#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|৩৮|
পদ্ম মাথা নুইয়ে ফেলল। আদিদ আবারও জিজ্ঞেস করলো,
‘কী হলো পদ্ম, কিছু বলছেন না যে?’
পদ্ম তার ভারি পল্লব মেলে তাকাল। নরম গলায় বললো,
‘আপনি চলে গেলে আমার খুব খারাপ লাগবে ডাক্তারবাবু।’
আদিদ বিস্মিত কন্ঠে বললো,
‘কেন?’
পদ্ম আবার নত মস্তিষ্কে বললো,
‘জানি না।’
আদিদ চেয়ে রইল তার দিকে। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণ নিরবতা কাটিয়ে সে বললো,
‘মায়া জিনিসটা মানুষকে বড্ড পোড়ায়, জানেন তো! আমিও পুড়ছি কারোর মায়ায়। তাই আপনাকে সাবধান করছি, এই মায়াকে প্রশ্রয় দিবেন না। কষ্ট বাড়বে।’
পদ্ম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো,
‘সুজানাকে আপুকে আপনি খুব ভালোবাসতেন তাই না?’
আদিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ভালোবাসতাম না, এখনো বাসি আর আজীবন বাসবো।’
পদ্ম আদিদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। আদিদ তার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ভেতরে যান। সবাই আপনাকে খুঁজবে নয়তো।’
পদ্ম দাঁড়িয়ে রইল। তার কেমন যেন লাগছে। সে অনুভব করতে পারছে, কিছু একটার জন্য কষ্ট হচ্ছে তার। বুকে তার তীব্র ব্যাথা অনুভব করছে। উফ, এই মন জিনিসটা এত খারাপ কেন কে জানে! অযথা যার তার মায়ায় পড়ে কষ্ট দিতে থাকে। মনটা বিষাদে ভরে যাচ্ছে। সে চোখ বুজে। ঢোক গিলে বলে,
‘আমার কষ্ট হচ্ছে ডাক্তারবাবু। আপনার জন্য কষ্ট হচ্ছে। জানিনা কেন, কিন্তু হচ্ছে কষ্ট। আপনি চলে গেলে এই কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। আমি জানি আমি যেটা বলছি সেটা অন্যায়। আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন ডাক্তারবাবু। আমি তার জন্য চির কৃতজ্ঞ থাকবো। আপনি আমাকে কখনো ভুলে যাবেন না প্লীজ। আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন, আমি এসব বলতে চাইনি। কিন্তু না বলেও থাকতে পারছিলাম না। ভালো থাকবেন ডাক্তারবাবু। আর দয়া করে এখানে আর আসবেন না; কারণ আপনি আসলে আমার কষ্ট আবার বেড়ে যাবে। আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। আমি যাই, আপনি ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।’
পদ্ম কাঁদতে থাকতে। নাক মুখ ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে সে চলে আসতে লাগে। আদিদের বিস্ময় যেন কাটছে না। মেয়েটা এইভাবে কেন কাঁদছে, শুধুমাত্র সে চলে যাবে বলে? আশ্চর্য!
আদিদ ফিরে ডাকে তাকে। পদ্ম থমকে দাঁড়ায়। আদিদ হেঁটে তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
‘আমি চলে যাবো বলে আপনি কাঁদছেন?’
পদ্ম মাথা ঝাঁকিয়ে “না” বললো। আদিদ ফিচেল গলায় বললো,
‘মিথ্যে বলছেন কেন?’
পদ্ম নাক টেনে বলে,
‘এমনি।’
আদিদ ব্রু কুঁচকে ফেলে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,
‘আমি আপনার কে হই, যে আমার জন্য আপনার এত মায়া? আমাদের পরিচয় কেবল কয়েক মাসের, এই কয় মাসেই আপনার আমার প্রতি এত মায়া জন্মে গেল? অদ্ভুত, এত মায়া নিয়ে বাঁচবেন কী করে আপনি?’
