নীড় পর্ব-২৭

0
1566

নীড়
রেশমী রফিক
২৭।।
শারারদের বাসায় এবারই প্রথম আসা হলো তুবার। এর আগে বোনের বিয়ের পর এই এলাকায় এসেছে কয়েকবার, সাইফুলদের বাসায়। দুই-একটা বাসা পরেই শারারদের এই বাড়িটা। গলির মুখে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে লাল সিরামিকের এই বাড়িটা। দোতলায় খোলামেলা বারান্দা। ঢাকা শহরের বাসাবাড়িতে যেমন বারান্দাগুলো আপাদমস্তক গ্রিল আটকানো থাকে, অনেকটা খাঁচার মতো, এই বারান্দাটা অমন নয়। কাঠ দিয়ে কারুকাজ করা কোমর সমান রেলিঙ। উপরের অংশটুকু ফাঁকা। রেলিঙয়ের ওপাশে কতগুলো গাছ-গাছালির টব। তাতে কয়েক ধরনের ফুল ফুটে আছে। স্বভাবতই গলিতে ঢুকলে এই বারান্দায় চোখে চলে যায় সবার। তুবারও গেছে। সাইফুলদের বাসায় ঢুকতে এবং বের হতে প্রতিবারই এই বাড়িটা আর বারান্দাটা দেখেছে। একটু অন্যরকম বলেই নজর কেড়েছে। তাই বলে কখনো তুবার জানা হয়নি, এই বাড়িতেই শারার থাকে। আজ যখন গাড়িটা থামল বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর, বের হয়েই এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল ভীত দৃষ্টিতে। তখনই বারান্দাটা চোখে পড়েছে। অবাক বিস্ময়ে ওর মুখটা হাঁ হয়ে গিয়েছিল নিজের অজান্তেই। শারার ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
– হাঁ করে আছ কেন? বাড়িঘর জীবনে দেখোনি?
তুবা বিস্ময়টা তখনই গিলে ফেলেছে। চোখও নামিয়েছে। শারারকে আর উত্তর দেয়া হয়নি। হতভম্ব ভঙ্গিতে একবার তাকিয়েছিল কেবল। শারার তাকায়নি ওর দিকে। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কথাটা বলেছে। তার চোখমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। তুবার সাহস হয়নি কথা বলতে। ততক্ষণে শফিকুল চৌধুরীর উপস্থিতি বাড়ির ভেতর নীরব হুটোপুটির সৃষ্টি করেছে। ছেলে-বৌ দুজনকে নিচতলায় দাঁড়াতে বলে তিনি একাই দোতলায় গেলেন। পরক্ষণেই তার আদেশ অগ্রাহ্য করে শারার নড়ে উঠল। ধুপধাপ পা তুলে সিঁড়ি বেয়ে উপরতলায় চলে গেল সে। খানিকবাদে কোনো একটা দরজা ধড়াম করে বন্ধ হবার শব্দ শোনা গেল। হতবাক তুবা একাই দাঁড়িয়ে রইল জবুথবু হয়ে। চারপাশে বাড়ির তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা ছড়িয়ে-ছিড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের চোখে কৌতুহল আর ত্রস্ত ভঙ্গি। কিন্তু ওর নিজেকে মনে হলো সার্কাসের কোনো প্রাণী। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে খেলা দেখাতে। চারপাশে দর্শক উন্মুখ ভঙ্গিয়ে তাকিয়ে আছে। অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। শফিকুল চৌধুরী একটু পরই নিচতলায় নামলেন। ছেলেকে দেখতে না পেয়ে কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলেন। একজন উত্তর দিল,
– ভাইজান উপ্রে চইল্লা গেছে।
শফিকুল চৌধুরীর কপালে ভাঁজ পড়ল। তবে এই নিয়ে তিনি কথা বাড়ালেন না। তুবাকে নির্দেশ দিলেন তাকে অনুসরণ করতে। অতঃপর শ্বশুরের পিছু নিয়ে তুবা চলে এসেছে বড়সড় একটা ঘরে, যেখানে অপার কৌতুহল আর বিস্ময় আটকে রাখা কঠিন। ঘরের সাথেই বারান্দাটা। কাচের টানা দরজার ভেতর থেকে বারান্দার আসল সৌন্দর্য দেখে সে তাৎক্ষণিকভাবে মুগ্ধ। শফিকুল চৌধুরী ওকে বসতে বলেননি। কেবল বসার ঘরে ঢুকিয়েই আবার চলে গেছেন। তাই সে টানা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। কাচের ওপাশে অভূতপুর্ব স্বর্গ দেখে স্থান-কাল-পাত্র বেমালুম ভুলে বসেছে।
খানিকবাদে শারার ঢুকল ঘরে। চোখমুখ তখনো থমথমে। তবে বিরক্তিটা নেই। সরাসরি তুবার পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে। নিচু সুরে বলল,
– তোমার সমস্যা কী? একটু পর পর হাঁ করে থাক কেন?
