পদ্মফুল #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা |৫০|

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|৫০|

রাণী তখন থেকে পদ্ম’র পেছন পেছন ঘুরছে তাকে কিছু বলবে বলে। কিন্তু পদ্ম কিছুতেই সেই সুযোগ দিচ্ছে না। সে একের পর এক ব্লকের কাজ করেই যাচ্ছে। আর কাজের সময় পদ্ম কে বিরক্ত করলে সে খুব রেগে যায়, সেটা রাণী জানে। আবার এইদিকে পদ্ম’র কাজও শেষ হচ্ছে না। রাণী দূরে বসে বসে নখ খাচ্ছে আর ভাবছে, কখন এই কাজ শেষ হবে? কখন সে পদ্ম’র সাথে একটু কথা বলতে পারবে।

রাণীকে আরো এক ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে পদ্ম’র কাজ শেষ হলো। রাণীর মনে শান্তি এলো। সে দ্রুত পদ্ম’র কাছে গেল। অস্থির গলায় বললো,

‘আপু, তোমাকে একটা কথা বলবো?’

পদ্ম তার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘বল।’

রাণী বড়ো বড়ো চোখে পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তোমার টেনশন হচ্ছে না আপু?’

পদ্ম বললো,

‘কিসের টেনশন?’

‘আরে, ডাক্তার সাহেব না বললেন কাল তোমার সাথে সমঝোতা করবেন। আমার কী মনে হয় বলতো, উনি বোধ হয় কাল তোমায় বিয়ে প্রপোজাল দিবেন। শুনো, তুমি কিন্তু সাথে সাথে রাজি হয়ে যেও না। ডাক্তার সাহেব কে একটু ঘুরাতে হবে। এত সহজে নিজেকে উনার কাছে ধরা দিও না।’

পদ্ম বিরক্ত হয়ে বিছানায় শু’লো। বললো,

‘তোর মতো পাগলরাই এসব ভাববে। তোর কী করে মনে হলো ঐ লোকটা আমাকে এত সহজে প্রপোস করে ফেলবে। উনি আর পাঁচটা মানুষের মতো এত সরল সোজা না যে হুট হাট করে এসেই প্রপোস করে বসবে। উনি হলেন একজন ঘাড় ত্যাড়া মানুষ। সহজে কোনো কাজ করেন না। আর তাছাড়া.. উনার মনে অন্য কেউ আছে। এত সহজেই কি উনি সেই মনে আমার জায়গা দিতে পারবেন?’

রাণী চোখ মুখ কুঁচকে বললো,

‘উনার মনে আবার কে আছে?’

পদ্ম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বললো,

‘সুজানা।’

‘কে সুজানা?’

‘উনার ভালোবাসা।’

রাণীর মন খারাপ হয়ে গেল। বিষন্ন কন্ঠে বললো,

‘তাহলে সেই ভালোবাসা কোথায়?’

‘মা*রা গিয়েছে, না মা*রা গিয়েছে বললে ভুল হবে বরং বলা উচিত মে*রে ফেলা হয়েছে।’

রাণী বিস্ময়ে দু হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরল। বিছানায় উঠে পদ্ম’র পাশে শুয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘কে মে*রেছে?’

পদ্ম তার দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

‘বলবো। কোনোদিন সব বলবো, তবে আজ ইচ্ছে করছে না।’

রাণীও জোর করলো না। তবে সেও যেন কিছু আন্দাজ করতে পারলো।

.

রাত দশ’টার দিকে পদ্ম আর রাণী খেতে বসেছে। পদ্ম’র ফোনটা তখন বেজে উঠে। পদ্ম ফোন টা নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। তাই সে আর ধরে না। একবার কল কেটে গিয়ে আরেকবার বেজে উঠে। পদ্ম বিরক্ত হয়ে কল টা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে তখন পরিচিত কারোর গলার স্বর শোনা যায়। পদ্ম কিছুটা অবাক হয়ে ফোন টা চোখের সামনে ধরে নাম্বার টা ভালোভাবে দেখে। তারপর আবার ফোন টা কানে লাগিয়ে বলে,

‘হঠাৎ কল দিলেন যে?’

‘শুয়ে পড়েছিলেন নাকি?’

