পবিত্র ভালোবাসা❣️পর্ব-১২

0
1555

#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১২

ইসরাত: আচ্ছা আমি কী স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি । একদিনে এতটা পরিবর্তন(মনে মনে) ভাবতে ভাবতে হটাৎ চোখ গেলো ঈশান যেনো কি একটা করছে….

পরে দেখলো ঈশান একটা একটা ছুরি দিয়ে ফল কাটছে। ইসরাত বুঝতে পারছে না এই সময় ফল কেন কাটছে। তো ও কিছু বলার আগেই ঈশান বলে উঠলো…

ঈশান: এইগুলো সব খাবে এখন (ইসরাতের পাশে বসে)

ইসরাত মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়ছে ঈশানের কথা শুনে।

ইসরাত: কিন্তু..

ঈশান: কোনো কিন্তু না খেতে বলছি খাবে। আর সবগুলাই….

ইসরাত: এত ফল কিভাবে খাবো

ঈশান: দাঁত দিয়ে কামড় দিয়ে মুখ দিয়ে গলার খাদ্য নালীতে প্রবেশ করাবে আর খাবে।

ইসরাত: আমি পারবো না

ঈশান: ভালো ভালোই বলছি খেয়ে নাও পরে যদি আমার রাগ উঠে তাহলে তোমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। পরে মুখ এইভাবে চেপে ধরে একটা একটা না সবগুলা একসাথে মুখে পুরে দিবো।

ইসরাত ঈশানের এই কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গেলো। তাই সে একটা একটা করে খাচ্ছে আর ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে।

ঈশান: ওই শোনো ডালিম টা খাও তাহলে শরীলে রক্ত হবে। রক্ত পরিষ্কার হবে।

ইসরাত: আচ্ছা আপনি কি জানেন আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কিছু ফলের নাম বলেছিলো?

ঈশান: নাহ জানি না, কি সেই ফল গুলো..?

ইসরাত: হুম বলছি শুনেন,,,,,একই পৃথিবী কিন্তু এর ভু-খন্ডগুলোর প্রত্যেকের বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্ত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ আলাদা। একই মূল থেকে দুটি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকই নিজের একক বৈশিষ্টের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে কখনো মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, ঝোঁক-প্রবণতা ও মেজাজের মধ্যে এতবেশি পার্থক্য দেখে পেরেশান হবে না। যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে সকল মানুষকে একই রকম তৈরি করতে পারতেন কিন্তু যে জ্ঞান ও কৌশলের ভিত্তিতে আল্লাহ এ বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করেছেন তা সমতা, সাম্য ও একাত্মতা নয় বরং বৈচিত্র ও বিভিন্নতার প্রয়াসী। সবাইকে এক ধরনের করে সৃষ্টি করার পর তো এ অস্তিত্বের সমস্ত জীবন প্রবাহই অর্থহীন হয়ে যেত। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। তারপর তার সাহায্য সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদন করেছন। এরপর তা থেকে সবুজ শ্যামল ক্ষেত ও বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করেছেন। আর খেজুর গাছের মাথি থেকে খেজুরের কাঁদির পর কাঁদি সৃষ্টি করেছেন, যা বোঝার ভারে নুয়ে পড়ে। আর সজ্জিত করেছেন আঙুর, যয়তুন ও ডালিমের বাগান। এসবের ফলগুলো পরস্পরের সাথে সাদৃশ্যও রাখে আবার প্রত্যেকে পৃথক বৈশিষ্টেরও অধিকারী। গাছ যখন ফলবান হয় তখন এর ফল ধরা ও ফল পাকার অবস্থাটি একটু গভীর দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করো এসব জিনিসের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা-আল আনআম, আয়াত-৯৯) এখানে এমন কিছু ফলের কথা উল্লেখ করছি যেই ফলগুলোর কথা আল্লাহপাক কুরআনে উল্লেখ করেছেন।

কলা: পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তারা কাঁটাবিহীন কুল গাছের কুল। থরে বিথরে সজ্জিত কলা। দীর্ঘ বিস্তৃত ছায়া। সদা বহমান পানি। অবাধ লভ্য অনিশেষ যোগ্য। প্রচুর ফলমূল। (সূরা-আল ওয়াকিয়াহ, আয়াত-২৮-৩৩)

