#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#১৯
নানান রকম খাবারের আয়োজন করা হয়েছে নিবিড়ের বাড়িতে। এতিমখানার বাচ্চাদেত নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।সাথে আত্মীয় স্বজনদের। মোশারফ হোসেন চাইছেন প্রিয়তাকে সাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।নিবিড়ের চার ফুফু,চাচা,চাচী মিলে সবাই এসেছে।শুধু তার ছোটো চাচাই নিখুঁজ তাই তিনি নেই।বাকীরা নিচে বসার ঘরে আড্ডা জমিয়েছে।
সালমা বেগম আর মোশারফ হোসেন এসে,আজ তোমাদের জন্য একটা বড়সড় সারপ্রাইজ আছে।
নিবিড়ের বড় ফুফু রোকসানা বেগম বললেন,ভাই “তোর ছেলেটাকে তো এখনো দেখলাম না।তোর সারপ্রাইজ তো পরের কথা।
নিবিড়ের মেজো ফুফু বললো,ভাই তোর ছেলে বড় বিজনেসম্যান বুজলাম তাই বলে আমাদের সাথেও দেখা করা যায় না।নাকি আমাদের ওর সাথে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেখা করতে হবে?
সালমা বেগম মুচকি হেসে,মেজো আপা,তুমি ভালো করেই জানো আমার ছেলেটা এইসব পছন্দ করে না।সবসময় নিজের মতোই থাকে।আমি আর তোমার ভাই আসছি সেই ব্যাপারে কথা বলতে।
নিবিড়কে আমি ডেকে আসছি একটু আগে ও রেডি হচ্ছে।
তোমাদের যে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলেছে সেটা দেখার জন্যও তো ওয়েট করতে হবে তাই না?
সবাই চুপ করে আছে।কিছুক্ষণ যেতেই নিবিড় সাদা পাঞ্জাবী পরে নেমে এসে,কেমন আছো সবাই?
বড় ফুফুর কাছে এগিয়ে এসে সালাম করে,বছরের এই একটা দিন তোমাদের সবাইকে কাছে পাই।সবাই নিবিড়ের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল করলো,সাদা শাড়ির মাঝে গোল্ডেন কালারের পাড়ি, গায়ে সোনার গহনা,একটা মেয়ে নেমে এসে মোশারফ হোসেন আর সালমা বেগমকে সালাম করলো, দাদীকেও সালাম করতেই, কিরে পিউ আইজ দেহি তোরে চাঁন্দের লাহান লাগতাছে।
আমার নাতি দেখলে তো চোখই ফিরাইবো না।দেওলা হইয়া যাইবো।
-দাদী তোমার নাতি তো,দেওয়ানা হবে না।কারণ সে তো আমার দিকে একবারে জন্যও চোখ দেয় না।ওই যে দেখো সবার সামনে থেকেও কীভাবে কথা না বলে চুপচাপ হয়ে একপাশে বসে ফোন টিপছে।মনে হচ্ছে ফোনই তার ঘরের বউ।
নিনিড়ের দাদী হা হা হা করে হাসি দিয়ে,আইচ্ছা আমি ওরে পাইলে পরে বকে দিমুনি।তুই সবাইরে যাইয়া সালামখান কইরা ফেল।সবাই কেমনে চাইয়া আছে।
প্রিয়তা সবাইকে সালাম দিয়ে দাঁড়াতেই, মোশারফ হোসেন প্রিয়তার কাঁধে হাত রেখে,তোদের সারপ্রাইজ। আমার ঘরের লক্ষ্মী।
নিবিড়ের বড় ফুফু দাঁড়িয়ে, লক্ষ্মী মানে,ভাই তুমি এইসব কি বলতেছো?
-হু,,,আমি ঠিক বলছি।ও নিবিড়ের বউ।
-সবাই অবাক হয়ে,নিবিড় বিয়ে করলো কবে?আমরা কেউই জানি না।নাকি তোমরা আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি।
নিবিড় কিছু না বলেই চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে ফোন টিপেই যাচ্ছে।
নিবিড়ের ছোটো ফুফুও এবার চুপ করে থাকলো না।তিনিও দাঁড়িয়ে, ভাই মেয়ের বংশ পরিচয় কী?
