#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_৩২
এই কথা শুনে তো সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে ইসরাত তো প্রায় জ্ঞান হারানোর পথে….
ইসরাত: বাবা এখন ওনি কোথায় ওনি কি ঠিক আছে। বাবা আমি ওনাকে দেখতে চাই দয়া করে আমাকে নিয়ে যান বাবা(কান্না করে)
ঈশানের বাবা ইসরাতের বাবা আর ইসরাত চলে গেলো হসপিটালে আর জান্নাত কে খবর দেওয়া হয়েছে ও আর অর্ণিল ও চলে যাবে আর ঈশানের মা খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তাই ইসরাতের মা আর ঈশানের দাদী ওনার সাথে থাকে…..
হসপিটালে…..
ঈশানের বাবা: ডক্টর আমার ছেলের কি হয়েছে ?কি অবস্থা ওর ?
ও কোথায় এখন?
ডক্টর: দেখুন মিস্টার চৌধুরী ওনার অবস্থা খুব খারাপ আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আর বাকি সব উপর ওয়ালার কাছে।
জান্নাত এসে ইসরাত কে ধরে কান্না করতে লাগলো ইসরাত জান্নাত কে হসপিটালে থাকা মেয়েদের একটি রুমে গেলো আর দুইজন নামাজ পড়তে লাগলো।
প্রায় দু ঘণ্টা পর….
জান্নাত আর ইসরাত আসলো…
বাবা এখন উনি কেমন আছেন?
অর্ণিল এসে জান্নাত কে বললো ….
জান্নাত তুমি ভাবি কে নিয়ে বাসায় যাও।
জান্নাত: কেনো? আর ভাইয়া কোথায়?
অর্ণিল: ঈশান ঠিক আছে তোমরা বাসায় যাও আমরা ওকে নিয়ে আসছি(কথাগুলো গলায় যেনো বেঁধে যাচ্ছে)
ইসরাত: কি হয়েছে ওনার আব্বু ?আপনি বলেন কি হয়েছে ?আপনাদের মুখ এমন কেনো?
ইসরাতের আব্বু: মা রে তোর জীবন টা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে তুই পারলি না তোর #পবিত্র_ভালোবাসা দিয়ে সুখে তোর স্বামীর সাথে সংসার করতে (ইসরাত কে জড়িয়ে ধরে)
ইসরাত: মানে কি বলছেন আপনি? কি হয়েছে ওনার কি হয়েছে আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই।
ঈশানের বাবা সোফার এক কোণে ঠায় হয়ে বসে রইলো আর ইসরাত তো পাগলামি শুরু করে দিছে…
আমি যাবো ওনার সাথে আমি কথা বলবো ওনি তো এখন আমার সব কথায় শুনে আমি জানি এখনও ওনি আমার সব কথা শুনবে আমি ওনার সাথে দেখা করবো(ইসরাত কেবিনে যেতেই অনেকগুলো নার্স এসে তাকে ধরে ফেললো)
জান্নাত: কি হয়েছে কি ইসু পাখি কে এইভাবে ধরেছেন কেনো? যেতে দিন ওকে ওর স্বামীর কাছে। আর ভাইয়ার কি হয়েছে তোমরা কিছু বলছো না কেনো?
অর্ণিল: বলেছি তো কিছুই হয়নি তোমরা যাও আমরা ওকে নিয়ে আসছি
জান্নাত: কেনো আমরা যাবো কেনো? একসাথে যাবো আর ভাইয়া কোথায় হুম। আচ্ছা ভাইয়া আর তোমরা কি কোনো প্ল্যান করছো ইসু পাখি কে সারপ্রাইজ দিবে বলে । তো আমাকে বলছো না কেনো? কি হলো বলো(অর্ণিল ধাক্কা দিয়ে)
ঈশানের বাবা: হুম সারপ্রাইজ বটে এই সারপ্রাইজ হলো বাপের কাধে ছেলের লাশ স্ত্রীর গায়ে সাদা শাড়ী বোনের কাছে ভালোবাসার এক টুকরো ঝরে যাওয়া মায়ের কাছে তার কলিজার সাত মানিক ছিনিয়ে নেওয়া
ইসরাত: বাবা কি বলছেন কি আপনি আমি কিছু বুঝতে পারছি না আমাকে বুঝিয়ে বলুন বাবা কি হয়েছে ওনার আপনারা এইভাবে লুকোচুরি করছেন কেনো? আমার কিন্তু এখন সত্যিই খুব কান্না পাচ্ছে….
