পাগল প্রেমিকা পর্ব-৪৭

0
966

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৪৭
#Sharmin_Akter_Borsha
________
সন্ধ্যার পরে তিতির হঠাৎ করেই কান্না শুরু করে দেয়। তাকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল, রিমি ও তিতিরের দাদু ফোন করে রিমনকে তারাতাড়ি বাড়িতে আসতে বলে, কিন্তু তার যে অফিসের কাজের চাপ অতিরিক্ত, তারপরেও মেয়ের জন্য ধ্রুত সব কাজ শেষ করে অফিস থেকে বের হলো। তারপরও সব কাজ শেষ করতে করতে প্রায় রাত দশটার লাগাত বেজে যায়। ততক্ষণে তিতির ঘুমিয়ে পরে। তিতিরকে বিছানার উপর শুয়ে দিলে সে আপনা আপনি কাত হয়ে যায়। আর চোখের পলকেই সে ঘুমিয়ে যায়।

সকলেই খেয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর রিমনের জন্য খাবার বেরে ডাকন দিয়ে ডেকে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। রিমনের কাছে এক্সট্রা চাবি থাকায় তাকে কাউকে ডাকতে হয়না। সে লক খুলে বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই সামনে থেকে ‘ ভোহহ ‘ বলে চিৎকার দিলো। এমনিতেই বাড়ির সকল লাইট অফ করাছিল তারপরে ঘুটঘুটে অন্ধকার সেখানে হটাৎ কেউ সামনে এসে এভাবে ভয় দেখালে তো আত্মা বের হওয়ার অতিক্রম হয়৷ বুকের উপর হাত রেখে শাণিতকন্ঠে বলল, ‘ এটা কি ছিল? ‘

বৃষ্টি ফিক করে হেঁসে দেয়। এই অন্ধকারে তা দেখতে না পেলেও ঠিক শুনতে পাচ্ছে। তা রিমন বৃষ্টি কে দেখার জন্য লাইট অন করতে নিলে বৃষ্টি রিমনকে থামিয়ে বলে, ‘ লাইট জ্বালিও না, লাইটের পাওয়ার অনেক বেশি অন করলে আমাকে দেখতে পারবে না। ‘.
রিমন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘ ছুঁতে তো পারবো ‘

বলে বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। দু’জনে হাত ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে যায়। মা’য়ের দরজার সামনে গিয়ে টোকা দিতে সে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। রিমন ভেতরে গিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে। অতঃপর বলে, ‘ মা আমি তিতিরকে আমার রুমে নিয়ে যাই, আজ থেকে আমার মেয়ে আমার সাথেই থাকবে। ‘

মা প্রথমত দ্বিমত করেছিল কারণ এতটুকু বাচ্চা রাতে যদি উঠে ত্যক্ত করে অথবা তার উপরে যদি রিমন হুট করে হাত পা উঠিয়ে দেয় তখন তো হিতে বিপরীত হবে। তারপরও ছেলে চাইছে বলে নিয়ে যেতে বলে।

ঘুমন্ত তিতিরকে বিছানার উপর শুয়ে দেয়। মাথার কাছে বসে তিতিরকে মন ভরে দেখছে বৃষ্টি, ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসল রিমন। বৃষ্টি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে টিটকারি মেরে বলল, ‘ সোনা বউ এইভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার মেয়ের নজর লেগে যাবে তো? ‘

বৃষ্টি রিমনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। প্রতিত্তোরে কিছু না বলে এক পাশে শুয়ে পরল। অন্য পাশে রিমন শুলো। তিতিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আমাদের মেয়ে। ‘

