পাগল প্রেমিকা পর্ব-৪৫

0
836

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৪৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_______
‘ ওও, ওকে ওমন সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে কেনো রেখেছেন? ‘ তোতলিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল রিমন। কিছু সময় চুপ থেকে প্রত্যত্তরে বলল,
‘ বাচ্চার পজিশন উল্টো ছিল আমরা অনেক চেষ্টা করে বাচ্চা ডেলিভারি ঠিক মতো করতে পেরেছি। তবে ডেলিভারির সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, যার জন্য আমরা ‘ আর কিছুই বলতে পারল না। মুখ থমথমে হয়ে গেলো গলার মধ্যেই কথা জেনো আটকে গেছে চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গাল বেয়ে পরল।
ডাক্তার নীল এর সামনে থেকে হেঁটে গিয়ে বেডের সামনে দাঁড়ালো নিজের হাতে মুখের উপর থেকে সাদা চাদর টা সরালো, কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে বৃষ্টি। কোনো সাড়াশব্দ নেই কিছুক্ষণের জন্য পুরোপুরি রিমন থমকে গেলো হঠাৎ করে ‘ বৃষ্টি ‘ বলে চিৎকার দিয়ে। বৃষ্টির পিঠের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে নিজের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। পাগলের মতো চিৎকার দিয়ে কাঁদছে, গালের উপর হাত রেখে আলতে চাপ দিয়ে ডাকছে আর বলছে, ‘ এই বৃষ্টি উঠো, বৃষ্টি কি হয়েছে বৃষ্টি চোখ কেনো খুলছো না। তুমি না বলেছিল চিরজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকবে তাহলে এখন কেনো চুপ হয়ে আছো। বৃষ্টি ওই বৃষ্টি, মা ও মা বলো না বৃষ্টি কে উঠতে ও কেনো উঠছে আমার সাথে কথা কেনো বলছে না, আমার কলিজা উঠ না। তুই না শুনতে চেয়েছিলি আমি তোকে ভালোবাসি কি না। হ্যাঁ আমি তোকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি এই বৃষ্টি এইবার তো উঠো৷

আমি ভালোবাসি বৃষ্টি তোমাকে তুমি কেনো ছেড়ে চলে গেলে আমাকে আমি বাঁচবো কি করে তোমাকে ছাড়া আমি যখন ভালোবাসি বলতাম না তখন তুমি শুনতে চাইতে আর আজ আমি যখন বলছি তখন তুমি শুনতে চাচ্ছো না। কিন্তু কেনো বৃষ্টি আমার জান আমার কলিজা উঠো না প্লিজ ওই উঠো না। আহহহহ আল্লাহ আমার বৃষ্টি কে কেনো কেড়ে নিলা আমার থেকে আমার বৃষ্টির প্রাণ ফিরিয়ে দাও আল্লাহ।

সোহান রিমনের কাঁধের উপর হাত রেখে শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘ চোয়াল শক্ত কর ভাই এভাবে ভেঙে পরিস না। ‘

