নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ পর্ব_১৫+১৬

0
5374

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১৫+১৬
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

🍁
দাদানের ভাষ্যমতে আগামিকাল শ্রেয়া-জয়ের হলুদ!
আকাশ সাহেব আমজাদ সাহেব সহ সকলেই আজ বাড়িতে উপস্থিত! অনেক আত্নীয় স্বজন চলে গেছে অনেকে আছেন।

আমজাদ সাহেব তার ঘরের সাথে লাগোয়া ব্যালকনিতে বসে চা খাচ্ছে আর অপেক্ষা করছেন প্রিয় বন্ধুর জন্য!কখন তিনি আসবেন..!
জয়কে ডেকে পাঠিয়েছেন তার ঘরে সেই কখন এখনো আসছে না কেন তাই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।স্থির আর গম্ভীর হয়ে চায়ে চুমুক দিলেন আমজাদ সাহেব।
দরজায় কারো করাঘাতে শেষ চা টুকুও একবারে গিলে নিয়ে বললেন এসো!
ধীর পায়ে দাদানের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো জয়।
জয়কে দেখে হাসার চেষ্টা করলেন তিনি।জয়কে বসতে বলে তিনিও নড়েচড়ে বসলেন!

দাদান কিছু আর্জেন্ট?

হুমম

জ্বী বলো..

তুমি কি এ বিয়েতে রাজি জয়?আই মিন তোমার সম্পুর্ণ সম্মতি আছে তো?আমার মনে হয় আছে।নয়ত তোমাদের বিয়ের কথা বাড়ির সবার মুখে তো শুনেছ সেই কবেই সম্মতি না থাকলে তো আগেই তোমার মুখে না শুনতে পেতাম!যাইহোক বলো..

উহহ নিজেই প্রশ্ন করে নিজেই তো উত্তর দিয়ে আবার কয় বলো (বিড় বিড় করে বলে কপাল কুঁচকালো জয়)

দাদুভাই জোড়ে বলো বয়স হয়েছে শুনি কম..

না দাদান আমার কোনো আপত্তি নেই!তবে..

আবার তবে??

আমি চাইছিলাম কি বিয়েটা আগামীকালই হয়ে যাক! তারপরদিন একটা রিসেপশন পার্টি দিয়ে দিবো!

হঠাৎ এ আইডিয়া?

আসলে দাদান..তিনদিন বিয়ের একটা হইহুল্লোড় তারপর আবার হানিমুনে যেতে হবে তো নাকি আবার যদি ওদের বাসায় যেতে হয়?এত দিনের প্যারা?অফিস নিয়ে ঝামেলা হবে..
আর তাছাড়া আমাদের অফিসের স্টাফ ক্লাইন্ডরাও তো হলুদ বিয়ের দিন বেঁধে আসতে পারবে না।আর পার্টি টা মর্ডাণ আনমর্ডান সকলের জন্য পারফেক্ট!
সো একটু ভেবে দেখো…

গম্ভীর হয়ে বসলেন আমজাদ সাহেব..!

দাদান…

ভেবে জানাবো। এখন এসো তুমি।

আচ্ছা…

জয় কপাল কুঁচকে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো!

আমজাদ সাহেব হাতের মুঠোয় থুতনি রেখে গম্ভীর হয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো!

🍁
এতদিন পর দাদু কে দেখে নিজেকে সামলে নিতে পারলো না শ্রেয়া।চিৎকার করে কেঁদে দাদুকে জড়িয়ে ধরল।
রহমত মিয়াও চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছেন!

কেমন আছো দাদা

ভালোরে দিদুভাই।তুই কেমন আছোছ?

আমিও ভালো!বাবা মা হুজাইফা কেমন আছে দাদা?

একটু গম্ভীর হয়ে গেলো রহমত মিয়া।

ও দাদা বলো?

ভালোই আছে।কথা ঘুরাতে বলল
আমজাদ কইরে?এত জরুরী তলব কেন?