বাবা কী করে? নিবিড়ের মতো বড় বিজনেস,নাকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার?
মোশারফ হোসেন বোনদের কি বলবে বুজতে পারছে না।সবাই এখন একে একে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলো মোশারফ হোসেনকে।তিনি এর থেকে ওর, ওর থেকে এর মুখের দিকে তাকিয়েই আছে।তিনি জানতেন প্রিয়তাকে নিয়ে সবাই আঙ্গুল তুলবে।তাই তিনি এতোদিন বাড়িতেও ঘটা করে কাউকে কিছু বলেনি।মোশারফ হোসেন চেয়েছিলেন যেদিন নিবিড় মন থেকে এসে বলবে বাবা প্রিয়তাকে সবার সামনে আনা দরকার সেদিনই তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে নিয়ে আসবেন।কারণ তিনি বিয়ের দিন ভোর রাতে নিবিড়ের বলা সব কথাই শুনেছিলেন।ফজরের নামাজ আদায় করে তিনি যখন মসজিদ থেকে ফিরছিলেন তখন নিবিড় বলছিলো,আমার পরিচয় আপনি কারো সামনেই দিতে পারবেন না, এবং সবার সামনে নাটক করার বিষয়টাও।কিন্তু আজ! আজও কী নিবিড় চুপ করে থাকবে? প্রিয়তা কি সত্যিই আমার ছেলের মনে কোনো জায়গা তৈরি করতে পারেনি?
ভাই তোমার মুখে কী কোনো কথা নাই?
বড় বোনের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠে, দেখ তোরা সবাই মিলে যেভাবে শুরু করেছিস এইটা ঠিক নয়।মেয়েটা যেখান থেকেই আসুক না কেনো ও এখন নিবিড়ের বিয়ে করা বউ।আমার ঘরের লক্ষ্মী। তোরা জানিস না।আমার ঘরের লক্ষ্মী শিক্ষিত, এবং আত্মমর্যাদার অধিকারী। নিজে কষ্ট পেলেও সবাইকে হাসি মুখে ভালোবেসে যায়।
-ভাই এ-যুগে ইমোশনাল দিয়ে চলে না।আমার তো মনে হয় নিবিড় এই মেয়েকে মোটেও পছন্দ করে না।আমি অনেকক্ষণ থেকেই খেয়াল করছি মেয়েটার দিকে তো নিবিড় আড় চোখেও একবারও তাকায়নি।আর যা সেজেছে ভূতের মতো,ভাই এসব সাজ নিবিড়ের মায়ের কালেই চলে এসেছে, এখন আর না।আমাদের নিবিড় যেমন স্মার্ট তারও দরকার ছিলো একটা মর্ডান মেয়ে।যে কিনা নিবিড়ের সাথে ভালো মানাতো।কথাগুলো শুনে প্রিয়তা নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে আর বার বার নিজের চোখের পানিগুলোকে মুছে নিচ্ছে।
-এনাফ ইজ এনাফ।তোমাদের কাছ থেকে আমি মর্ডান মেয়ে চেয়েছি? তোমরা সবাই মিলে একটা মেয়ের পিছনে পড়েছো কেনো?হ্যাঁ ও অন্য ট্রাইফের চলা ফেরা করে, ওর মাঝে কোনো আধুনিকা নেই।নেই কোনো আভিজাত্যের অহংকার। কিন্তু ও যথেষ্ট বুদ্ধিমান।এবং সে হাজার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করেই এসেছে।
তোমরা কি বলেছিলে তখন? ওর বাবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নাকি বিজনেস! ওর বাবাই নেই। ওর ফ্যামিলি আমাদের ফ্যামিলির মতো নয় এইটা ঠিক, কিন্তু সেই ফ্যামেলিটা এতোটাও খারাপ নয়।
নাদিয়া নিবিড়ের কাঁধে হাত রেখে, ভাই চুপ কর।ওরা আমাদের আপনজন।ওদের সাথে এভাবে,,,,
-আপু প্লিজ আজ যদি আমি চুপ করে থাকি তাহলে প্রিয়তাকে অসম্মান নয় আমাকে অসম্মান করা হচ্ছে।