পদ্ম’র ভীষণ রাগ হলো। সে কড়া গলায় বললো,
‘আমি আপনার মতো পাষাণ না ডাক্তারবাবু। আপনার মধ্যে মায়া দয়া নাই থাকতে পারে কিন্তু আমার মধ্যে আছে, অনেক বেশি পরিমাণে আছে।’
‘মায়া যত বেশি, কষ্টও তত বেশি। অযথা যদি কষ্ট পেতে চান, তবে মনের মধ্যে এই একগাদা মায়া পুষে রাখুন। আর একদিন দেখবেন এই মায়া আপনাকে কীভাবে কুরে কুরে খায়।’
পদ্ম নাকের পাল্লা ফুলিয়ে শক্ত গলায় বললো,
‘ভালো, আমার কষ্ট আমি বুঝবো। আপনি যান।’
আদিদ জোরে শ্বাস ছেড়ে বলে,
‘তা তো যাবোই। তবে যাওয়ার আগে একটা কথা বলতে চাই, আপনিও খুব ভালো একটা মেয়ে পদ্ম। জীবনে এত কষ্ট সহ্য করেও নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। জানেন, আপনি আমার কাছে আমার অনুপ্রেরণা। আপনাকে দেখেই আমি সাহস পেয়েছি, নতুন ভাবে বাঁচার। হয়তো ভালো নেই, তাও বেঁচে তো আছি। (একটু থেমে) পদ্ম, আমি হয়তো জানি আপনার মন কী চাইছে। কিন্তু, আমি বা আমার মন কোনোভাবেই প্রস্তুত না। কাউকে না পাওয়ার যন্ত্রণা যে কতটা নির্মম, সেটা আমিও বুঝি পদ্ম। আর বুঝি বলেই বলছি, নিজের মনকে প্রশ্রয় দিয়েন না তাতে আপনারই কষ্ট বাড়বে। আমি চলে যাচ্ছি, পদ্ম। তবে একেবারের জন্য না। আবার আসবো আমি। যদি কোনো দিন আমার মন বলে তার ঝিলে একটা পদ্মফুল দরকার তখন না হয় আসবো এই পদ্মফুলকে নিতে। আশা করি ততদিন পর্যন্ত সেই পদ্মফুলও সতেজ থাকবে। ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।’
আদিদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। পদ্ম হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বুকের ভেতরটা ধপাস ধপাস করে লাফাচ্ছে। শরীরটা কেমন যেন অবশ অবশ লাগছে। সব তো ঠিক ছিল তবে আদিদের শেষের কথাগুলো তো তাকে বারবার এলোমেলো করে দিচ্ছে। আদিদ কোন পদ্মফুলকে নিতে আসবে? আদিদ কি তার কথা বলছিল? সেকি আদিদের পদ্মফুল? পদ্ম’র মাথা ঘুরাচ্ছে। সেই মুহুর্তে তার রুমমেট একজন এসে খুব জোরে চেঁচিয়ে উঠে। পদ্ম ভয় পেয়ে যায়। সেই মেয়েটি পদ্ম’র কাছে এসে তার হাত ধরে বলে,
‘এই মেয়ে, তুমি এখানে কী করো? আর ঐদিকে সবাই তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ। চলো, ভেতরে চলো।’
মেয়েটি তাকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেল। সবাই তাকে বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করতে লাগল। জানতে চাইল, এতক্ষণ কোথায় ছিল সে। পদ্ম’র কান অবধি সেই সব কথা পৌঁছাল না। তার কানে তো কেবল আদিদের কথাই বাজজে। সে কারোর কথার কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ল।
.
.
বসন্তের শেষ সময়। চারদিকে গরম পড়ছে। কখনো আবার বাতাস বইছে অনেক জোরে। দুপুরের কাঠ ফাটা রৌদ্দুর। দূরের মসজিদে তখন যোহরের আযান হচ্ছে। বাড়ি জুড়ে চলছিল তখন বিয়ের প্রস্ততি। আহামরি আয়োজন না হলেও বেশ পরিপাটি করে করা হচ্ছে সবকিছু। এই তপ্ত দুপুরেও আশ্রমের মেয়েগুলো ছুটো ছুটি করছে। অনেক কাজ তাদের। সকাল থেকেই তারা সবাই ব্যস্ত। ব্যস্ত তো হতেই হতো, বিয়ে বলে কথা! তাও তাদের এখানেই। পুরো আশ্রমের সমস্ত ছোট ছোট কটেজের মতো ঘরগুলো ফ্যাইরি লাইট দিয়ে সাজানো। ফুল দিয়ে সাজানো রুমের ভেতরগুলো। তার সাথে সেজে উঠেছে আশ্রমের সমস্ত প্রাঙ্গণগুলো। আশ্রমের পরিচালিকা দু’জন মেয়েদের উপর একটু পরপর কেবল ক্ষেপে যাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য মতে মেয়েগুলো কোনো কাজ ঠিকভাবে করছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই চলে আসবে। এখনও পুরো রান্না হয়নি। কাজী সাহেবও চলে আসবেন নামাজ পড়ে। অথচ মেয়েগুলোর মধ্যে কোনো হুশ’ই নেই। উনারা হৈ চৈ করছেন, মেয়েদের তাড়া দিচ্ছেন। মেয়েরা বিরক্ত হলেও কিছু বলছে না। খালি আজ তাদের অভি ভাইয়ের বিয়ে বলে তারাও হাসি মুখে সবকিছু সহ্য করে নিচ্ছে।
চলবে…
(আমি পর্ব খুব ছোট করে লিখি। এই নিয়ে আপনাদের অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার হাতে এত সময় থাকে না যে বিশাল বিশাল পর্ব লিখবো। ভার্সিটি খোলা বলে ইদানিং খুব চাপ যাচ্ছে। সকাল সাড়ে সাত’টার দিকে আমি ভার্সিটি যাই, সাড়ে চার’টা পাঁচ’টার দিকে ফিরি। তারপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়ার পর এত ঘুম আসে যে আর তাকিয়ে থাকতে পারিনা। ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসা লাগে। তখন ফোন নিয়ে কোনোভাবেই বসা সম্ভব না। আমি কখন গল্প লিখি জানেন? রাতে সবাই শুয়ে যাওয়ার পর। এই সবার শুতে শুতে ধরুন সাড়ে বারো’টা কী এক’টা বাজে। আর তখন থেকে টানা একঘন্টা লাগে আমার এক হাজার পর্ব লিখতে। কখনো কখনো আরো বেশি সময় লাগে। তো দেখা যায় কী লিখে টিখে শুতে আমার বাজে দুইটা বা আড়াই’টা। পরদিন আবার সাড়ে ছয়টাই উঠতে হয় যেহেতু সাড়ে সাত’টায় আমার বাস। এখন আপনারাই হিসেব করুন আমি কত ঘন্টা ঘুমাই। আর ঐদিকে আমি যত বেশি ধরে সময় লিখবো, এইদিকে আমার ঘুমের সময়ও তত কমবে। তাই আমি নিরুপায়, চাইলেও লিখতে পারিনা। আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন, আসসালামু আলাইকুম।)