#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#২
___নুর জাহান বেগম প্রিয়তার কথা মতো ঘরোয়া ভাবেই বিয়ের আয়োজন করলেন।
গায়ে হলুদের দিনও কেউ কলেজে যায় নুর জাহান বেগম সেটা ভেবেই পায় না।বয়স হয়েছে তো কী হয়েছে একটু আনন্দ করতে দোষ কী?
ইভা আর অনিলা সকালেই বাপের বাড়ি চলে এসেছে।এসেই প্রিয়তাকে না দেখে নুর জাহান বেগমকে গাদা কথা শুনিয়ে দিলো।ইভার মেয়ে উপমা নিজের মাকে এইভাবে বকাঝকা করতে দেখে,
-মা তুমি শুরু করেছোটা কী।খালা মণি তো একটু পর চলেই আসবে তাই না?
-উপমা,তোকে কেউ এখানে কথা বলতে ডাকেনি।যা এইখান থেকে।
উপমা গম্ভীর হয়ে নুর জাহান বেগমের কাছে চলে গেলেন।
প্রিয়তা ক্লাস শেষ করে,বাহিরে আসতেই জুহি পিছন থেকে ডেকে উঠলো,ম্যাডাম!
প্রিয়তা পিছনে ফিরে তাকিয়ে জুহিকে দেখে মুচকি হেসে,জুহি?
জুহি কিছু না বলে ছলছল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৌড়ে এসে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা কিছুটা অবাক হয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে।
-কী হয়েছে মেয়েটার?
আস্তে করে পিঠে হাত দিয়ে জড়িয়ে, কী হয়েছে জুহি?
তুমি কাঁদছো কেনো? কলেজে কেউ কিছু বলেছে?
ক্লাসেও দেখলাম মন মরা হয়ে ছিলে।সবার সামনে জিজ্ঞেস করবো না বলেই কিছু বলিনি।
-ম্যাডাম,আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না।আপনার বিয়ে হয়ে গেলে নাকি আপনি আর কলেজে আসবেন না।
প্রিয়তা জুহির চোখের পানি মুছে দিয়ে,তোমাকে কে বলেছে এসব কথা?বিয়ে করলে যে কলেজে আসা যায় না।এইটা ঠিক না।তবে হ্যাঁ এই নিয়ে আমার বরের মায়ের প্রবলেম। ভ্রান্ত ভুল ধারণা কিছু আছে।সেগুলো কাটিয়ে শিগগিরই আমি তোমাদের কাছে ফিরে আসবো।এইবার বলো তোমাকে কে বলেছে আমি আর আসবো না?
-রিয়া বলেছে।বললো আমার আপু বিয়ের পর হয়তো আর কলেজে আসবে না।
ম্যাডাম বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে অনেক মিস করবো।ভাইয়ার পরে কেউ যদি আমায় ভালোবাসে সেটা হলেন আপনি।
-পাগলী মেয়ে।তুমি এক কাজ করো আজ বিকেলেই আমাদের বাসায় চলে আসো।তোমার বাসার নাম্বারটা দিও তো।আমি কথা বলে তাদের ইনভাইট করবো।
জুহি নাম্বার দিয়ে প্রিয়তার কাছ থেকে ক্লাসে চলে গেলো।
প্রিয়তা জুহির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখটা মলিন করে,আমার নিজের লোকেরাও একবারও বলেনি আমায় মিস করবে।সবাই আমাকে তাড়াতে পারলেই যেনো বাঁচে।আর এই মেয়েটা আমাকে এতোটাই আপন ভাবে যে আমি চলে যাবো শুনে সে কান্না করছে।প্রিয়তা কথাটা ভাবতেই চোখের খাঁচায় অশ্রুগুলো যেনো আটকা পড়ে গেলো।
নিবিড় ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছা আর অফিসের ফাইল গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।
ল্যান্ডফোন বাজতেই উঠে গিয়ে,
আসসালামু আলাইকুম, নিবিড় বলছি।
-ওয়া আইলাইকুমুস্ সালাম।আমি প্রিয়তা,জুহির ম্যাডাম বলছি।
-আপনি সেই ম্যাডাম?
