পবিত্র ভালোবাসা❣️পর্ব-১৩

0
1703

#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১৩

জান্নাত: আপনারা কি নিজেদের আলেম, ধার্মিক মনে করছেন। আপনারা নিজেই তো রাস্তা ঘাটে বোরকা পড়ে বের হোন না। এমনি তে তো বয়স ৩০ এর উপরে তাও এখনো ও মেয়েদের মতো সাজেন মনে হয় সেকেন্ড বিয়ে করতে চাচ্ছেন। আর আপনাদের ছেলে মেয়েরা যে কেমন আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। আর আন্টি আপনার মেয়ে তো ওইদিন কার সাথে না পোলায় গেছে কই তখন কই ছিলো আপনাদের আলেম আর জালেম। আসলে কি জানেন পরের জন্য কথা বলতে মুখে আটকাই না তখন নিজেদের ঘরের খবরের কথা মনে থাকে না। আর শুনুন অন্য কে কিছু বলার আগে নিজেদের নিয়ে আগে ভাববেন।

ইসরাত: জান্নাত তুই কি ভুলে গেছিস বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলতে নেই। ওনাদের সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিত।

জান্নাত: তাহলে ওনারা কেনো ভুলে গেছেন ছোটদের স্নেহ ও ভালো মন্দ বুঝানো ওদের দায়িত্ব।

ইসরাত: ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে খারাপ নামে ডাকা অথবা কাউকে বিদ্রুপাত্মকভাবে ডাকা উচিত নয়; বরং এর পরিবর্তে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের সুনাম, মর্যাদা অক্ষত রাখার জন্য যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে বিদ্রুপ না করে। কেননা তারা তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন বিদ্রপ না করে, কেননা তারা তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পরে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরনের আচরণ পরিত্যাগ করে না তারাই অত্যাচারী।’’ [সূরা হুজুরাত : ১১] তো ছোট এবং বড়দের আমরা কখনো খারাপ বা কটু কথা বলবো না জান্নাত বুঝতে পারছিস।

জান্নাত: হুম বুঝছি…

দাদিমা: দেখ তোরা ওর স্বামী কে নিয়ে কতো বাজে কথা বলছিলি আর এই মেয়েটা তোদের অসম্মান করাতে জান্নাত কে কত কথা বলেছে দেখছিস।

একজন মহিলা: মাফ করে দাও মা না বুঝে শুনে কত পাপ করছি

ইসরাত: আমার কাছে মাফ না চেয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে চান আর তওবা কাটেন।আল্লাহ তায়ালার একটি নাম হলো, আল-গাফুর: আল্লাহ ক্ষমাশীল, মার্জনাকারী। তিনি সর্বদা বান্দাকে ক্ষমা করা ও মার্জনা করার বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত, পরম ক্ষমাশীল হিসেবে স্বীকৃত। প্রত্যেকে যেমনিভাবে আল্লাহর রহমত ও দয়ার মুখাপেক্ষী, তেমনি তাঁর ক্ষমা লাভেরও মুখাপেক্ষী।হে পরম ক্ষমাশীল! আমাদেরকে খাঁটি তওবা করার তওফীক দান করুন। এমন তওবা যার দ্বারা আমরা যাবতীয় গুনাহ থেকে পরিপূর্ণরূপে বাঁচতে পারব। নিজেদের ভুলত্রুটি ও নাফরমানির উপর লজ্জিত হব এবং আপনার আনুগত্য করা ও আপনার নাফরমানি পরিত্যাগের উপর সংকল্পবদ্ধ হবো। আমাদের ক্ষমা করুন হে পরম ক্ষমাশীল!(আমিন)

সবাই বলে উঠলো আমিন…

অন্যদিকে…

ইসরাতের আব্বু: তো বাবা কেমন আছো

ঈশান: আলহামদুলিল্লাহ ভালো,,আপনি?

ইসরাতের আব্বু: আলহামদুলিল্লাহ…

ঈশান: তো আংকেল আন্টি কে সাথে আনলেন না কেনো?