জয়তুন: পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আর সিনাই পাহাড়ে যে গাছ জন্মায় তাও আমি সৃষ্টি করেছি তা তেল উৎপাদন করে এবং আহারকারীদের জন্য তরকারীও। (সূরা-আল মুমিনুন, আয়াত-২০) এই আয়াতে জয়তুনের কথা বলা হয়েছে। ভুমধ্যসাগরের আশপাশের এলাকার উৎপন্ন দ্রব্যাদির মধ্যে এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ গাছগুলো দেড় হাজার দুহাজার বছর বাঁচে। এমনকি ফিলিস্তিনের কোনো কোনো গাছের দৈঘ্য, স্থুলতা ও বিস্তার দেখে অনুমান করা হয় যে, সেগুলো হজরত ঈসা (আ.) এর যুগ থেকে এখনো চলে আসছে। সিনাই পাহাড়ের সাথে একে সম্পর্কিত করার কারন সম্ভবত এই যে, সিনাই পাহাড় এলাকার সবচেয়ে পরিচিত ও উল্লেখযোগ্য স্থানই এর আসল স্বদেশ ভূমি।

খেজুর: পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আর দেখ, পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন আলাদা আলাদা ভূখ-, রয়েছে আঙুর বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুর গাছ- কিছু একাধিক কা-বিশিষ্ট আবার কিছু এক কাণ্ড বিশিষ্ট, সবাই সিঞ্চিত একই পানিতে কিন্তু স্বাদের ক্ষেত্রে আমি করে দেই তাদের কোনটাকে বেশি ভালো এবং কোনটাকে কম ভালো। এসব জিনিসের মধ্যে যারা বুদ্ধিকে কাজে লাগায় তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। (সূরা-আর রাদ, আয়াত-০৪)

নবী মুহাম্মদ (সা.) তার একটি হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমরের (রা.) বর্ণিত হাদিসে বলেছেন, গাছের মধ্যে একটি গাছ আছে যা একটি মুসলিম অনুরূপ। তার পাতা পড়ে না ওই গাছটা কি? নবী (সা.) নিজেই বলেছিলেন, এটাই খেজুর গাছ।

আঙুর: পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তারপর এ পানির মাধ্যমে আমি তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্যই এ বাগানগুলোয় রয়েছে প্রচুর সুস্বাদু ফল এবং সেগুলো থেকে তোমরা জীবিকা লাভ করে থাক। (সূরা-আল মুমিনুন, আয়াত-১৯)

এসব বাগানের উৎপন্ন দ্রব্যাদি, ফল, শস্য, কাঠ এবং অন্যান্য যেসব দ্রব্য তোমরা বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করো, এসব থেকে তোমরা নিজেদের জন্য জীবিকা আহরণ করো।

ডুমুর: ডুমুর ও যায়তুন। সিনাই পর্বত। এবং এই নিরাপদ নগরীর (মক্কা) কসম। আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়।

আর জানেন জয়তুন ফল হচ্ছে জলপাই।
কোরআনে বর্ণিত ফলগুলোর অন্যতম একটি ফল জলপাই বা জয়তুন। সুরা ত্বিনের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ যে ফলের কসম খেয়েছেন। এই ফলের গাছকে আখ্যা দিয়েছেন মুবারক গাছ হিসেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের নুর। তার নুরের উপমা একটি দীপাধারের মতো। তাতে রয়েছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি রয়েছে একটি চিমনির মধ্যে। চিমনিটি উজ্জ্বল তারকার মতোই। প্রদীপটি বরকতময় জয়তুন গাছের তেল দ্বারা জ্বালানো হয়, যা পূর্ব দিকেরও নয় এবং পশ্চিম দিকেরও নয়। এর তেল যেন আলো বিকিরণ করে, যদিও তাতে আগুন স্পর্শ না করে…।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৪)

মহানবী (সা.)-এর পছন্দের ফলগুলোর একটি ছিল জয়তুন (জলপাই)। জয়তুনের তেল শরীরের জন্য বেশ উপকারী। রাসুল (সা.) নিজে ব্যবহার করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও জয়তুনের তেল ব্যবহারের তাগিদ দিতেন। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (জয়তুনের) তেল খাও এবং তা শরীরে মালিশ করো। কেননা এটি বরকত ও প্রাচুর্যময় গাছের তেল। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫১)