-কোন ম্যাডাম?
-না মানে আপনার বিয়ে হওয়ার কথা তাই না?
প্রিয়তা কিছুটা সময় নিয়ে,জ্বি।
-আমি জুহির ভাই।আপনি জানেন আপনার জন্য জুহি অনেক কান্নাকাটি করে? আসলে আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আর জুহি যদি কাউকে একবার ভালোবাসে তাকে নিজের কাছ থেকে হারাতে চায় না সহজে।
-হু,সেটা আমি বুজতে পেরেছি।আর ও খুব ভালো একটা মেয়ে।
-হুম ঠিক।কিন্তু আপনার সাথে তো অনেক কথায় বলে ফেললাম।কী কারণে ফোন দিয়েছেন সেটাই জানা হলো না।
প্রিয়তা গলায় একটু জড়তা নিয়ে,আসলে কাল আমার বিয়ে।ওইভাবে কোনো আয়োজন করা হয়নি।ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে।জুহিকে আমি খুব ভালোবাসি তাই আমি চাই আপনারা সবাই কাল বিয়েতে আসুন।আর জুহিকে বলেছি আজকেই চলে আসতে।
-হু, ঠিক আছে।আমি বাবাকে বলে দিবো।আসলে আমার অফিস আছে আমি যেতে পারবো না।
একটা কথা বলি? যদি কিছু মনে না করেন।
-জ্বি বলুন।
-আপনার কী আগে বিয়ে হয়েছে নাকি এটাই প্রথম। আসলে মেয়েদের তো এতো দেরিতে বিয়ে খুব কমই হয়।
-আপনি ঠিক বলেছেন।কিন্তু এটা আমার প্রথম বিয়ে।
আসলে জীবনে অনেক লড়াই করেছি।তাই বিয়েটা আর করা হয়নি।যাইহোক আপনার আসবেন কিন্তু।
আসলে আমি খুব খুশি হবো।
নিবিড় কিছু বলতে গিয়েও যেনো বললো না।গলাটা যেনো আঁকড়ে ধরে ছিলো।প্রিয়তা ফোন রেখে দিয়ে রিকশা নিয়ে বাসায় চলে আসলো।প্রিয়তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে উপমা দৌড়ে এসে, খালা মণি কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ্ মা।তুমি কেমন আছো?
-আমি একদম জোশ।
-প্রিয়তা মুচকি হেসে, পাকা মেয়ে একটা।
ইভা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রাগী স্বরে বললো, তুই আসলে কী প্রমাণ করতে চাস আপু? আমায় একটু খুলে বলবি?
প্রিয়তা মাথা তুলে তাকিয়ে,কী হয়েছে?
-আজও কী তোর কলেজে যাওয়া এতোই প্রয়োজন ছিলো?মানুষের কী বলবে?বিয়েটা তো করছিস নিজের এককাল পেরিয়ে, এখন আবার মানুষের কথা শুনানোর জন্য এতো উঠে পড়ে লেগেছিস কেনো?
আমার আর অনিলার শ্বশুর বাড়ির লোক এসেছে।তাদের আপ্যায়ন বলে তো একটা কথা আছে। নাকি সেটাও তোর ধারধারে না।মা একা হাতে কী সব সামলাতে পারে? তোদের বাড়িতে তো আমরা এসে পড়ে থাকি না দুই একদিনের জন্য আসি সেটাও কী কাজ করে আমাদেরকেই খেতে হবে?
