নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-২৬

0
1017

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
২৬ .

তাথৈ অবশেষে ইচ্ছের কাছে হেরে গেছে। পরনের ভারী শাড়িটায় যেনো এবার শ্বাস আটকে যাবে ইচ্ছের। ভ্যাপসা গরমে একেই তো সে ঘেমে নেয়ে চান। তাথৈ বোধ হয় ইচ্ছের ভারী নিশ্বাসের শব্দ শুনলো। আসলে ওর নিজেরই ইচ্ছেকে দেখে কষ্ট হচ্ছে। পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস জল ইচ্ছের হাতে দিয়ে বললো,

– ” তুমি শাড়িটা চেঞ্জ করে নাও বৌদি। তোমার তো কষ্ট হচ্ছে। এক কাজ করি ওই হালকা হালকা শাড়িটা এনে দিই! ”

বিছানায় রাখা হালকা সবুজ শাড়িটা আনতে বললে ইচ্ছে ইশারায় মাথা নেড়ে না বলে। যার অর্থ সে এই ভাবেই থাকতে চায়। আর বারে বারে জানালার বাইরে তাকাতে থাকে। প্রথমে জোর করলেও পড়ে ইচ্ছের বাড়ির উঠোন থেকে ভেসে আসা নীরবের গলা শুনে যা বোঝার বুঝে যায় তাথৈ। এটা হচ্ছে ভালোবাসার একটা পার্ট ও বলা যেতে পারে। সেকেন্ড ইয়ারে পরা কোনো মেয়ের পক্ষে এটা বোঝা সামান্য ব্যাপার। ছোটো থেকে উপন্যাস পড়ে পড়ে প্রেমের প্রতিটা ধাপই তাথৈ হস্তগত করেছে। শুধু নিজেই এখনও কারোর প্রেমে পড়েনি। যতবারই প্রেমে পড়েছে প্রকৃতির প্রেমে পড়েছে। প্রতিটা ঋতুর প্রেমে পড়েছে, ফুলের প্রেমে পড়েছে, মেলার ভিড়ের প্রেমেও ও পড়েছে। কেবল সেই প্রেমস্পদার তার জীবনে আজও আসেনি। আসলে বললে ঠিক প্রেম হয়না। প্রেমিক আমি খুঁজছি! এটা নিতান্তই একটা কথার কথা। এর সাথে প্রেম কিংবা ভালোবাসার সম্বন্ধ বহু দূর। প্রেম, ভালোবাসা খুঁজতে হয় না বা কাউকে খুঁজে দিতেও হয় না। ওটা আচমকাই হয়।

ফ্যানের স্প্রিড বাড়িয়ে তাথৈ বেরিয়ে যায়। উদ্দেশ্য ইচ্ছের বাড়ির উঠোনে যেখানে সকলে রয়েছে সেখানে যাওয়া। সকলে বলতে কেবল ছেলেরা। আজ নীরবের বাড়িতে ছেলেদের অ্যালাউ নেই। তাদের আতিথেয়তা ইচ্ছেদের বাড়িতেই হয়েছে। যদিও বা অনুষ্ঠান এতক্ষণে মিটে গেছে। এখন সকলে দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছে।

কচ্ছপের গতিতে ইচ্ছে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পরনে লাল একটা বেনারসী শাড়ির মতো শাড়ি। আসলে ইচ্ছে খুব বেশি শাড়ির নাম জানে না। শাড়িটা ভীষন ভারী, কাঞ্জিভরম হতেও পারে। এছাড়াও বোধহয় হাজারটা গয়না পরিয়ে রেখেছে ওকে। নীরবের ঠাকুরদার আমলের ভারী ভারী গলার হার থেকে শুরু করে কোমর বন্ধনী পর্যন্ত ইচ্ছেকে পড়তে হয়েছে। আজ সকালে এই গহনা গুলো রুমা দেবী ওর হাতে দিয়ে বলেছে, এইবার তোর জীবনে আরেক ধাপ এর প্রমোশন হচ্ছে। এই গুলো এই বাড়ির ঐতিহ্য। চরম অর্থ সংকটেও এই গহনায় কখনো আমি হাত দিইনি। এবার দায়িত্ত্ব তোর। আগলে রাখিস।”

কিন্তু ইচ্ছে এই গহনা গুলো আদৌ নিজের কাছে রাখবে না। বিয়ের আগে নিজের যাবতীয় খুঁচ খাছ যা গহনা ছিল তা থাকতো ওর মায়ের কাছে। তবে বিয়ের পর সেইগুলো নিজের দায়িত্বে কোনো কালেই ইচ্ছে রাখেনি। এই বাড়িতেও তো ওর এক মা আছে তার কাছেই ইচ্ছে নিজের গহনা রাখে। এইগুলো আবার রুমা দেবীর কাছেই যাবে। আসলে মাথার উপর দায়িত্ব থাকলে তা আমরা সব সময় পালন করি। কিন্তু মাথার মধ্যে একবার যদি ধন সম্পত্তির চিন্তা ঢুকে যায় তবে সারাক্ষণ একটা চিন্তা খেয়ে চলে তোমার মস্তিস্ক কে। আর ইচ্ছে এটাই মানে।

