#পাগল_প্রেমিকা
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_৩০
সন্ধ্যার পর হল রুমে সবাই একসাথে বসে আছে। এই সময় মনটা কেমন জেনো চা চা করে। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো রিমি আর বলল, ‘ আচ্ছা বাবা আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি ‘ এই সময়ে রহিমা সারাদিনের কাজ কাম শেষ করে শান্তি মতো মেঝেতে বসে টিভি দেখে এই সময়ে ওকে বিরক্ত করা যাবে না। এখানে কাজে আসার আগেই রহিমার শর্ত ছিলো, ‘ খালাম্মা আমারে এক বেলা খাওন না দিলেও চলবো কিন্তু সন্ধ্যার পর আমারে নাটক দেখতে দিতেই হইবো ‘। হুম কথাটা তখন সবাই মেনে নেয় কিন্তু এখন তার ফল পাচ্ছে এ মেয়ে টিভি দেখার জন্য যে এত পাগল তা বলার বাহিরে। আর এখন যদি বলে চা খেতে ইচ্ছে করছে রহিমা বিরক্ত হয়ে বলবে। ‘ খালাম্মা গো আর একটু আর একটু বিরতি দিয়া নেক! আর এক পর্বের পর শেষ হইয়া যাইবো তারপর কইরা দিমু একটু ধৈর্য্য ধরেন। ‘ হুম এইসবই বলবে। ওর এইসব কথা শোনার থেকে বাঁচার জন্যই রিমি নিজেই চা বানাবে বলে কিচেনে গেলো। মা, বৃষ্টি রিমন আর সোহানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথা জিজ্ঞেস করছে। রিমন মোবাইলের উপর নজর রেখেই তাদের কথা শুনছে সাথে হু হা উত্তর দিচ্ছে। এতে মিসেস আহেলা খানিক বিরক্তবোধ হচ্ছে। রিমি চা বানিয়ে নিয়ে আসে এবং সবাইকে দেয় আমাদের রিমনের আবার চা দিয়ে চলে না। তার কফি খাওয়ার স্বভাব তো তার জন্য আলাদা করে এক মগ হট কফি নিয়ে আসে। চা ও কফি খেতে খেতে কথা বলছেন মিসেস আহেলা রহিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ রহিমা টিভির সাউন্ড টা একটু কমা আমরা এখন জরুরি কথা বলবো। ‘
রহিমা প্রতিত্তোরে বলল, ‘ জি আজ্ঞে খালাম্মা ‘ টিভির সাউন্ড কমিয়ে সে আবারও টিভি দেখায় মন দেয়। মিসেস আহেলা গলা জেড়ে একটু কেশে নিলেন আর বললেন।
‘ আমার জরুরী কথা হচ্ছে বৃষ্টির তো আর পড়াশোনা বন্ধ রাখা যাবে না। ওকে আমাদের এখানে কোন এক ভালো ভার্সিটিতে এডমিশন দেওয়ার ব্যবস্থা কর। ‘
ফোন স্ক্রল করছে গরম কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে যায় মিসেস আহেলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভার্সিটি তে এডমিশন দেওয়া হওয়া এত সহজ নয় মা যত সহজে তুমি বলছো ‘ মিসেস আহেলা আবারও বললেন, ‘ বিয়ে হয়েছে বলে কি মেয়ে টা বাড়িতে বসে থাকবে পড়াশোনা বাদ দিয়ে? ‘
রিমন আবারও বলল, ‘ চাইলে থাকতেই পারে! ‘
মিসেস আহেলা, ‘ তোর কথা আমার পছন্দ হচ্ছে না রিমন! আমি যখন বলেছি বউমা ভার্সিটি যাবে তো যাবেই আর সব ব্যবস্থা তুই নিজে করবি এটা তোর মায়ের আদেশ! ‘ কথাগুলো বলে চায়ের কাপ সামনে ডেস্কের উপর রেখে হল রুম ত্যাগ করেন। কোনো উপায় নেই আদেশ দিয়েছে পালন তো করতেই হবে।
মোটামুটি বৃষ্টি এখন সুস্থ তবে ওর সুস্থ হতে প্রায় তিন দিন লেগেছে। এই তিন দিনে রিমন ভার্সিটিতে এডমিশন দেওয়া থেকে সব কিছু ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আজই বৃষ্টির ভার্সিটিতে প্রথম দিন। তা এই শহরে এই ভার্সিটিতে তেমন কাউকেই চিনে না আগের ভার্সিটি যেখানে পড়তো সেখানে কত ফ্রেন্ড হয়েছিল আজ আবারও নতুন করে পথ চলা নতুন বন্ধু খোঁজা এমন সময় ভার্সিটির সিনিয়র ভাইয়েরা পেছন বৃষ্টির মাথার উপর এক বোতল ঠান্ডা জল ডেলে দেয়। পেছন ঘুরে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও কঠোর গলায় বলল..
