পথ_হারা_প্রজাপতি(২) #Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

0
330

#পথ_হারা_প্রজাপতি(২)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সাফিরা, অবস্থা বেগতিক দেখলে এক দৌড় দিবে বলে ঠিক করে নেয় মনে মনে। এদিকে কটমট করে এগিয়ে আসে রাযীন!
যেই না সাফিরা দৌড় দিতে উদ্যত হয় অমনি পড়ার টেবিলের একপাশে লম্বা হাত রেখে পথ আটকে দাঁড়ায়! ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় সাফিরা। জানে না আজকে তার কপালে কি আছে? কেন যে ফটর ফটর করতে গেল? এখন সব ঘুম চোখ থেকে উধাও হয়ে গেছে। একটু আগে উধাও হলে কি এমন ক্ষতি হতো ঘুমের? সব দোষ ঐ ঘুমের, তা না হলে কি সে অমন কথা বলতে পারতো?

দাঁতে দাঁত চেপে রাযীন বলল,
–” খুব সাহসী হয়ে গেছিস দেখছি! আমার মুখে উপর কথা বলতে দুবার ভাবলি না? আমি ঠিক কি করতে পারি ভুলে গেছিস?
সাফিরা দৃষ্টি নামিয়ে নরম গলায় বলল,
–” দুঃখিত ভাইয়া, আমি আসলে ঘুমের জন্য এগুলো বলে ফেলছি। আর কখনো এমন ভুল হবে না।
টেবিল থেকে হাত সরিয়ে একটু দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে রাযীন বলল,
–” আজকে যদি আমি তোকে ছেড়ে দেই তাহলে দ্বিতীয়বার আবারো ভুল করবি তাই আজকে তোর শাস্তি উমমম, একটু ভেবে বললো,
তুই চেয়ারে বসে ঘুমাবি।

তারপর পুনরায় ফোন হাতে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে রাযীন! দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসে পড়ে সাফিরা। এটা আজকে নতুন না এরকম শাস্তি প্রায়ই পেতে হয় তাকে! তাই আজকে আর কান্না পেল না একটু হাসিই আসলো। ভেবেছিল এর থেকেও কঠিন শাস্তি দিবে রাযীন।

আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত চারদিক। সাফিরা পড়ার টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। রাযীনের ঘুম ভেঙ্গে যায় আজানের ধ্বনি কানে পৌঁছাতে। হাই তোলে উঠে বসে, কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল সোফায় তার মানে নেই। সামনে তাকাতে দেখে সাফিরা পড়ার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। যাওয়ার সময় দরজা অনেক শব্দ করে লাগিয়ে যায়, যার ফলে সাফিরার ঘুম ভেঙে যায়। মাথা তুলে তাকিয়ে আশেপাশে দেখতে পায় রাযীন নেই। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে বুঝতে পারেন রাযীন মসজিদে গিয়েছে।
সাফিরা ও উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে ফজর নামাজ পড়ে নেয়। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
আরাম স্থান পেয়ে নিমিষেই ঘুম চোখের পাতায় নেমে আসে।
.
.
সকাল বেলা রাযীন অফিসে যাওয়ার সময় আফরোজা বেগম বললেন,
–” তোর সাথে সাফিরা কে নিয়ে যা। ওর কলেজের পথ দিয়েই তো যাবি, নামিয়ে দিস।
রাযীন ফোনে দৃষ্টি রেখেই বলল,
–” আমরা পায়ে হেঁটে কলেজে গিয়েছি আর ওর প্রাইভেট কারে করে যেতে হবে? রিক্সা করে চলে যেতে বলো।
এই বলে বেড়িয়ে যায় রাযীন। আফরোজা বেগম মন খারাপ করে পিছনে ফিরলে দেখতে পায় ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাফিরা। আফরোজা বেগম বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলেন,
–” হাসছিস কেন?
–” তোমার কান্ড দেখে হাসবো না তো কাঁদবো? খালামনি। আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো যেন তোমার ছেলের মনে ধরে আমাকে। অথচ ফলাফল সেই শূন্যের কোঠায়। প্লিজ খালামনি এরকম করো না। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আল্লাহ ভরসা এই নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না আমি। তুমিও দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করো।

রাযীন গাড়িতে উঠবে তখন দেখে তামান্না গাড়িতে বসে আছে! রাযীন কে দেখে আমতা আমতা করে বলল,
–” ভাইয়া আমাকে একটু কলেজে নামিয়ে দিবেন প্লিজ?
তামান্না কে দেখে আবারো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল রাযীনের। চাপা রাগের গনগনে গলায় বলল,
–” কার পারমিশন নিয়ে গাড়িতে উঠেছিস তুই?
নাম বলছি!
তামান্না ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে যেই গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখন সাফিরা বাড়ির মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে আসে। রাযীন সাফিরা কে দেখতে পেয়ে তামান্না কে বলল,
–” গাড়িতে বস আমি কলেজে নিয়ে যাব!
তামান্না হতভম্ব হয়ে ঠিক হয়ে বসে, সাফিরা কে দেখতে পায়নি সে। তারপর রাযীন সামনে ড্রাইভারের সাথের সিটে বসলে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দেয়।
পিছন থেকে সাফিরা দেখলো রাযীন তামান্না কে তার গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ তার বেলায় বলল, রিক্সায় করে যেতে। যা সাফিরার মনে অনেক কষ্ট দিল। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে রিক্সাওয়ালা মামাকে হাতে ইশারা দিয়ে বলল,
–” মামা যাবেন?
রিক্সাওয়ালা মামা বললেন,
–” ক‌ই যাইবেন?
–” তো… কলেজ।
–” হ যামু।

