#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৫
‘ডুড হেডমাস্টার তো বলল তার মেয়েরে কিডনাপ করা হয়ছে! এটার জন্যে তোকে কেন ডাকছে। পুলিশ কমপ্লেইন করতো।’
ফাহাদের কথা আরভীক এর কর্ণপাত হতেই সে ভ্রু নাচিঁয়ে আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নেই তার বন্ধুর। সে থতমত খেয়ে যায়। ভুলেই গেছিল সেই তো পুলিশ তাও আবার সিআইডি অফিসার। সে তার বন্ধুর দিকে তাকায়। হেডমাস্টারের রুমের ঢুকার আগে ও বের হওয়ার পর থেকে আরভীককে ভাবলেশনহীন দেখাচ্ছে। যেন সে গভীর মনে কোনো পরিকল্পনা কসায় ব্যস্ত। সায়াজ ইতিমধ্যে ট্রাফিক রোডের সামনে চলে আসে। আপাতত তাকে নেওয়ার জন্যে এ ব্যস্ত রাস্তার ধারে আসা। সায়াজ গাড়িতে উঠে তৎপর গলায় শুধায়।
‘সরি সরি আইম লেইট। ইজ এনিথিংক ফিনিশ!’
ফাহাদ নাবোধক মাথা নেড়ে নেতিবাচক ইঙ্গিত দেয়। সায়াজ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বেচারা ঘুমকাতুরে। রাতে বহু দেরি করে ঘুমানোর কারণে সাতসকালে চোখ খুলতেই পারেনি। অন্যথায় এলার্ম বেজে উঠলে হাত চালিয়ে বন্ধ করে দেয়। ঠিক এগারোটা বেজে জাগতে পেরেছে। ঘড়ি দেখে হা হুতাশ করে প্রস্তুত হয়ে বাসার সামনে আসার জন্য অনুরোধময় বার্তা পাঠায় আরভীককে। সে তার ড্রাইভারকে তাই করতে বলে! লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
কিন্তু ভেবেছিল গাড়িতে মসমাস্তি চলছে! যা ছিল সায়াজের অবাস্তব কল্পনা। গাড়িতে নির্জীব অবস্থা ভরপুর। আরভীক যে সবটা সময় রসিকতায় কাটিয়ে দিতে পারে। সেই আজ নিশ্চুপে কিছু ভেবে চলছে। সায়াজ হাত নাড়িয়ে ধ্যান ফেরায় তার। সে মাথা নেড়ে ‘কি’ বোঝায়।
‘ডুড আগে গাড়িতে কত মসমাস্তি করতাম! তুই নিজেই ছিলি লিডার। আজ এত চুপচাপ কেন!’
‘নাথিং।’
‘সি ডুড উই আর বেস্ট ডুড এভার! শেয়ার আস।’
ক্লেশময় চাহনী নিয়ে সে ফাহাদের দিকে তাকায়। ফাহাদ তার বন্ধুর চাহনী দেখে সায়াজকে বলে,
‘লিসেন ডুড আমি বলি!’
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা…..
হেডমাস্টারের রুমে নক করে আরভীক। মুখশ্রী তখনো গাম্ভীর্যতায় ভরপুর তার। কারণ আনজুমাকে ফোনের মধ্যে রুডভাবে নিষেধ করেছে। এতে হয়তো মেয়েটা সাময়িক কষ্ট পেয়েছে। সে চাইনি রুডলি বিহেভ করতে। তবুও শ্রেয়ার কারনামা সে ভালো করে জানে। ক্লাবে চড় মেরে ছিল। বিধেয় ডেঞ্জারাস মেয়ে চুপ করে বসে থাকার নয়।
হেডমাস্টার সিসিটিভি ফুটেজে দরজার বাহিরে আরভীক ও ফাহাদকে দেখে খোশমনে ভেতরে আসতে বলে। তারা এসে ভদ্রতার সহিত বসে। হেডমাস্টার কে সালাম দিয়ে আরভীক বলে,
‘আপনি কি এমন জরুরি কাজের জন্য ডাকলেন! যার জন্য আমার থেকে সূদুর মাহদিপুর শহর থেকে আলখেল্লাপুরে আসতে হলো।’
কথাটি শুনে মিইয়ে গেল হেডমাস্টারের মুখশ্রী। বয়স্ক পুরুষ,চুলে পাক গজেছে,মোটা ফ্রেমের চশমাটি খুলে টেবিলের উপর রাখে। দৃষ্টিনত করে ঠোঁট কামড়ে জিজ্ঞেসা করে।
‘তোমরা আগে বলো বাবা আমার কাজটা কি করে দিতে পারবে!’