রিমন সোহানের এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘ ভাই ওই ভাই বৃষ্ বৃষ্টি তো তোর সব কথাই শুনতো তাই না বল। তুই তুই ওকে ডাকলে ও নিশ্চয়ই উঠবে, ডাক না ভাই ওকে, ও কেনো এখানে এভাবে শুয়ে আছে। ওকে কেউ উঠতে বলছো না কেনো? রিমি এই রিমি তু.ই তুই বল না ওকে উঠতে তুই বললে ও নিশ্চয়ই উঠবে মা তুমি একবার বলো না ওকে উঠতে। ডাক্তার নীল তুমি তো বৃষ্টির বেস্ট ফ্রেন্ড বলো তুমি ওকে ডাকো না প্লিজ তোমরা সবাই এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নেকা কান্না কেনো করছো? আমার বৃষ্টির কিছু হয়নি ও এখনই উঠে দেখো #writer_babu বলে ডাকবে। তোমরা প্লিজ কান্না বন্ধ করো। আমার বৃষ্টি এখনই উঠবে।
সবার সামনে গিয়ে গিয়ে সবার হাতে ধরে কথাগুলো বলে আবারও বৃষ্টির কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে ডাকতেছে, ‘ এই বৃষ্টি আমার জানপাখি দেখো তোমার রাইটার বাবু তোমাকে ডাকছে প্লিজ উঠো লক্ষীটি প্লিজ উঠো একবার আমার নাম ধরো ডাকো প্লিজ এই উঠো।
বৃষ্টির কাঁধে হাত দিয়ে শরীর ঝাঁকাতে লাগল। বৃষ্টির চিবুকের উপর মাথা রেখে অশ্রুপাত করছে। এভাবে ভেঙে পরলে মানসিক আঘাত পেতে পারে। ডাক্তার নীল, পূর্ণা আর মিলির দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করল। তারা দুজন মাথা উপর নিচ করে সেখান থেকে চলে গেলো। এদিকে রিমনের কাঁদতে কাঁদতে হিচকিনি উঠে গেছে কেউ তাকে বৃষ্টির থেকে দূরে সরাতে পারছে না। এবং কান্না কোনো মতেই থামছে না৷ এদিকে নবজাতক শিশু খিদে তে কেঁদে উঠছে। এ কান্না যদি আজ তার মা শুনতে পেতো তাহলে কি তাকে এভাবে কাঁদতে দিতো নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখে কান্না থামাতো কিন্তু আফসোস সে মা আজ নেই তার কান উব্ধি পৌঁছাচ্ছে না। সকলের চোখে পানি রিমনের কান্নাকাটি শুনে আশে পাশের কেবিন থেকো মানুষ জন ছুটে এসেছে। রিমনের কান্না দেখে তাদের চোখেও পানি জমেছে। পূর্ণা ইনজেকশন নীল এর হাতে এনে দিতে ডাক্তার নীল ইনজেকশন রিমনের বা হাতে পুশ করে দেয়। কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পরে সে। বৃষ্টির নিস্তেজ দেহ নিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে আসে। আশেপাশে এলাকায় ছড়িয়ে পরে রিমন এর বউ বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে গত হয়েছে। আশেপাশের মানুষ সবাই আশে তাকে দেখতে। বৃষ্টি কে দেখে এক মহিলা বলল, ‘ ওইদিন মেয়ে হবে বলেছিলাম বলে আমাকে কত কথাই না শুনিয়েছিল আর আজ সেই মেয়েই গিলে খেলো তোমার বউ টাকে। ‘

এমন অবস্থায় নাতনি কে কোলে নিয়ে অশ্রুপাত গোটাচ্ছিলেন প্রতিবেশী হওয়ার তাগিদে কোথায় সান্ত্বনা দিবেন তা না উল্টো কটু কথা বলছেন৷ এই অবস্থায় তাদের কি বলবেন জানা নেই। কয়েক ঘন্টা আগে জন্ম নেওয়া নাতনিকে বুকের সাথে চেপে ধরে গত হওয়া বউমার শোকে আহত হয়ে পরেছেন৷ বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় সবাইকে ঢেলে সামনে আসলেন বৃষ্টির পরিবার, এত কম বয়সে নিজেদের মেয়েকে হারিয়ে তাদেরও করুণ অবস্থা সবার উপস্থিতির পর বৃষ্টি কে শেষ গোসল করানোর জন্য নিয়ে যায়। গোসল শেষে মসজিদের খাটে শুইয়ে দেওয়া হয়। চার মাথায় চারজনে ধরে মসজিদের উদ্দেশ্য নিয়ে যায়। জানাজা শেষ করে কবরস্থানের উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হয়। পলকের মধ্যেই বৃষ্টি কে মাটির বিছানায় শুইয়ে মাটি চাপা দিচ্ছে। জ্ঞান ফিরলে লাফ দিয়ে উঠে বসে। রুম থেকে দৌড়ে বাহির হয় বাড়ির সামনে মানুষের হড্ড ভীড় দুয়ারে উঠানে যে যেখানে জায়গা পেয়েছে সেখানে বসে কান্না জুড়ে দিয়েছে।
রিমন তাদের সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ আমার বৃষ্টি কোথায়? ‘

