নীলাম্বরীর_প্রেমে
Tuhina pakira
পর্ব : ১৩
-” মামী মনি তাড়াতাড়ি এসো , স্পর্শ দা এসে গেছে।”
দিহানের গলায় ‘স্পর্শ এসে গেছে’ কথাটা শ্রবণ গোচর হতেই স্পর্শের মা হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। কিন্তু বেশি দূর যেতে হলো না। তার আগেই কেউ তাকে জড়িয়ে ধরলো। এতদিন পর ছেলেকে কাছে পেতে তার চোখ ছলছল করে উঠলো। স্নেহ মিশ্রিত মমতাময় হাত ছেলের মাথায় রাখলেন। ভিডিও কলে কী ঠিক মতো ছেলেকে দেখা যায়।
-” কেমন আছিস?”
-” আমি ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?”
-” এই যে তোকে কাছে পেয়ে আরও ভালো হয়ে গেছি।
স্পর্শ তারপরে আয়ুর মায়ের কাছে গেলো। আয়ুর মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-” কতো বড়ো হয়ে গেছিস। ”
– ” আমি তো বড়ো হয়ে গেছি তবে আমার দুই মা কিন্তু এখনও ইয়ং আছে। ”
-” স্পর্শ দা তুমি একদম ঠিক বলেছো। এই দুই মা জননীর মাথায় এখনও একটাও পাকা চুল দেখতে পেলাম না।”
সোফায় বসে ছিল আয়ু আর স্পর্শের বাবা। দিহানের কথায় দুইজনেই হেসে উঠলো।
-” জয় ওনারা নাকি এখনও ইয়ং। শুনেই হাসি পাচ্ছে।”
-” আরে শিশির বাচ্চারা ভুলে গেছে মার্কেটে চুল কালো করার কতো রকম ব্র্যান্ড রয়েছে।”
দুই বন্ধুর কথায় আয়ু এবং স্পর্শের মা গায়ে মাখলো না। উল্টে দুই জনে তাল মিলিয়ে বললো,
-” যারা ওই সব ব্যবহার করে তারাই ভালো জানে। আমাদের ওই সব কিছু ব্যবহার করতে হয় না। ”
হঠাৎই কোথা থেকে আয়ান ছুটে এসে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরলো।
-” কেমন আছিস ছোটু?”
-” আমি খুব ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
-” বিন্দাস।”
– ” আজ স্কুলে যাসনি? ”
-” না। তুমি আসবে আর আমি স্কুলে চলে যাবো তা হতেই পারে না।”
দিহান আর দ্রুতি কে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেখে স্পর্শ ওদের দিকে এগিয়ে গেলো।
-” কী রে দুজনের কী খবর? কেমন চলছে নিউ কলেজ লাইফ।”
কথাটা বলতে দেরি , দিহান যেনো লাফিয়ে উঠলো।
-” বিন্দাস লাইফ দা। শুধু প্রবলেম একটাই।”
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বললো, – “কী?”
দিহান বলার আগেই দ্রুতি হরবর করে বললো,
-” ওই যে গর্দভ টা এখানেও আমার পিছু ছাড়লো না।”
দিহান দ্রুতির মাথায় চাটি মেরে বললো,
-” ওই আমি তোর পিছু কী ছাড়বো উল্টে তুই আমার পিছু ছাড়িসনি। চল হাট।”
দ্রুতি দিহানের পা মাড়িয়ে ধরলো।
-” তুই হাট। হাটে গিয়ে জিলিপি , বাদাম বিক্রি কর।”
দিহান নিজের পায়ে হাত দিয়ে বললো,
-” বাপরে মরে গেলাম। ওই আমার বুঝি লাগে না।”
-” লাগার জন্যেই মারা বাবু।”
-” শয়তান মাইয়া।”
-” তুই শয়তান ছোকরা।”
-” ওই তোকে বলেছি না , আমকে ছোকরা বলবি না। ”
-” বেশ করবো বলবো। তুই কি করবি?”
-” কী করবো দেখবি?”
