নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ পর্ব_২৫+২৬

0
6146

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_২৫+২৬
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

🍁
হঠাৎ জয়ের ফোনে কল আসতেই সে দাঁড়িয়ে পড়লো!দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো! যা কারোই চোখ এরালো না!হাত না ধুয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো!

কয়েকমিনিট পরেই ফিরে এলো জয়!সবাই খুব উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জয়ের দিকে!

জয়ের চোখমুখ লাল টকটকে হয়ে আছে!জয় শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে বললো রোদের দাদীমনি খুব অসুস্থ! স্টোক হয়েছে!

বলেই উপরে চলে গেলো জয়!

ঝর্ণা বেগম বুঝতে পারলেন কেন তার ছেলের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছে!দাদী মারা যাওয়ার পর এ মহিলাটাই তো স্বাভাবিক করেছিলো জয়কে!

জয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জিসানের প্লেটে তরকারি তুলে দিলো শ্রেয়া!
হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো জিসান!হোয়াট রাবিশ বলেই দাঁড়িয়ে পড়লো সে…
শ্রেয়া ততক্ষণে দেখে নিয়েছে সে জিসানের প্লেটে নয় সাদা শার্টের হাতায় তরকারি ফেলে দিয়েছে!

শ্রেয়া কিছু বলতে চাওয়ার মুহুর্তেই ঠাসস করে চড় বসিয়ে দিলো জিসান শ্রেয়ার গালে!

মুহুর্তেই ডাইনিং রুম জুড়ে নিস্তব্ধতায় ভরে গেলো!সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে..
শ্রেয়া পানি টলমল চোখে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে!সে দৃষ্টি এসে বুকে আঘাত করলো জিসানের!চাইতেও সে অশ্রু মাখা গভীর চাহনী উপেক্ষা করতে পারলো না!
অনুশোচনা এসে ভর করলো ক্ষনিকেই! পাশে থাকা কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে তাতে হাত চেপে ধরলো জিসান!জু্ঁই ঝর্ণা বেগম চিৎকার করে উঠলেন!

সবাই এসে ওর হাত থেকে কাচের টুকরো সরাতে ব্যস্ত!আর জিসান ব্যস্ত সে অশ্রুময়ীর ভারাক্রান্ত আঁখি জোড়া দেখতে!

🍁
একটা চাপা আওয়াজ এলো শ্রেয়ার কানে!সে ছুটে ড্রয়িংরুমে গেলো!টি টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স হাতে তুলে নিয়ে দ্রুত পায় হাঁটা ধরলো!
সবাই ঝর্ণা বেগম বললেন বড় বউমা এদিকে আন ফাস্ট এইড বক্স টা!অনেক টা ক্ষত হয়েছে!
জুঁইয়ের মুখটা শুকিয়ে গেলো!সে ভাবল শ্রেয়াও কতটা কেয়ার করে জিসানের!তাি হয়ত জিসান শ্রেয়াকে এত ভালোবাসে….হাত কাটতেই সব ভুলে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে এলো দৌড়ে!
সে কি সত্যিই তার মত এত ভালোবাসার যোগ্য? তার স্বামীর হাত কেটেছে অথচ সে তো পারলো না দৌড়ে যেতে!

জুঁইয়ের হুঁশ ফিরল শ্রেয়ার কথায়!

মামনি ওনার হয়ত কোথাও লেগেছে! ফুলদানী ভাঙার শব্দ কানে এলো!ড্রয়ারে তো আরো একটা বক্স আছে!জুঁইকে বলো আনতে!ওর বরের হাতে ঔষধ লাগানো ওর উচিত!শান্ত সরে জবাব দিয়ে সবাইকে অবাক করে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো শ্রেয়া!

জুঁই হতবাক নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শ্রেয়ার যাওয়ার পানে!শ্বাশুড়ির ধমক খেয়ে সে স্বাভাবিক হলো।ছুটলো ফাস্ট এইড বক্স আনতে!
এতক্ষণে বেশ অনেকটা রক্ত ঝরে গেছে!

🍁
জয় মাথা চেপে ধরে বসে আছে!শ্রেয়া পাশে বসলো!
ফাস্ট এইড বক্স থেকে এন্টিসেপটিক তুলোয় নিয়ে হাত টেনে ধরে লাগালো!
জয় চমকে উঠলো পুরো!