মেজো ফুফু তুমি তখন বললে না প্রিয়তাকে ভূতের মতো দেখাচ্ছে? কিন্তু সত্যি এটাই এই ভূতটাই আমার বউ।ও যেমন আছে আমার কাছে তেমনটাই ভালো লাগে।লাগবে না ওর মর্ডান হওয়ার।
প্রিয়তা অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই দৌড়ে উপরে উঠে গেলো।
নিবিড় আরও কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে,প্লিজ আজ তোমরা এসেছো সবাই ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করো।আমি চাইনা আমার ওয়াইফকে নিয়ে আর কোনো কথা হোক।
মাহিদ এসে, স্যার এতিমখানার ছেলেরা এসে গেছে।
– ওকে মাহিদ, বাবা আপনি চলুন, মায়ের কবর যিয়ারত করে সবাইকে খাওয়ার দেওয়া হোক।
ছেলেরা বসাই বাহিরে চলে গেলো।আর মেয়েরা সবাই থমথমে হয়ে বসে কথাবার্তা বলছে।নিবিড় উপরের দিকে তাকিয়ে, মনে মনে বলছে,তোমার কান্না কেনো জানি আমার সহ্য হয় না এখন আর।এতোসুন্দর করে সেজে এসে সাজটাই নষ্ট করে দিলে চোখের পানিতে?
প্রিয়তা যারা তোমার চোখে পানি নিয়ে এসেছে একদিন দেখবে তারাই তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসা দিয়ে ঘিরে থাকবে।নিবিড় বাহিরে যেতেই মোশারফ হোসেন নিবিড়ের কাঁধে হাত দিয়ে থামিয়ে,
-বাবা কিছু বলবেন?
মোশারফ হোসেন ছেলেকে মুখে কিছু না বলে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।অনেকক্ষন থাকার পর নিবিড়কে ছেড়ে কবরের কাছে চলে গেলেন।
নিবিড় বাবার কান্ড দেখে মুচকি হেসে, বাবা আমি জানি আপনি কেনো আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আপনার লক্ষ্মীর পক্ষ হয়ে কথা বলছি তাই।
সবাই খাওয়া দাওয়া করছে,নিবিড় প্রিয়তাকে না দেখে নিজের রুমে এসে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে প্রিয়তা তাকে দেখে চোখ মুছে,আপনি?
নিবিড় কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,এখানে বসে আছো কেনো?সবার হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আসলে,,,,প্রিয়তা উঠে নিবিড়কে থামিয়ে, আমি সে জন্য কাঁদছি না।উনারা যা বললেন তা তো ঠিকি বলেছেন।আপনার সাথে আমার যায় না।কিন্তু উনারা তো জানেন না আমি আপনার জীবনে বেশিদিন নেই।
শুধু শুধু আমার জন্য বাবাকে কতোগুলো কথা শুনতে হয়েছে।
বিশ্বাস করুন আমি যদি জানতাম এমন কিছু হবে তাহলে আমি নিচেই যেতাম না।আসলেই তো আমি কিসব ভূতের মতো সেজেছি।আপনিও তো আমার দিকে একবারের জন্যও তাকাননি।আপনার ফুফু যে বলেছে,আমি ভূতের মতো সেজেছি দেখেই আপনি আড় চোখেও তাকাননি।
নিবিড় মুচকি হেসে, নিজের ফোন বের করে প্রিয়তার সামনে ধরে, ফোনের দিকে তাকাও তো মেয়েটাকে চিনতে পারো কিনা?
প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো চোখে তাকাতেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে,এইতো আমার ছবি!
নিবিড় আরও কয়েকটা ছবি দেখিয়ে ভ্রু নাচিয়ে, কি?
– তার মানে আপনি প্রথম থেকেই আমাকে ক্যামেরায় দেখছিলেন?
-তোমাকে কখন দেখলাম? দেখলাম তো আমার বউকে।তোমার মতো পেত্নীর দিকে তাকাতে আমার বয়েই গেছে।
-কিহ্ আমি পেত্নী?