দ্রুতি কিছু বলতে গেলেই স্পর্শ ওকে থামিয়ে দিল।
স্পর্শ এতটা পথ এসে সত্যিই খুব ক্লান্ত। তাই ওদের ধমক দিয়ে বলল,
-” তোরা এবার চুপ কর। যেখানে একসঙ্গেই আছিস, সবসময় একসঙ্গেই থাক তোরা। কিন্তু আমার মাথা খাস না। মা আমি ঘরে যাচ্ছি। ”
-” হ্যাঁ যা। আমি তোর খাবার আনছি। খেয়ে রেস্ট করবি।
স্পর্শ নিজের ঘরে চলে গেলো। অপরদিকে দ্রুতি আর দিহান নিজেদের মধ্যে খুনশুটি করতে করতে বাইরের দিকে চলে গেলো। ওদের পিছনে গেলো আয়ান। ওকেই এদের সামলাতে হবে। যখন ছোটো ছিল তখন আয়ু আর স্পর্শ এর ঝগড়া সামলানোর চেষ্টা করতো না। বরং স্পর্শকে হেল্প করতো। ওর দিদিকে যখন স্পর্শ দা রাগায় কেনো যেনো ওর খুব ভালো লাগতো। ওদের ঝগড়াটা আয়ানের কাছে খুব কিউট লাগে । কিন্তু দ্রুতি আর দিহানের ঝগড়া অন্যরকমের, একপ্রকার হাতাহাতি। একে অপরকে পারলে মেরে হসপিটালে ফেলে দিয়ে আসে। খুব ডেঞ্জারাস ঝগড়া।
♣
এতো গুলো দিন পর নিজের ঘরে এসে স্পর্শের যেনো নিজেকে প্রফুল্ল লাগছে। নিজের ঘরের মধ্যে কিছু একটা ব্যাপার তো আছে। নাহলে আকাশের পাখিরা সারাদিনের ক্লান্তির পড়ে নিজের ঘরে ফিরে যেতো না। স্পর্শ ঝট করে ওয়াশ রুমে চলে গেল। গা হাত খুব কিরকির করছে। তার উপর গা ম্যাজম্যাজ তো আছেই। এখন শাওয়ার নিলেই নিজেকে চাঙ্গা ফিল হবে। স্নানের এক আলাদা উপকারিতা আছে। যা মানুষকে বলতে গেলে এক প্রকার আরোগ্য দেয়। ওর মা আগে থেকেই ওর জামাকাপড় গুছিয়ে রেখেছে।
কিছুক্ষণ পর স্পর্শ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। ঝিমিয়ে পড়া শরীরটা একেবারে চনমনে হয়ে গেছে। গলায় টাওয়াল ফেলে মাথা মুছতে মুছতে আগের অভ্যেস মতো বারান্দার দিকে পা বাড়ালো। যদিও সেই মহাশয়া এখন ওপারের বারান্দায় নেই। তিনি কলেজ গেছেন। বারান্দায় যাবার আগেই স্পর্শের মোবাইল টা বেজে উঠলো।
-” কাল সন্ধ্যাবেলা সামনের চায়ের দোকানে চলে আসবি। আড্ডা হবে।”
-” আরে স্পর্শ আড্ডা তো হবেই। তবে তুই যে এলি একবারও বললি নাতো।”
-” আমি যদি বলতাম আপনারা আজ অফিস না গিয়ে এখানে বসে থাকতেন।”
-” সে তো থাকতামই। তুই আসছিস বলে কথা।”
-” ওই জন্যেই বলিনি। এই সবে নতুই চাকরি পেয়েছিস। এর মধ্যে ছুটি করে লাভ নেই। কাল শনিবার তাই সন্ধ্যা বেলা চলে আসবি। ”
-” সে তোকে বলতে হবে না। আমি আর অরূপ ঠিক সময়ে পৌছে যাবো।”
-” আচ্ছা রাখ। কাল দেখা হবে। ”
স্পর্শ ফোনটা রাখলো। হঠাৎই কিছু মিষ্টি সুরেলা শব্দ স্পর্শের কানে এসে বারি খেলো। স্পর্শ আস্তে আস্তে সেই দিকে এগিয়ে গেলো। শব্দ টা বারান্দা থেকে আসছে। সেখানে লাগানো রয়েছে উইন্ড চিমস। ওটা হাওয়ার তালে দুলছে। তা থেকে সুরেলা শব্দ গুলো ভেসে আসছে।
স্পর্শের যতদূর মনে পড়ে, ওর বারান্দায় কোনো উইন্ড চিমস ছিল না। তাহলে এটা এখানে কে লাগাবে, ওর মা? তবে যাই হোক জিনিসটা ওর খুব ভালো লেগেছে। উইন্ড চিমসে পাঁচটা লম্বা গোল মেটেল দিয়ে ঘেরা। সব থেকে মাঝের টা ঠিক কতকটা একটা পাতার মতো লাগানো। ওর মধ্যে কিছু লেখাও রয়েছে। খুব ছোটো অক্ষরে লেখাটা সহজে চোখে পড়বে না। তাতে খুব সুন্দর করে লেখা,
” শুভ জন্মদিন।”
স্পর্শ কী মনে করে মেটেলেটা উল্টো করে ধরতেই চোখে পড়লো, “স্পর্শায়ু।”
স্পর্শ আয়ুর ঘরের দিকে তাকালো। ওকে কাউকে জিজ্ঞেস করতেই হবে না এটা কে দিয়েছে? এতক্ষণে ও বুঝেগেছে খুব কাছের কারোর কান্ড এটা। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল স্পর্শের। কেনো যেনো আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে।
-” এইটা আয়ু দিয়েছে।”
স্পর্শ চমকে তাকিয়ে দেখলো ওর মা। মাকে দেখে হালকা হেসে ও ঘরে চলে গেল। ওর মা ওর পিছু যেতে যেতে বলল,
-” তোর যাবার কয়েকদিন পর দিয়েছিল। তোর জন্মদিনের গিফট। আমিই ওখানে লাগিয়ে রেখেছি। মেয়েটার চয়েস আছে বলতে হবে।”
স্পর্শ ওর মায়ের হাত ধরে বিছানায় বসালো। ও মেঝেতে হাঁটু ভাঁজ করে বসে মায়ের কোলে মাথা রাখলো।
-” ওর পছন্দের সব কিছুই মায়াময়,ভালোবাসাময়। তাই না মা?”
-” আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। তোর মনকে জিজ্ঞেস কর।”
-” আমার মন তো এক জায়গাতেই স্থায়ী। ওই যে ,#নীলাম্বরী_প্রেমে। বুঝলে মা জননী?”
– ” আপনিই বুঝুন আমার সুপুত্তুর।”
(চলবে )
{ বিঃ : ত্রুটি ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }