আমার ঠিক হয়ে থাকা বিয়েটা ভেঙে দিলেন আমার নিজের ছোট চাচী।পাত্র পক্ষকে তিনি ফোন করে বললেন, আমার একটা গোপন রোগ ছিল। এই জন্য সার্জারি করা হয়েছিল। এখন আর আমি কোনদিন সন্তানের মা হতে পারবো না!
পাত্রপক্ষের ওরা সবাই কথাটা বিশ্বাস করলো।
পাত্রের মা আমার মাকে ফোন করে যা ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই বকলো। মাকে বকে তার শখ মিটেনি। এরপর আমায় ফোন দিলো। ফোন দিয়ে বললো,’ এই মেয়ে, এতো খারাপ কেন তুমি? তোমার বাবা মা তোমায় নিয়ে এতোই বিপদে পড়েছে যে তোমার রোগ গোপন রেখে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে মানুষের সাথে। আমার তো মনে হয় শুধু এই সমস্যা না।গোপনে আরো বড় কিছু আছে। তোমার চরিত্রের ঠিক আছে কি না আল্লাহ জানে!’
আমি রাগের গলায় বললাম,’ এসব কি বলছেন আপনি? কে বলেছে আপনার কাছে এসব?’
উনি আমার কথা কানে না তুলে বললেন,’ উচিৎ কথা শুনলে গায়ে মরিচের মতো জ্বলুনি উঠে তাই না? হুহ।আমি কালকেই আসতেছি। উচিৎ শিক্ষা দিয়ে যাবো এসে।’
‘
যার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার নাম আদনান। তার মায়ের এমন বাজে আচরণের জন্য সরাসরি আদনানকে ফোন করলাম আমি। ফোন করে বললাম,’ আপনার মায়ের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আদনান? এসব কি বলছে আপনার মা?’
আদনান বললো,’ কি বলছে?’
আমি বললাম,’ আপনি কিছুই জানেন না নাকি?’
আদনান বললো,’ জানি।’
আমি বললাম,’ তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন যে?’
আদনান বললো,’ এমনিই জিজ্ঞেস করেছি।আর মার মাথা খারাপ হবে কেন? তোমরা কি ভেবেছিলে আমাদের বোকা বানিয়ে সব শেষ করে ফেলবে? আমার কাছে তোমায় গছিয়ে দিতে চেয়েছিলো তোমার বাবা মা। এখন ধরা পড়ে গেছো বলে আমার মায়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই না?’
আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আদনান পড়াশোনা জানা শিক্ষিত ছেলে।আমি ভেবেছিলাম অন্তত সে একটু ভালো আচরণ করবে। বিষয়টা বুঝবে। কিন্তু সেও তার মায়ের মতোই আচরণ করলো।
‘
এর পরদিন অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটলো।আদনানের মা এলো আমাদের বাড়িতে।এসে বললো,’ আংটিটা ফেরত দিন।’
ওরা আমার সঙ্গে আদনানের বিয়ে ঠিক করার পর আমার আঙুলে আংটি পরিয়ে গিয়েছিল সেদিনই। কিন্তু গতকাল ফোন করে এসব বলার পর আমায় পরিয়ে দেয়া আংটি গতকালই খুলে রেখে দিয়েছিলাম আমি।উনি এসে যখন আংটি ফেরত চাইলেন মা সঙ্গে সঙ্গে তা ফেরত দিয়ে বললেন,’ আল্লাহ যা করেন ভালোই করেন। আপনাদের মতো খারাপ লোকদের সঙ্গে আত্মীয় না হয়ে ভালোই হয়েছে। এরকম খারাপ লোকদের বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দেয়ার চেয়ে মেয়েকে গলা টিপে মে*রে ফেলা ভালো!’
আদনানের মা কথার উত্তর দিলো না। সে সরাসরি চলে গেল আমাদের ছোট চাচীর ঘরে। গিয়ে আমাদের ছোট চাচীর বড় মেয়ে শিলার আঙুলে সেই আংটি পরিয়ে গেল। শিলাকে তার ছেলের জন্য বউ করে নিবে।
আর আমরা তখনই বুঝতে পারলাম আসলে ঘটনা কি ঘটেছে।কে এই অপবাদ দিয়েছে আসলে।
ছোট চাচী লোভে পড়ে এই কাজটা করেছেন। আদনান ধনী লোকের ছেলে। তারপর বাপের একমাত্র ছেলে।আর কোন ভাই বোন নাই। সংসারে ঝামেলা নাই।লোভ তো হতেই পারে!
মা ছোট চাচীকে ডেকে বললেন, ‘ এই কাজটা কিভাবে করলা রাবেয়া? আমার মেয়েই কি আর তোমার নিজের মেয়েই বা কি? কিভাবে আমার মেয়ের সঙ্গে এমন নোংরা কাজটা করলা তুমি?’
ছোট চাচী সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন। বললেন, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা কিভাবে এসব শুনেছে।
মা বললেন, ‘ আচ্ছা ধরলাম তুমি কিছুই জানো না। কিন্তু যে ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে সেই ছেলের কাছে তোমার মেয়ের বিয়ে দিচ্ছো।এটা কি ঠিক হচ্ছে?’
চাচী বললেন,’ আপা, আপনি রাগের কারণে ভুল ভাবে জিনিসটা চিন্তা করছেন।আমি কোন ভুল করছি না।তাকদীর হলো আসল বিষয়। কপালে থাকলে একভাবে না একভাবে বিয়ে হবেই। এই ছেলের সঙ্গে আপনার মেয়ের জোড়া মিলানো নাই।তাই বিয়ে হয় নাই। এই জন্য রাগ করলে কি হবে আপা?’
কি অদ্ভুত কান্ড। ছোট চাচী সত্যি সত্যিই লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছেন।মা এ নিয়ে আর কথা বাড়াননি।কথা বাড়ালেই তো তর্ক হবে। ঝগড়া ঝামেলা হবে।কি দরকার এসব করে!
কিন্তু আমরা কথা না বাড়ালেও তারা চুপ থাকে না।
ছোট চাচীর মেয়ে শিলা মাঝেমধ্যেই আমাদের ঘরে আসে।
সেদিন এসে গলার নতুন সোনার চেইন দেখিয়ে বললো,’ আপু, আদনান এটা আমায় দিয়েছে।এক লাখ টাকা দাম এটার।’
এর কদিন পর এসে কানের এক জোড়া দোল দেখিয়ে বললো,’ কানের দোল গুলো কেমন আপু? ডিজাইনটা দেখ তো!’
আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেখলাম তাকিয়ে। বললাম,’ সুন্দর।’
শিলা হাসলো। মুচকি হেসে বললো,’ কে দিয়েছে জানো?’
আমার জানার কোন আগ্রহ নাই।তাই কথাই বললাম না। কিন্তু আমি কথা না বললেও বা জানার কোন রকম আগ্রহ না দেখালেও সে বললো ,’ আদনান পাঠালো।’
এরপর গতকাল এসে বললো,’ আপু, আমি তো মালদ্বীপ যাচ্ছি।’
আমি খানিক অবাকই হলাম। বললাম,’ কোথায় যাচ্ছিস?’
শিলা বললো,’ মালদ্বীপ। আদনান আমায় নিয়ে যাবে।’
আমি বললাম,’ তোদের তো বিয়ে হয়নি এখনও। বিয়ের পর যা।’
শিলা অট্টহাসি হেসে বললো,’ তোমার চিন্তাভাবনা কিরকম যেন সেকেলে ধাঁচের আপু। মানুষ বয়ফ্রেন্ড নিয়েই তো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভেকেশন কাটায়।ডেট করে।আর সে তো আমার হবু বর। তার সঙ্গে গেলে সমস্যা কি!’
আমি বললাম,’ গোনাহ হবে। আল্লাহকে ভয় পাওয়া যদি সেকেলে চিন্তা ভাবনা হয় তাহলে আমি সেকেলে চিন্তা ভাবনার মানুষই। এখন তুই যা এখান থেকে।তোর মতো আধুনিক চিন্তা ভাবনার মানুষদের সঙ্গে কথা বল গিয়ে।’
শিলা গেল ঠিকই আমার কাছ থেকে। কিন্তু সে গিয়ে আমাদের পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে বানিয়ে বানিয়ে বলে বেড়াতে লাগলো, আমি নাকি আদনানের চরিত্র নিয়ে পঁচা পঁচা কথা বলেছি। আদনান আমায় বিয়ে করেনি বলে নাকি আমার সহ্য হচ্ছে না।আমি শিলার সুখ দেখতে পারছি না!
ওরা এমন আচরণ করতে লাগলো যে আমি একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম।সত্যি সত্যি আমার চোখে জল এলো।আমি এই কষ্টের কথা শুধু আল্লাহর কাছেই বললাম।
‘
শিলা আদনানের সঙ্গে মালদ্বীপ গেল ফেব্রুয়ারিতে। ওখানে পনেরো দিনের মতো ছিল। তারপর ওখান থেকে আসার মাস খানেক পরেই আদনানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের দু মাস খুব সুন্দর কাটলো। কিন্তু দু মাস পর হুট করে শিলা এসে আমার উপর ভয়াবহ রকমের এক অভিযোগ দিয়ে বসলো।মার কাছে এসে বললো, আমি নাকি আদনানের সঙ্গে গোপনে প্রেম করছি। এই জন্য তার সংসারে আগুন লেগেছে।
শুধু মার কাছে বললে কথা ছিল, সে এ বাড়ি ও বাড়ি সবার কাছে বলে বেড়াতে লাগলো।মার কাছে বললো, আমি আদনানের সঙ্গে প্রেম করছি কিন্তু অন্যদের কাছে বললো ভিন্ন কথা। বললো, আমি নাকি রাত দিন আদনানকে ফোন দেই। আমি নাকি বলেছি তার দ্বিতীয় বউ হতেও আমার কোন আপত্তি নাই। আমাকে বউ করে নিজের ঘরেও নিতে হবে না। বাইরের কোন ঘরে রাখলেও হবে।
‘
‘
(চলবে)…
#গল্পঃ_পরনিন্দা
#সূচনা_পর্ব |০১|
#লেখাঃ_অনন্য_শফিক
—-