তুবা মুখ বন্ধ করে ফেলল। চোখটাও আবার নামিয়ে ফেলল। আতঙ্ক ফিরে এসেছে। মাথার ভেতর হাজারও দুশ্চিন্তা আর জল্পনা-কল্পনা ফিরে এসেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য, এই মুহূর্তে ওদের বাসায় কী হচ্ছে। যথাসময়ে বাসায় না ফিরলে কী কী হতে পারে, তা অনুমান করতে চেষ্টা করছে। সবটাই জানা আছে। ঘড়ি ধরে নির্দিষ্ট সময়ের পর কয়েক মিনিট পার হলেই শেফালি চলে যান বারান্দায়। উঁকি মেরে রাস্তায় দেখার চেষ্টা করেন তুবার রিকশাটা এসেছে কি না। যতক্ষণ না তুবা ফেরে, তিনি পায়চারি করতে থাকেন। এভাবে খানিকটা সময় পার হবার পর তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। তিনি প্রথমে দিদারুল সাহেবকে তলব করেন। অনুরোধ করেন যেন রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। তারও খানিক পর না ফিরলে তিনি তুবার বান্ধবীদের বাসায় কল করতে শুরু করেন। যতগুলো বান্ধবী সবারই বাসায় নম্বর তার ডাইরিতে লেখা আছে। সেখান থেকে সিরিয়াল অনুসারে একেকজনকে কল করেন। আজকের পরিস্থিতি যা হবে, তা হলো দিদারুল সাহেবকে যখন শেফালি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে বলবেন, তিনি চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে তুবার নম্বরে কল করবেন। বলা বাহুল্য, মোবাইলে ওকে পাওয়া যাবে না। ফোনসেট আসলে কোথায়, তুবা জানে না। ব্যাগের ভেতর রেখেছিল নাকি ড্রেসের পকেটে, মনে নেই। ব্যাগে থাকলে ওটা এতক্ষণে হামলাকারীদের দখলে। তারা নিশ্চয়ই ব্যাগ ঘেঁটেছে। এরপর ফোন পেয়েছে। লক করা বিধায় হয়তো ফোন খুলতে পারবে না। তবে মোবাইলটা গুম করে ফেলতে পারে। সিমকার্ড ফেলে দিলেই হয়। সেক্ষেত্রে কল করলে মোবাইল বন্ধ থাকবে। যদি ফোনটা খোলা থাকে, হয়তো কেউ রিসিভ করবে। এরপর দিদারুল সাহেব ঘটনা একটু হলেও আঁচ করতে পারবেন। অন্তত এটুকু বুঝতে পারবেন, মেয়ে বিপদে পড়েছে। তারপর তিনি কী করবেন, তুবার ধারণা নেই। হয়তো ওই লোকদের কাছ থেকে লোকেশনটা জেনে নিতে পারেন। এরপর স্বর্ণপাতার থালায় গিয়ে খোঁজ করলেই সবটুকু জানবেন। এরপর? তিনি কি মেয়েকে নিতে আসবেন এই বাসায়?