দাদান মনে হয় ঘরে..চলো নিয়ে যাই!
.
.
.
.
.
শ্রেয়া তুমি কি রাজি আছো এ বিয়েতে?তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?আমজাদ সাহেব শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

শ্রেয়া তার দাদুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

চুপ করে না থেকে বলে ফেলো।ক্লিয়ার কথা আমি পছন্দ করি দিদুন!

আসলে দাদান দাদা যা বলবে আমি তাতেই রাজি!

তোমার দাদা কি সংসার করবে?পাগলি মেয়ে।তুমি বলো।আপত্তি আছে?আমরা নাতি টা কিন্তু সত্যিই ভালো..

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো শ্রেয়া।

আচ্ছা তাহলে তুমি যাও।আমি রহমতের সাথে কথা বলি!

শ্রেয়া ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

প্রায় এক ঘন্টা পরামর্শ হলো দুই বন্ধুর মধ্যে! ঠিক হলো আগামি কালই ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়ে যাবে।তারপর দিন সময় করে একটা পার্টি দিবে!
.
.
.
.
.
.
দুপুরে সবাই বসল খেতে!জয়ের এক মামী বলে উঠল মেয়ের বাবা মা কাউকে তো দেখছি না?তারা কোথায়?বাবা মা ছাড়া কি বিয়ে হবে?

কথাটা শোনা মাত্রই গলায় খাবার আটকে গেলো শ্রেয়া।খাওয়া থেমে গেলো রহমত মিয়ার ও।
তবুও শান্ত গলায় বললো ওর বাপ মা নাই!মইরা গেছে!

শ্রেয়া অবাক চোখে তাকালো তার দাদার দিকে।চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানিও গড়িয়ে পড়লো।

জয়ের চোখ এড়ালো না তা!

মামী মুখ গুরিয়ে বলল এতিম?তাও আবার গ্রামের?হায়রে চয়েজ..

থামো! বউয়ের ভাবী বলে কিছু বলছি না!খাওয়ার সময় এত কিসের কথা…হ্যা!ধ্যাত..বলেই আমজাদ সাহেব উঠে চলে গেলেন।

শ্রেয়াও তার পরপর উঠে গেলেন!রহমত মিয়াও উঠে গেলেন শ্রেয়ার সাথে।

জয়ের মামী হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।তার একটা কথায় পরপর সবাই এভাবে চলে গেলো?কি এমন বলেছে সে হ্যা?ঠিকই তো বলেছে..!

আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি উঠছি মা বলেই আদিবা উঠে পড়লো।সাথে সাথে জয় আর রোদ ও!

ঝর্ণা বেগম তার ভাবীর সামনে গিয়ে বলল _এতটা বাড়িয়ে কথা না বললেও পারো ভাবী!আমার সংসার এটা আমাদের বাড়ি তো নয়!

অন্তরা বেগম ননদের কথায় জ্বলে উঠলো!ভুল কিছু বলেছি নাকি হ্যা আজকাল দেখছি সত্যি বলতেও একশবার ভাবতে হবে।

হ্যা ভাবতে হবে।কারন এটা তোমার ননদের শ্বশুরবাড়ি!

থাকলাম না শ্বশুর বাড়ি। বললাম না কথা!কি আসে যায়।ডেকে এনে অপমান?এ আমি মেনে নিবো না বাপু!
গজগজ করতে করতে তিনি ঘরে চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচে নামলেন অন্তরা বেগম! ঝর্ণা বেগম রান্না ঘরে কাজ করছিলেন..ভাবীকে নিচে নামতে দেখে বেরিয়ে এলেন।যেতে বাঁধ সাধলো কিন্তু তিনি রাগ দেখিয়ে চলেই গেলো।দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের কাজে মন দিলো ঝর্ণা বেগম!
.
.
.
.
.
.
আমজাদ সাহেবের ঘরেই থাকবেন রহমত মিয়া! তাই শ্রেয়া নিজের ঘরে বসে বাবা মার কথা ভাবতে লাগলো।

দরজায় নক করলো কেউ!শ্রেয়া তাকিয়ে দেখে জয়!

