#পথ_হারা_প্রজাপতি(৫)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)
বাম দিকে কোনায় একটা ছোট রুম আছে যেখানে রাযিনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তামান্না কে রুমে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় রাযীন! তামান্নাকে আজকে একটা শিক্ষা দিবে বলে ঠিক করে নেয় রাযীন। এর আগেও অনেকবার সাবধান করেছে কিন্তু তামান্না শুনে নাই। তাই আজকে এর বিহিত করবেই।
তামান্না ভেতর থেকে দরজায় অনেক ধাক্কাতে থাকে রাগে দুঃখে কান্না করে বলতে থাকে, ভাইয়া আমি আর এরকম করবো না। দরজাটা খুলে দিন প্লিজ? তামান্নার দরজা ধাক্কানো আর আর্তনাদে ছোট বাচ্চারা চলে আসে। তখন রাযীন তাদের বলল,
–” তোমাদের একটা কাজ দিলে করতে পারবে?
বাচ্চা গুলো কিছু বুঝতে না পেরে ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর যে ছেলেটা সবার বড় সেই ছেলেটা বলল,
–” কি কাজ? ভিতরে কে আছে? দরজা খুলে দেই?
রাযীন কাছে গিয়ে বসে বলল,
–” ভিতরে একটা দুষ্টু মেয়ে আছে। আমাকে খুব বিরক্ত করে সে জন্য বন্দি করে রেখেছি। তোমরা দেখবে কেউ যেন দরজা খুলে না দেয়। ঠিক আছে?
ছেলেটা মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। তারপর রাযীন বলল,
–” তোমরা চকলেট পছন্দ করো?
পিছন থেকে ছোট মেয়ে বলল,
–” আমি চকলেট খাব।
–” আচ্ছা ঠিক আছে বিয়ে শেষে আমি তোমাদের সবাইকে চকলেট কিনে দিব ইনশা আল্লাহ।
তারপর রাযীন পুনরায় গিয়ে বিয়ের কাজে মনোযোগী হল।
বিয়েতে আগত অতিথিদের খাওয়া দাওয়া তারপর বিয়ে, কনে বিদায় সবকিছু মিলিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই সম্পূর্ণ হয় আলহামদুলিল্লাহ। মাগরিব নামায পড়ে বড়রা যখন ফ্রি হয়ে বসে চা নাস্তা খাচ্ছে তখন তামান্না ছাড়া পেয়ে বসার ঘরে ছুটে আসে। অবস্থা তার করুন। সাজগোজের দশা খারাপ। চোখের কাজল লেপ্টে, কান্না করে ফুলিয়ে ফেলেছে। তামান্নার মা দৌড়ে এসে মেয়ে ধরে আর্তনাদ শুরু করেন। মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয়েছে মুহুর্তেই ভেবেনিলেন। মানুষের মন সেকেন্ডের মধ্যেই কতো শত ভালো মন্দ কথা ভেবে ফেলে সেই জানে।
তামান্নার বাবা এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–” কি হয়েছে মা? কোথায় ছিলি তুই? কতোবার তোকে এদিক ওদিক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। ভাবলাম বিয়ে বাড়ীতে কোথাও হয়তো আছিস, আনন্দ করছিস তাই অতো মাথা ঘামায়নি।
তামান্না তার মা’কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। যার কারণে রুবিনা বেগম আরো ভয় পেয়ে গেলেন। উত্তেজনা হয়ে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?
তামান্না কান্নাজড়িত কন্ঠে রাযীন ভাইয়া বলে আবার কান্না করা শুরু করলো।
সবাই রাযীনের নাম শুনে হতবাক। তখন পিছন থেকে রাযীন এসে দাঁড়ায়। সবাই রাযীনের দিকে তাকিয়ে থাকে। করিম সাহেব উঠে গিয়ে তামান্না কে জিজ্ঞাসা করে কি করেছে রাযীন? পিছন থেকে রাযীন বলল,
–” আমি বলছি।
তারপর তামান্না কিভাবে বিরক্ত করে রাযীন কে সেসব কথা বলে আজকের সবটা বলল রাযীন।
সবকিছু শুনে তামান্নার বাবার লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেল। আজকে মেয়ের কারণে এতোটা লজ্জায় পড়বেন ভাবতেও পারেন নাই তিনি।
রুবিনা বেগম রাগ সামলাতে না পেরে মেয়ের গালে সজোরে থাপ্পর দিলেন। আরো দিতে গেলে আফরোজা বেগম গিয়ে ধরলেন। রুবিনা বেগম কে দূরে সরিয়ে নিলেন। তামান্না গালে হাত দিয়ে, মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
জাসমিন বেগমের স্বামী মানে রাযীনের বড় ফুফা বসা থেকে উঠে এসে সবাইকে শান্ত হতে বললেন।
তারপর তিনি সবাইকে বসতে বলে তামান্নাকে ও বসতে বললেন। তারপর ইসলামের রেফারেন্স দিয়ে বললেন,
–” আল্লাহ্ তায়ালা সূরা নুরে বলেন, আর মুমিন নারীদেরকে বল, “তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে” এবং “তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে”। আর “যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না”। “তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে”।