এবারও বৃষ্টি কোনো প্রতিত্তোর করল না। শুধু দু-চোখ দিয়ে অশ্রু ছেড়ে দিলো। এখানে রিমনের ও যে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।
_____
ভোরের মিষ্টি আলো তিতিরের মুখ পানে পরছে, সে বারবার নড়েচড়ে উঠছে, কিছুক্ষণের মধ্যে সে পুরোপুরি ঘুম থেকে উঠে যায়। নিজে হাপুড় দিয়ে একা একাই উঠে বসে রিমনের চোখে মুখে হাত দিয়ে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে, চোখের উপর খোঁচা দিচ্ছে নাকের ভেতর দিয়ে আঙুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে, লাফ দিয়ে উঠে বসে দেখে মা মেয়ে দুজন হাসছে। তিতিরকে কোলে নিয়ে বিছানা থেকে নিচে নেমে পরে। রিমন তিতিরকে কোলে নিয়ে ঝাঁকুনি দিচ্ছে, মুখের উপরে দাঁত উঠেছে সে দাঁত দু’টো বের করে খিলখিল করে হাসছে। বৃষ্টি রিমনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তিতির জেনো ওর মা’কে দেখতে পায়। এক হাত বাড়িয়ে দেয় সে বৃষ্টির দিকে কোলে তো নিতে পারবে না। তবে আঙুল ছুতে তো পারবে। সে তিতিরের আঙুল স্পর্শ করতে তিতির আবারও খিলখিল করে হেঁসে ফেলে একবার বৃষ্টির দিকে তো আরেকবার রিমনের দিকে তাকাচ্ছে, রিমন ও বৃষ্টি তিতিরের কান্ড দেখে ফিক করে হেঁসে ফেলে। এতে তিতির ও সাই দিয়ে শব্দ করে হাসে।

সকাল হয়েছে তিতিরকে খাওয়ানোরও সময় হয়ে গেছে। মা এসে দরজায় কড়া নাড়ছে, দরজা খুলে দিলে সে তিতিরকে তার রুমে নিয়ে চলে যায়।
রিমন তিতিরকে দিয়ে পেছনে ঘুরতে বৃষ্টিকে দেখতে পায়না বলে জোর করে হাসার চেষ্টা করে তবুও চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।
_____
দেখতে দেখতে প্রায় চারটা বছর গেটে যায়। এর মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। সবাই অতীত পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায় তবে শুধু একজনই সেই অতীত আগড়ে ধরেই বেঁচে আছে, এই চার বছরে বৃষ্টি তেমন আর রিমনের সাথে দেখা করতে আসেনি। মাঝে মধ্যে রিমন বৃষ্টিকে অতি স্বরং করলে এসেছে, তবে বেশিক্ষণ থাকেনি। বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর রিমন বৃষ্টিকে এতটাই ভালোবেসে যে সেখানে অন্য কারো কোনো জায়গা নেই। বৃষ্টির পর আজ পর্যন্ত রিমন তিতিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছে, মেয়ে বলতে অজ্ঞান রিমন। এই চারবছরে সে অনেক উন্নতি করেছে, এখন আর সে অন্য কারো অফিসে জব করে না। তার এখন নিজেরই দুইটা অফিস হয়েছে, নিজেরই এখন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হয়েছে, বাড়িতে মা ছাড়া কেউ নেই, মেইড স্টাফ আছে তারা বাদে আপন বলতে একমাত্র মা আর তিতির রয়েছে তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি আসে রিমনের একা কৃত্তের সঙ্গী হতে। সপ্তাহে একদিন রিমন বৃষ্টির কবর জিয়ারত করতে যায় সাথে তিতিরকেও নিয়ে যায় সে এখন বুঝতে পারে সবই, সে জানে তার মা এই পৃথিবীতে নেই, তাকে জন্ম দিতে গিয়েই তার মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
কবর জিয়ারত সম্পূর্ণ হলে কবরের পাশে বসে, এক সপ্তাহের কিচ্ছা কাহিনী বলা শুরু করে। যাওয়ার আগে নিয়ম করে বুকের বা পাশের দিকটায় ব্লেজারের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একটা লাল গোলাপ বের করে, ফুল টাতে নিজের ঠোঁটের আলতো পরশ একে দিয়ে কবরের উপর রাখে আর বলে, ‘ খুব ভালোবাসি আমার প্রিয় দর্শিনী তোমাকে ‘

মেয়ের হাত ধরে সেখান থেকে চলতে শুরু করে। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেও রিমনের প্রতিটি কথায় বৃষ্টির নাম উচ্চারিত হয়।
______
একটা ইয়াং ছেলে তো আর সারাজীবন একা থাকতে পারবে না। তাকেও তো তার সংসার নতুন করে বাঁধতে হবে। এই নিয়ে আলোচনা করছিলেন তখনই রিমন সহ তিতির বাড়িতে প্রবেশ করল তাদের দেখে বাকি সবাই চুপ হয়ে যায়।
সন্ধ্যা সকলে একসাথে

চলবে?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here