ঈশানের বাবা: আংকেল কি ঈশান বাবা বল(ধমক দিয়ে)

ঈশান: কিন্তু…(পরে ওর বাবার চোখ দেখে আর কিছু বললো না) হুম বাবা…

ইসরাতের আব্বু: আরেহ ছেলেটাকে এইভাবে বকছিস কেনো? প্রথম প্রথম তো এমন হবেই। আর বাবা তোমার চাচীর শরীল টা বেশি একটা ভালো না গতকাল ইসরাতের বিদায়ের পর অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। বুঝোই তো একটা মাত্র মেয়ে আমাদের তাই এত তাড়াতাড়ি মন কি আর ঠিক করা যায়।

ঈশানের বাবা: তাহলে আগামীকাল ঈশান আর ইসরাত কয়েকটা দিন তোদের বাসায় থেকে আসবে তাহলে ভাবির মন টা ভালো থাকবে আর বিয়ের পর তো এমনি তেই যেতেই তো হয়।

ইসরাতের আব্বু: কিন্তু আমি তো ভাবছিলাম আজকে নিয়ে যাবো

ঈশানের বাবা: আসলে আম্মা বলছে আগামীকাল যাওয়ার জন্য

ইসরাতের আব্বু: আচ্ছা ঠিক আছে

ঈশান তো ইসরাতের বাবার বাসায় যাবার কথা শুনেই দাঁত কিড়মিড় করে বললো…

ঈশান: এই মেয়েটার জন্য এখন আমার স্বাধীনতা সব বিসর্জন দিতে হচ্ছে এর শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে মিসেস ইসরাত।

এই অনুষ্ঠানে ঈশানের দুই বেস্ট ফ্রেন্ড অর্ণিল ও তিয়াস ও এসেছে…

তিয়াস: দোস্ত কত আশা ছিলো তোর বউয়ের সাথে হাজার হাজার পিক তুলে ফেইসবুকে আপলোড দিবো কিন্তু সব ইচ্ছাই এখন পানি হয়ে গেলো…

অর্লীন: ওই হালা তোর লজ্জা করে না অন্যের বউ নিয়া পিক তুলবি। যদি এতই পিক তোলার ইচ্ছা থাকে তাহলে একটা বিয়ে করে ফেল। তখন যত পারিস ততো পিক তুলিস। বাই দা রাস্তা ঈশান তোর বোন জান্নাত পাগলী টা কই? আজ তো তার দেখাও পাচ্ছে না।

ঈশান: আর বলিস না ওই মেয়ের সাথে আমাদের মহারানীর কলেজ এ ফ্রেন্ড হয়েছে তাই মহারাণী এখন পর্দারানি হয়ে গেছে। আর এখন ওই মেয়ের সাথেই রুমের কুটিরে বসে আছে। আর হাদীস শুনছে। এই মেয়েটা বাড়িতে এসে আমার বাবা মা বোন দাদিমা সবাই কে নিজের দলে নিয়ে গেছে। আমার মনে এই মেয়ে জাদু জানে।

তিয়াস : ঈশান কি বলছিস তুই আমাদের জান্নাত আফা এখন পর্দা করে। যে মেয়ে কিনা প্রতিদিন ফেসবুকে হাজার হাজার পিক আপলোড দেয় সেই মেয়ে কিনা এখন পর্দা করে স্ট্রেঞ্জ….

অর্নিল: এই জন্যই তো দেখি ওর আইডি ডিএকটিভ। পরে ভাবছি হইতো কিছুদিনের জন্য হইতো এমন করছে।

ঈশান: আরেহ ওর পিক তো আর একটা দুইটা না হাজার হাজার তাই আইডি নষ্ট করে ফেলছে আর নিউ আইডি খুলছে আর ওইখানে ইসলামিক স্টোরি বা কথা পোষ্ট দেয়। আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই ছিলো তো আমি দেখে তো অবাক পরে ভাবছি এইটা কি আমার বোন নাকি অন্য কেউ।

তিয়াস: ওরে ভাই মুঝে মারো মুঝে মারো । এত দেখছি কেট্রিনা থেকে হুজরানী হয়ে গেছে।

অর্ণিল: ওই ভালোই তো হয়েছে। আমি কিন্তু এখন ভাবি কে নিয়ে প্রাউড ফিল করি।

ঈশান: তুই কি আমার ফ্রেন্ড নাকি অন্য কেউ…

তিয়াস: আরেহ মনে হয় আজ খেয়েছে কিছু..

