#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#২৪
নিবিড়ের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে প্রিয়তার কাঁধে খামচে ধরে আছে।নাজিফা বেগম এসেই,মুচকি হেসে, আরে প্রিয়তা তোমরা দাঁড়িয়ে কেনো? বসো!
নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে,তোমাকে সরাসরি দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো।পরে ভাবলাম বিয়েতে তো দেখা হবেই তাই আর প্রিয়তাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।এতো অল্প বয়সে চারদিকে তোমার এতো নাম ডাক আমি তো এসব দেখে খুবি অবাক।নিশ্চয়ই তোমার বাবা মা অনেক ভাগ্যবান তোমার মতো সন্তান পেয়েছেন।
নিবিড় নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে,খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো,আমি জানি না আমার মা ভাগ্যবান কিনা আমার মতো সন্তান পেয়ে,কিন্তু আমার বাবা ভাগ্যবান যিনি আমায় উজাড় করে ভালোবেসেছেন।
নাজিফা বেগম নিবিড়ের কথা শুনে মুচকি হেসে,আচ্ছা বাবা বসো।রাফিয়া তোর বাবাকে বল প্রিয়তা এসেছে ওর হাজবেন্ডকে নিয়ে।
নিবিড় বসে প্রিয়তাকে নিজের পাশে বসিয়ে,দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে পাশে ফিরে দেখে মোজাম্মেল হোসেন।
নিবিড়ের বিস্ময়ের সীমাই কাটছে না।কি থেকে কি শুরু করবে,এখন তার কিভাবে রিয়েক্ট করা উচিত? প্রিয়তাকে কথা দিয়েছে এমন কিছু করবে না যাতে খারাপ কিছু হয়।
কিন্তু এই মহিলা আমার মা! আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।এতোটা বছর আমি মা মা করে নিজের জীবনটাকে কারো সাথেই মিশাতে পারিনি।সব সময় মনে করতাম মা আজ বেঁচে থাকলে এইটা করতাম ওইটা করতাম।মা হয়তো আমায় খাইয়ে দিতো।মা আমায় আদর করতো।প্রতিটি দিন নিজের সাথে এগুলো বলেই কাটাতাম।আর সেই মা দিব্যি দিন কাটাচ্ছে? আমার আর বোনের কথা কি মায়ের একবারও মনে হয় না? দাদীর কাছ থেকে ছোটো বেলা থেকে শুনেছি,মায়ের সাথে সন্তানের নাড়ির সম্পর্ক। সন্তানকে নাকি দূরে থেকলেও বলতে পারে তার সন্তান তার আশেপাশেই আছে কিন্তু আমার মা!মায়ের একবারও মনে হয়নি আমি সন্তান তার সামনে আছি?
প্রিয়তা নিবিড়ের কানের কাছে এসে,আমি জানি আপনার ভিতরে কী চলছে।প্লিজ এমন কিছু করবেন না যাতে আপনি আরও কষ্ট পান।
নিবিড় প্রিয়তার দিকে রাগন্বিত টকটকে লাল চোখে তাকিয়ে আবার নাজিফা বেগম আর মোজাম্মেল হোসেনের দিকে ফিরে,আসলে আমার ওয়াইফ প্রিয়তা কাল থেকে আপনাদের কথা বলে যাচ্ছে।শুনে আমি বেশ অবাক হয়ছি।কারণ আমার ওয়াইফ কারো এতো প্রশংসা করে না।আমাদের বাসায় কাল একটা পার্টি আছে। আজ আমি নিজে এসেছি আপনাদের ইনভাইট করার জন্য।
প্রিয়তা অবাক হয়ে,কিসের পা,,,,,
নিবিড় আবারও বড়সড় চোখ করে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই প্রিয়তা চুপ করে গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে, ডোন্ট মাইন্ড! আমার ওয়াইফ কথা একটু বেশি বলে।যার কারণে ওকে থামাতে হয়।
আপনারা যদি কাল আমার বাসায় আসেন আমি খুব খুশি হবো।
মোজাম্মেল হোসেন একগাল হাসি দিয়ে বললো,আরে তোমার মতো একজন মানুষ আমার বাড়ি নিজে এসে ইনভাইট করছে আর আমরা যাবো না?
নিশ্চয়ই যাবো।কি বলো নাজিফা?
– হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছো।আমরা অবশ্যই যাবো।
-তাহলে আজ আমরা আসি।কাল দেখা হচ্ছে।
নিবিড় প্রিয়তাকে নিয়ে বাহিরে এসে প্রিয়তাকে রেখেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়তা কিছুই বুজে উঠতে পারলো না।অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি আসলো।
কিন্তু নিবিড়কে না দেখতে পেয়ে,দৌড়ে মোশারফ হোসেনের কাছে গিয়ে,বাবা তোমার ছেলে আসেনি?
-না।কেনো কি হয়েছে? ও কি কোনো ঝামেলা করেছে ও খানে গিয়ে?
-না বাবা। ঝড় আসার পূর্বে সব যে ভাবে নিস্তব্ধ হয় যায় মানুষটাও ঠিক সেইরকমই করেছে।প্রিয়তা ওই বাড়িতে কি হয়েছে সব বলতেই মোশারফ হোসেন বললো,তুই এইটা কি করলি?তোকে আমি নিষেধ করেছিলাম।এখন ছেলেটার যদি কিছু করে বসে?
মোশারফ হোসেন রুম থেকে বেরিয়ে এসে,মাহিদকে ফোন দিলো।মাহিদ কিছুই বলতে পারলো না।রিসাদকেও ফোন দিলো সেও কিছু বলতে পারলো না।
প্রিয়তা নিজের উপর নিজের খুব রাগ হচ্ছে।কেনো করলাম আমি। আমি উনার ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেললাম না তো?বিকাল গনিয়েছে কিন্তু নিবিড়ের খবর কেউ বলতে পারেনি।মোশারফ হোসেন থানায় যেতে পারছে না।কারণ নিবিড়ের কিছু শুনলে সাংবাদিক পাগলের মতো ছুটে আসবে।নিবিড় ফিরে আসলে এইটা নিয়ে সবার উপর রাগে যাবে।মোশারফ হোসেন বললো আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আপাতত কিছু করার নেই।
বাড়ির সবাই এটাই বুজতে পারছে না কি এমন হলো নিবিড় এমন করেছে।প্রিয়তা কী অন্যায় করেছে যার কারণে নিবিড় কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে।
প্রিয়তা আর মোশারফ হোসেন কাউকে কিছু বললো না।
সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমাট বেঁধেছে।চারদিকে প্রচন্ড বাতাস।শেফালী গিয়ে সব রুমের জানালা বন্ধ করে দিলো।
বাহিরের ঝড়ের গতি যেনো বাড়তেই থাকলো।প্রিয়তা স্তব্ধ হয়ে আর বসে থাকতে পারছে না।
মোশারফ হোসেনের কাছে গিয়ে,বাবা আমার মনে হয় এইভাবে বসে থাকলে চলবে না। বাহিরে প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে। এই ঝড় বৃষ্টির মাঝে উনি কোথায় গিয়ে বসে আছেন আল্লাহ জানে।
-মারে,আমি কী করতে পারি তুই বল? যে হারিয়ে যায় তাকে খোঁজ করা যায়।আর যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।যতক্ষণ না সে নিজে থেকে ফিরে আসে।
-ঠিক আছে বাবা, তাহলে আমি খুঁজতে যাচ্ছি।আমি পারবো না উনাকে বিপদে রেখে শান্তিতে বাড়িতে বসে থাকতে।
প্রিয়তা বাড়ির ড্রাইভারকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।বিভিন্ন জায়গায় খোঁজার পরও প্রিয়তা তাকে ফেলো না। রাত আটটা বেজে গেছে, বৃষ্টির কমার কোনো লক্ষ্মণ নেই।প্রিয়তা নিরুপায় হয়ে বাড়ির পথে আসতেই দেখে রাস্তার পাশে একটা খোলা জায়গায় নিবিড়ের গাড়িটা দেখা যাচ্ছে।
-চাচা আপনি গাড়ি থামান।আপনার স্যারের গাড়িতো এখানে দেখা যাচ্ছে।
-কিন্তু মা তুমি নামার দরকার নেই।আমি গিয়েই দেখে আসি।
-না চাচা,আপনাকে দেখলে হয়তো ও আরও রেগে যাবে।আপনি ছাতাটা আমার কাছে দিন।
প্রিয়তা ছাতা নিয়ে নেমে গিয়ে দেখে গাড়ির ভিতরে কেউ নেই।মাথা উঠিয়ে সামনের দিকে ফিরে দেখে নিবিড় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে সামনে এগিয়ে গিয়ে,আপনি এখানে?আর আমি আপনাকে কত জায়গায় খুঁজেছি আপনি জানেন?
