নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-২৪

0
651

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
২৪ .

রাতের দিকে হসপিটাল গুলো সবে গভীর ঘুমে বলা যেতে পারে। চারিদিকে একটা স্তব্ধতা বিরাজ করছে। তবে মাঝে মাঝে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ কানে প্রবেশ করতে না করতেই পেশেন্ট এর পরিবারের একটা জটলা কানে আসছে। কয়েক মুহূর্তে তাও স্তব্ধ।
রাত আড়াইটার দিকে হসপিটালের একটা চেম্বারে বসে রয়েছে নীরব আর ইচ্ছে। পাশে ধীর ও আছে। সাইডের একটা সোফায় ইপশি ঘুমে মগ্ন। আর তাকে গাইড করে দাঁড়িয়ে রয়েছে রজত। এতো রাতে ডক্টর পাওয়া একেই মুশকিল। তাও এক ডক্টর থাকায় সুবিধা হয়েছে।

– ” আরে ডক্টর আস্তে, লাগছে তো আমার। ”

গত আধা ঘন্টা ধরে নীরবের গলায় এক উক্তি, যে ওর লাগছে। ডক্টরের ও এইবার ভীষন রাগ হলো। একেই তো এতো রাত তার উপর ডিস্টার্ব করে চলেছে।

– ” থামুন তো মশাই। হয়ে গেছে। এই তো ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। এতোই যখন ভয়, তবে মারপিট করেন কি জন্যে। তাও আবার রাতে।”

নীরব ব্যথায় কপাল কুঁচকে ফেললো। সামনের চেয়ারে বসা ইচ্ছে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। নীরবের কাছে এটা নতুন না। যখনই নীরব কোনো কিছুতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ডক্টরের শরণাপন্ন হয়েছে, প্রতিবারই ইচ্ছে নীরবের দিকেই তাকিয়ে থাকে। তার একটাই কারণ নীরব ইনজেকশনে খুব ভয় পায়। তাই তো ডক্টর কে দেখার সাথে সাথে ইনজেকশনের ভয়ে কুই কুই করে।

ইচ্ছের কপালে অল্প একটু আঘাত লাগায় ডক্টর সেখানে ব্র্যান্ডেড লাগিয়ে দিয়েছে। সেই থেকেই ও বসে রয়েছে। নীরবের এমন কান্ডকারখানা দেখতে দেখতে বেচারি টায়ার্ড। তার থেকে ওর মাথায় ব্যথা লাগলেই বরং ভালো ছিল। ইচ্ছে থেকে থেকে বারবার হাই তুলছে আর নীরবের কুঁচকে যাওয়া কপালের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

– ” এই ইনজেকশনটা নিয়ে আপনি এখান থেকে যান মশাই। আমার আর ভালো লাগছে না। ডিউটি শেষে বাড়ি যেতেও পারছিনা। ”

তেতে ওঠে নীরব। একহাতে কপাল চেপে বলে, ” এ আবার কেমন ডক্টর যে পেশেন্টের সঙ্গে এমন বিহেব করছেন। ভালো করে কথা বলা যায় না। ”

– ” আহ্, নীরব চুপ কর। এই যে তোকে এতক্ষণ ধরে সহ্য করছে এই অনেক। আমার তো আমার বোনের জন্যে কষ্ট হচ্ছে। না জানি তোর মতো এমন ভিতু ছেলের সঙ্গে ও কাটাবে কীকরে?”

ধীরের পিঠে ধুম করে একটা ঘুষি মারলো নীরব। “সারা জীবন বোন বোন না করে একটু বোনের বর, বর তো করতেই পারিস!”

-” নীরব তোমরা এসো। ইপশির ঘুমটা ভেঙেছে। ওকে আমি বাড়ি দিয়ে আসি না হলে পরে মুশকিল হবে। ”

নীরব ইশারায় রজতকে যেতে বললো। ইপশি ঘুম ঘুম চোখে চারিদিক দেখতে দেখতে বেরিয়ে গেলো। এই মুহূর্তে ওর লাগবে ওর নিজের ঘরের বিছানা। সেখানে গিয়ে না ঘুমালে ঘুম হবে বলে মনে হয় না।

– ” আরে ইপশি, ভালো করে একটু চলো। পড়ে যাবে তো!”

যেতে যেতে ইপশি রজতকে জড়িয়ে ধরলো। ঘুমঘুম জড়ানো গলায় বলল, ” কোলে নাও। ”

ঘাবড়ে গেল রজত। বলে কী এই মেয়ে? কোলে নাও মানে কী?

– ” ইপশি আমাদের বিয়ে হোক তোমাকে তখন কোলে নেবো। এখন লক্ষ্মী মেয়ের মত চলো দেখি। ”

——————–

– ” ধুর ডক্টর বোঝেন না কেনো, আমি ইনজেকশন নেবো না। মানে নেবো না। ”

– ” দেখুন মশাই অনেক বকছেন কিন্তু। ইনজেকশন না নিয়ে এইখান থেকে এক পাও নড়বেন না বলে দিলাম।”

-” ধীর ওনাকে বলে দে আমি ইনজেকশন নেবো না।”

ডক্টর ও অসম্ভব জেদ নিয়ে বললো, ” আমিও এখান থেকে আপনাকে যেতে দেবো না। এই যে আপনার হাত ধরলাম এই হাত আর ছাড়ছি না।”