নক করার কি আছে? আপনাদের বাড়ি আপনাদের ঘর!

কথাটা মনে হয় একটু খোঁচা দিয়েই বলল শ্রেয়া।জয়ের কাছে তা মনে হলো!
ঘরে এসে দরজা আটকে দিলো!

শ্রেয়া লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল কি হলো দরজা আটকালেন কেন?

আমদের বাড়ি আমাদের ঘর তাই দরজাটা ও আমাদের..ইচ্ছে হয়েছে লাগিয়েছি!

কিছু বলল না শ্রেয়া। মুখ শক্ত করে বসে রইল!
দুই পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ালো জয়!

আমায় ভালোবাসো?শ্রেয়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলল জয়।

আঁতকে উঠল শ্রেয়া।অবাক দৃষ্টিতে তাকালো জয়ের মুখপানে..

মশা ডুকে যাবে তো!

মুখ বন্ধ হলো শ্রেয়ার।আমায় ভালোবাসো?কথাটা ঝংকারের মত কানে বাজতে লাগলো..আর কোনো কথায় শ্রেয়ার কানে ডুকছে না!

বলো আমায় ভালোবাসো?

হয়ত বাসি!কিন্তু সেটা ফিল করি মুখে বলতে পারবো না।প্রেমাবেগ গুলো যে নিস্তব্ধতায় মোড়া!
মনে মনে বলল শ্রেয়া।

শ্রেয়া…

হু হু?

কি জিজ্ঞেস করলাম!

আমার ভালোবাসা দিয়ে কি আসে যায় আপনার? আর ভালোবাসলেই বলবো কেনো?আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না!এ্যানি ম্যামকে ভালোবাসেন..তাহলে এসব অযথা কথা শুনে লাভ নেই!

এতদিন পর এ্যানির কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ হলেও রাগ হলো বেশ!

তা মশাই হঠাৎ এ কথা জানতে এলেন যে। এ্যানিকে ছেড়ে একলা একা লাগছে বুঝি?

তোমার কি মনে হয় শ্রেয়া সামান্য ঝগড়ার কারনে আমি এ্যানিকে ছেড়ে দিয়েছি?এতবছরের সম্পর্ক মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছি শুধুমাত্র ঝগড়ার কারনে?আমি কি ১৬-১৭ বছরের বাচ্চা ছেলে?আমি যথেষ্ট মেচিউর!
তোমার মনে আছে একদিন ভুলে বুঝে আমি তোমাকে মেরেছিলাম? আদিবা আর তুমি একরকম জামা পড়েছিলে!

ওই ছেলেটা রোদ ভাইয়া আর মেয়েটা আদিবা ছিলো বিড়বিড় করে বলল শ্রেয়া।

হুম জানি!ওইদিন আদিবা তোমার আমার কিছু ছবি তুলে এ্যানির কাছে পাঠিয়েছিলো।
তোমাকে ডক্টর দেখিয়ে বাসায় আসার পর সেগুলো এ্যানি আমাকে পাঠায় আর যাচ্ছে তাই গালাগাল করে!
আমি বেশ চটে গিয়েছিলাম।অফিস আওয়ার শেষে দেখা করতে চাইলাম এ্যানির সাথে।৬-৭ টা কল দেয়ার পরও রিসিভ হলো ন।গেলাম ওর ফ্ল্যাটে।ওর বাবা মা দেশে থাকে না।ও ওর এক ফ্রেন্ডের সাথে থাকে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে।কলিংবেল চাপ দিতেই দরজা খুলে দিলো ওর ফ্রেন্ড দিশা।দিশাকে দেখেই আরো রাগ উঠে গিয়েছিলো।কারন ২-৩ বার ও আমায় এ্যানির সাথে ব্রেকআপ করতে বলেছিলো।কারন বলতো না।তাই আমি ওকে পছন্দ করতাম না।
দিশা দরজা খুলে দিতেই আমি সোজা এ্যানির রুমের দিকে গেলাম।দরজা বন্ধ কিন্তু ভেতর থেকে এ্যানির বেস্ট ফ্রেন্ড আহনাফের কন্ঠস্বর শুনে আমি থমকে গিয়েছিলাম।দিশার দিকে তাকাতেই ও কিছুটা অভিমান নিয়ে মাথা নিচু করে নিজের ঘরে চলে গেলো।
আমার কাছে সব স্পষ্ট হয়ে গেলো।কেনো দিশা কারন বলতো না।তারমানে ওদের সম্পর্ক অনেকদিনের।সোফায় বসে রইলাম।নিজের প্রতি সেদিন সবচেয়ে বেশি লজ্জা হয়েছিলো।কি করে আমি এমন একটা মেয়ের চক্করে ফেঁসে গেলাম..
থামলো জয়!