এদিকে দুটো গলি পেরিয়ে গাড়ি থামিয়ে তামান্না কে নামতে বলে রাযীন! তামান্না আবারো কিছু বুঝতে না পেরে বসেই থাকে গাড়িতে। রাযীন ধমকে উঠলে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামে তামান্না।
রিক্সায় করে চলে যা বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায় রাযীন! ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে রাস্তার মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে তামান্না। তার সাথে আজকে কি হচ্ছে এসব? কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিল আজকে? পিছন থেকে রিক্সার হর্ন দিয়ে যাচ্ছে, তামান্না মাঝ রাস্তা থেকে সরছে না বলে রিক্সার ড্রাইভার বললেন, কি আফা আর কোন গাড়ি খুইজ্জা ফাইলেন না রিক্সার নিচে নি মারতে আইছেন?
নিজেকে সামলে নিয়ে রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তামান্না। তারপর সাফিরার কথা মনে হতেই অন্য গলিতে ঢুকে যায়। কেননা সাফিরা যদি তাকে রাস্তায় দেখতে পায় তাহলে বুঝে যাবে রাযীন তাকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে। যা তার কাছে খুবই লজ্জার হবে।

কলেজে পৌঁছে ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে সাফিরা। ক্লাস শুরু হতে আরো দশ মিনিট বাকি। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো তামান্না কে কলেজ গেইট দিয়ে ঢুকতে। তামান্না আর সাফিরার ডিপার্টমেন্ট আলাদা তাই তামান্না তার ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেল। সাফিরা মনে মনে ভাবলো রাযীন হয়তো তামান্না কে গাড়ি করে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল। তা না হলে সাফিরার আগে তামান্নার পৌঁছানোর কথা কলেজে।

সাফিরা ভুলে গিয়েছে কারো প্রতি কখনো খারাপ ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। মানুষের প্রতি যে কোনো বিষয়ে ভালো ধারণা পোষণ করা উত্তম ইবাদতের সমতুল্য। কুরআন এবং হাদিসে মানুষের প্রতি খারাপ বা মন্দ ধারণা পোষণকে গোনাহের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ কোনো কোনো ধারণা পাপ। আর তোমরা একজন অন্যজনের গোপনীয় বিষয়ে খোঁজ নিও না। আর একজন অন্য জনের গিবত করো না। [১]
অযথা কারো প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে গোনাহগার হওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে উপদেশই দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ ধারণাভিত্তিক কথা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান করো না। আর তোমরা একে অপরের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। এবং পরস্পর শত্রুতা ও দুশমনি পোষণ করো না।

পরক্ষনেই মনে কুরআন এবং হাদিসের কথা মনে হতে নিজেকে বকা দিয়ে, মনে মনে আল্লাহ তাআলা কাছে মাফ চেয়ে নিল সাফিরা।
.
.
রাযীন আর তার কলিগ বন্ধু মিনহাজ একসাথে ক্যান্টিনে বসে। চাকরির সুবাদে দুজনে খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে এক সময় মিনহাজ বলল,
–” বয়স তো কম হচ্ছে না আর কতদিন এভাবে থাকবি? হয় মেয়েটাকে ছেড়ে দে নয়তো মেনে নে! এভাবে তো আর জীবন চলবে না। মেয়েটার ও তো একটা ভবিষ্যত আছে। তোর জন্য তো মেয়েটা আটকে আছে!

রাযীন কোক পান করছিল মিনহাজ এর কথায় থেমে গিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
–” আটকে আছে মানে?

আজকে সকাল বেলা মিনহাজ যখন অফিসের জন্য বাসা থেকে বের হয় তখন আফরোজা বেগম কল করে মিনহাজ কে সুপারিশ ধরে। রাযীন কে যেন সে একটু বুঝায়। তাই এসব কথা তুলে মিনহাজ।
মিনহাজ কে চুপ করে থাকতে দেখে রাযীন নিজেই বলে,
–” মেয়েটা নিজের প্রয়োজনে আমাদের বাড়িতে আছে। কেউ তাকে আটকে রাখেনি। ওর মুখের দিকে তাকালে ওর সেই ন*ষ্ট বোনের কথা মনে পড়ে যায় আমার!….

#চলবে ইনশা আল্লাহ

রেফারেন্স:-
[১] (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here