‘না, বলুন।’

‘কাল বিকেলে ফ্রি আছেন?’

‘না, কেন?’

ওপাশের মানুষটা শক্ত গলায় বললো,

‘এত কিসের ব্যস্ততা আপনার?’

পদ্ম ভাব নিয়ে বললো,

‘আজকাল আপনার চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি আমি। এখন আপনি বলুন আপনার কী প্রয়োজন।’

পদ্ম জানে মানুষ টা তার কথায় রাগছে। রাগুক, তার কী তাতে। আদিদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘দয়া করে কাল বিকেলের দিকে আধ ঘন্টা আমাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

পদ্ম মনে মনে হাসে। তবে গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলে,

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। কালকে চার’টার পর আধ ঘন্টার জন্য আমি ফ্রি আছি, সে সময় টা না হয় আপনাকে দিলাম।’

আদিদ শান্ত গলায় বললো,

‘খুব ভাব নিচ্ছেন, তাই না? ভালো, এখন তো আপনারই সময়। তবে খুব শীঘ্রই আমারও ভাব নেওয়ার সময় আসবে। তখন আমিও দেখবো, আপনি কী করেন।’

পদ্ম পাল্টা কিছু বলার আগেই আদিদ বললো,

‘একটা এড্রেস টেক্সট করে দিয়েছি, ঐ এড্রেসে কাল বিকেলে চলে আসবেন। রাখছি।’

পদ্ম ফোন রেখে রাগি গলায় বললো,

‘আমি নাকি ভাব দেখায়, নিজে যে ভাব দেখাতে দেখাতে শহীদ হয়ে যায় সেটার সময় কিছু না। যাবো না আমি, কী করবে হ্যাঁ। যত্তসব আজাইরা মানুষ।’

রাণী মুখের ভাত টা গিলল। তারপর বললো,

‘ডাক্তার সাহেব ছিলেন বুঝি, কালকে দেখা করার কথা বলছেন?’

‘হু।’

‘শুনো, আমার মাথায় একটা দারুণ বুদ্ধি এসেছে।’

পদ্ম তাকে পাত্তা না দিয়ে বললো,

‘তোর বুদ্ধি আমার জানা আছে।’

‘তুমি আগে একবার শুনেই দেখো না।’

পদ্ম খেতে খেতে বললো,

‘না শুনলেও যে জোর করে শুনাবি সেটা জানি। বলে ফেল।’
.
.

বিকেলের স্নিগ্ধ রোদ। রোদের সোনালী আভায় চারদিক ঝলমল করছে। গাছের পাতাগুলো সোনালী লাগছে। এই রোদে তেজ নেই। কেমন নরম স্পর্শ তার। গায়ে লাগলে আরাম বোধ হয়।

রাণী মাঠের মাঝখানে বসে আছে। রোদে তার গায়ের রংটা চকচক করছে যেন। শ্যামলা বর্ণের মেয়েটা ডাগর ডাগর চোখগুলো মেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে কী যেন দেখছে। তার থেকে অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে আছে পদ্ম আর অনিক। অনিকের চোখে মুখে বিরক্তির ভাবটা স্পষ্ট। পদ্ম মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মধ্যে বাঁকা চোখে সে রাণীর দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটাকে মাথায় তুলে আছাড় দিতে মন চাচ্ছে তার। বার বার বলেছিল, এসব করার কোনো দরকার নেই। কিন্তু, এই ফাজিল মেয়ে তার কোনো কথা শুনেনি। আর তার ফল এখন তাকে ভোগ করতে হচ্ছে। অনিক এবার রেগে গেল। অনেকক্ষণ হয়েছে সে এখানে এসেছে, অথচ পদ্ম তাকে কিছু বলছেই না। সে অত্যন্ত বিরক্ত গলায় বললো,

‘আপনি কি আমাকে এখানে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য ডেকে এনেছেন, পদ্ম?’

পদ্ম “না” সূচক মাথা নাড়াল। অনিক তখন পুনরায় প্রশ্ন করলো,

‘তাহলে?’

পদ্ম আমতা আমতা করে বললো,

‘না মানে আসলে আম..’