তারপর..

কিছুসময় পর আহনাফ সহ এ্যানি বেরুলো রুম থেকে।আমাকে দেখে চমকে গেলো দুজন।তারপর সেখানেই সব শেষ।আশার সময় দিশাকে সরি বলে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলাম পারলে যেন এরকম বিষাক্ত নারীর সংস্পর্শ থেকে দূরে চলে যায়।

ওওহ!

হুম!

বুঝলাম!

কি বুঝলে?বসতে বলবে না?

আপনাদের বাড়ি আপনাদের ঘর আপনাদের বিছানা।ইচ্ছে হলে বসুন!

তুমি!সব এলোমেলো করে দিলে! ধ্যাত বসলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো জয়।

শ্রেয়া মুচকি হেসে বিছনার মধ্যেখানে বসল।প্রথম দিন থেকে আজ অব্ধি জয়ের সব চাল চলন মনে করে একা একাই হাসতে লাগলো শ্রেয়া।ছেলেটাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে! হয়ত…..!
#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১৬
#স্বর্নালি_আক্তার_শ্রাবণ

🍁
জীবনের সব হিসেব গড়মিল হয়ে গেছে জিসানের!সব স্বপ্ন, চিন্তাধারণা, পরিকল্পনা সব অগোছালো হয়ে গেছে!

একের পর এক মদ গিলে যাচ্ছে জিসান!সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার!
জুঁইদের বাসা থেকে এসেছে পুরো একটা দিন কেটে গেছে! তবুও সে শান্ত হতে পারছে না!সে তো পালিয়ে এসেছে!পালিয়ে আসতে হয়েছে তাকে!মেয়েটার সামনে কি করে দাঁড়াতো সে?

ঘুম ভাঙতেই মাতা চেপে ধরে উঠে বসল জিসান!মিনিট দশেক বসে থেকে চোখ মেলে তাকিয়ে বিছানা থেকে নামতে নিয়ে পেছনে ফিরে তাকলো!বেশ হতবাক আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো নিজের দিকে আর এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে থাকা জুঁইয়ের দিকে।
আর সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো তার কাছে!সবটা!কোনো রকম কাপড় জামা পরিধান করে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো জিসান!

কি করবে?কি বলবে?কিচ্ছু ভাবতেই পারছে না..!একদিকে সে ভালোবাসে শ্রেয়াকে অন্যদিকে একটা মেয়ের আত্মসম্মান..!
একটা দুর্ঘটনা..একটা কাজ?সব নষ্ট করে দিলো সব..!
শ্রেয়ার ছবি ফোনের স্ক্রিনে নিয়ে তাতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর নেশা করে চলেছে..

হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ঘরে কেউ ডুকলেই জিসানের দৃষ্টি নড়ল!দরজার দিকে তাকিয়ে মন খারাপের চেয়ে বেশি ভয় হতে লাগলো।সাথে রাগ ও।কি বলবে জুঁই?

