#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১৪
জান্নাত ওর রুমে যাচ্ছে কি একটা আনার জন্য ঠিক তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাইতে চাইলে ওই লোকটা তাকে ধরে ফেলে,,,,,লোকটার দিকে তাকাতেই দেখলো তিয়াস আর সাথে সাথে ওর মনে ঘণ্টা বাজা শুরু করলো….
তিয়াস: এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম হটাৎ কার সাথে ধাক্কা খেলাম মেয়েটি পড়ে যাইতেই ধরে ফেললাম। মেয়েটা হিজাপ পরে মুখ ঢেকে রেখেছে শুধু চোখ দুটি দেখা যাচ্ছে। আর চোখ দুটি খুব চিনা লাগছে। পরে বুঝতে পারলো যে এইটা জান্নাত। কিরে তুই নাকি কেত্রিনা থেকে হুজরানি হয়ে গেছিস।(মজা করে)
জান্নাত তো এই কথাটা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো ….
জান্নাত: এই যে তিতা সাগর মনে করবেন না ভালো হয়ে গেছি বলে কথা পারি না।
তিয়াস: ও ও তাই বুঝি
জান্নাত: ওই সরেন সরেন আমার কাছ থেকে(দূরে সরে গিয়ে)
তিয়াস: ওই তোকে একদম খালাম্মা খালাম্মা লাগছে। তোর তো আর এখন বিয়ে হবে না।
জান্নাত: না হোক ভালো হইছে। আর নিজেকে তো কাকার মতো লাগে ইসসসসসস মুখের কি অবস্থা ওয়াক থু থু । একদম পাগলের মতো দেখা যাচ্ছে…
তিয়াস: তোকে তো আজ….(বলতে না বলতেই জান্নাত উধাও) হাই আল্লাহ এই মেয়েটা কই গেলো তাও এত তাড়াতাড়ি…(ভাবতে লাগলো)
রাতে….
দাদিমা: ওই ইসু আয় তো আমার পাশে
ইসরাত: হুম… দাদিমা বলেন।
দাদিমা: ওই শুন তুই আজ থেকে আমায় তুমি করে বলবি নিজের দাদী কে যেভাবে ডাকিস।
ইসরাত: আচ্ছা(বলেই দাদীমার খুলে শুয়ে পড়লো)
দাদিমা: ঈশান কি তোকে মেনে নিয়েছে বোন(মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)
ইসরাত: কি বলবো আমি মিথ্যা বলা তো পাপ। আবার ওনি ও তো বলছে যেনো কাউকে না বলি তো কি করবো এখন আমি (মনে মনে)
দাদিমা: কিরে বল…
ইসরাত: দাদিমা একদিনে কি সব ঠিক হয়ে যায় বলো। একদিন দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার নাতির মন আমি আমার #পবিত্র_ভালোবাসা দিয়ে ঠিক নিজের করে নিবো।
দাদিমা: ইনশাআল্লাহ,,,,
ঠিক এমন সময় জান্নাতের আগমন…
জান্নাত: বাহ ভালোই তো আমাকে রেখেই গল্প শুরু করে দিছো তোমরা(মুখ ফুলিয়ে)
ইসরাত: ওলে বাবালে আমাদের জান্নাত বাবু টা কি লাগ কলেছে(জান্নাতের গাল টেনে)
জান্নাত: করেছিলাম বাট এখন রাগ কমে গেছে (হেসে দিয়ে)
দাদিমা: তোদের দুইজনের বন্ধুত্ব টা খুব ভালো লাগে আমার। আল্লাহ তায়ালা যেনো তোদের এই সম্পর্ক অটুট রাখে।
জান্নাত ও ইসরাত: আমিন….
জান্নাত: দাদিমা আমি আজ নামাজ শিক্ষা বই এ একটা জিনিষ দেখছি বাট কিছুই বুঝতে পারি নাই।
দাদিমা: কি দেখছিস তুই?
জান্নাত: তাহাজ্জুদের নামায সম্পর্কে কিছু লিখা ছিলো কিন্তু কিছুই বুঝি নাই আমি…
দাদিমা: তাহাজ্জুদ শব্দটি আরবি। এর ব্যবহার পবিত্র কোরআনে আছে। তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্রা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এই পরস্পরবিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে ৭৯নং আয়াতের অর্থ এই যে, রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন।
জান্নাত: এইটা তো বুঝছি তুমি পুরো ডিটেইলস টা বলো না।
দাদিমা: আমার থেকে মনে হয় ইসরাতেই ভালো বলতে পারবে না তাই না ইসরাত।
ইসরাত: চেষ্টা করতে পারি(হেসে দিয়ে)
জান্নাত: তো বলা শুরু কর….