তখনই তার কাছে রাণী দৌড়ে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

‘আপু, ডাক্তার সাহেব চলে এসেছেন।’

পদ্ম আর অনিক দুজনেই সামনের দিকে তাকাল। দেখল আদিদ তাদের দিকেই আসছে। অনিক বুঝতে পারে না কিছু। সে ব্রু কুঁচকে বলে,

‘পদ্ম, কী হচ্ছে বলবেন কিছু?’

পদ্ম কিছু বলার আগেই রাণী তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগল,

‘আসলে স্যার, ঐ যে ডাক্তার সাহেব কে দেখানোর জন্য আপনাকে এখানে ডেকেছি। ডাক্তার সাহেব যেন আপনাকে আর আপুকে একসাথে দেখে জেলাস হয়, তাই। কিছু মনে করবেন না প্লীজ, এইসব কিছু আমার বুদ্ধি।’

অনিক এবার ক্ষেপে গেল। পদ্ম কে বললো,

‘এসব কী পদ্ম? এজন্য আপনি আমাকে ডেকেছেন? আশ্চর্য, আপনারা কি ছোট নাকি? আপনারা তো যথেষ্ট ম্যাচিউর। তাহলে এসব টিনেজ বয়সের বাচ্চাদের মতো কাজ কর্ম কেন করছেন?’

তাদের কথাবার্তার মাঝেই সেখানে এসে আদিদ উপস্থিত হলো। তাকে দেখে সবাই চুপ। আদিদের কাছে অনিক কে চেনা চেনা লাগল। অনিক তখন বললো,

‘ভালো আছেন, আদিদ ভাই?’

আদিদ কিছুটা অবাক হলো। বললো,

‘জ্বি, ভালো। তবে আপনাকে তো চিনলাম না।’

অনিক হেসে বললো,

‘আমি অনিক। অভি ভাইয়ের কাজিন। অনেক আগে একবার আমাদের দেখা হয়েছিল। হয়তো আপনার মনে নেই।’

আদিদের এবার মনে পড়ল। সে হেসে বললো,

‘ওহ হ্যাঁ, চিনতে পেরেছি। তা, তুমি এখানে?’

অনিক পদ্ম আর রাণীর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আরে বলবেন না, এই দুজন মহীয়সী নারী আপনাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য আমাকে এখানে ডেকেছেন।’

পদ্ম আর রামী দুজনেই লজ্জায় স্তব্ধ। বিশেষ করে পদ্ম’র তো লজ্জায় ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে। পদ্ম দাঁতে দাঁত চেপে রাণীর দিকে তাকাল। বেচারা ভয়ে আর লজ্জায় এই বুঝি কেঁদে ফেলবে।

আদিদ এই অবস্থায় কী বলবে বুঝতে পারছে না। তার অবশ্য হাসিও পাচ্ছিল। তবে সে সেটা চেপে রাখল। ভীষণ গম্ভীর গলায় বললো,

‘রাণীর সাথে থাকতে থাকতে আপনিও দেখছি বাচ্চা হয়ে যাচ্ছেন, পদ্ম। আচ্ছা যাকগে, অনিক তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে ভালো লাগল। আর এই বাচ্চাদের ব্যবহারে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।’

‘না না ভাই, আপনি কেন দুঃখিত হবেন। আসলে আমি এসব কিছু আগে থেকে জানতাম না। জানলে আমি কখনোই এখানে আসতাম না। তবে এখন মনে হচ্ছে এসে ভালোই হয়েছে, আপনার সাথে দেখাটা হয়ে গিয়েছে। আর একটা কথা ভাই, এই যে এই মহান নারী, উনি আপনাকে ভালোবাসেন। কিন্তু নিজের জেদের কারণে সেটা প্রকাশ করতে চাইছেন না। উনি যদি আপনাকে ভালো না বাসতো তাহলে আমি উনাকে বিয়ে করতাম। তবে এখন আপাতত, আমি আপনাদের বিয়ে খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই দাওয়াত পাবো।’

পদ্ম বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। আদিদ সেই সময় বলে উঠল,

‘ইনশাল্লাহ।’

পদ্ম আঁতকে উঠল। “ইনশাল্লাহ?” তার মানে কি আদিদ সত্যি সত্যিই তাকে বিয়ে করতে চায়?

চলবে…

(এহেম এহেম, সবাই বিয়ের কেনাকাটা শুরু করুন🙊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here