জিসান এই জিসান কি হয়েছে তোমার?ফোন তুলছো না কেনো?
দেখো তো ২০০+ কল করেছি!লাইনে নেই ফোন ধরছো না মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছো না!কি হয়েছে তোমার বলবে?
আমার তো মনে হচ্ছে না এরকম বিরহে ডুবে যাওয়ার মত কিছু হয়েছে..!কি হলো কথা…

জিসান কথার ধাচ বুঝতে পেরে যেন জ্বলে উঠলো।
পুরো কথা শেষ হবার আগেই ঠাসস ঠাসস ঠাসস করে দুগালে তিনটে চড় পরলো জুঁইয়ের। গালে হাত দিয়ে ভীত চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো জিসানের ভয়ংকর চোখের দিকে!

জিন্স টপস পরা চুলগুলো ছাড়া একদম স্টেইট!কাধে একটা ব্যাগ নেয়া জুঁইয়ের দিকে রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে তাকালো। তুমি ইচ্ছে করেই…..
লজ্জা করে না জুঁই? আমার তো খুব লজ্জা করছে তোমাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে!
কেন এমনটা করলে বলো তো?নিজেকে এতটা ছোট করলে তো করলেই আমার জীবনটা শুরু করার আগেই শেষ করে দিলে!
কেনো করলে বলো তো?

জিসান আমি..

থামো!তুমি তো ঠিক ছিলে কেনো আমায় বাঁধা দিলে না?

আমি কি করে তোমায় বাঁধা দিবো বলো হুশ ছিলো না তোমার!

সাট আপ…একজন মানুষ মাতাল মানে এই নয় সে দানব!তুমি চাইলেই আমাকে আটকাতে পারতে!কোনো সার্ভেন্টকে ডাক দিয়ে!বা হাত মুচড়ে বা মুখে পানি মেরে!ধাক্কা বা চড় মেরে হলেও তো আটকাতে পারতে!
কেনো এভাবে নষ্ট করলে আমার জীবনটা কেনো? কেনো?কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো জিসান!

জুঁই ও কাঁদছে! কি বলবে সে!ভালোবাসা পাওয়ার দুর্গম ইচ্ছে টা মাথায় চেপে বসেছিলো।
সরি জিসান!

সরি হোয়াট সরি?সরি বললেই কি সব শেষ? বাহু ধরে টেনে এনে হাতে ফোন দিলো।দেখো দেখো এই মেয়েটাকে এই মেয়েটাকে ভালোবাসি আমি!আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না!এখন তুমিই বলো আমি কি পারবো তোমায় বিয়ে না করে ওকে বিয়ের কথা বলতে?আমি কি পারবো তোমার সাথে ঘটে যাওয়া সব ভুলে সামনে এগুতে বলো?কোথাও না কোথাও আমিও অপরাধী ভীষণ অপরাধী!

জুঁই স্তব্ধ নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!জিসানের ও যে ভালোবাসা থাকতে পারে ভাবে নি জুঁই!ভালোবাসা তাকে অন্ধ জ্ঞানশূন্য করে দিয়েছিলো!
জিসানের ফোনে থাকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ! মেয়েটা খুব মিষ্টি জিসান খুব মিষ্টি!
ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো একটা রাতের কথা!দেখবে ভালো থাকবে!বাংলাদেশে ফিরে যাও!আর এসো না এখানে!দেখবে সব ঠিকঠাক হবে!ভালো থেকো!

বেরিয়ে গেলে জুঁই!জিসান উঠে ঘরের সব কিছু ভাঙচুর করতে লাগলো!

🍁
বিয়ের সাজে পুতুলের মত লাগছে শ্রেয়াকে।জয়কেও আজ কম সুন্দর লাগে নি।সাদা পাঞ্জাবি পাজামায়?উফফ ক্রাশ!শ্রেয়া তো হ্যাবলার মত চেয়েই ছিলো খানিকক্ষণ! আদিবার কাশিতে হুঁশ এলো।চারপাশে মুরব্বিদের তাকিয়ে থাকতে দেখে কি লজ্জাতেই না পড়েছিলো! ইশশ..

