পথ_হারা_প্রজাপতি(৪) #Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

0
333

#পথ_হারা_প্রজাপতি(৪)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

নিজের রুমে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সাফিরা। এই দুনিয়ায় তার মা-বাবা, বোন কেউ র‌ইলো না। আর কে আছে তার মতো এমন অভাগী? মা বাবা বোন সবার কত্ত আদরের ছিল সাফিরা অথচ আজকে অন্যের বাসায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। তার জীবনটা তো এমন হ‌ওয়ার কথা ছিল না। এগুলো যত‌ই ভুলে থাকতে চায় ততোই কেউ না কেউ মনে করিয়ে দেয়। মানুষ গুলো কি বুঝে না? সাফিরার বড্ড কষ্ট হয়। মানুষ গুলো এতো নিষ্ঠুর কেন?

ফ্লোরে বসে খাটের উপর মাথা রেখে অঝোরে কাঁদছে সাফিরা। কাঁদতে কাঁদতে একসময় চোখের পানি শুকিয়ে আসে। কিন্তু ওভাবেই বসে থাকে। দশ পনেরো মিনিট পর পেয়ারা মাখা খাওয়ার জন্য আফরোজা বেগম এসে দরজা করাঘাত করে কিন্তু সাফিরা কোন সাড়া শব্দ করে না। তাই আফরোজা বেগম ভাবলেন সাফিরা বোধহয় ঘুমিয়ে আছে সে জন্য তিনি আর বেশি ডাকাডাকি করলেন না।
এর ঘন্টা খানেক পর ফোনের রিং টোন শুনে মাথা তুলে সাফিরা। ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার বান্ধবী মিম কল করেছে। কলেজ জীবন থেকে মিমের সাথে পরিচয় সাফিরার। দু’জন খুবই ভালো বান্ধবী। কলেজ শেষে এক‌ই কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছে তারা যেন একসাথে পড়াশুনা করতে পারে সে জন্য। মিমের মা খুব আদর করে সাফিরা কে। যাই হোক কল রিসিভ করে সালাম দেয় সাফিরা।
সালামের জবাব দিয়ে মিম বলল,
–” জানিস আমার জন্য মামা একটা বিয়ের ঘর এনেছেন। কিন্তু পাত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে আমার পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু আমি আম্মুকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। আচ্ছা তুই একটু আম্মুকে বুঝিয়ে বলবি? আমি জানি আম্মু তোর কথা শুনবে ইনশা আল্লাহ। কিরে তুই কিছু বলছিস না কেন?
–” হুম।
–” কি হুম?
–” আচ্ছা ঠিক আছে।
–” সাফি তুই কি আবারো কান্না করেছিস?
সাফিরার কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারে মিম। নিশ্চয়ই সাফিরা কান্না করেছে। তাই উদগ্রীব হয়ে উঠে জিজ্ঞেস করে কেন কান্না করেছে? কেউ কিছু বলেছে নাকি অতীতের কথা মনে করে কাঁদছে সাফিরা? উত্তরে সাফিরা কিছু বলে না। এই সময় গুলোতে কাছের মানুষজন যদি এসে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? তাহলে আরো বেশি কান্না চলে আসে। তাই সাফিরা কান্না দমাতে ঠোঁট কামড়ে চুপ করে রইলো। মিম বুঝতে পারে তাই বলল,
–” এই বিশাল পৃথিবীটা যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তোর সামান্য কষ্ট গুলো মুছে দিতে পারবেন না? অবশ্য‌ই পারবেন। আল্লাহ তাআলার উপর থেকে আস্থা, বিশ্বাস হারাবি না একদম। একদিন দেখবি ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পারবেন, তখন তোকে মেনে নিবেন।
কোরআন আছে,
হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন। [১]
তাই আল্লাহ তাআলার কাছে চাইতে থাক নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কাউকে নিরাশ করেন না। যখন তোর দুঃখগুলো ভুলিয়ে দিবেন তখন তুই নিজেই বলবি, হে আল্লাহ, আমি তো কখনো আপনাকে ডেকে ব্যর্থ হইনি।
আচ্ছা সাফি দুপুরের খাবার খেয়েছিস?
সাফিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–” গোসল করে নামায পড়বো। আমার জন্য দুআ করিস। এখন রাখি পরে কথা বলবো ইনশা আল্লাহ।
–” আচ্ছা আচ্ছা তাড়াতাড়ি যা।
আসসালামু আলাইকুম।
–” ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
.
.
করিম সাহেবের বড় বোন জাসমিন, তার ছোট মেয়ের বিয়ে। জাসমিন এক সপ্তাহ আগে, একমাত্র ভাই এবং তার পরিবারকে চলে যাওয়ার জন্য বললেও রাযীনের অফিস এবং ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা ক্ষতি হবে ভেবে করিম সাহেব বোনকে কথা দিয়েছে, আল্লাহ চাহেতু বিয়ের দু’দিন আগে যাবে। আর তাই রিমা বাপের বাড়ি চলে এসেছে একসাথে সবাই যাবে বলে।
আজকে সেই দিন। আফরোজা বেগম সবাইকে তাড়া দিচ্ছেন তৈরি হ‌ওয়ার জন্য। ধীরে ধীরে সবাই তৈরি হয়ে ডয়িং রুমে চলে আসে। মেয়েরা সবাই পরিপূর্ণ পর্দা করলেও তামান্না বোরকার সাথে ফ্যাশনেবল হিজাব পরেছে যা দ্বারা পরিপূর্ণ পর্দা হয় না। প্রথম প্রথম করিম সাহেব আর আফরোজা বেগম তামান্না কে বুঝাতেন পরিপূর্ণ পর্দা করার জন্য। কিন্তু তামান্না নাছোড়বান্দা কথা শুনে না তাই আল্লাহ তায়ালার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কাউকে হেদায়েত দান না করলে সাধ্য নেই কারো দ্বীনের পথে আনার। তবে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। যাই হোক বিয়ে বাড়িতে তারা গিয়ে দুপুরে পৌঁছায়। যোহরের নামায আদায় করে খাওয়া দাওয়া করে নেয়। তারপর বড়রা নিজেদের মতো কথাবার্তা বলে, মেয়েরা মেয়েদের মতো করে মজা করে। তবে যাই করে না কেন ইসলামের পরিপন্থী হবে এমন কিছু যেন না হয় তা বড়দের আদেশ।