-তা নাতো কি? প্লিজ এখন এসব ন্যাকা কান্না থামিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।এখন সত্যি সত্যিই ভূতের মতো দেখাচ্ছে তোমায়।তোমারভাগ্য ভালো, বাবা তোমাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে না হলে যে আরও কতটা বছর বুড়ী হয়ে থাকতে আল্লাহ ভালো জানে।
প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে তখনি নিবিড়ের ফোন আসতে,হ্যাঁ মিস্টার সুমন বলুন।
প্রিয়তাকে রেখে নিবিড় রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
মোশারফ হোসেন দরজায় দাঁড়িয়ে, মারে আসবো?
প্রিয়তা দরজার দিকে তাকিয়ে, বাবা আসো।
প্রিয়তার কাছে আসতেই প্রিয়তা মোশারফ হোসেনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
মোশারফ হোসেন মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে,আমি জানি তোর অনেক কষ্ট হচ্ছে ওদের কথায়।এই বুড়ো মানুষটা ওদের হয়ে তোর কাছে ক্ষমা,,,,,
প্রিয়তা মোশারফ হোসেনকে থামিয়ে দিয়ে,,বাবা আজ আমার কোনো কষ্ট হয়নি। কারণ কষ্টের থেকে আজ আমার আনন্দের পাল্লার ওজনটা অনেক বেশি।যে মানুষটা কারো পক্ষে কথা তো দূরের কথা টু শব্দটিও করে না সে মানুষট কিনা আমাকে এতোটাই কেয়ার করে আমার হয়ে সবার সাথে লড়েছে।এই মানুষটার সাথে দেড় বছর নয় জনম জনম যে বাঁচতে ইচ্ছে হয়।
মোশারফ হোসেন অবাক হয়ে, দেড় বছর মানে?
প্রিয়তা কথা কাটিয়ে, না মানে উনি যদি,,,,,
প্রিয়তা বলার আগেই নিবিড় এসে, কী ব্যাপার?
মোশারফ হোসেন নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে, তুই এতোক্ষণ বেলকনিতে ছিলি?
-জ্বি বাবা,মিস্টার সুমন ফোন করেছিলেন।আমার পরশু সিঙ্গাপুরে একটা মিটিং আছে। আমাকে এখান থেকে একটু পরেই বেরিয়ে যেতে হবে।
-কবে ফিরবি?
-সাত আট দিন লেগে যাবে।
মোশারফ হোসেন কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
নিবিড় প্রিয়তার কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই,আপনার সত্যিই যেতে হবে?
-কেনো তুমি কি আমাকে মিস করবে?
-আ আ আমি আপনাকে কেনো মিস করবো? ওকে আপনার ইচ্ছা,আপনি যাবেন তাতে আমার কী? আমার তো কিছু যায় আসে না।বরং আমার জন্য ভালো।কয়েকটা দিন শান্তিতে থাকতে পারবো।কোনো ঝগড়া নেই।রাক্ষসেরর রাগ দেখতে হবে না।
কথাগুলো বলতে বলতে প্রিয়তা খাটের কাছে এগিয়ে এসে, একটা থ্রি পিজ হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের জন্য পা বাড়াতেই, নিবিড় হাত ধরে কাছে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে,আস্তে করে বললো,সত্যি তুমি ভালো থাকবে?
প্রিয়তাও ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো, হ্যাঁ থাকবো।
-সত্যি?
-হু,
-আবার বলো?কথাটা বলতে বলতে নিবিড়ের ঠোঁট যেনো প্রিয়তার ঠোঁটের সাথে মিলে যাচ্ছে।
প্রিয়তা আর কথা বলতে পারছে না।বুকের ভিতরের ধুকপুক শব্দটা তীব্র হয়ে গেছে।গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।পুরোটা শরীর যেনো কাঁপতে শুরু করেছে।
প্রিয়তার অবস্থা দেখে নিবিড় প্রিয়তাকে ছেড়ে দিয়ে,তোমার মাঝে কিছু আছে?