‘ এই সবের মানে কি? ‘
‘ ভার্সিটিতে প্রথম জয়েন্ট হলে আমরা তাকে উদ্ভোদন করি। একেক জনকে একেক ভাবে। ‘
‘এটাকে রেগিং বলে? ‘ বৃষ্টি বলল।
‘ সো হোয়াইট! ‘
আর কিছু বলতে যাবে তখনই পেছন থেকে বৃষ্টিী ঘাড়ের উপর কেউ হাত রাখল, কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে প্রথমে হাতের উপর লক্ষ্য করল তারপরে পেছনে মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। ডাক্তার নীল ভার্সিটিতে কি করছে হাসপাতালে রোগী না দেখে ভার্সিটির ক্লাস নিতে আসছে নাকি? অবাক করা বিষয়, বৃষ্টি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টির দিকে কিছুটা ঝুকে প্রশ্ন ছুঁড়ল…
‘ এভাবে কি দেখছেন ম্যাডাম? ‘
বৃষ্টি পরে গেলো বিপাকে আনএক্সপেক্ট জায়গায় আনএক্সপেক্ট মানুষকে দেখে কিভাবে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছে না। বিস্মিত স্বরে বলে উঠে..
‘ নীল তুই এখানে? ‘
উপস্থিত সকল ছাত্র ছাত্রী অবাক হয়ে তাকালো বৃষ্টির দিকে। ডাক্তার নীল এর নাম ধরে ডাকছে তাও আবার তুই তুকারি করছে সবাই বৃষ্টির অবস্থা কি হবে একটু ভয় পাচ্ছে। সবাই কম বেশিডাক্তার নীল এর গম্ভীরতা ও রাগের সাথে পরিচিত সচরাচর মাঝেমধ্যেই ভার্সিটিতে আসা হয় তার নিজের জন্য নয় অন্য৷ একজনের প্যাড়ায়। ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যার নীল এর বাবা পুরো ভার্সিটির ওনার উনি নিজেই তার একমাত্র ছেলে নীল। মাঝেমধ্যে ভার্সিটিতে আসে নীল তার বাবার জন্যই হুটহাট কল দিয়ে বলে উনার কাছে এসে কিছুক্ষণ সময় দিতে আর মিস্টার রাজ্জাক উনার ও বয়স হয়েছে তাই বাবার আবদার ভেবেই হাসপাতাল থেকে সময় বের করে চলে আসে। আজও এজন্যই এসেছিল কল দিয়ে বলেছিল ‘ পেসার লো হয়ে গেছে মাথা ঘুরছে ‘ এমনটাই বলেছিল নীল বুঝতে পারে তার বাবা মিথ্যে বলছে তবুও সে আসে কারণ বুড়ো বয়সে বাবা মা তার সবটা সময় তাদের ছেলে মেয়েদের সাথেই কাটাতে ইচ্ছা রাখেন শুধু সেটা প্রকাশ করতে পারেন না। (বুড়ো বলছি মানে কিন্তু আপনারা আবার ভাববেন না একদম বয়স্ক ওকে?)
সে সুত্রেই আসা গেইট দিয়ে গাড়ি ঢুকে পার্কিং স্পটে গাড়ি পার্ক করে এদিকেই আসছিল তখন দেখল বৃষ্টি কে ভার্সিটির কয়েকটা ছেলে-মেয়ের রেগিং এর শিকার হতে তীক্ষ্ণ রাগ নিয়েই এদিকে আসে ম্যাজাজ পুরো চটে রয়েছে। সবগুলো ছেলে মেয়ে একসাথে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠল..
‘ স্যার আপনি! ‘
নীলকে স্যার সম্মোধন করেছে বলে বৃষ্টি সবার দিকে তাকালো। প্রতি উত্তরে নীল বলল…
‘ তোমাদের সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার সাথে প্রিন্সিপাল স্যারের অফিস রুমে দেখা করো। ‘
বৃষ্টির দিকে না তাকিয়েই সেখান থেকে চলে গেলেন ডাক্তার নীল৷ পেছন পেছন ওরাও গেলো বৃষ্টি অপলকভাবে তাকিয়ে রইল পাশ থেকে একটি মেয়ে এসে বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলল…
‘ হাই! আমি অধরা! তোমার সাথে পরিচিত হতে পারি? ‘
‘ সিইওর, আমি বৃষ্টি ভার্সিটিতে নিউ নাইচ টূ মিট ইউ ‘
‘ চলো যেতে যেতে কথা বলা যাক। তুমি নীল স্যারকে তুই বললে অথচ উনি তোমাকে কিছু বললো না। ‘
‘ ওর কিছু বলার সাহস আছে আমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো.. ‘
‘ কিহহহ.. ‘ অধরা মুখ অর্ধেক হা করে দাঁড়িয়ে পরল বেচারি হেবি অবাক হইছে। বৃষ্টি মুচকি হাসল, দু’জনে ক্লাসে একই বেঞ্চে বসেছে। অধরা অনেক আগ্রহী নীল এর সাথে বৃষ্টির কি সম্পর্ক জানার জন্য তবে অধরা মনে মনে ভেবেই নিয়েছে বৃষ্টি ডাক্তার নীল এর গার্লফ্রেন্ড জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তবে বৃষ্টির বলা কথা শুনে ধারণায় এক বালতি জল উপছে পরল।
‘ নীল আমার থেকে ৬/৭ বছরের বড় আমরা ছোটো বেলায় খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমি ওর থেকে অনেক ছোট ছিলাম তাই সবাই আমাদের দেখলে মজা নিতো আমাদের দেখলেই বলতো দেখ দেঝ জিরাফের সাথে তেলাপোকা যাইতাছে। ‘
এটা শোনার পর কে দেখে অধরার হাসি। হাসি যে থামার নামই নেই তবে স্যার তা লক্ষ্য করে অধরাকপ চুপচাপ বসতে বলে আর একবার এভাবে হাসলে ক্লাস থেকে বের করে দিবে। হাসি থামিয়ে বৃষ্টি’র দিকে তাকালো.!