দুই দিন যাবত সাফিরার মন ভালো নেই এরমধ্যে বিয়ে বাড়ি এসেছে। সারা বাড়ি জুড়ে মেহমানদের সমাগম। গ্রামের বাড়ি বলে আশেপাশের লোকজন ও এসেছে, বৃদ্ধদের পান সুপারি দেওয়া হয়েছে তারা আরামে খাচ্ছেন আর কথাবার্তা বলছেন। তাই সাফিরা একটু নিরিবিলি পরিবেশে থাকার জন্য ছাদে গিয়ে বসে থাকে একাকী। রাতের বেলা জোছনার আলোয় আলোকিত হয়ে আছে ছাদ। চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল লাগছে সাফিরা মুখশ্রী। এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সাফিরা। পিছনে রাযীন এসে দাঁড়ায় কিন্তু সাফিরা তা টের পায় না। সাফিরা কে দেখতে পেয়ে কি করবে ভেবে পায় না রাযীন। এখানে রাযীনের সমবয়সী কোন ছেলে নেই যে তার সাথে সময় কাটাবে। সে জন্য ছাদে আসে রাযীন। কিন্তু সাফিরাকে দেখতে পেয়ে ছাদের দরজার কাছেই থেমে ভাবতে থাকে কি করবে?

কিছুক্ষণ ভেবে সামনে এগিয়ে যায়। পিছন থেকে বলে কিরে ফাঁকিবাজ! রাতের বেলা একা একা এখানে কি করছিস? বিয়ের উসিলায় তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিস একদম।
হঠাৎ কারো কথা শুনতে পেয়ে ভয়ে লাফিয়ে উঠে সাফিরা। বুকে হাত দিয়ে ধম নিতে শুরু করে। বুকে স্পষ্ট ধুকপুকুনির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
সাফিরা কে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাযীন আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে ত্যারা চোখে তাকিয়ে বলল,
–” কিরে কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছে?
সাফিরা ছোট করে বলল,
–” ভয় পেয়েছি।
–” কেন?
–” আপনি হঠাৎ এসে কথা বলায়।
তখন আকস্মিক সাফিরার গালে হাত রেখে রাযীন বলল,
–” তুই দেখছি ভীতুর ডিম!
রাযীনের এমন স্পর্শে কেঁপে উঠে সাফিরা। ছিটকে দূরে সরে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে আটকে রেখেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রাযীন শুকনো কাশি দিয়ে ছাদের অন্য পাশে চলে যায়। এই সুযোগে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে যায় সাফিরা। সাফিরার যাওয়ার শব্দ শুনে সেদিকে তাকায় রাযীন। নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব সে।
.
.
বিয়ের দিন,
ছেলেরা ছেলেদের মতো আর মেয়েরা মেয়েদের মতো করে সাজতে ব্যস্ত। একদিকে ব‌উকে সাজানো হচ্ছে। অন্যান্য মেয়েরা রঙিন পোশাক পরে হিজাব নিকাব পরলেও সাফিরা বোরকার সাথে ছয় পার্ট হিজাব, নিকাব পরে। রুমের এক কোনায় বসে থেকে বৌয়ের সাজানো দেখছে সে। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় নামেরা কে কোলে নিয়ে সময় পার করছে সাফিরা। বিয়ে বাড়ি এসে রিমা নিশ্চিন্তে মজা করছে কারণ খাওয়া আর ঘুমের সময়টা বাদ দিয়ে নামেরা সাফিরার কাছেই থাকছে। সাফিরার ও বোরিং লাগছে না নামেরার জন্য।

বরযাত্রী আসার পর তাদের আপ্যায়নের তদারকি করছে রাযীন। তাদের কি প্রয়োজন তা হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে। তার বড় ফুফির বড় ছেলে নেই। তাই ফুফাতো বোনের মামাতো ভাই হিসেবে সেই দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে রাযীন কে সাহায্য করার অজুহাতে তামান্না তার পিছুপিছু ঘুরছে! একেই তো কীসব সাজগোজ করেছে পর্দার “প” ও নেই তার‌উপর রাযীন কে বিরক্ত করছে। এক সময় রাযীন সহ্য করতে না পেরে তামান্নার হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে! হাত খুব শক্ত করে ধরায় তামান্না ব্যাথা পেয়ে বলল,
–” ভাইয়া ছাড়েন আমার খুব লাগছে।
কিন্তু তামান্নার কথা পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে রাযীন।….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

রেফারেন্স:
(১) [সুরা বাকারা : ১৫৩]

(আসসালামু আলাইকুম।
গল্পটা সম্পূর্ন ইসলামের ধাঁচে লিখার চেষ্টা করছি। তাই আমার কোন ভুলত্রুটি হলে মার্জিত ভাষায় ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here