হা করে আছেন কেন মশাই?

তুমি কি জানলে আমার লেগেছে?

বউ তো!হৃদয়ের কানেকশন আছে না একটা

মৃদু হাসলো জয়!

কি করে লাগলো?

আসলে..

বলুন!

কান্না পাচ্ছিলো খুব সাথে রাগ ও!তাই কনট্রোল করতে…

এটা কোনো কথা!ছেলে মানুষ কাঁদতে হয় বুঝি! আর রাগ কনট্রোল করতে কিছু ফর্মূলা এপ্লাই করতে হয়!তাও সেটা বউয়ের উপর..জানেন তো..

কি বলছো..

ধ্যাৎ আপনি দেখি কিছুই জানেন না!হাতে ব্যান্ডজের শেষ গিট দিতে দিতে বললো শ্রেয়া!

হুমমম জানিতো…

কি জানেন…

অনেক কিছু!

ভ্রু কুঁচকে জয়ের দিকে তাকালো শ্রেয়া!জয়ের ঠোঁটে তখন রহস্যের হাসি!
সে রহস্য ভেদ করে শ্রেয়া মাথা রাখলো জয়ের বুকে!
আলতো হাতে খোঁপা খুলে দিলো জয়!এলোকেশগুলো ঢেউয়ের মতো দোল খেয়ে বিছানা ছুঁয়ে নিচে গড়িয়ে পড়লো!

এ এক শান্তির স্থান!এক নিরাপদ স্থান!স্বামী প্রশস্ত বুক!এ বুকে মাথা রেখে যেন অনন্তকাল কাটিয়ে দেয়া যাবে!নির্দ্বিধায়………..….………!

চলবে_
#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_২৬
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

🍁
সকাল থেকে বেশ আয়োজন মাহমুদ ভিলায়! আকাশ সাহেব এসেছে পরেছে গতকাল রাতেই!
বাড়ির একমাত্র মেয়ের আকদ আজ!কিন্তু আমজাদ সাহেব আসতে পারেন নি!রাঙামাটি থেকে আসতে পারে নি!

আজই আসবেন রোদের বাবা মা আদিবাকে দেখতে!রোদের দাদীর অবস্থা বেশি ভালো না! তাই আজই আকদ সারতে চায়!পরে তিনি সুস্থ হলে একটা রিসেপশন পার্টি দেয়া যাবে!

সকাল থেকেই ব্যস্ত শ্রেয়া!বাড়ির বড় বউ হিসেবে তারে ঘাড়ে দায়িত্বের বোঝা বেশ বড়সড়!এদিক অদিক ছুটোছুটি করছে!কাজের বুশা এসেছেন চারজন!তাদের সব বুঝিয়ে দিচ্ছেন!
তাছাড়া জুঁইয়ের প্রেগন্যান্সি সিমটমগুলো বেশি হচ্ছে! বমি করেছে বেশ কয়েকবার! জুঁইকে দেখতে যাচ্ছে!স্যালাইন বানিয়ে দিয়ে এসেছে!

বাবুর্চি দিয়ে বাগানের পশ্চিমে রান্না হচ্ছে!জয় সেখানে ব্যস্ত!
জিসান বাড়িটাকে মোটামুটি সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছে!তাছাড়া জুঁইয়ের শরীরও ঠিক নেই! কিছুক্ষণ পর পর দেখছে ঘরে গিয়ে!
.
.
.
.
.
.
সব কাজ শেষ করে আদিবাকে সাজাতে ওর ঘরে গেলো শ্রেয়া!গিয়ে কিছুটা নয় বেশ অনেকটা অবাক হয়ে গেলো!
লাল শাড়ির সাথে গোল্ডেন অর্নামেন্টস পড়ে সম্পূর্ণ বউ সাজে সেজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদিবা!

গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে আদিবাকে দেখছে শ্রেয়া!
কোমড়ে হাত দিয়ে শ্রেয়ার দিকে ফিরে তাকালো আদিবা!ভাবী দেখো তো ঠিকঠাক?

একাএকা সেজে নিলে?

আসলে তুমি আসছো না!আর আমি আগে থেকেই ভাবতাম বিয়েতে আমিই সাজবো! তাই আর কি..এখন ঠিকঠাক তো?বলো না..

নাহ কিছু একটা মিসিং..

তাই নাকি?কি বলোতো?

উমমম লাল লিপস্টিক দাও নি?