‘আপনি আমাদের গুরুজন। বলে দেখুন নিরাশ হবেন না।’
আরভীক এর কথায় আবেগী হয়ে গেল হেডমাস্টার। আকস্মিক ফাহাদ ও তার ডান হাতজোড়া ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ভেবাচ্যাকা খেয়ে যায় তারা। তড়িঘড়ি আরভীক তার স্যারের পিঠে হাত বুলিয়ে সহায়তার আহ্বান জানায়। দৃঢ় কণ্ঠে শুধায়।
‘ভেঙ্গে পড়বেন না। পরিবেশ সামলাতে খাপছাড়া হওয়া যাবে না।’
আরভীক এর কথায় হেডমাস্টার অতীব কষ্টে বলে,
‘আমার মেয়েটিকে কয়েকজন বখাটে ছেলে তুলে নিয়ে গেছে। ওদের মধ্যে বখাটের লিডার হচ্ছে যাবের। তার কুনজরের স্বীকার আমার মামুনি। সে তাকে তোলে নিয়ে গেছে বিয়ে করতে। তোমরা প্লিজ তাকে বাঁচিয়ে আনো। এই উপকারের কৃতজ্ঞতা আজীবন বহন করব।’
‘আপনার মেয়ে কাউকে ভালোবাসে!’
কথাটা আড়চোখে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে। সে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে আরভীক এর বলা কথাটির অর্থ খোঁজে লাগে তার মনে। কিন্তু এই চোখভরা রহস্যে মানুষের ব্রেনের কল্পনা জাস্ট ইম্পসেবল!
আরভীক এর কথায় কান্না থামিয়ে দিল হেডমাস্টার। টেবিলে থাকা পানির গ্লাসটি নিয়ে ঢকঢক করে পুরু গ্লাসের পানি খেয়ে নেয়। আরভীক এর কথার বিপরীতে উত্তর দিল।
‘মামুনিকে জিজ্ঞেস করলেই বলতো তার ভালোবাসা আছে। সে এবা…..।’
হেডমাস্টারের পরের বাক্য বেশ ভালো আন্দাজ করেছে আরভীক। সে তাকে থামিয়ে তাড়াহুড়োর সাপেক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘তোকে কি আসার জন্যে ইনভাইট করতে হবে!’
ফাহাদ তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে যায়। আরভীক তার স্যারের হাত ধরে আশ্বস্ত গলায় বলে,
‘ডোন্ট ওয়ারি স্যার বিয়ে হবে আপনার মেয়ের তবে যাবেরের সঙ্গে না। যার সঙ্গে আমার মন চাইবে তার সঙ্গেই আপনার মেয়ের বিয়ে করিয়ে জামাইবাবুকে নিয়ে আপনার সামনে হাজির হবে।’
হেডমাস্টার হতবাক হয়। ক্ষণিকে হেসে মাথা নাড়ে। তিনি তার দু’ছাত্রের উপরে সম্পূর্ণ আস্থা রাখে। তাদের বিবেচনাধীন ছেলে কখনো অনুপযুক্ত হতে পারে না। ফলে তিনি এখন প্রশান্তির শ্বাস নেয়। ফাহাদের থেকে ঘটনা শুনে সায়াজ সন্দেহের চোখে আরভীক এর দিকে তাকায়। তার কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন করে।
‘কারে ভালিকা বাকড়া বানানোর চিন্তা করছস হে! তোর কুবুদ্ধিভরা ব্রেনে আমাদের ফিউচার নিয়ে ভাবিস না। আইম সিঙ্গেলমেট এন্ড নট ফল ইন লাভ!’
