পদ্মফুল #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা |১৩|

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৩|

কিছুক্ষণ আগে আদিদ বেরিয়ে গেছে। রুবি হোসেন তাকে খুব করে বলছিলেন, দুপুরের খাবার খেয়ে বেরুনোর জন্য কিন্তু তার তাড়া ছিল ভীষণ, তাই সকালের নাস্তা কোনোরকমে খেয়েই বেরিয়ে পড়লেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
পদ্ম হাতে কফির মগ’টা নিয়ে নিজের রুমে ফিরে এলো। নিচে তখন ও রুবি হোসেন আর আকবর সাহেব বসে কথা বলছিলেন আর কফি পান করছিলেন। রুবি হোসেন যদিও পদ্ম-কে উনাদের সাথে বসে গল্প করতে বলেছিলেন কিন্তু পদ্ম’র কাছে আকবর সাহেবের ঐরকম ঘুরঘুর করে তাকানো’টা পছন্দ হচ্ছিল না বিধেয় সে রুমে চলে এসেছে। সে বুঝে উঠতে পারে না, লোকটা আসলে কেমন, কিংবা তিনি কী চান। একবার উনার ব্যবহার দেখলে মনে হয় উনার চেয়ে ভালো মানুষ বোধ হয় দুনিয়াতে আর নেই, আর একবার উনার তাকানোর ধরণ আর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখলে মনে হয়, উনার চেয়ে কুৎসিত মনের মানুষ বোধ হয় আর একটাও হয় না। কিন্তু আদৌ ঐ মানুষ’টা কেমন, সেটাই সে বুঝে উঠতে পারছে না।

কফির মগ’টা নিয়ে নিচে নামে পদ্ম। গিয়ে দেখে নিচে কেউ নেই। পদ্ম রান্নাঘরে ঢুকে। খালা দুপুরের রান্নার আয়োজন করছে। পদ্ম মগ’টা ধুয়ে এক সাইডে রেখে খালা-কে গিয়ে বললো,

‘খালা, আমি একটু সাহায্য করবো?’

খালা মুখ কালো করে তাকাল, যেন পদ্ম এই প্রশ্ন করে খুব বড়ো অপরাধ করে ফেলেছে। পদ্ম তখন বোকা বোকা হেসে বললো,

‘আরে খালা রেগে যাচ্ছো কেন? ঠিক আছে আমি আর সাহায্য করার কথা বলবো’ই না। তুমি একাই সামলাও সবকিছু। আমি উপরে গেলাম,,’

পদ্ম ফিরে যেতে নিলেই খালা তাকে আবার ডাকল। পদ্ম চমকে পেছন ফিরে তাকাল। সে চমকিয়েছে এইজন্য যে, সে এই বাড়িতে আসার পর থেকেই এই খালার সাথে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে; কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে খালা কোনোভাবেই তার সাথে কথা বলতে চায় না। আজ প্রথম তিনি তাকে ডাকলেন। পদ্ম ভীষণ খুশি যেন। সে খালার কাছে গিয়ে বললো,

‘কিছু বলবে খালা?’

খালা তার চোখ মুখ কুঁচকে বললো,

‘তুমি খুব ভালা মাইয়া। আর খুব বেকুব ও। মানুষরে খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেল। এই অতি বিশ্বাসের ফল একদিন তোমারে ঠিকই ভোগ করতে হইব মাইয়া। সাবধানে থাইকো।’

পদ্ম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। খালা এইসব কী বললো। পদ্ম খালা’র দিকে বিভোর দৃষ্টিতে তাকালো। বললো,

‘খালা, এসব কী বলছেন আপনি? যদি কিছু বলতে চান তবে সরাসরি বলুন, এইভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললে কিভাবে বুঝবো?’

‘ওকে কী বলার কথা বলছো, পদ্ম?’

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল রুবি হোসেন দাঁড়িয়ে আছেন। উনাকে দেখে খালার যেন প্রাণ যায় যায়। উনি কাঁপাকাঁপা গলায় অস্থির হয়ে বলতে লাগলেন,

‘না না খালাম্মা, কিছু না। আসলে ও একটা রান্না শিখতে চায়, তাই ঐডার কথায় আমারে জিগ্যেস করছিলো।’

পদ্ম’র কেন যেন মনে হলো এখন খালার কথার সাথে তাল না মেলালে উনি হয়তো বিপদে পড়ে যাবেন। তাই সেও বলে উঠল,

‘হ্যাঁ, বড়ো মা। আমি খালা-কে একটা রান্নার কথাই জিগ্যেস করছিলাম।’

রুবি হোসেনের কথা’টা হয়তো বিশ্বাস হলো না। তিনি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললেন,

‘পদ্ম তুমি তোমার রুমে যাও।’

পদ্ম কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। পদ্ম চলে যেতেই রুবি হোসেন খালার দিকে এগিয়ে গেলেন। খালা ভয়ে জমে গিয়েছেন। রুবি হোসেন তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন,

‘আমার নুন খেয়ে আমার সাথেই বেইমানি করতে চাইছিস? এত সাহস কিন্তু ভালো না,,,’

খালা বুক ধরফর করছে। তিনি হাত জোড় করে করে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,

‘বিশ্বাস করেন খালাম্মা, আমি ঐ মাইয়ারে কিচ্ছু বলি নাই। আর জীবনেও কিছু বলমু না। একেবারে আমার পোলার কসম।’

রুবি হোসেন বাঁকা হেসে বললেন,

‘কথা’টা যেন মনে থাকে।’

খালা ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালেন। তারপর রুবি হোসেন হনহন করে বেরিয়ে পদ্ম’র রুমে গেলেন।

.
.