আর যদি কোনোভাবে দিদারুল সাহেব মোবাইল বন্ধ পান, অথবা কোনো খোঁজ বের করতে না পারেন, শেফালি নিশ্চিতভাবেই মেয়ের বান্ধবীদের কাছ থেকে জানতে পারবেন, তুবা আজ কোচিংয়ে যায়নি। স্কুলের পর পরই কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এই খবরটা কেবল উর্মি জানে। আসার আগে ও জিজ্ঞেস করেছিল। উর্মি শারারের কথাও জানে। তবে পরিচয় জানে না। দু-একজন বান্ধবী এতটুকু জানে, তুবা একটা ছেলের সাথে প্রায়ই দেখা করতে যাচ্ছে। তারা বিস্তারিত জানতে চেয়েছিল। তুবা আগেভাগে কিছু বলতে চায়নি। ওদেরকে শুধু এটাই বলেছে,
– তোরা যেমন ভাবতেছিস, কাহিনি সেরকম না। যার সাথে দেখা করতে যাই, অবভিয়াসলি একটা ছেলে। কিন্তু সে আমার বয়ফ্রেন্ড না। এখানে অন্য কাহিনি আছে। তোদেরকে অবশ্যই বলব। জাস্ট একটু সময় দে। কাহিনিটা পুরাপুরি শেষ করেই নাহয় বলি একবারে। এখন বললে তোদের কিউরিসিটি মিটবে না।
তুবার এখন মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। শারারের বিস্তারিত পরিচয়টা না বলুক, অন্তত দিবাপুর শ্বশুরবাড়ির কেউ এটা বলতে কী সমস্যা ছিল বান্ধবীদের, ভেবে পাচ্ছে না। দিবাপুর দেবর হয় সম্পর্কে, এতটুকু বললেও চলত। তাহলে আজ উর্মি কোনো একটা সুত্র ধরিয়ে দিতে পারত শেফালিকে। এখন কী করবে সে? কীভাবে ওর বাবা-মা খুঁজে পাবে ওকে?
চট করে মনে হলো, শারারের বাবা-ই ওদের বাসায় কল করবেন। তিনি একজন মুরব্বি। নিজে দায়িত্ব নিয়ে ওকে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন, ওই নরকস্থল থেকে, হাজারও লোলুপ দৃষ্টির কবল থেকে ওকে উদ্ধার করে এনেছেন। এবার নিশ্চয়ই ওর বাবা-মাকে খবর দিয়ে আনাবেন। অথবা পাশের বাড়ি থেকে দিবাপুকেও ডেকে আনতে পারেন। মনের মধ্যে খানিকটা আশার আলো জ্বলতেই তুবা মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগল,
– হে আল্লাহ! আংকেল যেন আমাদের বাসায় কল না করে, বাবা-মাকে যেন কিছু না জানায়। আংকেল যেন দিবাপুকে ডেকে আনে। তাহলে দিবাপু কোনো না কোনোভাবে ওকে এই বাসা থেকে উদ্ধার করতে পারবে। তারপর বাসায় কল করে মাকে বুঝাতে পারবে যে, কোনো একটা কারণে স্কুলের পর পরই তার কাছে চলে এসেছিল তুবা। সে আর ফিরতে দেয়নি। একটু পর সাইফুল ভাইকে দিয়ে পাঠাবে। এতটুকু হলেই আজকের এই বিপদ মাথা থেকে নেমে যাবে একদম। এই বিপদক্ষণে আপুই একমাত্র ভরসা। তবে সমস্যা হচ্ছে, দিবাপু খুব সহজে মানবে না। বাবা-মাকে উল্টাপাল্টা কিছু বুঝাতে রাজি হবে না। তাকে মানাতে হলে হাতে-পায়ে ধরতে হবে। তাতে তুবার আপত্তি নেই। দরকার পড়লে সারারাত সে আপুর পা ধরে বসে থাকবে। তাছাড়া, সাইফুল ভাই আছে। উনিও নিশ্চয়ই ওর পক্ষ নিয়ে আপুকে বুঝাবেন।
তুবার মনে হলো, বুক থেকে ভারী পাথর আচমকা সরে গেল। বুকটা খালি হয়ে যাওয়ায় লম্বা নিঃশ্বাস নিল সে। মনোবল খানিকটা বাড়ল। হাত-পায়ের কাঁপুনি বন্ধ হলো। সে মিনমিন করে শারারকে বলল,
– শারার ভাই, দিবাপুকে একটু ডেকে আনবেন প্লিজ?
শারার ঘুরে তাকাল। অবাক সুরে বলল,
– কেন?
– কেন আবার কী? সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি এখনো বাসায় যাইনি। না জানি কী চলতেছে ওখানে। আম্মাকে তো চিনেন না আপনি। আমাকে আজকে কচুকাটা করে ছাড়বে। এজন্য দিবাপুকে ম্যানেজ করা লাগবে। দিবাপু একবার লিড দিলেই ঝামেলা শেষ।
– দিবাপু কী লিড করবে?