‘বাট আওয়ার ফাহাদ অলরেডি ফলড।’
দীর্ঘ এক হামি দিয়ে মাথা হেলিয়ে দেয় সিটে আরভীক। ফাহাদ ঢোক গিলে সায়াজের দিকে তাকায়। সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। যেন মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে ফাহাদ। এর শাস্তি স্বরুপ নিশ্চিত তাকে গরুর বিরিয়ানীর জায়গায় গরুর গোবর খাওয়ানো হবে।
সায়াজ সূক্ষ্ম ভস্মীভূত চোখজোড়া ফাহাদের দিকে করে বলে,
‘কে রে মাইয়া! যার প্রেমে পইড়া তুই হইয়াছিস অপরাধী।’
‘কে আবার তোর চাচাতো বোন সাইবারাণী!’
বন্ধুর লাভারের কথা শুনে হা হয়ে যায় সে। মুখ আপনাআপনি চমকে পরিণত হয়। তথাপি বিষন্নতায় মনঃক্ষুণ্ণ হলো তার। সে জানে তার পাগলী বোনটা আরভীক এর উপর ক্রাশ খেয়ে বাঁশের মত বকা খেয়েছে প্রতিবার। দূরত্ব নিয়ে থাকতে বললে উল্টো নিকটস্থ হওয়ার প্রেরণা জুটাতো। কিন্তু পাগলীটা ঠিক পিছু হাঁটেনি। আরভীককে পেলেই আগপিছ ঘুরপাক করবেই। যা দেখে প্রতিনিয়ত হৃদ পুড়তো ফাহাদের। আরভীক সায়াজের ভাবনা দেখে চোখ ঘুরাল। ধুপধাপ করে তার পিঠে বারি দিয়ে বলে,
‘ভাবতেছিস কি হে! সাইবা আমার না ফাহাদের প্রেমে লুতুপুতু খাচ্ছে। আর এই বলদ ভাবে ঐ নাকি আমাকে ভালোবাসে। কত বলদ হলে কেউ এমন ভাবে!’
শেষাক্ত কথাটি আরভীক ইচ্ছেকৃতভাবে সায়াজকে পিন্চ করে বলে। পুরু কথা শুনে সায়াজ নির্বোধ চাহনী নিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
‘আসলেই তুই একখান বলদ। আমার বোনটাকে আমি চিনি। ঐ দিন বিচে ওর সেজে যাওয়া,সারপ্রাইজ প্লানিং এন্ড প্রপোজ প্লানিং তোর জন্যে ছিল আবাল!’
‘বুঝছস এবার তুই কেমনে মেয়েটারে হার্ট করছস। একবার তারে ধরে জিজ্ঞেসই করতি যে সে কাকে ভালোবাসে! নাহ্ মশাই নিজের মত ভেবে আলকাতরা সেজে আছে। এবার ভোগ তুই।’
মনমরা হয়ে বসে থাকে ফাহাদ। বন্ধুদের আড়ালে ফোনে কয়েকবার মেসেজ দিয়েছে সাইবাকে সে। তবে একটাও দেখেনি মেয়েটা। আজ সত্যি মাত্রা ছাড়িয়েছে সে। চড় না মেরে আদুরীয় গলায় শুধালে নিশ্চয় সত্য কথা বলতো! ফাহাদের এখন তার নিজের কপাল চাপড়াতে মন চাচ্ছে। একবার শুনা উচিৎ ছিল। আরভীক আনমনে বলে,
‘এখন আফসোস খেয়ে পস্তালে লাভ নেই। বসে বসে নাকে দুদু খাহ্।’
২৭.