নেই তো..

আচ্ছা দাড়াও আমি আনছি..দ্রুত পায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো শ্রেয়া!
নিজের ঘরে যেয়ে লাল লিপস্টিক টা এনে বেরোতেই শাড়িতে পা পেঁচিয়ে পড়ে গেলো শ্রেয়া!
চাপা আর্তনাদ করে উঠলো শ্রেয়া!
খুব চেষ্টা করে উঠলো!উঠে দাঁড়িয়ে মনে হলো ব্যাথাটা ভ্যানিশ হয়ে গেলো!

শ্রেয়া মনে মনে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো!কিন্তু ব্যাথা অনুভব না হওয়ায় দিব্বি হেঁটে গেলো আদিবার ঘরে!মনে মনে আল্লাহর শোকর আদায় করলো!
লিপস্টিক টা আদিবার হাতে দিয়ে বেশ কিছুক্ষন গল্প করলো!
তারপর চিনচিনে ব্যথা অনুভব হওয়ায় ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো!
.
.
.
.
.
.
জিসান নিচ থেকে এসে জুঁইকে বললো শাড়ি বদলে নিতে!নিস্তেজ হয়ে পড়েছে জুঁই!কথাই বেরুচ্ছে না মুখ থেকে!

শার্ট পাল্টাতে পাল্টাতে জিসান কিছুটা জোড়ে বলল কি হলো?বেশি শরীর খারাপ লাগছে?

হ্যা!অস্ফুট স্বরে উত্তর দিলো জুঁই!

কিন্তু যেতে তো হবেই!বাড়ির বউ তুমি!

জিসানের মুখে বউ কথাটা শুনে বেশ ভালো লাগলো জুঁইয়ের!নেতিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল যেমনি আছি ওমনিই যাই?

তা কি করে হয়?আচ্ছা বসো!
আলমারি থেকে একটা হালকা নীল কালার শাড়ি বের করে জুঁইয়ের সামনে রাখলো!
আস্তে আস্তে ধরে দাঁড় করালো!
জুঁই কেবল অবাকের পর অবাক হচ্ছে!নতুন শাড়িটা পড়তে হেল্প করলো!বসিয়ে চুল আঁচড়ে দিলো!নিজে হাতে খোঁপা করলো জুঁই!
মাথায় ঘোমটা টেনে দিলো জিসান!চোখে কাজল দিতে কাজল এগিয়ে দিলো!তারপর আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিয়ে হাত ধরে ধীর পায়ে এগুলো সামনের দিকে…
.
.
.
.
.
.
সকাল সাড়ে ১১ টায় কাজী এলো বিয়ে পড়াতে!তারঠিক ২৫ মিনিট আগেই রোদ তার মা বাবা ফুপি ফুপা মামা মামী আর মামা তো বোন এসেছে!

আদিবা রোদকে পাশাপাশি বসালো!
জিসান জুঁই ঝর্ণা বেগম আকাশ মাহমুদ সবাই বসে আছে!

জয় শ্রেয়াকে নামতে না দেখে নিজেই রুমে গেলো!
সোফায় পা মেলে বসেছিলো শ্রেয়া!
জয় পাশে যেয়ে বসতেই বললো কি হয়েছে তোমার?শরীর খারাপ করছে?

নাহ তেমন না!মৃদু ব্যাথা হচ্ছে!

কি বলছো?ডক্টর ডাকবো?নাকি হসপিটালে নিয়ে যাবো সরাসরি..

এত ব্যস্ত হবেন না প্লিজ!আদিবার বিয়েটা শেষ হোক তারপর না হয়…আর তাছাড়া ফুড পয়জনিং ও হতে পারে!

নিচে থেকে ডাক এলো জয়ের!

আপনি যান!আমি আসছি পরে…

একা থাকবে?আমি থাকি না…

না না!সেটা কেমন দেখায়!আপনি যান আমি আসছি..

আচ্ছা যাই তবে?

আচ্ছা!
জয় দ্রুত পায় নিচে হাঁটা ধরলো!

🍁
বিয়ের সব কাজ সম্পাদন করে কবুল দোয়া পরিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হলো আদিবা-রোদের!সবাই মিষ্টি মুখ করে খাবার খেতে বসল!

মায়ের জোরাজুরিতে শ্রেয়াকে রেখেই খেতে বসল জয়!ভাতে হাত দিতেই…

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here