পদ্মফুল #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা |৩৬|

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|৩৬|

একগাদা জিনিস পত্র নিয়ে আদিদ আর পদ্ম আশ্রমে ফিরে আসে। পদ্ম আদিদের উপর ভীষণ বিরক্ত। সে এত এত শপিং করেছে যেন এটা কোনো বাচ্চার বার্থডে। অদ্ভুত! অভির ত্রিশ বছর হবে বলে কি তাকে ত্রিশ’টা গিফ্টই দিতে হবে? এটা কোথাও লেখা আছে নাকি যত বছর হবে ততটা গিফ্ট।

এত এত জিনিস পত্র দেখে আশ্রমের সকলের চোখ চড়কগাছ। এর আগেও প্রতিবার আদিদ এখানে এসে অভির সাথে কেক কেটেছে। কিন্তু এত আয়োজন কোনো বেলায়’ই ছিল না।

আদিদ আশ্রমের সব মেয়েগুলোকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দিল। আর সবাইকে খেয়াল রাখতে বললো, অভি যেন এসব ব্যাপারে কিছু বুঝতে না পারে।
বাগানের অপর পাশে বাঁশের ঝোপের মতো ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হলো। ফুল আর বেলুনে ভর্তি সেই রুম। সবকিছু গুছিয়ে রুম থেকে একে একে মেয়েরা সব বেরিয়ে গেল। রাণী বের হওয়ার আগে একবার আদিদের কাছে গেল। তাকে লজ্জামাখা কন্ঠে বললো,

‘আপনার পছন্দ কিন্তু খুব সুন্দর, ডাক্তার সাহেব।’

তারপর সে হেসে সেখান থেকে চলে গেল। আদিদ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল। পদ্ম তখন আদিদের মুখ দেখে হেসে বললো,

‘কী হলো ডাক্তার সাহেব, মুখটা এমন করে রেখেছেন কেন?’

আদিদ ব্রু কুঁচকে বললো,

‘মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করে?’

‘হয়তো আপনার প্রেমে পড়েছে।’

কথাটা বলেই পদ্ম শব্দ করে হাসতে আরম্ভ করে। পদ্ম’র হাসি দেখে আদিদ ব্রু যুগল আরো কুঁচকে যায়। সে তেতো মুখে বলে,

‘এসব আজাইরা কথা বলা বন্ধ করে আমাকে সাহায্য করুন।’

পদ্ম হাসি বন্ধ করে বললো,

‘সব কাজ না শেষ করলাম, আর কী করবো?’

আদিদ চোখের ইশারায় টেবিলের দিকে দেখিয়ে বললো,

‘এই গিফ্ট গুলো প্যাক করতে হবে না?’

পদ্ম মুখ কালো করে বললো,

‘এতগুলো গিফ্ট প্যাক করতে করতে তো দিনই শেষ হয়ে যাবে।’

‘শেষ হবে না। আমিও সাহায্য করবো। চলুন।’

পদ্ম সব নিয়ে ফ্লোরে বসলো। তারপর বললো,

‘বাকিদের ডেকে নিয়ে আসি?’

‘না না, ওদেরকে ডাকার দরকার নেই। ওরা আসলে ওদের সাথে রাণী ও আবার আসবে। আর এসে আমাকে জ্বালাবে। বাচ্চা মেয়ে বলে ধমকও দিতে পারিনা। একবার ছোট্ট একটা ধমক দিয়েছিলাম বলে কেঁদে কেটে দুনিয়া উদ্ধার করেছিল, আর না। আপনি আর আমিই পারবো করতে, ওদের প্রয়োজন নেই।’

পদ্ম মুচকি মুচকি হাসে। তা দেখে আদিদ বিরক্ত গলায় বলে,

‘হাসার মতো কিছু বলেনি। হাসি বন্ধ করে কাজে মনোযোগ দিন।’

আধ ঘন্টায় বিশ’টা গিফ্ট র‍্যাপিং করে কিছুটা হাঁপিয়ে উঠল পদ্ম। তবে ভালোও লাগল খুব। আদিদ কাজটা খুব মনোযোগ দিয়ে করছিল। আর তাই তার র‍্যাপিং’টাও খুব সুন্দর হচ্ছিল। এই লোকটার সব কাজই এত নিঁখুত কেন? যেন এইটুকুও খাদ নেই কোনো কিছুর মাঝে। সবার শেষে একটাই জিনিস পড়ে রইল। পদ্ম দেখল একটা ছবি। কিন্তু আদিদ সেটাকে র‍্যাপ করেনি। সে সেটা তার পকেটে রেখে দিয়েছে। ছবিটাতে দুটো বাচ্চাকে দেখা যাচ্ছিল। পদ্ম বললো,

‘ছবির ঐ বাচ্চাগুলো কারা?’

আদিদ তার দিকে তাকিয়ে জবাবে বললো,

‘আমি আর অভি।’

‘আপনারা কি খুব ছোট বেলার বন্ধু।’

‘হ্যাঁ, যবে থেকে আমরা বুঝতে শিখেছি তবে থেকেই আমরা একসাথে আছি।’

‘আচ্ছা, আপনাদের মাঝে কখনও ঝগড়া হয়নি?’