আর “তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। আর “তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে”। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [১]
উপোরুক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা নারীদের কে কিছু নীতিমালা দিয়েছেন যেগুলো সবগুলোই সামাজিক আমরা কথা বলব ঘরের বাহিরে পর্দা নিয়ে। আয়াতে হিজাবে ও বোরকার ব্যাপারে কিছুই বলেনি। বরং আল্লাহ্ তায়ালা ঘরের বাহিরে পর্দার ব্যাপারে বলেছেন “যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না” এবং বলেছেন “তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে” দুটি কথায় সহজে বুঝতে পারা যায় নারীদেরকে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশে নিষেধ করা হয়েছে, সুতরাং ঘরের বাহিরে নিজের সৌন্দর্যকে আবৃত করে তারপর বের হওয়া আর তাদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখার নামই পর্দা। তাই মা পর্দা মেনে চলো, এই দুনিয়া কিছুই না। আমাদের সকলকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে কাজেই মৃত্যুর পূর্ব প্রস্তুতি নিতে আমাদের ইসলামের সকল বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আজকে তোমার কারণে তোমার বাবা মায়ের মাথা নিচু হয়েছে তাই তোমার বাবা মায়ের কাছে মাফ চেয়ে বলো, আর কখনো এমন কাজ করবে না যে কাজে আল্লাহ পাক নারাজ হন। তোমার বাবা মায়ের মাথা নত হয়।
অতঃপর তামান্না নিজের ভুল বুঝতে পেরে মা বাবার কাছে মাফ চেয়ে নেয়। আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করে নেয়।
.
.
রাযীন আর এখানে থাকলো না, বিয়ের পরের দিনেই চলে গেল নিজেদের বাড়ি ঢাকায়। বাকিরা মেয়েকে শশুর বাড়ী থেকে নিয়ে আসা পর্যন্ত থাকবে।
বিয়ের জন্য অফিস থেকে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছিল রাযীন। কিন্তু ছুটি শেষ হওয়ার আগেই যখন অফিসে গেল।
লাঞ্চ আওয়ারে মিনহাজ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–” কিরে মানুষ ছুটি চেয়েও ছুটি পায় না আর তুই ছুটি শেষ হওয়ার একদিন আগেই চলে এসেছিস? ব্যাপার কি? বিয়ে ঠিকঠাক মতো সম্পূর্ণ হয়েছে তো?
–” হুম বিয়ে ঠিকঠাক মতোই হয়েছে।
–” তাহলে চলে এলি কেন?
তামান্নার ব্যাপারটা সবটা বলে রাযীন বলল, তাই আর ওখানে থাকতে ইচ্ছা করে নাই।
মিনহাজ সবটা শুনে বলল,
–” আচ্ছা তোর যে বউ…
বউ কথাটা বলতেই রাযীন কেমন করে তাকালো মিনহাজ এর দিকে। তাই মিনহাজ বলল,
–” মানে তোর খালাতো বোন। উনি ও কি পর্দা করেন?
রাযীন শান্ত স্বরে বলল,
–” হুম।
–” তোর সামনে ও করে?
রাযীন খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল,
–” না।
–” কেন করে না?
খাবার খাওয়া থামিয়ে রাযীন বলল,
–” ও আমার বিয়ে করা বউ! ও কেন আমার সামনে পর্দা করবে?
মিনহাজ মুচকি হেসে বলল,
–” তাহলে মানছিস ও তোর বিয়ে করা বউ?
জবাবে রাযীন কিছু বলল না, চুপ করে খাওয়াতে মনোযোগ দিল।
খাবার খাওয়া শেষে মিনহাজ আবার বলল,
–” তুই মানিস আর নাই মানিস উনি তোর বিয়ে করা বউ। আজকে তোর ফুফাতো বোন তোর সামনে বে-পর্দায় ঘুরে বেড়ায় বলে তোর রাগ হচ্ছে অপরদিকে তোর খালাতো বোন সেও তোর সামনে বে-পর্দায় ঘুরে বেড়ায় সেটা তোর কাছে মোটেও খারাপ লাগছে না তাই বুঝা যায় এটাই হালাল সম্পর্কের পাওয়ার বুঝলি?
রাযীন আগে কখনো এভাবে ভেবে দেখেনি। তাই এখন চুপ করে বসে রইলো। তারপর যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরলো তখনো তার মাথায় এসব ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। রাতে ঘুম ও ঠিকঠাক মতো হলো না।
এর দুদিন পর বাসার সবাই ফিরে এলো। সাফিরা কে পড়ানোর মাঝে মাঝে রাযীন তাকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলো…..
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।
রেফারেন্স:
(১) (সূরা আন-নূর-৩১)