ইভা ঝাঁঝিয়ে কথাগুলো বলছে আর প্রিয়তা মুগ্ধ চোখে দেখছে।খানিকটা সময় পার করে কিছু না বলেই মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে ঘরে চলে গেলো।ড্রইংরুমে আত্মীয় স্বজনরা এসেছে।কেউ বসে পান চিবুচ্ছে কেউবা চা।প্রিয়তাকে দেখে ইভার শ্বাশুড়ি বললো,কী গো মা? আজকের দিনেও কাজে যাওয়া লাগে? আমরা আসছি তোমাগো বাড়িতে আর তুমিই নাই।
ইভা সেই ব্যাপারে কিছু না বলে বললো,কেমন আছেন খালা?
-সেই আর ভালা,বাঁতের ব্যাথাটা ইদানীং খুব বাড়ছে।বউডারে কত কইরা কইলাম, এহন যামু না।কিন্তু কোনো কতাই শুনলো না।ঠিক আমারে ধইরা বাঁইন্ধা নিয়া আইলো।
-খুব ভালো করছে।আপনা বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
নুর জাহান বেগম হলুদ আর লাল পাড়ের একটা শাড়ি এনে প্রিয়তাকে না দেখে খাটে রেখে দিয়ে নিজে রুমে আবার গেলো গয়না নিয়ে আসার জন্য।
প্রিয়তা ওয়াসরুম থেকে এসে শাড়িটা দেখে তাচ্ছিল্য হাসি মুখে ফুটিয়ে মাথা নাড়লো।
-প্রিয়তা আসবো?
কথাটা শুনে তাকিয়ে দেখে অনিলার শ্বাশুড়ি সায়মা খাতুন অনিলার মেয়েটাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা মুচকি হাসলো।আসুন খালা,আপনার শরীর কেমন আছে?
-এইতো মা আলহামদুলিল্লাহ্।আমি খুব খুশি হয়েছি তোমার বিয়ের কথা শুনে।জীবনে পরিবারের জন্য অনেক করেছো।এবার নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নাও।
প্রিয়তা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়মা খাতুনের পাশে বসে,খালা এক মাত্র আপনিই সে লোক যে আমায় একটু বুজেন।আপনাকে আমার কেনো ভালো লাগে জানেন? আমার নিজের মাও কখনো কখনো অবুজ হয়ে যায়।কিন্তু আপনি আমাকে এতোটাই বুজেন যে মাঝে মাঝে আমি খুব অবাক হই।ছোটো বেলা থেকে শুনে এসেছি মা বাবা নাকি সন্তানের মনের সব কথা বুজে। কিন্তু আমার বেলা তা নয় খালা।বাবাকে যতোদিন কাছে পেয়েছি তখন তো এতোটাও বুজ ছিলো না।কিন্তু মা, মাকে কখনো দেখিনি আমার মনের লুকানো কথা একটু বুজে নিতে।
সায়মা বেগম কোল থেকে বাচ্চাটাকে শুয়ে,প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে, আমি মাঝে মাঝে তোমাকে নিয়ে অনেক ভাবি,একটা মেয়ে চাইলে সব পারে।তোমাকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে প্রিয়তা।একটা মেয়ে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছে।সেই গল্পটা কি কখনো কেউ জানতে চেয়েছে? না চাইনি।কেউ চাইবেও না।সবার জন্যইতো নিজেকে উজাড় করে দিয়েছো।তাঁর বিনিময় তুমি পেয়েছো একত্রিশ বছরের বুড়ির অপবাদ।অনিলা আমার ছেলের বউ হতে পারে, কিন্তু তোমার মতো মন মানুষিকতা সে পায়নি।আমার খুব আফসুস হয়।কেনো জানো?
আমার ছেলেটা যদি অনিলাকে না বিয়ে করে তোমাকে বিয়ে করতো।
-খালা, অনিলাও কিন্তু খারাপ নয়।হয়তো ওর রাগ একটু বেশি মানিয়ে নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সায়মা বেগম মুচকি হাসলেন।
-আচ্ছা,বুজেছি।নতুন সংসারে যাচ্ছো নিজের দিকে খেয়াল রেখো।সবার মন রাখতে গিয়ে যেনো নিজের কথা ভুলে যেও না।
প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে, তখন হঠাৎ করেই কেউ এসে জড়িয়ে ধরতেই প্রিয়তা অবাক হয়ে,জুহি!