কথাটা শুনে প্রিয়তা হকচকিয়ে, কিছু নাই মানে? আমি পারফেক্ট একটা মেয়ে।
-আমার তো সন্দেহ হচ্ছে।তুমি সত্যিই মেয়ে কিনা?
প্রিয়তা তোতলাতে তোতলাতে,কিকি কি আ আ আজে বাজে বকছেন।আমি সত্যিই মেয়ে।
নিবিড় মুচকি মুচকি হেসে, তাই?তাহলে তো প্রমাণ করতে হয়!কিন্তু তুমি আমাকে দেখলেই ভয়ে যেভাবে কুঁকড়ে যাও তাতে তো সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক কিছু নয়?
-দেখুন,হ্যাঁ এইটা ঠিক আপনি আমার কাছে আসলে আমার কেমন জানি লাগে।
-কেমন লাগে?
-পুরো শরীর কাঁপতে থাকে।বুকের ভিতর শব্দটা যেনো বেড়ে যায়।মাথা বনবন করে ঘুরে।
-ওহ্,তাহলে তুমি মেয়ে।
কথাটা বলেই নিবিড় প্রিয়তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবার ফোন টিপছে।
-আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না?
নিবিড় মাথা উঠিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে, হু,একটু খানি।এখন যাও মুখটা ধুয়ে আসো।শাড়িটা আমি যতক্ষণ আছি ওটাই থাকুক।আমি গেলে না হয় চেইঞ্জ করো।
প্রিয়তা হাতের জামা কাপড় রেখে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।
ভাই,ভাই! রিসাদ সহ নাদিয়া নিবিড়ের রুমে এসে,তুই এখানে বসে আছিস?
-কেনো কি হয়েছে? নিবিড় খাটে ফোন রেখে ঘড়িটা পরে নিলো।
-তোরা খাবি না? প্রিয়তা আর তুই তো কিছুই খাসনি।
আর তুই কি কোথাও যাচ্ছিস চেইঞ্জ করে নিলি?
-হু,রিসাদ সাহেব, আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। ওইখানে আমাদের মিটিং আছে।
-স্যার মিটিংএর ব্যাপারে তো আমরা কিছু জানি না।
– হু,এই মাত্রই মিস্টার সুমন ফোন দিছে।আপনি আর মাহিদ অফিসের কাজ সামলে নিবেন।আর হ্যাঁ অধরার কাল থেকে স্কুলের গাড়ি আলাদা। আপনাকে আর কষ্ট করে দিয়ে আসতে হবে না।
-ভাই তুই অধরার জন্য গাড়ি কিনেছিস আবার?কী দরকার ছিলো।স্কুলের গাড়িতেই না হয় চলে যেতো।
-আপু তুই আর জুহিই তো আমার সব।আমার যা আছে সব তো আর আমার একার নয়।
রিসাদ মুচকি হেসে, এতো বোকামি মানুষ করে? বোন বোন করেই এই শালাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া যাবে।আমি শুধু প্রিয়তাকে একবার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসি তারপর তুই তোর বোনকে নিয়েই শোক পালন করিস।
কথাটা ভেবেই চোখ দুটো যেনো প্রিয়তাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে।
প্রিয়তা ওয়াশরুম থেকে এসে,একি আপনি রেডি হয়ে গেছেন? রিসাদের দিকে চোখ পড়তেই,আপু আপনারা এইখানে?
-হ্যাঁ প্রিয়তা,এসেছি তোমাদের খেতে ডাকতে এখন দেখি ভাই হঠাৎ করে এইভাবে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে।
প্রিয়তা চুপ করে আছে, নিবিড় একেবারে রেডি হয়ে,প্রিয়তা চলো।আমি খেয়েই বেরিয়ে যাবো।
আমি চলে যাওয়ার পর কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবা।আর হ্যাঁ দাদীর দিকে একটু খেয়াল রেখো।
নিবিড়কে বিদায় দিয়ে সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।প্রিয়তা রুমে এসে নিবিড়ের জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে নিতে নিতে দুপুরে কথা গুলো মনে পড়েতেই চোখের পানিগুলো যেনো অঝোরে ঝরছে।
চলবে,,,,,,