পাগল প্রেমিকা পর্ব-৩৩

0
426

#পাগল_প্রেমিকা
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_৩৩

ঠাসস ঠাসসস করে সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়ের গালে কষে দুইটা থাপ্পড় মারলেন। মেয়ে দুই গালে হাত রেখে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘ আমাকে মাফ করে দেন, আমি এইসব কিছুই টাকার জন্য করেছি বিশ্বাস করেন। আমাকে যাইতে দেন আমাকে পুলিশের হাতে তুইলা দিয়েন না। আমার ছোটো ছোটো দুইটা বাচ্চা আছে আম্মা আমারে মাফ কইরা দেন। ‘ শেষ পর্যায়ে মাটিতে বসে পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে। মেয়ের এমন সব কথা শুনে রিমি তেজি কন্ঠে বলে, ‘ দু’টো বাচ্চা আছে এইসব করার আগে ভাবিসনি কেনো? ‘

‘ রিমি আপু শান্ত হও, এর সাথে তর্ক করে লাভ নেই ওকে যা করার পুলিশ এসেই করবে। ও তো থানায় কল করেছে। ‘ বৃষ্টি বলল।

রিমন পলকহীনভাবে তাকিয়ে ছিলো হুট করে ছুটে এসে বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরল। নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। খুব শক্ত করে চেপে ধরেছে বেচারির শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সবাই বিস্মিত হয়ে চোখ নামিয়ে নেয় অন্য দিকে ঘুরে যায়।

বৃষ্টি রিমনের হাতে ধরে ধীর কন্ঠে বলল, ‘ ছাড় নষ্টা সবাই তাকিয়ে আছে। ‘
______

ঘন্টা খানিক আগে,

কেবিনে সিফট হওয়ার পর থেকে পাশের বেডের মহিলা টা বার বার ঘুরে রিমনকে দেখছে তা অবশ্য শুরু থেকেই বৃষ্টি লক্ষ্য করছে।

নার্স এসে বলল, ‘ মিস আফরা চলুন আমার সাথে আপনার কিছু টেস্ট করাতে হবে। ‘

মিস আফরা নার্স এর সাথে চলে গেলে রিমন বৃষ্টি কে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ মিস আফরা ছিলেন ভালোই লাগছিল কত কথা বলছিলেন চলে গেলেন! ‘

বৃষ্টি ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ ১০মিনিট হয় নাই আমরা হাসপাতালে আসছি আর তুমি মেয়ের নামও জেনে নিয়েছো? ‘

‘ আমি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করিনি। নার্স বলল তুমি শুনোনি। কেউ ইচ্ছে করে না শুনে বয়রা হতে চাইলে আমার কি দোষ? ‘

‘ কি বললে তুমি? ‘ কিছুটা রেগেমেগে বলল।

পেছন থেকে কেউ একজন বলল। ‘ রিমন হাসান এর বাড়ির লোক কে আছেন? চলুন আমার সাথে ডাক্তার এখুনি যেতে বলেছেন!’

বৃষ্টি রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আমি আসছি ভুলেও ওই মহিলার সাথে কথা বলতে দেখলে ১২টা বাজিয়ে দেবো। ‘

আঙুল তুলে কথাগুলো বলে বের হয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পর,

বৃষ্টি কে কেবিনের দিকে আসতে দেখে রিমন ইচ্ছে করেই মিস আফরার সাথে কথা বলতে লাগল। বৃষ্টি কেবিনের মধ্যে ঢুকে রিমনকে ওই মহিলার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে দেখে তেড়েমেরে ভেতরে প্রবেশ করে। দুই বেডের মাঝখানে থাকা পর্দা টা ফট করে টেনে দেয়। রিমন বিস্মিত স্বরে বলে উঠল, ‘ এটা কি হলো? ‘

বৃষ্টি রাগে অগ্নীকান্ড হয়ে বলল, ‘ বলে ছিলাম না ওই মেয়ের সাথে কথা না বলতে, তারপরেও কেনো বললে? ‘

‘ কেউ যদি সামনে থেকে এসে আগ বাড়িয়ে কথা বলে তখন তার সাথে কথা না বলা কি ঠিক? ‘

বৃষ্টি বলল, ‘ আমরা এখনই চলে যাবো উঠো!’

‘ এখনই যেতে হবে একটু পরে গেলে হয় না? ‘

‘ একটু পরে কেন? ‘ ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে তাকিয়ে বলল।

‘ না মানে মিস আফরার সাথে আরও একটু গল্প করা যেতো! ‘ রিমন বলল!