বরকতময় এই ফল ও এর তেলের রয়েছে বহু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। গবেষকদের মতে, জয়তুন রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার। ফলে এটি সবজি ও ফল দু্ইটিরই কাজ করে। আরো আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন- ই।

এছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কোষের সুরক্ষার কাজ করে জয়তুন। আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রম, জটিল ধরনের টিউমার, রগ কিছুটা ফুলে যাওয়া, দাঁতের ক্যাভিটি ইত্যাদি রোগের প্রভাব কমিয়ে আনে জলপাই। এ জন্যই হয়তো রাসুল (সা.) এই গাছের ডালকে উত্তম মিসওয়াক বলেছিলেন।

জয়তুন ক্যান্সার বিস্তারের বিরুদ্ধে কোষের মেমব্রেনকে রক্ষা করে। রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার একটি বড় প্রতিকারের নাম জলপাই। যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখে ছোট্ট এই ফল।

ঈশান: ওই তোমার মাথায় এত এত হাদীস কিভাবে থাকে। আমার মনে হচ্ছে এইটা মাথা না এইটা একটা হাদীসের বই। কিন্তু কথা গুলো সত্যিই খুব ভালো ছিলো।

ইসরাত: শুকরিয়া…..

ঈশান তখন পিছনে তাকিয়ে দেখলো তার ডেড চলে গেছে। পরে তখন সে তার নিজের রূপ ধারণ করলো….

ঈশান: বাহ, আপনাকে বলেছি কি কি সেই ফল আর আপনি পুরো হিস্টরি বলে দিছেন। আর এইভাবে খাচ্ছেন কেনো মনে হচ্ছে এইসব ফল জীবনেও দেখেন নাই। শুনেন, এইভাবে রাক্ষসের মতো না খেয়ে আমার জন্য গিয়ে ফল কেটে আনেন। এই ফল গুলো আমার জন্য কেটেছিলাম বাট তখন আয়নায় তাকিয়ে দেখি ডেড পিছনে দাড়িয়ে আছে তাই আর কি আপনার সাথে ভালো বিহ্যাভ করেছি যেটা আপনার মতো মেয়ের যোগ্য না। আর ভালো বিহ্যাভ করেছি বলে যে আমি আপনাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি এইটা কিন্তু ভুলে ও ভাববেন না মিস ইসরাত ওহহ সরি মিসেস।

ইসরাত: তারমানে ওনি এতক্ষণ আমার সাথে অভিনয় করেছিল(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) আর আমি কিনা কত কি ভেবে বসে ছিলাম।(মনে মনে)

ঈশান: এত কিছু না ভেবে ফল নিয়ে আসেন আমার জন্য(ধমক দিয়ে)

ইসরাত: হুম…

পরে ইসরাত ঈশানের জন্য ফল কেটে আনলো….

ঈশানের রিলেটিভ রা সবাই নতুন বউ দেখতে এসেছে শুধু ছেলেরা বাদে। সবাই তো ইসুর রূপের প্রশংসা করছে। আর বলছে আমাদের ঈশানের সাথে কিন্তু ভালো মানিয়েছে। কিন্তু ঈশান যেমন চরিত্রের কিন্তু বউ টা তার একদম বিপরীত…. তখন একজন বলে উঠে উঠলো…

আরেহ একটা কথা আসে না আলেমের ঘরে জালেম ও হয় আর জালেমের ঘরে আলেম ও হয়। আর এইখানে তো হয়েছে জালেমের বউ আলেম বলে সবাই হু হু করে হেসে দিলো…

কথাটা শুনে ইসরাতের অনেক কষ্ট হলো। কেননা যতই যাই হোক ঈশান তো ওর স্বামী। স্বামী কে নিয়ে কোনো স্ত্রীই বাজে কথা শুনতে পারে না। জান্নাত তো এই কথা টা শুনে রেগে আগুন। তাই সে বলেই দিলো….

জান্নাত: আপনারা কি নিজেদের আলেম, ধার্মিক মনে করছেন। আপনারা নিজেই তো….

চলবে….

বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here