নিবিড় চোখ বন্ধ করেই গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-নিবিড় প্লিজ, আপনার ঠান্ডা লাগবে।এইভাবে কতক্ষণ থেকে বৃষ্টিতে ভিজছেন আপনি? আপনার কিছু হলে বাবা নিজেকে সামলাতে পারবে না।প্লিজ বাড়ি চলুন সবাই অপেক্ষা করছে।কথাটা বলে প্রিয়তা নিবিড়ের হাত ধরেতেই, নিবিড় একঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে চিৎকার দিয়ে,গেটআউট, নাউ গেটআউট।
প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকিয়ে,বা আমি যাবো না।আমি জানি যা করেছি ঠিক করেনি।আমার শাস্তি আপনি নিজেকে কেনো দিচ্ছেন?
-শাস্তি! কিসের শাস্তি? শাস্তি তো ছাব্বিশ বছর আগেই নাজিফা বেগম আমার আর আমার বোনকে নিজের হাতে দিয়ে গেছে।
-আমি জানি আপনার কতটা কষ্ট হচ্ছে।আসলে আমি আপনাকে ওই বাড়িতে না নেওয়াই উচিত ছিলো।
-প্রিয়তা তুমি নিজেকে দোষ দিয়ে কী হবে? দোষ তো আমার কপালের।ছোটো বেলা থেকে প্রতিটি দিন নিজেকে কতটা অসহায় লাগতো তোমাকে বুজাতে পারবো না।সবার মা সবার পাশে ছিলো।যখন স্কুল কলেজে পড়ার সময় কেউ মায়ের গল্প করতো তখন অঝরে চোখের পানিগুলো গড়িয়ে পড়তো।দিনের পর দিন রাতের পর রাত মা মা করে কতো কেঁদেছি তা কাউকে বুজাতে পারবো না। এইসএসসি শেষ করে বাহিরে চলে গেলাম পড়ালেখা শেষ করার জন্য।সেখান থেকে এসেই বিজনেস শুরু করলাম।তৈরী হলো, আইএন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। শুরু হয়ে গেল জীবনের নতুন যুদ্ধ। প্রতিবছর মায়ের মৃত্যু বার্ষিকির দিন নিজেকে একা করে বন্ধ ঘরে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি।এটাই কি তার প্রতিদান প্রিয়তা?শুনেছি জীবনে মায়ের ছেয়ে আপন কেউ হয় না।দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরে যার কারণে মায়েরা কখনো সন্তানের জন্য খারাপ হয় না,তাহলে আমার বেলায় এমন কেনো কেনো? আমার কী অন্যায়? মেয়েরা ছলনাময়ী হয় জানতাম তাহলে আজ থেকে আমার জীবনে এটাও প্রমাণ হলো মায়েরাও ছলনাময়ী।
প্রিয়তা নিবিড়ের একদম সামনে এগিয়ে গিয়ে ছাতাটা মাথার উপর ধরে, কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, প্লিজ,,,, এবার বাড়ি চলুন।এভাবে নিজেকে কেনো কষ্ট দিচ্ছেন?
নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে, আমার মাথায় ছাতা ধরে লাভ কি?
মানুষের জীবনের মাথার বড় ছায়া মা।আমার মাই তো সেটা বুজলো না।তুমি অন্য মেয়ে হয়ে কী বুজবে?