‘ অসভ্য তুই যাবি এখন এখান থেকা না আমি তোকে টানতে টানতে নিয়া যামু! ‘

‘ এইভাবে বলার কি আছে চলো যাচ্ছি! ‘ রিমন ভীত কন্ঠে বলল।
__

এবার গাড়ি রিমন ড্রাইভ করছে, এদিকে বৃষ্টি নিজের সম্পূর্ণ হুশশ হাওয়া ধ্যান দিয়ে ফোন স্ক্রল করছে।
দু’জনের মধ্যেই নীরবতা, রিমন বৃষ্টির দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ ডাক্তার নীল এর বাড়ি যাবে নিশ্চয়ই ? ‘

বৃষ্টি ভ্রু খানিক কুঞ্চিত করে রিমনের দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ কেনো? ‘

‘ না মানে তুমি তো তার বাড়িতেই থাকো। ‘ আমতাআমতা করে বলল।

বৃষ্টি বলল, ‘ আমি তার বাড়িতে থাকলেও এখন আমি আমার জামাইয়ের বাড়িতে যাবো। ‘

রিমন আর কিছু না বলে গাড়ি চালানো তে মন দিলো। পুরো রাস্তা দু’জনে আর একটা কথাও বলেনি। বৃষ্টি ফোনেই মুখ গুঁজেছিল!
বাড়িতে আসলে রিমন কে দেখে রীতিমতো সবাই অবাক হয় সাথে যখন বৃষ্টি কে দেখল তখন আরও অধিক পরিমাণে বিচলিত হয়। রিমনকে দেখে অবাক হওয়ার কারণ হচ্ছে, সবাই জানে রিমন কাল রাতের ফ্লাইটে মালদ্বীপ চলে গেছে, আর সে রিমন দুপুর লাগাত বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে সাথে বৃষ্টি। মিমিয়া তার মুখটা বিষ বানিয়ে দিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করল, ‘ তুমি না বৃষ্টি সেদিন বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল তা আজ আবার কেন আসছো নিজের চেহারা দেখাতে? ‘

বৃষ্টি হাল্কা মুচকি হাসি দিয়ে শীতলকন্ঠেই প্রত্যত্তরে বলল, ‘ আমি আমার বাড়ি ছেড়ে একে বারে যাইনি মিমিয়া শুধু নিজের স্বামীর উপর থেকে মিথ্যে অপবাদ এর জড় টাকে খুঁজতে গিয়েছিলাম যা এখানে থাকলে হত না। ‘

ভ্রু উঁচু করে সোহান, রিমি, মা তাকিয়ে রইলেন। ইতস্ততভাবে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মিমিয়া। রিমনও বৃষ্টির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি হল রুমে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ উপস্থিত সকলের মনে এখন অনেক প্রশ্ন জাগছে। হ্যাঁ এটা আমি বুঝতে পারছি আর আমি রিমনকে দেশ থেকে যেতে আটকিয়েছি কারণ আমি এটা কোনো ভাবেই মানতে পারবো না। আমার স্বামী কোনো মিথ্যা অপবাদ বহন করে, মাথা নিচু করে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। ‘

বৃষ্টি কে থামিয়ে দিয়ে মা বলল, ‘ তুমি কি বলছো মা আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না যদি একটু পরিস্কার করে বলো!’

‘ হ্যাঁ মা আপনি সোফায় বসুন আগে আমি সব কিছু বলার জন্যই এসেছি আর সকল প্রমাণ সাথে নিয়েই এসেছি। ‘

সোহান প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ কি বলার কথা বলছো তুমি আর কিসের প্রমাণের কথা বলছো? ‘

‘ রিমন নির্দোষ ওকে ফাঁসানো হয়েছে এটাই ‘

মিমিয়া হতভম্ব হয়ে গেলো বিস্মিত স্বরে বলে ফেলল, ‘ মানে তুমি প্র.. প্রমাণ কোথায় পেলে? ‘

মিমিয়ার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে বলল, ‘ রিলাক্স মিমিয়া সময় হলে জানতে পারবে।’

সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে বুক চিড়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছনে তাকিয়ে একজনের নাম ধরে ডাক দিলো…

ডাক পরার সাথে একজন বাড়ির ভেতরে ঢুকল হাতে তার ল্যাপটপ। লোকটাকে দেখে ভ্রু কুঞ্চিত করল রিমন। বৃষ্টি লোকটাকে ইশারা করতে সে ল্যাপটপ থেকে একটা ভি..

চলবে?

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here