পদ্ম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় রুবি হোসেন-কে বসে থাকতে দেখল। সে তাই ধীর পায়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রুবি হোসেন এতক্ষণ পদ্ম’র জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পদ্ম-কে দেখে বললেন,

‘বসো মা।’

পদ্ম উনার পাশে বসলো। উনি তখন পদ্ম’র মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘তখন ঐভাবে বলাতে কি খুব খারাপ লেগেছে তোমার?’

‘না না বড়ো মা, আমার একটুও খারাপ লাগেনি। তোমার যেটা পছন্দ নয় সেটা আমি করবো না। তোমার বারণ থাকলে আমি আর খালার সাথে কথা বলবো না, সমস্যা নেই।’

‘কথা কেন বলবে না? কথা বলতেই পারো। আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই। তবে বোঝই তো গ্রামের মহিলা খুব কথা লাগায়। তুমি এই বাড়িতে আসার পর তোমাকে নিয়েও অনেক কথা আমাকে বলেছে। আজ নিশ্চয়ই তোমার কাছে আমাদের নিয়ে কিছু বলতে চাইছিল? ওর অভ্যাস’ই এটা। খালি এর কাছে ওর কথা লাগানো। তাই ওর কথায় গুরুত্ব দিও না। নয়তো ও পুরোপুরি তোমার ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলবে।। বুঝেছো তো আমার কথা?’

পদ্ম কিছু না বোঝা সত্ত্বেও মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘হ্যাঁ, বুঝেছি।’

রুবি হোসেন হেসে বললেন,

‘এই তো আমার বুদ্মিমতী মেয়ে, সহজেই সবকিছু বুঝে ফেলে।’

.

ডাইনিং এ বসে সবাই দুপুরের খাবার খাচ্ছে। পদ্ম’র বরাবর চেয়ার’টাতে আকবর সাহেব বসেছেন। উনি খাচ্ছেন কম পদ্ম’র দিকে তাকাচ্ছেন বেশি। পদ্ম ব্যাপারটা খেয়াল করেছে অনেক আগেই। এক পর্যায়ে সে আর না পেরে আকবর সাহেব-কে জিগ্যেসই করে বসলো,

‘আপনি কি কিছু বলবেল আমায় আংকেল? না, আসলে তখন থেকে ঐভাবে তাকিয়ে আছেন তো তাই জিগ্যেস করলাম। আপনার কিছু বলার হলে বলতে পারেন।’

বিষম খেলেন আকবর সাহেব। পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে বললেন,

‘কক-ক-কই না তো। আমি তো দেখছিলাম তুমি ঠিক ভাবে খাচ্ছো কিনা? এই এক তরকারি দিয়েই তো সব খেয়ে ফেলছো, এটাও একটু ট্রাই করো; বেশ মজা হয়েছে কিন্তু।’

কথা’টা বলে তিনি একবার রুবি হোসেনের দিকে আড়চোখে তাকালেন। রুবি হোসেনের রক্তিমা অক্ষিযুগল দেখে তিনি ঢোক গিলে ফটাফট নিজের খাবার খেতে লাগলেন। পদ্ম আর কথা বাড়াল না। নিজের খাওয়ায় আবার মনোযোগ দিল।

দুপুরের খাবারের পর্ব শেষে সবাই যার যার রুমে গেল। রুবি হোসেন রুমে ঢুকেই দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলেন। আকবর সাহেবের শার্টের কলার ধরে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন,

‘কচি মেয়ে দেখলেই লাফালাফি শুরু হয়ে যায়, না? এর আগেও এমন অনেক কমপ্লেইন এসেছে, কিচ্ছু বলেনি জাস্ট সাবধান করে গিয়েছি। এবারও যদি কিছু উল্টা পাল্টা করেছো, তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে রাখলাম।’

কলার থেকে বউয়ের হাত সরিয়ে আকবর সাহেব আহ্লাদী গলায় বললেন,

‘আরে বউ, তুমি এত সিরিয়াস হচ্ছো কেন? আমি তো শুধু তোমার জেলাসি লেভেল’টা চেক করছিলাম। তুমি কিন্তু একেবারে আগের মতোই রয়ে গেছো, আমার জেলাসি কুইন।’

‘হয়েছে আর ঢং না করে পরের প্ল্যানিং বলো, কবে কী করবে? আমি আর কাউকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না, বুঝলে?’

চলবে…

(এখনও বাড়িতে আছি, তাই রেগুলার গল্প দিতে না পারলেও একদিন পরপর দেয়ার চেষ্টা করবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here