তুবা কন্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ল। আতঙ্ক উবে যাওয়ায় আবার আগের মতো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ফিরে এসেছে তার মধ্যে। দুই হাত নেড়ে বলল,
– আহ, আপনি এত টিউবলাইট কেন? সহজ কথাটা বুঝতেছেন না? আচ্ছা শোনেন। আমি বলতেছি আপনাকে। আপু যদি আম্মাকে বুঝিয়ে বলে, মানে মিথ্যে করে বলবে যে, আমি স্কুল ছুটি হবার পরই আপুর কাছে চলে গেছি। আপুর বাসায় ছিলাম সারাদিন। এরপর বিকেলে ফিরতে চাইলেও আপু দেয়নি। বলছে, রাতে খেয়েদেয়ে এরপর যাব। সাইফুল ভাই নামিয়ে দিয়ে আসবে আমাকে। তাহলে মনে করেন আম্মা একদম ঠান্ডা। নাইলে আজকে বাসায় যাওয়ার পর আমার খবর হয়ে যাবে একদম।
শারারের চেহারা দেখে মনে হলো, এমন আজব কথা সে জীবনেও শোনেনি। অথবা তুবা যে ভাষায় কথা বলছে, সেই ভাষা কস্মিনকালেও শিখেনি। কথা বুঝবে কী? তবু কোনোমতে বলল,
– কী খবর হবে?
– কী খবর মানে? আম্মা পুরা সানডে মানডে ক্লোজ করে দিবে আমার। এমন মাইর দিবে! আমার আর দুনিয়া দেখা লাগবে না মাইরের চোটে। আপনার গার্লফ্রেন্ড খুঁজে দেয়ার যে মাগনা চাকরি আমি নিছি, যে কারণে আজকে এত কাহিনি হলো, সেটা এখানেই শেষ। ও, শোনেন। ভালো কথা মনে পড়ছে। আজকের পর আপনার সাথে আমার দেখা হবার পসিবিলিটি একদম জিরো। মানে দিবাপুকে ম্যানেজ করতে না পারলে তো আমি পুরাই গন কেস। ধোলাই দেয়ার পর আম্মা জীবনেও আমাকে আর বাসা থেকে বের হতে দিবে না। আর এই তল্লাটে মানে দিবাপুর শ্বশুরবাড়ির আশপাশে যাওয়া এই জীবনে শেষ। আর যদিও দিবাপু ম্যানেজ হয়, তাহলেও আমি আর এই ভেজালে নাই। আমার আজকে কলিজা শুঁকিয়ে গেছে। বুঝছেন? সো, আর দেখা হইতেছে না। যেটা বলতেছিলাম, আপুর বিয়ের অ্যালবাম আনার কথা ছিল না আজকে? আমি কিন্তু অ্যালবাম আনছিলাম। আপনাকে তখন মিথ্যা কথা বলছিলাম। মানে একটু টেনশনে রাখতে চাইছিলাম আর কী। এত সহজে আপনার পছন্দের মেয়েকে খুঁজে পেলে তো জমল না, এইজন্য। যাই হোক, সেই কাহিনির লেঞ্জা এখন আরেকদিকে চলে গেছে। আপনি এক কাজ করেন। আমি আপনাকে অ্যালবাম দিয়ে যাই। আপনি ওই মেয়েটাকে খুঁজে এরপর একটা চিহ্ন দিয়ে রাখবেন ছবিতে। এরপর অ্যালবামটা কোনোভাবে দিবাপুর বাসায় দিয়ে আসবেন। ভাবখানা এমন যেন, আজকে আমি দিবাপুর বাসায় আসছি, অ্যালবাম নিয়ে। এরপর ভুল করে রেখে চলে গেছি। পরে দিবাপু আবার আমাদের বাসায় অ্যালবাম ফেরত পাঠাবে। তখন আমি ছবি ঘেঁটে আপনার দেয়া চিহ্ন অনুসারে মেয়েটাকে চিনতে পারব। অবশ্য আমার চিনেই বা কী লাভ? আমার তো আর আপনার সাথে দেখা হবে না। আচ্ছা, শোনেন। আপনি নিজেই কোনোভাবে দিবাপুর কাছ থেকে জেনে নিবেন মেয়েটা কে। পারবেন না? আরে যাহ, অ্যালবাম কই? ও আল্লাহ, আমার স্কুলের ব্যাগ?
তুবার বিস্ফারিত চোখের দিকে বিস্মিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে শারার। যেন তুবাকে সে চিনেই না। এই প্রথম দেখা হলো। এই মেয়ে এতক্ষণ ধরে কী কথা বলল, তার কানে ঢুকেনি। ঢুকলেও মাথা কাজ করেনি। যে ঝামেলা পার করে আসতে পেরেছে বাসা অবধি, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। (চলবে)
পরের পর্ব আগামীকাল রাত নয়টায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here