ঈশানের বাবা: মা তোকে এনেছিলাম আমার বাড়িতে ছেলের বউ না নিজের মা বানিয়ে আর সত্যিই বলতে আমার ছেলে তোর সাথে যা করেছে তার শাস্তি পেয়েছে ।
ইসরাত: আমার সাথে ওনি কোনো অন্যায় করেন নি। আমি ওনাকে খুব ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি তাই আমি ওনার অবহেলা হলো সহ্য করতে পেরেছি আর এইখানে তো ওনার কোনও অপরাধ নেই। বাবা আব্বু প্লিজ বলুন না ওনার কি হয়েছে
ঈশানের বাবা: ঈশান আর নেই চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে আর কোনোদিন আসবে না আমাদের বিরক্ত করতে ও এখন ঘুমাচ্ছে খুব আরামে ঘুমাচ্ছে কেউ বিরক্ত করবি না আমার ছেলেটাকে । আমার ছেলেটা এতদিন কত মিথ্যা ছলনায় ভুগছিল আজ সে মুক্তি পেয়ে গেছে ওকে কেউ বিরক্তি করবি না।
ইসরাত: না ওনি আমাকে রেখে যেতে পারে না আমি ওনার সাথে একটিবার দেখা করতে চাই প্লিজ আমাকে যেতে দিন(নার্সেরা শক্ত করে ধরে আছে) আমাকে যেতে দিন বলছি(হিজাবের আড়ালে চোখ বেয়ে নোনা পানিতে ভরে যাচ্ছে আর হিজাব প্রায় ভিজে গিয়েছে) আমি যাবো ওনার সাথে(জ্ঞান হারিয়ে ফেলে)
জান্নাত: ইসু পাখি ইসু পাখি শান্ত হো(ইসরাত কে জড়িয়ে ধরে)
অর্ণিল গাড়ি ঠিক জান্নাত আর ইসরাত কে বাসায় দিয়ে আসে আর ইসরাত তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে তাই ওকে বসার রুমে সোফায় শুয়ে দেওয়া হয়……
অনেক্ষণ পর ইসরাতের জ্ঞান ফিরে আর দেখে বাসা ভর্তি লোকজন এসে পড়েছে সবাই কান্না করছে ওর আম্মু আর শাশুড়ি জান্নাত সবাই তাই ও কাওকে কিছু না বলে চলে গেলো নিজের রুমে আর চারপাশ তাকিয়ে দেখতে লাগলো পরে ওযু করে নামাজ পড়ে বলতে লাগলো….
হে আল্লাহ এমনি যদি তুমি করবে তাহলে কেনো আমায় আমার স্বামীর প্রতি #পবিত্র_ভালোবাসা শিখিয়েছো আমাকে কোন পাপের শাস্তি তুমি দিলে কি এমন পাপ করেছিলাম আমি আল্লাহ…..
মোনাজাতে প্রচুর কান্না করছে…..
এইদিকে…
আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছো অর্ণিল আমি ব্যাথা পাচ্ছি ছার আমায় অর্ণিল তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না। অর্ণিলের কাছে হাত দিয়ে কিন্তু ওর গায়ে তো ওর হাত লাগছেই না। এই তোরা আমার শরীল সাদা কাপড়ে ঢেকে দিচ্ছিস কেনো? তোরা কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না (চিল্লিয়ে বলতে লাগলো ঈশান)….
আমার বাড়িতে এত মানুষ কেনো ডেড কি হয়েছে বাড়িতে ডেড। মম কান্না করছো কেনো আর জান্নাত এইভাবে কান্না করছিস কেনো তোকে তো এখন পেত্নীর মতো লাগছে…
ঈশান বকবক করেই যাচ্ছে বাট কেউ ওর কোনো কথা শুনতে পাচ্ছে তাই সে খুঁজতে লাগলো ইসরাত কে….
গিয়ে দেখে ইসরাত মোনাজাত করে কান্না করছে….
এই ইসরাত দেখো সবাই কান্না করছে আবার তুমি ও । কিন্তু কি হয়েছে কেউ তো আমার কথা শুনছে না ওই ইসরাত তুমি গিয়ে বলতো আমি এই যে এইখানে বলো গিয়ে…..
ইসরাত ও তার কথা শুনছে না তাই সে গেলো আবারো বসার রুমে গিয়ে দেখে তিয়াস বাঁশ কাটার বেবস্থা করছে আর কান্না করছে….