জাফর সাহেব খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে ইনসার্চার রুমে বসে আছে। তার ফোন পুলিশ ইনসার্চের কাছে। সে তারই পাশে বসে লক্ষ করছে। পুলিশ ইনসার্চ মেসেজ আসা নাম্বারটি তাদের সিক্রেট ক্রিমিনাল সার্চ কোডিং এর মাধ্যমে খোঁজার প্রচেষ্টা করছে। লিয়াকত সাহেব কেবিনের বাহির থেকে বিষয়টা ঘোর নজরে দেখছে। তার কল্পনায় কিছু একটার জন্যে অশুভ আশঙ্কা করছে! সেই অশুভ আশঙ্কা সত্য না হওয়ার জন্যে তারা ফোনে মেসেজ দেওয়া ব্যক্তিকে খোঁজে বের করতে চাইছে। ইনসার্চ একটা কোড দিয়ে পুনরায় ফোনের নাম্বার ট্যাগ করে। ট্যাগ না হয়ে একটি লিখা সাজেস্ট টাইপ কিছু দেখা গেল স্ক্রিনে। ইনসার্চ ও জাফর সাহেব লিখাটি পড়ে।
ইনসার্চ খোশমনে শুধায়।
‘স্যার শিগ্রই ক্রিমিনালের কথা জেনে যাব। আরেকবার মেসেজ পাওয়ার অপেক্ষা করুন।’
জাফর নিশ্চিত মনে ফোনটি তাদের কাছে রাখতে বলে বেরিয়ে পড়ে। লিয়াকত সাহেবকে দেখে গলা জড়িয়ে লম্বা একটা শ্বাস ছাড়ে। তিনি জাফর সাহেবের উদাসীনতা দেখে শান্ত্বনার কণ্ঠে শুধায়।
‘চিন্তা করছস কেন বন্ধু! ওমন ছাইপাশ ছোকরা কিছুই করতে পারব না আমাদের সাথে।’
‘বন্ধু তুই জানস আমি চিন্তিত কোন বিষয়ে!’
‘কোন বিষয়ে!’
‘চার বছর আগে হওয়া দূবির্ষহ ঘটনাটা মনে আছে তোর।’
কথাটি লিয়াকত সাহেব শুনতেই তার বন্ধুর মুখ চেপে ধরে। আশপাশে চোরা চোখ বুলিয়ে ধীরস্থির ভাবে হাতটা সরায় তার মুখ থেকে। জাফর সাহেব আতঙ্কিত হলো না। বরং নিশ্চুপ হয়ে ছিল শুধু। তিনি তার বন্ধুর কাঁধে হাত বুলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘পুরোনো কথা তুলতে নেই। যা গেছে তা গেছে। নতুন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখ। তখন যা পাওয়ার ছিল তা পেয়ে শান্তি পেয়ে ছিলাম। অথচ পেতে কত কাঠখোড় না পুড়াতে হলো মনে নেই তোর।’
জাফর সাহেব গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝায়। লিয়াকত সাহেব তিক্ষ্ণ শ্বাস নিয়ে বলে,
‘তুই বল প্রথমদিনের মেসেজে কি লিখা ছিল!’
জাফর সাহেব উদ্দীপ্ত গলায় ঢোক গিলে ভীতি দৃষ্টি নিয়ে তাকায় লিয়াকত সাহেবের দিকে। তিনি নিজেও যে সাহসী মনভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা নয়। তিনিও ভেতরে ভেতরে ভীতিগ্রস্থ। তবুও বন্ধুর সামনে প্রকাশ করছে না। ভাব এমন যেন কেউই তাদের কিছু করতে পারবে না। জাফর সাহেব কপাল চুলকে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
‘মেসেজ ছিল, মনে পড়ে চার বছরের আগের কথা।’
লিয়াকত সাহেব শুনে ঘাবড়ে গেল। এর মানে যে ব্যক্তি মেসেজ করেছে সে অবশ্যই তাদের কারসাজির কথা লুকিয়ে প্রমাণ জমিয়েছে। এখন সেই প্রমাণের রেশ ধরে তাদের পাগল কুকুরের মত তাড়া করতে চাইছে। মনে মনে সেই ব্যক্তিটি নোংরা গালি দেই তিনি। সে তার বন্ধুকে সিটের মধ্যে বসিয়ে চোরা কণ্ঠে বলে,
‘শুন তুই ইনসার্চের কাছে ফোন দিয়ে বড় ভুল করছস।’
বন্ধুর কথার অর্থ বুঝে উঠেনি তিনি। কপাল কুঁচকে রাশভারী কণ্ঠে শুধায়।
‘ওয়াট ডু ইউ মিন!’