ইচ্ছে আজ খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা দিয়েছিল। যেগুলোর ছোটো ছোটো পাঁপড়ি গুলো ঝরে শাড়ির আঁচলের ভাঁজে ভাঁজে জড়ো হয়েছে। ইচ্ছে গলার বড়ো হারটা একহাতে ধরে আঁচলের ফুলের পাঁপড়ি গুলো সরিয়ে দিলো। পড়ে নিজের পেটে পরম মমতায় হাত দিয়ে আপন মনে হাসতে লাগলো। স্বপ্নের দেশে এক রূপকথার ঘর সাজাতে লাগলো। হুট করেই পিছন থেকে এক বলিষ্ঠ হাত ইচ্ছের কোমর জড়িয়ে পেট স্পর্শ করলো। নীরব জানা সত্ত্বেও আচমকা স্পর্শে কেঁপে উঠলো ইচ্ছে। পড়ে হুশ ফিরতে নীরবের হাত স্পর্শ করে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তাকালো ইচ্ছে। নীরব ও ওর দিকেই আয়নার মধ্য দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। দুইজনের চোখে চোখ পড়লে লজ্জা পেলো ইচ্ছে। হুট করেই চোখটা বন্ধ করে নিলো। নীরব তখনও ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছের লজ্জা মাখা দুটি আঁখি তখনও বন্ধ। দুষ্টু হেসে নীরব পিছন দিক থেকে ইচ্ছের কানে ফিসফিস করে বলল,

—-” লজ্জার পরিমাণ এতো বেশি যে ইচ্ছের গালটা ফট করে ফেঁটে যেতে পারে। এটা দেখে ইচ্ছের দাদা আমি নামক অধমকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিতেও পারে। তবে সেইসব তো অতীত, এখন আবার ইচ্ছেই মেরে এই অধমের নাক ফাটিয়ে দেয়। যুগ পাল্টেছে বস।”

ইচ্ছে ফট করে চোখ খোলে। প্রেগন্যান্সির দরুন নাহয় কয়েকবার নীরবের নাকে ঘুষি মেরে দিয়েছিল। তাও ঘুমের ঘোরে। তাই বলে এইভাবে বলতে হবে। হালকা হালকা রাগে মুখ ফুলিয়ে ফেললো ইচ্ছে। নীরবের কাছে এই রাগ ফুস মন্তর টাইপ। এই আছে, এই হাওয়া। পিছন দিক দিয়ে ইচ্ছের গালে নীরব নিজের ঠোঁট স্পর্শ করতেই ইচ্ছে আবারও লজ্জা পায়। এইবার সামনে ফিরে নীরবের বুকে মুখ লুকায়। নীরব ও হেসে দেয়।

জীবন থেকে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। সেই সাথে নীরব ইচ্ছের ভালোবাসাটা বেড়েছে। আজ ইচ্ছের সাঁধ ছিল নয় মাসের। ইচ্ছে মা হতে চলেছে। নতুন একটা সম্পর্কের প্রমোশন হয়েছে তার।

ইচ্ছেকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় নীরব বললো, ” খাবার সব খেয়েছিস? না হাঁ করে খালি গিলেছিস? ”

বোকা বোকা হাসলো ইচ্ছে। যা নীরবের দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে মনে হয় না। নীরবের পাঞ্জাবির বোতাম গুলো নিয়ে খেলতে খেলতে ইচ্ছে কেবল বাম দিক থেকে ডানদিকে গভীর ভাবে মাথা কাত করে দেখালো, যে ও সব খেয়েছে এইবার ইচ্ছে ঠিক কতটা খেয়েছে তা তো নীচে গেলেই নীরব জানবে। যদিও বা নীরবের আন্দাজ মতে কেবল চাটনিই ইচ্ছে মুখে তুলবে।

– ” আচ্ছা চল ফ্রেশ হয়ে নে। আমার তোকে দেখা হয়ে গেছে। তোকে ভালোই লাগছে তবে তুই বেশি মুটি হয়ে গেছিস? ”

কথাটা নীরব ইয়ার্কির ছলে বললেও ইচ্ছে কুটুস করে নীরবের হাতে খামচি কাটলো।

– ” আচ্ছা বাবা সরি। তুই মুটি না। হয়েছে। আমি মোটা, চলবে? ”

ইচ্ছে একগাল হেসে সম্মতি দিলো। নীরব প্রথমে মুখটা ব্যাজার করে হেসে উঠলো। ইচ্ছের গালটা টেনে দিয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে গহনা গুলো খুলে দিলো। পড়ে ইচ্ছে ফ্রেশ হতে ওকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। পড়ে ইচ্ছে ঘুমিয়ে গেলে নীরব বাইরে চলে গেলো। যাবার আগে তাথৈ কেও রেখে গেছে। তাথৈ ও এসে ইচ্ছের পাশে সাবধানে দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়েছে। এখনও বাড়িতে অনেক লোক জন আছে। সবার খাওয়া হয়নি। তাথৈ আগেই খেয়ে নিয়েছে ইচ্ছের সাথে থাকবে বলে। বলা তো যায় না কখন কী প্রয়োজন পড়ে।

( চলবে )

{ গল্পটা তো শেষ হবে এবার। আর লেখালেখি জীবনের একটা বছর হতে চলেছে আমার। আর মাত্র কয়েক দিন। তো নতুন গল্পের চরিত্র হিসেবে কাকে চান আমার পাঠকেরা। যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেই রায়ান – মায়াকে? নাকি নতুন করে কাউকে কে আনবো? }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here