তিয়াস ওই বজ্জাত পোলা কান্না করছিস কেনো? আর বাঁশ কাটছিস কেনো? এই দেখ এইকানে আমি(তিয়াস কে ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু তিয়াসের শরীলে ওর হাত যাচ্ছেই না তাই সে ওই সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা লাশটির কাছে গেলো বার বার চেষ্টা করতে লাগলো কাপড়টা সরানোর জন্য কিন্তু সে কিছুতেই পাচ্ছে হটাৎ একটি লোক এসে কাপড়ের মুখটা খুললো আর ঈশানের বাবা কেদে উঠল ঈশান লাশটির দিকে তাকিয়ে দেখে লাশটি আর কেউ না সে নিজেই তাই জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো আমি এইখানে ওইটা আমি না তোমরা কেউ কি শুনতে পাচ্ছো না।
আর এইদিকে ইসরাত কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গোসল করাতে কিন্তু সে পাগলের মতো আচরণ করতে লাগলো আর বললো আমি ওনার কাছে যাবো আমি ওনার কাছে যাবো যখন কিছু মহিলা ও সাদা শাড়ী পড়াতে লাগলো তখন সে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো এই হাসছে আবার এই কান্না করছে আবার এই দোয়া পড়ছে ……
ঈশানের লাশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জীবনের শেষ গোসল করানোর জন্য সে বার বার নিষেধ করা সত্বেও তাকে নিয়ে যাওয়া হলো…
বড়ই পাতার গরম পানি দিয়ে তাকে গোসল করানো হচ্ছে একটা বেঞ্চের উপর আর ঈশান কান্না করছে আর বলছে আমার শরীল পুড়ে যাচ্ছে প্লিজ আর কেউ এই পানি দিও না আমি সহ্য করতে পারছি না আর ভাবতে লাগলো কি বড় বাথরুমে সে গোসল করতো কত দামী দামী সাবান কত কিছু ব্যাবহার করতো আর এখন মাত্র ১০ টাকার সাবানে সে গোসল করছে গোসলের পর তাকে তিনটি টুকরো টুকরো সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে আর সে ভাবতে লাগলো কত ভালো ভালো দামী পোশাক সে পড়তো আর এখন এক দামে মাত্র ৫০০ টাকার পোশাক পড়ছে…. তখন সে বুঝতে পারলো এই দুনিয়ার বড়াই করা মাত্র ক্ষণিকের
তার লাশ যখন মসজিদের ওই পালকি(খাঠোলা) শুয়ে দেওয়া হলো তখন তার মা তা আবারো অজ্ঞান হয়ে গেলো জান্নাতের অবস্থা তো খুব খারাপ অর্ণিল তো নিজেকেই ঠিক রাখতে পারছে না এখন আবার জান্নাত কেও তার স্বাভাবিক করতে হচ্ছে….
ঈশান জোড়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো আমি এইখানে তোমরা কান্না বন্ধ করো…..
আর ইসরাতের কথা কি বলবো বার জ্ঞান হারাচ্ছে আবার পাগলের মতো আচরণ করছে তাই তাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হলো ইসরাতের বাবা মা ও খুব ভেঙ্গে পড়ছে…..
ঈশানের জানাজা পড়ানো শেষ করলো বেচারি ইসরাত শেষ দেখাও দেখতে পারলো না তার স্বামী কে …..
ঈশান কে যখন কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন তার মা বলতে লাগলো আমার ছেলে কে নিও যেও না ও আমাদের রেখে ওই অন্ধকারে থাকতে পারবে না। আমার মানিক কে কেউ নিয়ে যেও না।
ঈশান বার বার বলছে ডেড তিয়াস অর্ণিল তোমরা আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমার খুব ভয় করছে আমাকে নিয়ে যেও না আমি থাকতে পারবো না….
কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে….
তোমরা এইখানে আমাকে শুয়ে রেখেছো কেনো আমি তো ব্যাথা পাচ্ছি আমাকে এইখানে একা রেখো না ডেড আমি আজ থেকে তোমার সব কথা শুনবো যা বলবে তাই করবো আমাকে এইখানে একা রেখো না আমার খুব ভয় হচ্ছে….
ঈশান কে কবরে শুয়ে রেখে উপরে বাঁশের খুঁটি দেওয়া হচ্ছে…
ডেড আমায় বের করো তিয়াস অর্ণিল আমার বের কর এইখান থেকে আমার খুব ভয় করছে আমি তো জিবনে এমন কোনো ভালো কাজ করি নি, নিজের স্ত্রী কে কত অপমান করেছি কত কি বলেছি তার পর্দা কে অসম্মান করেছি ওকে আমি খুব ভালোবাসি প্লিজ আমাকে নিয়ে যা আমি ইসরাতের সাথে থাকতে চাই আমার আমার পরিবারের সাথে থাকতে চাই আমাকে নিও যাও ভিতর টা খুব অন্ধকার আমায় ভয় করছে আমার নিয়ে যাও…..
ঈশান খুব ডাকছে কিন্তু কেউ ওর ডাক শুনতে পাচ্ছে না ঈশান কে কবরে রেখে সবাই চলে এসেছে বাহিরে খুব ঝড় হচ্ছে….
ঈশান কবরে ওর লাশ কে বলছে….
তুমি দুনিয়ায় থাকতে খুব পাপ করেছো আর সেই পাপের শাস্তি পেতে হবে আমাকে কেনো তুমি তোমার বাবা মায়ের কথা শুনলে না কেনো নিজের নিষ্পাপ একজন ভালো সহধর্মিণীর কথা শুনলে না এখন তো তার শাস্তি তোমায় পেতেই হবে…..
ঈশান কে কবরের তিনটি প্রশ্ন করা হলো….
চলবে….