অর্নিল: তোরা কোনোদিন ভালো হবি না। শুন ভালো হলে টাকা লাগে না ঈশানের মতো একটা বউ থাকলেই যতেষ্ট। ইসসসসসস কবে যে আমি ভাবির মতো একজন কে পাবো…

ঈশান: আমার টা নিয়া যা

অর্নিল: ঈশান আজ এই কথা বলছিস কিন্তু একদিন তুই দেখবি এই মেয়েই তোর পুরো লাইফ জুড়ে থাকবে। আর সেইদিন বলবি যে তুই কাকে এতদিন অবহেলা করেছিস।

ঈশান: তোর মতো বন্ধু থাকতে শত্রুর দরকার হয় না।

তিয়াস: ওই ঈশান তোর বিয়েতে দেখছি কোনো মেয়েই নাই যে একটু টাইম পাস করবো। এইটা বিয়ে নাকি শোক পালন বুঝতে পারছি না।

ঈশান: মেয়ে আছে কিন্তু তারা রুমের বাহিরে আসতে পারবে না।

তিয়াস: যত্তসব আজগুবি কথা।

অর্নিল: ঈশান তোর শালীকা নেই?

ঈশান: নাহ মহারাণী একাই।

তিয়াস: কেনো রে অর্ণিল তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস নাকি(কপাল নাচিয়ে)

ঈশান: এই মেয়ের যদি বোন থাকতো তাহলে তো এই মেয়ের মতোই আরেকটা সাবানা তৈরি হতো ভাগ্যিস আর কোনো বোন নাই তা আমার মতো আরেকজনের কপাল পুড়তো ।

অর্নিল: ঈশান এইটা কিন্তু একটু বেশীই বলে ফেলছিস। বাবির যদি বোন থাকতো আমি নিজে বিয়ে করে আমার বাসায় এনে তাকে রানীর মতো রাখতাম।

তিয়াস: হাহাহা ওই চল চল একটু হাঁটি এমনি বোর হচ্ছি এইখানে থেকে থেকে আবার তোদের কথায় এখন আরো বোর হচ্ছি।

ঈশান: হুম চল….

ঈশানের বাবা: জানিস ইমতিয়াজ(ইসরাতের আব্বু) ঈশান না অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। আজ একটু আগে দেখলাম পরে ঈশানের বাবা সব বললো ঈশান যে ইসরাত কে ফল কেটে দিছে আর খুব ভালো ব্যবহার করেছে….

ইসরাতের আব্বু: আলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ কি বলছিস তুই(খুশি হয়ে)

ঈশানের বাবা: একদম সত্যি,,,মনে হয় আমার ছেলেটা বুঝতে পেরেছি যে ইসরাত হচ্ছে ওর জীবনের আলো।

ইসরাতের আব্বু: জানিস এই কথা টা শুনে আমার বুক থেকে একটা পাথর সরে গেলো। কেননা আমি আমার মেয়ের জন্য এমন একজন ছেলে খুঁজছিলাম যে আমার মেয়েটাকে খুব ভালো রাখবে। আর ঈশান বাবা যেহেতু একদিনে এতটা বদলে গেছে ইনশাআল্লাহ পুরোপুরি বদলাতে বেশি সময় লাগবে না।

ঈশানের বাবা: ইনশাআল্লাহ….

জান্নাত ওর রুমে যাচ্ছে কি একটা আনার জন্য ঠিক তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাইতে চাইলে ওই লোকটা তাকে ধরে ফেলে,,,,,লোকটার দিকে তাকাতেই সে দেখলো……

চলবে….

বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

শিক্ষণীয় কিছু কথা: আমরা মাঝে মাঝে কথার মাঝে ছোটদের ও বড়দের অনেক কিছু বলে ফেলি যা বলা কিন্তু ভালো না। বড় রা যদি তাদের চরিত্র বা কথা ঠিক বলতে না পারে তাহলে তাদের বুঝাবো উচিত এমন ভাবে ছোটদের ও কেননা তারা না বুঝে এমন করে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here