নীরব বেচারা যেনো খাদে পড়ে রয়েছে। যার কাছে সব থেকে ভয়ঙ্কর বস্তু ইনজেকশন তাকে বলে কিনা এটাই এখন নিতে হবে। নেবে না ও। কেনো নেবে? কিছুতেই না। ঘ্যাট হয়ে এক জায়গায় বসে রয়েছে সে।

এই সবের মাঝে অসহ্য লাগছে ইচ্ছের। একেই হসপিটালের উগ্র গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। তার উপর এইভাবে বসে থাকা ওর আর সহ্য হচ্ছে না। সারাদিন না খেয়ে শরীরটা কেমন গুলোছে। এখানে ঔষুধের গন্ধে ওর আর থাকা পসিবল না। তাই হুড়মুড় করে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো ইচ্ছে।

– ” আরে কোথায় যাচ্ছিস? দাঁড়া আমি আসছি। ”

নীরবের দিকে একবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ধীর। যার অর্থ, এইবার অন্তত ইনজেকশনটা নে ভাই।

– ” আপনি কি এইবার এখান থেকে যাবেন? ”

– “যেতে তো অবশ্যই চাই। কিন্তু আপনিই তো ইনজেকশনের দোহাই দিয়ে রেখে দিয়েছেন। বউটা আমার রেগে গেছে বোধহয়। তাই দেখলেন না কেমন ভাবে চলে গেলো। নিন এই উটকো ঝামেলার কাজ মিটিয়ে আমাকে ছাড়ুন।”

ডক্টর প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে বললো, ” সে আমার অনেকক্ষণ দেওয়া হয়ে গেছে। আপনি খেয়াল করেননি। আর আপনার ব্যাথাও লাগেনি। শুধু শুধু ভয় পাওয়ার অভিনয় দেখলাম। তবে হাতে কিঞ্চিৎ ব্যথা হতেই পারে। ”

নীরব অবাক হয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো, ” কখন দিলেন?”

– ” যখন নিজের বউয়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলেন। সেই মুহূর্তে। এখন আসুন। আর শুনুন, ঘরে সুন্দর বউ রেখে বাইরে মারপিট করতে যান কোন সাহসে। বউয়ের হাতের মার খাবেন। তাতে আলাদা মজা আছে। দেখবেন ধোলাই তারাই করবে। আবার সেবাও তারা করবে। ”

উঠে দাঁড়ালো নীরব। ফিচেল হেসে ডক্টর কে বললো, ” আপনি কি তবে বউয়ের সঙ্গে মারপিট করেন? কে বেশি মার খায়, আপনি?”

প্রশ্নটা করেই বাইরের দিকে ছুট দিয়েছে ও। এর উত্তরটা অতি সহজে নাও পাওয়া যেতে পারে। হয় দেখা যাবে ডক্টর খুব খুশি হয়ে উত্তর দেবে। আর নাহলে রেগে যেতেই পারে। কী দরকার সব প্রশ্নের উত্তর জেনে।

নীরব দের গাড়ি যখন ওদের পাড়ায় আসে তখন প্রায় সাড়ে তিনটার কাছাকাছি। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে অনেকে উঠে জগিং এ বেরিয়ে গিয়েছে। গাড়ি থেকে নীরব আর ইচ্ছে নামতে ধীর গাড়িটা গ্যারেজ করতে নিয়ে যায়। দুই বাড়িরই তখন সদর দরজা খোলা। বাইরের আলোগুলোও জ্বলছে। হয়তো সকলে জেগে ওদের অপেক্ষাই করছে।

ইচ্ছে চুপচাপ ধীরের অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ধীরের আসতে দেরী দেখে ও বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। ওর পাশাপাশি হাঁটছে নীরব। মুখ ফুটে ইচ্ছেকে কিছু বলতে চাইছে ও। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছে। এইবার সাহস করে ইচ্ছের হাতটা ধরতে যেতেই, নীরবের হাত ইচ্ছের আঙ্গুল ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলো। ইচ্ছে সোজা নিজের বাড়িতে ঢুকে গেলো। নীরবের বাড়িতে ও যাবে না আর।

ক্যাবলার মত দুই বাড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে মুখ ফুলালো নীরব। পিছন থেকে ধীর এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল, ” যা নিজের বাড়ি যা। ইচ্ছে ওর বাড়িতেই থাকবে। এতো সব প্ল্যান আমাদের না বলার শাস্তি স্বরূপ বউ লেস কয়দিন ঘোর। ভালো লাগবে। ”

নীরবকে কিছু বলতে না দিয়ে ধীর বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। পড়ে কী ভেবে পিছন ফিরে বললো, ” আমার মা, কাকা , কাকিমা তোদের বাড়িতেই আছে। একটু ডেকে বলে দিস বাড়ি আসতে। আমরা এসে গেছি। চল ফুট। ”

সিটি দিতে দিতে ধীর নিজের বাড়িতে চলে গেল। কেবল নীরব চুপ করে ওর কথা গুলো গিললো ছোটো বাচ্চার মতো। যেনো ছোট্ট একটা বাবু একা একা হাঁটছে রাস্তা দিয়ে। পায়ের কাছে পড়ে থাকা ছোটো ইটের টুকরোটা শর্ট মারতে মারতে নীরব নিজের বাড়িতে চলে গেল।

( চলবে )

{ বিঃ : জ্বর হওয়ার জন্যে গল্পটা আমি দিতে পারিনি। ক্ষমা করবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here