‘আব্বে হা’লা’র পু’ত তুই ফোনে কুকীর্তি লেইখা রাখস নাই। আবাইল্লা কথা জিগাস!’
চকিত দৃষ্টিতে তিনি উঠে দাঁড়ায়। আসলেই তার বন্ধুর বলা কথাতে সে ভুলেই গিয়ে ছিল। তার ফোনের গ্যালারি, ফাইল’স এ বিভিন্ন কুকর্মের ছবি,ডকুমেন্ট তৈরি করে সেভ রেখেছে। সে নিজেই যেন তার মরণ ডাকলো । লিয়াকত সাহেব তার বন্ধুর বাহু চেপে ধরে বলে,
‘জলদি যাহ্ দাঁড়ায় আছস কেন! ধরা খাইলে তুই, আমি বাকি সবাই মরবে।’
তিনি সময় বিলম্ব না করে ভেতরে যাওয়ার জন্য দরজায় নিজের আইডিকার্ড স্ক্যান করায়। স্ক্যান সফল হতেই দরজা খুলে যায়। আর তখনি প্রবেশ করতে নিলে তার কদম থেমে যায়। ভীতি,বিপদশঙ্কায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ অবস্থা। তার ফোন যে ইনসার্চের কাছে ছিল। সেই পিস্তল ঠেকিয়ে ধরেছে তার মুখোমুখি। জাফর সাহেবের পেছনে লিয়াকত সাহেব ইনসার্চের চোখের আড়ালে আয়নার কাঁচ দিয়ে লক্ষ করে। বিষয়টা ধামাচাপা দিতে হবে অন্য কেউ আসার পূর্বেই। না হলে বহু পূর্বের জমানো খেল নিমিশেষে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। ভেবেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল লিয়াকত সাহেবের। তিনি খুব সাংঘাতিক ভাবে পাশে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সিলিন্ডার হাতে নেই। ইনসার্চ তখনো লিয়াকত সাহেবকে খেয়াল করেনি। তার ধাঁরালো চোখের দৃষ্টিপাত জাফর সাহেবের উপর নিবদ্ধ। এ মানুষটিকে খুব ভদ্র,সুশ্লীল,সৎ মানুষ ভেবে ছিল সে। এ তো মানুষ নামে অমানুষ একটা। ইনসার্চ পিস্তল দেখিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
‘আ আপনি আম আমাদের সসুয়াইব স স্যারের খু খুনি!’
আতঁকে চোখ বড় হয়ে গেল জাফর সাহেবের। অতীতের দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে তার। মুখে বিশ্রী এক অমার্জিত ভয়ানক হাসি ফুটে উঠে। স্যারের হাসি দেখে ঘাবড়ে যায় ইনসার্চ। সে পিস্তল ধরে রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
‘এখনি আপনি সামনে ঘুরে চলুন! পিছু ঘুরলে একটা গুলিও আপনার কপাল ভেদ করে যাবে না। কি হলো যানন!’
কথাগুলো বলে ইনসার্চ জাফর সাহেবের পিঠ ধাক্কিয়ে সামনের দিকে ঘুরায়। ইনসার্চ সাবধানে জাফর সাহেবের ফোনটি নিয়ে পকেটে রেখে দেয়। এই ফোন এখন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হাতে সপে দেবে। সেখান থেকেই আসল খুনিকে তারা সাজা দেবে! জাফর সাহেবকে সামনে মোড়িয়ে রেখে ইনসার্চ তার চুক্ষগোচরে নিজস্ব ফোন দিয়ে ফাহাদকে মেসেজ দেয়।
‘ভাই যত জলদি পারস ইনসার্চ রুমের দিকে আয়। মনে আছে চারবছর আগে সুয়াইব স্যারের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। এর রহস্য জেনে গিয়েছি দোস্ত। হারিআপ ডুড!’