চুপটি করে বসে আছে বিছনার এক কোণায়!সামনে পুরো বিছানা জুড়ে ফুল!কিন্তু তার খানিক বাদে বাদে হাঁচি আসছে!কেনো বুঝে উঠতে পারছে না।একমাত্র হাসনাহেনা ফুলের সামনে দাঁড়ালে তার এরকম হাঁচি হয়!কিন্তু আশেপাশে তো দেখতেও পারছে না!এদিকে রাত বাড়ছে কিছুটা শীত পড়ায় আর এত এত গহনা পড়ে বসে থাকায় বেশ বিরক্তই লাগছে তার!
অথচ জয়ের রুমে ডোকার নামই নেই!
মনে মনে একশ গালাগাল দিতে লাগলো শ্রেয়া!

দরজার খরখর শব্দে নিজেকে আরো ঘুটিয়ে নিলো শ্রেয়া!
কিন্তু মুহুর্তেই সব আবার নিরব! শ্রেয়া ঘোমটার নিচ থেকে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে? জয় কি করছে?
বেশ কিছুসময় পর বিরক্ত হয়েই নিজেই ঘোমটাটা তুললো শ্রেয়া!
একদম মুখ বরাবর জয়কে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো!সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলো জয়।

চুপ চুপ.. চুপ করো।কেউ শুনতে পেলে কারাপ ভাববে

উউুউউউ

কি?

হাতের দিকে ইশারা করতেই হাত সরালো জয়।

পায়ের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে রইল।কি সুন্দর নুপুর জোড়া!কখন পরালো জয়?শ্রেয়া তো টেরই পেলো না।
শ্রেয়া কিছু বলতে নিলেই জয় বললো প্রচুর দখল গেছে আজ আমার!আর একটা শব্দ ও শুনতে চাই না।সকালে শুনবো!ফ্রেশ হয়ে ঘুমাও।আমি বিছানায় শুবো।তুমি সোফায় যাও!শ্রেয়া কিছুসময় অবাক হয়ে জয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো!
জয়ও তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ! তার পর উঠতে নিলেই শ্রেয়া হাত ধরে রইলো।
ভ্রু নাচিয়ে জয় জিজ্ঞেস করলো কি।
শ্রয়া আস্তে আস্তে উঠে এসে সালাম করলো জয়কে।জয় মুচকি হাসল শুধু।

ফ্রেশ হয়ে জয় বিছানায় শুয়ে পড়লো। শ্রেয়াও ফ্রেস হয়ে এসে দাঁড়িয়ে রইল বিছনার পাশে।

শ্রেয়া ক্যান্ডেল জ্বলছে! লাইটটা অফ করে দাও।পাশ ফিরে শুয়েই বলল জয়!

শ্রেয়া তবুও দাঁড়িয়ে আছে!

জয় বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো শ্রেয়া দাড়িয়ে।কি হলো?

আমায় একটু জায়গা দেন?কই শুবো আমি?

কেনো সোফায়

করুন চোখে তাকালো শ্রেয়া জয়ের কথা শুনে!

আসলে আমি তো বেড শেয়ার করে শুতে পারি না।অভ্যেস নেই!তুমি বরং সোফায় শোও!কিছুদিন যাক।আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।

শ্রেয়া কপাল কুঁচকে সোফায় শুতে শুতে বিড়বিড় করে বললো উহহ অভ্যেস নেই হুহ।রোদ ভাইয়া এলে তো ঠিকই শোয়!আর আমি হলেই অভ্যেস নেই..হুহ।
আমারও মনে থাকবে।আরেকদিন শুতে বললেও শোবো না।শোধ নিবো হু..দিলো বাসররাত টা মাটি করে।বর বউ রা এদিনে কত গল্প করে।আর সে নাকি ঘুমাবে।হুহ

অপরদিকে জয় আড়চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো
সেদিন তো খুব ধাক্কা মেরেছিলে না!আজ মজা বুঝো!হুহ!আমি ও কম পাজি নই..!

🍁
পোড়া গন্ধ নাকে আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল শ্রেয়া! আগুন বলে চেঁচিয়ে ধমকে গেলো..

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here