অবশ্য জানো তোমার সাথে আমার এখন একটা মিল আছে।তুমি ছোটো বেলা থেকে সবার কথা, গঞ্জনা সয়ে বড় হয়েছো আর আমি হয়েছি ঠকিয়ে।
নিবিড় প্রিয়তার হাত থেকে ছাতা ফেলে দিয়ে,প্রিয়তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,পৃথিবীতে যাই ঘটে যাক না কেনো তুমি আমায় ঠকিও না।আমি আর সহ্য করতে পারবো না।জীবনে যাই হয়ে যাক না কেনো আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও যাওয়ার চিন্তাও করো না।যতটা দিন বেঁচে আছি তোমার বুকে আমায় একটু ঠাই দিও।
প্রিয়তা নিবিড়ের কথাগুলো শুনে নিজেও কাঁদছে।
গাড়ির ড্রাইভার এসে,স্যার! এবার বাড়িতে চলুন।বড় স্যার ফোন দিয়েছেন।
নিবিড় প্রিয়তাকে ছেড়ে, চাচা আপনি বাড়ি যান।আমি প্রিয়তাকে নিয়ে আমার গাড়ি নিয়েই আসছি।
ড্রাইভার চলে যেতেই, নিবিড় প্রিয়তার চোখ মুছে দিয়ে,আর কাঁদবে না।এই যে দেখো আমি তো কাঁদছি না।এখানে কেনো এসেছি জানো? ভেবেছি বৃষ্টির মাঝে সব কালো চোখের পানিগুলো মুছে নতুন করে শুরু করবো।কখনো নাজিফা বেগমকে নিয়ে ভাববো না।
মা তো আমার বাড়িতেই আছে তাই না প্রিয়তা?
যে আমার জন্য না খেয়ে রাতে অপেক্ষা করে।কখন আমি আসবো রাত জেগে বসে সেই অপেক্ষা করে।জানো আমার যখন জ্বর হতো মা সারারাত কান্না করতো আর নামাজ পড়ে আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতো।তাকেই বলে মা।
-আপনি ঠিক বলেছেন।আপনার মা আজও কিন্তু আপনার অপেক্ষায় বসে আছে। যখন শুনেছে আপনি কোনো কিছু নিয়ে রাগ করে বেরিয়েছেন তখন থেকে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি রাগ করে।
নিবিড় প্রিয়তাকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ করতে করতে,আচ্ছা তুমি কী করে জানলে নাজিফা বেগম রাফিরার মা।আর তুমি বাসা চিনলে কি করে?
-সেদিন পার্টিতে আপনি বললেন না আমার কি হয়েছিলো? সেদিন আমার মাথা ব্যাথা করেনি।আমি আপনাকে মিথ্যা কথা বলেছিলাম।আমি উনাকেই দেখেছি।এবং আমি শিওর হয়ার জন্য সাজিদ ভাইয়ার সাথেও দেখা করি।এবং তিনিই আমাকে রাফিয়াদের বাসায় নিয়ে গেলো।
কিন্তু আপনি আজ কি করে আসলেন বলুন তো? আমাদের বাড়িতে তো কাল কোনো পার্টি নেই তাহলে উনাদের ইনভাইট করে এলেন কেনো?
-ভালো কথা মনে করেছো।ওয়েট নিবিড় ফোন অন করে মাহিদকে ফোন দিয়ে সব বুজিয়ে দিলো।
প্রিয়তা নিবিড়ের কথা শুনে এতো তাড়াতাড়ি এতো কিছু করা সম্ভব?
-চিন্তা করো না বুড়ী। তোমার মুখটা শুধু বন্ধ রাখো।
-জানেন আজ আমি খুব ভয়ে পেছিলাম।যখন আপনি ওই বাড়িতে নিজেকে এতোটা শান্ত রেখেছিলেন।
নিবিড় মুচকি হেসে,না রাখলে যে উনাদের শাস্তিটা যে পাওয়া হবে না।দুইটা লোক মিলে আমাদের সবাইকে ঠকিয়ে আসছে। কাল সবাই দেখবে নতুন এক নিবিড়কে।নিবিড় মাকে যতোটা ভালোবাসতো তার ছেয়ে বেশি এখন ঘৃণা করে।
দুজনে বাড়ি আসতেই সালমা বেগম দৌড়ে গিয়ে, নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে,বাবা এতো রাগ কেউ করে? তোর রাগ বেশি প্রিয়তা বুজতে পারিনি।মেয়েটা না হয় একটা অপরাধ করেছিলো।তুই বুজিয়ে বললেই তো হতো।
নিবিড় সালমা বেগমকে এই প্রথম নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে, মা, তুমি থাকতে তোমার ছেলের কিচ্ছু হবে না।যতক্ষণ তোমার মতো মা আমার পাশে আছে ততদিন আমার কিচ্ছু হবে না।
সালমা বেগম নিবিড়ের কথা শুনে অবাক হয়ে,বাবা তুই ঠিক আছিস?