মেসেজ পাঠিয়ে ফোন পকেটে রেখে দেয়।
_______
আরভীক,ফাহাদ ও সায়াজ দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো বিল্ডিং এর সামনে। আরভীক তার গুপ্তচরের মাঝে জেনেছে হেডমাস্টারের মেয়েকে এই বিল্ডিংয়ের মধ্যে নিয়ে আনা হয়েছে। যেই না তারা এর সত্যতা কতটুকু প্রমাণ করতে প্রবেশ করবে। ক্ষণিকে থেমে যায় ফাহাদের পথচলা। আরভীক প্রায় সিড়ির কাছে পৌঁছে গিয়ে ছিল। সায়াজও সঙ্গে ছিল। কিন্তু ফাহাদকে না দেখে পিছু ঘুরে দেখে সে আশ্চর্যের দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আরভীক ভ্রু কুঁচকে তার নিকট গেল। পিঠে হাত রেখে বলে,
‘এনি প্রব্লেম ডুড!’
‘সুয়াইব স্যার!’
চমকিত কণ্ঠে বলে ফাহাদ। সে নিজেও জানতে চাই খুনি কে! ইনসার্চ রুমে কাজরত ইনসার্চম্যান তার বেস্ট কলিগ হয়। শুধু কি তার ! সে,সুয়াইব,সায়াজেরও বেস্ট কলিগ ছিল। তার মেসেজ দ্বারা প্রমাণ সে বিপদে আছে। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। তার কণ্ঠ, পুরু শরীর ক্রমান্বয়ে কাঁপছে। আরভীক স্তদ্ধ। তার নড়চড় না দেখে ফাহাদ তার কাঁধ নাড়িয়ে দেখে। এতে ক্ষণিকে তার স্তদ্ধতা কেটে যায়। ‘সুয়াইব’ নামটা তার মস্তিষ্কের ইন্দ্রিয়জোড়া দূর্বল করে দিচ্ছে। নামটা তার কাছে ঝাঁপসা জানা পরিচিত মনে হচ্ছে! হ্যাঁ, সে শুনেছে তার ধারণা অপরিকল্পিত হতে পারে না। সে শুনেছে নামটা! এই কি সেই সুয়াইব যে মিস আবানের হাজবেন্ড!
‘মিস আবানের হাজবেন্ড’ কথাটি ভাবনায় আসতেই মাথা ঝিম ধরে গেল আরভীক এর। জীবনে কোনো মেয়েদের সাথে ওত ফাজলামি করেনি সে। যতটা মিস আবানকে পেয়ে করছে, হয় হেসেছে না হয় মজার ছলে মেয়েটিকে রাগিয়েছে। কিন্তু সে তো বিবাহিত ! এ বাস্তব সত্যতা তার মনে বিশেষরুপে প্রভাব ফেলছে। আমতা আমতা করে ফাহাদকে জিজ্ঞেস করে।
‘সসুয়াইব কে!’
