই ওর বান্ধবীর সাথে প্রেম করেছে।”
মাইনুল ইসলাম সাহেবের চোখমুখ কঠোর হয়ে যায়,সাপের মতো হিসহিসিয়ে বলে,”নিয়ে আয় ওকে।জ্যান্ত কবর দিবো আমি”
সুরমা চাবি এনে দিতেই আমির ঝড়ের গতিতে বের হয়ে গেলো,প্রথমে নিশানদের বাসায় গেলো,হাসনাত সাহেব দরজা খুলে দিতেই সোজা জিজ্ঞেস করলো,”চন্দ্রকে ডেকে দিন,বাসায় নিয়ে যাবো।”
হাসনাত সাহেব বুঝে যায় যা বুঝার।
আমির আর দাঁড়ায় না।যেভাবে এসেছে সেভাবে বের হয়ে যায় আবার।
হাসনাত সাহেব কল করে নিষাদকে বলে।ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে নিষাদ ফোন রেখে দেয়।
চন্দ্র এখনো কাঁদছে।
নিষাদ চন্দ্রকে উঠিয়ে বসায়।তারপর সুয়েটার পরিয়ে দেয়,তার উপর চাদর।
চন্দ্র হতবুদ্ধি হয়ে যায়,কোথাও কি যাচ্ছে না-কি তারা এখন?তারপর চন্দ্র কে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেকগুলো চুমু খায়।
রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে।
বাহিরে কলিং বেল বেজে উঠে।নিষাদ উঠে যায় দরজা খুলতে,আজ না হয় কাল,এই সত্যের মুখোমুখি হতেই হতো,নিষাদ নিজেকে শক্ত করে তোলে।
চন্দ্র নিজেও আসে নিষাদের পিছন পিছন।চন্দ্রকে বামপাশে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিষাদ দরজা খুলে দেয়।
মুহূর্তে রক্তশূণ্য হয়ে যায় চন্দ্রর চেহারা।যমের মতো সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমির।
চোখ টকটকে লাল,কপালের রগের দপদপানি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চন্দ্রর কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে।
তবে কি এই তার জীবনের শেষ সুখ?
মায়ের মতো কি তার জীবন ও হবে?
চন্দ্র আর ভাবতে পারছে না কিছু,বারবার মনে হচ্ছে কেনো সারাদিনে নিষাদকে আরেকটু আদর করে নিলো না,নিষাদ কি তবে জানতো আমিরে আসছে যে?
কেনো চন্দ্রকে বললো না,নিষাদ কে আদর করে যে চন্দ্রর তৃষ্ণা মেটে নি,এই তৃষ্ণা চন্দ্র মেটাবে কি করে আর?
কেনো আরেকটু ভালোবাসলো না,কেনো এতোদিন রাগ করে ছিলো,আর কি নিষাদকে কাছে পাবে সে?
চন্দ্র কি বলবে এখন,সে তো সাবালিকা,তার অধিকার আছে মতপ্রকাশের,সে কি পারবে নিজের মনের কথা বলতে?
নাকি মায়ের মতো হবে তার?
আমির একটা কথা ও বলে না,চন্দ্রর গালে কষে এক চড় বসায়।
তারপর টানতে টানতে নিয়ে যায়।নিষাদ বজ্রাহত মানুষের মতো দাঁড়িয়ে আছে।তার প্রাণ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,সে কি করবে এখন?
গলা কাটা মুরগির মতো তড়পাতে থাকে নিষাদ একা রুমে,এই বিছানায়,এই বালিশে চন্দ্র ছিলো একটু আগে,এখন চন্দ্র কোথায়!
চিৎকার করে কান্না করতে চেষ্টা করে নিষাদ,কান্না আসে না।বুকের ভিতর যেনো দুমড়ে মুচড়ে যায় নিষাদের।
নিশ্বাস নিতে পারছে না নিষাদ,সারা পৃথিবীতে যেনো অক্সিজেনের অভাব,কি অদ্ভুত,একটা মানুষের থাকা না থাকার উপরে মাঝেমাঝে নিজের নিশ্বাস ও নির্ভর করে।
কে বলে নিশ্বাস ছাড়া মানুষ বাঁচে না?
নিশ্বাস নিজেই তো বাঁচে না ভালোবাসার মানুষ ছাড়া।
অসহ্য রকমের যন্ত্রণা হতে থাকে নিষাদের।মনে হচ্ছে যেনো খাঁচা ছেড়ে প্রাণপাখি এখনই চলে যাবে।
এই ভীষণ যন্ত্রণার কথা নিষাদ কাকে বলবে?
উপরতলায় গান বাজছে,”এ জীবন ও যাইবার কালে রে,একবার যেনো দেখি রে আমার….. ”
নিষাদের মনে হচ্ছে এখনই মরে যাবে আর কিছুতেই চন্দ্রকে দেখবে না।
চলবে….???