‘না হয়নি। তবে একবার আমি ওর সাথে খুব রাগ দেখিয়েছিলাম তাও বিনা কারণে। কিন্তু সেই রাগ আমার একদিনও টিকেনি। পর দিনই আবার সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে ওর কাছে চলে যাই। জানেন, আজ যদি ও আমার পাশে না থাকত তবে হয়তো আমি নিঃস্ব হয়ে যেতাম। এই ছেলেটা যে আমার জন্য কী সেটা আমি কখনও কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না।’

আদিদ থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পদ্ম আলতো হেসে বললো,

‘আপনার মতো যদি একটা বেস্টফ্রেন্ড আমারও থাকতো!’

আদিদ তাকিয়ে রইল। পদ্ম চোখ নামিয়ে বললো,

‘চলুন বের হয়ে দেখি অভি ভাই এলো কিনা?’

পদ্ম উঠে দরজার কাছে যেতেই আদিদ তাকে ডাকল,

‘শুনুন পদ্ম..’

পদ্ম ঘুরে তাকিয়ে বললো,

‘কিছু বলবেন?’

আদিদ নরম গলায় বলে,

‘আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি? যদিও আমাদের বয়সের পার্থক্য’টা খানিক বেশি। বাট আই থিংক, বন্ধুত্বে কোনো বয়স মেটার করে না। আপনার কী অভিমত?’

পদ্ম যেন হতভম্ব হয়ে পড়ল। আদৌ সে ঠিক শুনছে তো? ডাক্তারবাবু কখনো তার সাথে এইভাবে কথা বলবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। তার তখন আবার মনে হলো, হয়তো তিনি কিছুদিন পর চলে যাবেন তাই হয়তো পদ্ম’র উপর মায়া হচ্ছে উনার। তাতেও পদ্ম খুশি। হোক না কিছুদিনের ব্যাপার তাও তো সে ডাক্তারবাবুকে তার বন্ধু হিসেবে পাচ্ছে। এর থেকে বড়ো পাওয়া আর কী হতে পারে?

পদ্ম ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,

‘আপনি সত্যিই আমার বন্ধু হতে চান?’

‘হ্যাঁ, কেন না?’

পদ্ম শ্বাস টেনে বললো,

‘ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু। আপনি খুব ভালো।’

‘আপনি ভালো বলেই আপনার চোখে সবাই ভালো। চলুন এবার, আর দাঁড়িয়ে থাকলে অভি চলে আসবে।’

‘ঠিক আছে, চলুন।’
.
.
সূর্য’টার প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থা। কিছুক্ষণের মাঝেই হয়তো সেটা মেঘের আড়ালে তলিয়ে যাবে। দিনের আলো নিভে গিয়ে হয়তো রাতের অন্ধকার হানা দিবে। আর দিনের সেই অন্তিম সময়ে এসে, আশ্রমের সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে অভির অপেক্ষায়। তখনই বাইরে থেকে গাড়ির শব্দ শুনতে পেল সবাই। আদিদ উৎফুল্ল গলায় বললো,

‘অভি চলে এসেছে। সবার মনে আছে তো কী কী করতে হবে?’

সবাই সমস্বরে বললো,

‘হ্যাঁ।’

অভি গাড়িটা সাইডে পার্কিং করে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকাল। ভীষণ অবাক হলো সে। বাইরে কেউ নেই? সবাই কি ভুলে গেল তার যে আজকে জন্মদিন। অন্য সময় তো সবাই এসে তাকে একগাদা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় অথচ আজ তার কিছুই হচ্ছে না। আশ্চর্য!

অভি ভাবতে ভাবতে ভেতরে গেল। আশ্রমের মেইন বিল্ডিং’টাতে এসে আবার একবার থামল সে। এখানেও কেউ নেই। অভির ঠিক বিশ্বাস হলো না, সবাই এক সঙ্গে তার বার্থডে ভুলে গেল? এটা তো কখনো হয়নি।
অভি এবার বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো। লিভিং রুমে গিয়েই সে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল। আদিদ সোফায় বসা। আর বাকি সব মেয়েরা নিচে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে টি.ভি দেখছে। অভি ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল সেই দিকে। এটা কেমন কথা, সবাই তার বার্থডে ভুলে এইভাবে হা করে টি.ভি দেখছে কেন?

অভি চওড়া গলায় ডেকে উঠল,

‘আদিদ!’

আদিদ সহ বাকি সবাই তার দিকে তাকাল। সবাই খুব স্বাভাবিক। কেউ তাকে দেখে অবাক হলো না। কেউ তাকে শুভ কামনাও জানাচ্ছে না। অভি তো এবার রেগে গেল। সে গর্জে উঠে আদিদকে বললো,

‘তুই হঠাৎ এখানে কেন?’

আদিদ দায়সারা ভাবে বললো,

‘এমনি।’

‘এমনি মানে?’

‘আরে এমনি মানে এমনি। এদিকে এসে বস না। দেখ, আমরা একটা দারুণ সিনেমা দেখছি।’

অভি রাগে ফুঁসতে লাগল। সে কাউকে কিছু না বলে বড়ো বড়ো পা ফেলে উপরে উঠে গেল। আর সে চলে যেতেই সেখানে হাসির বন্যা বয়ে গেল।

চলবে…

(পদ্ম’র সাথে কার মিল হবে এই নিয়ে সবার দুশ্চিন্তা, তাই না? আচ্ছা মনের মিল কি বড়ো মিল না? কাউকে কি এক পক্ষ থেকে ভালোবেসে বাঁচা যায় না?

আর আবারও বলছি হিরো আমাদের ডাক্তারবাবু’ই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here