– হ্যাঁ মা একদম ঠিক।তবে এতোদিন ঠিক ছিলাম না।আজ প্রিয়তা আমায় চোখ খুলে দিয়েছে।তাই এখন একদম ঠিক আছি।
মোশারফ হোসেন দূর থেকে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
-ভাই তুই ঠিক আছিস তো।
-আপু আমি এখন ঠিক আছি।আর কাল থেকে তুইও ঠিক থাকবি।
কথাটা শুনে নাদিয়া বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
সালমা বেগম নিবিড়কে ছেড়ে,যা বাবা চেইঞ্জ করে আয়। প্রিয়তা তুইও যা।
নিবিড় উপরে উঠে যাওয়ার আগে মোশারফ হোসেনের কাছে এগিয়ে গিয়ে,বাবাদের যদি নোবেল দেওয়া হয় আগে তোমাকেই দেওয়া উচিত। এইপ্রথম কোনো বাবা মনে হয়ে তার সন্তান্দের জন্য এতোটা ত্যাগ স্বীকার করেছে।
মোশারফ হোসেন কথাগুলো শুনে, প্রিয়তার দিকে তাকালো।প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে আস্বস্ত করলো।মোশারফ ছেলেকে জড়িয়ে ধরে, তোরাই তো আমার সব।তোদের জন্য করবো না তো কার জন্য করবো বাবা?
সালমা বেগম শেফালীকে ডেকে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? আজ আমার ঘর পরিপূর্ণ হয়েছে,রাতের রান্না ব্যবস্থা কর।আমি নিজের হাতে রান্না করবো। কতোদিন রান্না করা হয় না আমার ছেলের জন্য।এই মেয়েটা আসার পর থেকে আমায় প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে।
রাতে নিবিড় সবার সাথে খেয়ে প্রিয়তাকে নিয়ে রুমে এলো।রিসাদ নিজের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে দেখে,কি ব্যাপার রিসাদ সাহেব মাহিদ ফোন দিয়ে ছিলো।হ্যাঁ ও তোমার সব কথাই বলেছে।
ওকে তাহলে গুড নাইট। নিবিড় দরজা আটকিয়ে দিতেই রিসাদ চোখ বন্ধ করে ফেললো।
শালাবাবু তুমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে নিজেই আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে একদিন।
নাদিয়া এসে, কী ব্যাপার দরজায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো অধরা রুমে একা ঘুমাচ্ছে।
-নাদু কাল আমার তিন লাক্ষ টাকা লাগবে।
-কাল! টাকা দিয়ে কি করবে?
-দরকার আছে।তবে এতো টাকা কোথায় পাবো সেই চিন্তা করছি।
-চিন্তা করছো মানে? আমার একাউন্ট থেকে নিবা।
-না নাদু এইটা হয় না।ওইটা তোমার ভাই তোমাকে দিচ্ছে এইগুলো আমি কি করে নিই বলো?
-আরে পাগল,আমার টাকা মানে তো তোমার তাই না? কাল চেক নিয়ে যেও। তোমার যত টাকা লাগে তুমি তুলে নিও।
রিসাদের মুখে যেনো জয়ে হাসি ফুটেছে।নিবিড়, আস্তে আস্তে আমি তোমার সব কেড়ে নিবো।এবং কি তোমার বউটাও।
প্রিয়তা বিছানা ঠিক করে উঠে দাঁড়াতেই নিবিড় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে নিজের নাক ডুবিয়ে।আচ্ছা বুড়ী আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি কেনো?
-আমি কি করে জানবো? আচ্ছা এখন শুয়ে পড়ুন।
-শুয়ে পড়বো মানে? বউ কী সাজিয়ে রাখার জন্য এনেছি?
-তো কী করতে এনেছেন?
-প্রেম করতে।
-আচ্ছা আপনি আমায় কতোটা ভালোবাসেন?
-প্রিয়তা আমার ভালোবাসার পরীক্ষা তুমি কখনো করতে যেও না।কারণ সেই পরীক্ষায় নিজেই জ্বলে যাবে।বার বার হেরে যাবে তুমি আমার কাছে।হেরে যাবে বিবেকের কাছে।হেরে যাবে আমার ভালোবাসার কাছে।তুমি যতবার আমায় পরীক্ষা করবে ততবার নতুন করে আমায় ভালোবাসবে।
কথাগুলো বলতে বলতে প্রিয়তাকে কাছে টেনে নিশ্বাসের সাথে এক করে নিলো আরেকটি নিশ্বাস।
চলবে,,