‘আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বেস্ট লয়াল অফিসার। কিন্তু একরাতে কার এক্সিডেন্টে তার মৃত্যু হয়ে যায়। বলতে পারিস অকালে ঝরে পড়ে ছিল। ওহ হে সে বিবাহিত ও তার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট ছিল মনে হয়। সে একবার তার খুশির উপলক্ষে আমাদের ট্রিট দিয়ে ছিল। তবে কখনো তার বউবাচ্চাকে দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনি। নানান মিশন হাতের নাগালে চলেই আসতো।’
ফাহাদ তার ফোন পকেটে রেখে তড়িঘড়ি আরভীক এর কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘ডুড তুই এখানেরটা সামলে নেস। আমি আসব। এখন ইনসার্চ বলছে সে সুয়াইব ভাইয়ের মৃত্যুর রহস্য জেনেছে। তাই আমার যেতে হবে। আমাকে ডাকছে।’
আরভীক মুচকি হেসে তার কাঁধে রাখা হাতটি চেপে আশ্বস্ত নয়নে যেতে বলে। ফাহাদ চলে গেলে পিছ থেকে সায়াজ বলে,
‘চল ডুড ভালিকা বাকড়া আমারী হওয়া লাগব আরকি।’
সে হেসে সায়াজের সঙ্গে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠা আরম্ভ করে। ইতিমধ্যে বিল্ডিংয়ের সামনে শব্দহীন পুলিশের গাড়ি এসে থেমেছে। এর ব্যবস্থা ফাহাদই করে ছিল। সে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তেই থানায় থাকা কনস্টেবলকে আসতে বলে ঠিকানা তাদের ফোনে মেসেজ করে দেয়।
২৮.
আনজুমা নাক টানছে আর কাঁদছে। আশফি অবুঝের মত টিস্যু পেপার তার মায়ের দিকে একেকটা এগিয়ে দিচ্ছে। তার মন চাইছে মাকে উচ্চস্বরে বলতে যে, ‘মা কেঁদো না। এত ছিদকাদুঁরে মা কেনো তুমি হুম!’
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
কিন্তু মনের কথা সাজিয়ে বলতে পারে না আশফি। আদু আদু কণ্ঠে মায়ের বুকের উপর শুয়ে বলে,
‘মাম্মা কি হতে!’
‘কিছু না পাপা তুমি ঘুমাও। পেটভরা না ঘুমিয়ে যাও আমি তোমার মাথায় বিলি কেটে দেই।’
আনজুমা একহাতে আশফির মাথায় বিলি কাটছে অন্যথায় রাগে ফুলছে। তার সাথে রুড বিহেভ করে যেন আরভীক ঠিক করেনি। এর শোধ সে নিবিড়ভাবে নেবে। তাও কেমনে ঐ ‘শ্রেয়া’ নামের মেয়ের চাওয়া পূর্ণ করে। কথাটি ভেবে পৈশাচিক হাসি দিল সে। আজ পর্যন্ত গলা উঁচিয়ে কথা শুনে আসলেও রাগের মাথায় তার ফোনকে উপেক্ষা করে কেটে দেওয়া এমনটা কেউ করেনি। তার উপর রেগে কথা বলাটা বেশ ইগো হার্ট করেছে তার। বেশ আত্মসম্মান প্রখর। ফোন কাটবে তো শালীনভাবে কথা শেষ করে কাটুক। ওমনেই কট করে কেটে দেবে নাকি!
এর শোধ না নিলে তার মন আকুপাকু করতে থাকবে। মনে মনে আরভীক এর চেহারাটা ভেবে পৈশাচিক কণ্ঠে বলে,
‘এতদিন খুব ফাজলামি করছেন! এবার পালা আমার। নিষেধ করছেন না দেখেন আমি সেই নিষেধের মাইরে বাপ করে দেব কালকে হাহ্।’
সে ফোন বের করে ‘শ্রেয়া জাফর’ এর নাম্বারে মেসেজ দেয় যে, ‘ম্যাম আপনি প্রডাক্ট’স নিতে কাল আসুন।’
ফোনটি ড্রয়ারের উপর রেখে চোখ বুজে নিল। মেয়েটির প্রডাক্ট’স নেওয়ার ব্যাপারটা ও তার নাম্বার দিয়ে ছিল তারই এসিস্ট্যান্ট রাজিব নামের ছেলেটি।
কাজ সম্পূর্ণের দ্বায়ে আনজুমা তৎপর হলেও সে কাজ সফলতা বয়ে আনবে।
না, কোনো বড় সুনামি জীবন এলোমেলো করে দেবে।
চলবে…..
(গল্পটা কি পছন্দ হচ্ছে না। রেসপন্স খুব কম কেনো🥺)