এক মহিলা বলল, ‘ তাকে তো জানাজার পর কবরস্থানে নিয়ে গিয়েছে। ‘

‘ নাহহ ‘ বলে এক চিৎকার দিয়ে বাড়ি থেকে হন্ন হয়ে ছুটে বের হয়। দৌড়াচ্ছে কবর দেওয়ার আগে সেখানে পৌছাতে হবে। কানের মধ্যে শুধু একটাই শব্দ ভাসিতেছে, গতকাল রাতে বৃষ্টির গাওয়া গান, ‘ মইরা গেলে কানবা ঠিকই বাঁইচা থাকতে বুঝলা না। ‘
দুই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে দৌঁড়ে কবরস্থানের কাছে আসল। এসে দেখে কবর দেওয়া সম্পূর্ণ মসজিদের ইমাম সাহেব ও কিছু মুসল্লী মোনাজাত করছেন। রিমন এক দৌড়ে ছুটে এসে বৃষ্টির কবরের উপর পরল। দুই হাতের মুঠির মধ্যে মাটি নিয়ে চিৎকার দিয়ে বলছে, ‘ তোমরা কেনো আমার বৃষ্টি কে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছো কেনো আমার বৃষ্টি কে আমার অগোচরে দাফন করেছো কেনো আমার বৃষ্টি কে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছো কেনো আমাকে শেষ বারের মতো দেখতেও দিলে না। আমার বৃষ্টি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আমি কেনো তাকে আটকাতে পারলাম না। আমার কাছে কতবার ভালোবাসি শব্দ টা শুনতে চেয়েছিল আমি তাকে ভালোবাসতাম তবে কেনো তাকে বলিনি। সে বলেছিল আজকেই শেষ আর কখনো শুনতে চাইবো না তবুও আমি তার কথার গুরুত্ব দেইনি। আমি বলিনি তাকে আমিও যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসি। সে যদি হয় ভালোবাসায় #পাগল_প্রেমিকা তাহলে আমি তার ভালোবাসার #পাগল_প্রেমিক
বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পরল৷ সবাই কবরস্থান থেকে চলে গেলো শুধু রিমন তার বৃষ্টিকে ছেড়ে যায়নি। কারণ বৃষ্টি বলেছিল তার অন্ধকারে থাকতে ভয় করে। আর আজ সেই বৃষ্টি অন্ধকার কবরে একা শুয়ে আছে, রিমন তার বৃষ্টি কে একা ছেড়ে কিছুতেই যাবে না। কবরের উপর উপুড় হয়ে মাটি যাপ্টে ধরে শুয়ে কেঁদেই যাচ্ছে আর বলল, ‘ জানপাখি শুনতে পাচ্ছো খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়! ভয় করছে? ভয় পেয়ো না আমি তো আছি, আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবো না বৃষ্টি একটি বারও ভালোবাসি বলার সুযোগ দিলে না আমায়৷ ভেবেছিলাম আমাদের সন্তান কে কোলে নিয়ে তারপর তোমাদের দু’জন কে একসাথে বলবো ভালোবাসি৷ কিন্তু তুই আমার থেকেও বড় নিষ্ঠুর পাখি তুমি আমাকে সেই সুযোগ টুকুও দাওনি। 😭
আমি রিমন হাসান আজ এই খোলা আকাশের নিচে, কবরস্থানের সকল কবরবাসিদের সাক্ষী রেখে বলছি বৃষ্টি আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কি শুনতে পাচ্ছো আমার ডাক আমি তোমাকে ভালোবাসি। বৃষ্টি আমি ভালোবাসি তোমাকে!

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

রিচেইক করতে পারেনি ভুলক্রটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন কেমন হয়েছে। ধন্যবাদ ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here