-হুম ম্যাডাম আমি।রিয়ার সাথেই চলে এলাম।ভাইয়াকে বলে ম্যানেজ করে চলে এসেছি।
-খুব ভালো করেছো।খালা, ও আমার ছাত্রী।রিয়ার সাথেই পড়ে।কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে সে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে।
সায়মা বেগম কথাটা শুনে না হেসে পারলেন না।
জুহি অবাক হয়ে,কে বলে দিয়েছে আপনাকে এইসব?
ভাইয়া বলেছে।আসার সময় ভাইয়া বলেছিল আপনি ফোন দিয়েছেন।তাহলে ভাইয়া সব বলে দিয়েছে?
-হু,একটু একটু।রিয়া যা ওকে নিয়ে যা।দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নে।
নুর জাহান বেগম বিড়বিড় করে ঘরে ঢুকে, কিরে তুই শাড়িটা পরিসনি?
-না মা, কিন্তু তুমি বিড়বিড় করছিলে কী নিয়ে?
-আর বলিস না।গহনার বাক্সটা কোথায় রেখেছি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
-তাই মেজাজটা বিগড়ে গেছে।তাই তো?
-উহু,,এতো কথা বলিস না তো।নে এগুলো পরেনে।আমার অনেক কাজ পড়ে আছে। সেগুলো শেষ করে আসছি।
রাতে প্রিয়তা সামান্য একটু হলুদ লাগিয়েছে,হাতেও সামান্য মেহেদি দিয়েছে। তাও জুহি জোর করে নিজে লাগিয়ে দিয়েছে।সবাই যে যার মতো করে ঘুমিয়েছে।
জুহি প্রিয়তার রুমে এসে প্রিয়তার সাথেই ঘুমিয়েছে।মাঝ রাতে প্রিয়তা অস্বস্তি লাগছে দেখে উঠে বসলো। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।এমন একজন কী এই পৃথিবীতে নেই যে তাঁর সব সুখ দুঃখকে নিজের সাথে ভাগাভাগি করে নিবে? আমাকে নিজের মতো করে পড়ে নিবে।নিজের মনে সাজিয়ে নিবে হাজার খানেক কবিতা।আছে কী কেউ এমন?
কথাগুলো ভেবেই চোখ দুটো যেনো ভারী হয়ে আসছে।
উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে লোহার গ্রিল গুলো শক্ত করে মুঠোয় চেপে নিয়ে,দূর আকাশে তাকিয়ে আছে।সাদা মেঘ গুলো চাঁদটাকে ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা ছুটে চলছে নিজের ঠিকানায়।পিছনে তাড়া করছে আরও কয়েক খন্ড মেঘ।
প্রিয়তা নিজের অজান্তেই হাসি দিয়ে,হয়তো সামনের মেঘটাই আমি।আর পিছনে মেঘগুলো ছিলো আমার ভাবনা,আমার অতীত, আমার অভাব, আমার তিন বোনের ভবিষ্যত। হয়তো সেসব পিছন থেকে তাড়া করেছে বলেই তো আজ আমি প্রিয়তা।
হঠাৎই মনে পড়লো,জাহিলের কথা।লোকটার সাথে আমার বিয়ে।এখন অনেক আধুনিক যুগ।বিয়ের আগে নাকি ছেলে মেয়ের অনেক কথাই থাকে।কিন্তু জাহিল একটা বার ফোন দেয়নি।একটা বার জানতেও চায়নি আমার মতামত। এতোটা কি মা বাধ্যগত ছেলে? হয়তো তাই।
সকাল সকাল প্রিয়তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।উঠে গিয়ে সবার জন্য চা বানালো।সকাল বেলা ঠিক সময় চা না পেলে ইভার মাথা ঠিক থাকে না।চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলবে।সে কথা চিন্তা করে নুর জাহান বেগমও উঠে এসে,কিরে তুই চা না করে আমাকে ডাকলেই তো পারতি।