ঠোঁট বাঁকা করে ভ্রু কুঞ্চিত করে অধরার ভেটকানি দেখছিল একটু রাগ হলো হাসার কি আছে এখানে আজব মাইয়া। অধরা বলল!
‘ তারপর বলো?’
‘ তারপর আর কি প্রথম প্রথম রাগ হতো ইচ্ছে করে তাদের সাথে ঝগড়া করতে যেতাম তবে নীল একদিন বুঝালো তাদের সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই তাদের মুখ আছে তারা শত কথা বলবেই তাদের মতো তাদের কে বলতে দে আর তাদের বলা কথা তাদের মুখেই থাকবে আমাদের গায়ে তো এসে লাগছে না তাই তাদের সাথে ঝগড়া করে নিজের মুড খারাপ করিস না। হুহ তারপর আমি আর তাদের কথায় কান দেইনি। আমাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর ছিল আমরা একে অপরকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। শুধুই বন্ধু ছিলাম আমরা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম আমাদের বন্ধুত্ব টাকে লোকে রা অন্য নজরে দেখতে লাগল। আমি তখন এসএসসি পাস করি। সেদিন নীল এর সাথে আমার শেষ দেখা হয় বাড়িতে ফিরতে দেখি আব্বু বাড়ি জায়গা জমি বিক্রি করে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার ডিসিশন নিয়েছেন শুধু মাত্র সমাজের লোকের কথা বলা বন্ধ করানোর জন্য তারপর থেকে আমার আর নীল এর কোনো যোগাযোগ ছিল না। ওইদিন হাসপাতালে দেখা হয়েছে আর আজ কলেজে…
‘ ধ্যাত আমি আরও ভাবছিলাম তুমি উনার গার্লফ্রেন্ড..! ‘ অধরা বলল।
‘ কিহ, পাগল আমি বিবাহিত! ‘
আরও একবার শকট খেলো এই বিবাহিত বাণী শুনে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে এক বোতল পানি খেয়ে ফেলল। ক্লাস শেষ হলে দু’জন এক সাথেই বের হয়। এতক্ষণে অধরার আর বৃষ্টির খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ভার্সিটির গেইটের কাছাকাছি যেতেই দেখল নীল পার্কিং স্পটের দিকে যাচ্ছে। বৃষ্টি দৌঁড়ে নীলের দিকেই যাচ্ছে নীল গাড়ির ডোরের উপর হাত রাখে খোলার জন্য সে হাতের উপর বৃষ্টি হাত রাখে। মাত্রারিক্ত রাগ ক্ষোপ নিয়ে পাশে তাকায় তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি..
বৃষ্টি কে দেখে চোখ দু’টো নামিয়ে নেয়। দরজা কিছুটা টান মেরে খুলে ছিল সেটা বৃষ্টি ঠাস করে লাগিয়ে দিয়ে নীল এর উদ্দেশ্যে বলে..
‘ বড় ডাক্তার হয়ে গেছিস বলে আমাকে ইগনোর করছিস? ‘
প্রতি উত্তরে হালকা মুচকি হাসল। যা দেখে বৃষ্টির রক্ত মাথায় উঠে গেলো আর বলল..
‘আমি তোর সাথে যাবো যেকোনো ক্যাফে তে চল। ‘
বলে গাড়ির বিপরিত পাশে চলে গেলো। গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসল ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পরল। গাড়ি চালিয়ে পাশেই একটা ক্যাফের সামনে এসে গাড়ি থামালো।
ওয়েটারকে ডেকে দুইটা কোল্ড কফি দিতে বলল। ওয়েটার এসে অর্ডার সেই কখন দিয়ে গেছে বিশ মিনিট ধরে নিরবতা পালন করছে দু’জন। নিরবতা ভেঙে বৃষ্টি বলল…
‘ আজও ভালোবাসিস আমাকে? ‘
প্রতিত্তোরে নীল বলল…
চলবে?