ইসরাত: হুম…তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত। তবে এটি নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগতে হয়, এজন্য তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি।
তাহাজ্জুদের নামাজ নবী (সা.)-এর জন্য অতিরিক্ত ফরজ হিসেবে নির্দিষ্ট ছিল। আমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ নয়, বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অবশ্য এই নামাজ নেককার ও আল্লাহভীরুদের বৈশিষ্ট্য।তাহাজ্জুদ নামাজ কু-প্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হৃদয় ও মননকে নির্মল করে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির) একেবারে যথার্থ।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত :৬৪)
তাহাজ্জুদ নামাযের সময় শুরু হয় অর্ধ রাতের পর। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম। তবে ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকলে ইশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নতের পর ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েয আছে। তবে পূর্ণাঙ্গ তাহাজ্জুদের সওয়াব ও মর্যাদা পেতে হলে, রাত ২টা বা ৩টার দিকে উঠে নামায আদায় করা জরুরি।
শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা আল্লাহর ভালোবাসায় নিদ্রা ত্যাগ করে জেগে ওঠে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ১৬)
শুধু নামাজ আদায় নয়, রাতের শেষ ভাগে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা খাঁটি ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত ব্যয়কারী ও রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৭)
তাহাজ্জুদ নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৩)
তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব!’ (বুখারি ও মুসলিম)
জান্নাত: তাহাজ্জুদের নামায কত রাকাত ইসু পাখি…?
ইসরাত: আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না।
প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। -সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩
আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন, অর্থাৎ, আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তেরো রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত পড়তেন, কখনো ছয় রাকাত পড়তেন। কখনো আট রাকাত পড়তেন। কখনো দশ রাকাত পড়তেন। সুতরাং তাহাজ্জুদের নামায ১০ রাকাত পর্যন্ত পড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আমরা সহীহ হাদীসে পাই। এর চে’ বেশি পড়া যাবে না, এমন নয়। যেহেতু এটি নফল নামায তাই যতো বেশি পড়া যায় ততোই সওয়াব। তাই ইচ্ছেমত পড়া যায়।
সেই সাথে চার রাকাতের কম পড়লে তা তাহাজ্জুদ হবে না, বিষয়টি এমনও নয়। তাই দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ নামায হিসেবেই গণ্য হবে। সময় কম থাকলে দুই রাকাত পড়ে নিলেও তাহাজ্জুদ নামায পড়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। রাতের এবং দিনের নফল নামাযের নিয়ত চার রাকাত করেও নিয়ত করা যায়, এমনিভাবে দুই রাকাত করেও নিয়ত করা যায়। কোন সমস্যা নেই।
জান্নাত: এই নামাজের জন্য কি নির্দিষ্ট কোনো সূরা আছে?
ইসরাত: তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন সুরা
দিয়েই এই নামায আদায় করা যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত মুখুস্ত থাকে
তবে, সেগুলো দিয়ে পড়াই উত্তম। কারন রাসুল (সাঃ) সব সময় বড় বড় সুরা
দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত
করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত নামাদ আদায় করা উচিৎ।
যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলে যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায়
করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক
রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই
নামায আদায় করতে হবে।
জান্নাত: তাহাজ্জুদ নামাজের আগে কি কিছু করতে হয়…
ইসরাত:তাহাজ্জুদ নামাযের আগে করণীয়ঃ
হুযাইফা (রাযিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন তখন
মিসওয়াক করতেন এবং আমাদেরকেও মিসওয়াক করার হুকুম দেয়া হত,
আমরা যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতাম, অতঃপর নবী (সাঃ) অযু করতেন
(মুসলিম) । তারপর দু’আ ও তাসবীহগুলি দশবার করে পড়তেন ।
তারপর নামায শুরু করতেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১০৮ পৃঃ)
দোয়া গুলো হলো:
(১) দশবার “আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)
(২) দশবার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই)
(৩) দশবার সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী (আমি আল্লাহ প্রশংসার সাথে তাঁর
পবিত্রতা ঘোষনা করছি)
(৪) দশবার সুব্হানাল মালিকিল কদ্দুস (আমি মহা পবিত্র মালিকের গুণগান করছি)
(৫) দশবার আসতাগফিরুলাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি)
(৬) দশবার লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ
নেই)
(৭) দশবার আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন দীক্বিদ্দুনিয়া ওয়া দীক্বি
ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ (হে আল্লাহ! আমি এই জগতের এবং পরকালের সঙ্কট
থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
জান্নাত: আলহামদুলিল্লাহ,,, আমি তাহলে এখন থেকে তাহাজ্জুদের নামায পড়া শুরু করবো।
দাদিমা ও ইসরাত: মাশাআল্লাহ….
তখন হটাৎ করেই ঈশান এসে ইসরাত কে ডাকা শুরু করলো…..
চলবে….
বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
শিক্ষণীয় কিছু কথা: তাহাজ্জুদ নামাজ আজ কিছু আলোচনা করলাম কিন্তু আমি তো আর সব কিছু পারি না তাই যদি ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা করবেন । সব নফল নামাজ থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ উত্তম কেননা এই নামাজ আল্লাহ তায়ালার বান্দা রা মাঝ রাতে ঘুম কে তুচ্ছ করে আর নামাজ আদায় করে । তো চলুন সব সময় যদি না পরতে পারি তাহলে মাঝে মাঝে পড়ি। কেননা মাঝরাতে মহান আল্লাহ তায়ালা কিন্তু তার বান্দাদের ডাকে ☺️ আমাদের উচিত তার ডাকে সাড়া দেওয়া।