-সমস্যা নেই। বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে চা করা যাবে না।সেটা কোনো আইনে নেই।
প্রিয়তার কথায় নুর জাহান বেগম কিছু বললেন না।চায়ের একটা কাপ নিয়ে ইভার রুমে চলে গেলেন।
দুপুর গড়িয়ে এসেছে।সবাই সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত।কিন্তু প্রিয়তাকে সাজানো নিয়ে কারো তেমন মাথা ব্যাথা নেই।উপমা বসে বসে গেম খালায় ব্যস্ত।তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।দশ বছরের উপমার দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা হেসে,তোমাকে আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
-খালা মণি, তুমি যখন বউ সাজবে দেখবে তোমাকেও খুব সুন্দর লাগবে।
উপমা আরও কিছু বলতে যাবে তখনি ইভা এসে ধামকিয়ে, উপমা তুই এখানে? যা তো তোর আব্বুকে ডেকে নিয়ে আয় বাহিরে থেকে।আর আপু তুই এইভাবে জোকারের মতো বসে আছিস কেন?
যা রেডি হয়ে নে।
-আমি নিজে সাজবো?
-তাহলে তোকে কে সাজাবে? বুড়ো বয়সে ঢং করিস না তো।অনেক দেখিয়েছিস।
নুর জাহান বেগম আস্তে করে বললো,তুই সাজিয়েদে না।বিয়ের দিন নিজের হাতে সাজলে কেমন দেখায় না?
-মা,তুমিও না।আপুকে সাজালে আমি নিজে কখন সাজবো।তোমার মেয়ের এসব ন্যাকামি দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।
জুহি এতোক্ষণ তাকিয়ে সব দেখছিলো।কাল থেকে সে খেয়াল করে যাচ্ছে সবার আচরণগুলো।এরা মানুষ নাকি মানুষ রূপে ডায়নী।
জুহি এগিয়ে এসে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে,আপনারা সাজতে যান।আমি ম্যাডামকে সাজাবো।
ইভা চলে যেতেই রিয়াও এগিয়ে এসেছে।
জুহি প্রিয়তাকে নিজের হাতে সাজাতে বসে গেলো।
প্রিয়াতার চোখের পানির কারণে চোখে কাজল লাগাতে পারছেনা।জুহিও যেনো নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললো।প্রিয়তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস তাঁর নেই।কিন্তু সে কাল থেকে এইটা বুজে নিয়েছে এই পরিবারে তাঁর ম্যাডাম মোটেই ভালো নেই।
বরপক্ষ এসেছে কয়েকজন নিয়ে,সাথে জাহিলের মাও।
তাঁরা এসে ড্রইংরুমে বসতেই মোশারফ হোসেনে এবং সালমা বেগম এসেছেন।
জুহি তাদেরকে নিয়ে প্রিয়তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
প্রিয়তা কিছুক্ষণ কথা বলতেই হঠাৎ জুহি সালমা বেগমকে বললো,মা ভাইয়া আসেনি?
-নারে।ও অফিসের কাজ আছে বলে আসলো না।
জুহি আর কিছু বললো না।মোশারফ হোসেন ড্রইংরুমে বরপক্ষের সাথে গিয়ে বসে পড়লেন।সবাইকে দেখছেন।জাহিলকে দেখে মোটেও ওনার ভালো লাগেনি।বিরক্তিকর চোখ নিয়ে সব কিছু দেখে যাচ্ছেন তিনি।
একটু পর ইভার স্বামী জাফর এসে কাজী সাহেবকে বললেন বিয়ে পড়ানোর জন্য।
চলবে,,,