পাগল_প্রেমিকা পর্ব-১৯

0
364

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_১৯
#sharmin_akter_borsha
________
বিয়ে বাড়ি বলে কথা পুরো বাড়ি মেতে উঠেছে খুশি ও আনন্দে সবাই সবার মতো করে আনন্দ করছে শুধু খুশি ও আনন্দ ওদের একজনের মনেও নেই। বৃষ্টি ওর রুমের বেলকনিতে বসে আছে বর্ষা রিমা বৃষ্টি কে রেডি হতে বলেছে সাথে ওর জন্য ড্রেস বিছানার উপর বাহির করে রেখে গেছে ওরা রেডি হতে গেছে। তনিমাকে সাজাতে মেক-আপ আর্টিস্ট এসেছে তনিকে ওর রুমে সাজানো হচ্ছে। রিমনকেও রেডি হতে হেল্প করছে অভ্র শুভ আরও বাদ বাকিরা। অন্য দিকে নিলয় ছাঁদে এসে একা একা দাঁড়িয়ে আছে কিছুক্ষণ পর সেখানে অভ্র আসে আর নিলয়ের পেছনে দাড়িয়ে অভ্র নিলয় এর কাঁধে হাত রাখে। পেছন থেকে কারো স্পর্শ পেয়ে নিলয় পেছনে ঘুরে তাকালো আর অভ্রকে দেখে বলল.

“ও তুই. কেনো আসছিস এখানে যা আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দে.”

কথাটা বলে নিলয় আবারও সামনে দিকে ঘুরে যায়। অভ্র নিলয়ের কাঁধে হাত রেখেই নিলয়কে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলে।

” এভাবে হেরে যাবি! তুই তো বলেছিলি তুই বৃষ্টি কে ভালোবাসিস আর তখন তুই জানতি না ও বৃষ্টি এখন জানার পর নিজের কাছে নিজেই হেরে যাচ্ছিস ”

অভ্র’র কথা শুনে নিলয় তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল।

” তো কি করবো আমরা সবাই জানি বৃষ্টি রিমনকে কত বেশি ভালোবাসে আর সেখানে আমাকে কেনো ভালো বাসবে তুই বল ”

অভ্র নিলয়ের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে গালে হাত রেখে বলল!

” তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস আজ রিমন এর বিয়ে তাই বৃষ্টি কে রিমনকে ভুলে যেতেই হবে আর বৃষ্টি সারাজীবন একা থাকবে না ওর লাইফ পার্টনার লাগবে আর সেই পার্টনার তুই হয়ে যা। তাহলেই হয় তোর ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিবি তুই বৃষ্টির ভালোবাসা বুঝেছিস আর আজ থেকেই স্টার্ট করে দে নিজের ভালোবাসা কে হারিয়ে যেতে দিস না। এখন চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে চল আমার সাথে রেডি হবি তো নাকি? আর যদি রেডি না হস বৃষ্টি এমন পাগলের অবস্থায় তোকে দেখলে পছন্দ না-ও করতে পারে তোর ভালোর জন্য বলছি চল চল ”

কথাগুলো বলে অভ্র নিলয়ের হাত ধরে টানতে টানতে ছাঁদ থেকে নিয়ে ওদের রুমে চলে যায়।

এদিকে সব কিছু সম্পূর্ণ হয়েগেছে শুধু বিয়ে হওয়া বাকি। স্টেজ সাজানো হয়েছে শুধু ফুল দিয়ে। স্টেজ সাজিয়েছে বর বউ সামনা সামনি বসবে পাশে বসবে কাজী আর দুজনের সামনে ফুল দিয়ে সাজানো। এদিকে লাউডস্পিকারে গান বাজছে। কিছুক্ষণ পর রিমনকে স্টেজে নিয়ে বসানো হয়। সবার প্রায় খাওয়া দাওয়া ও কমপ্লিট।
বর দেখতে মানুষ স্টেজের সামনে ভিড় ধরেছে। রিমনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র, নিলয়, শুভ, সামিয়া, তিয়া। সবাই সেন্টারে দাড়িয়ে আছে কথা বলছে হাসছে গল্প করছে এখানে শুধু দু’জন নেই তারা হলো এক তনিমা দুই বৃষ্টি.. এদিকে সন্ধ্যে হয়ে গেছে কাজী এখনো আসেনি উনার আসতে লেট হবে অন্য একটা বিয়েতে গেছে সেখান থেকে এখানে আসছে তাই দেরি হলো। কিছু পর লাল রঙের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পরে হেঁটে আসছে সেন্টারের ভেতরে একটি মেয়ে সাথে গর্জিয়াস সাজ চুলগুলো স্টাইল করে খোঁপা করে বাঁধা দুই গালের পাশে ছোটো-ছোটো চুল বাহির করানো দেখতে অস্থির লাগছে। মেয়েটাকে দেখে তিয়া সামিয়ার চোখ কপালে উঠে গেলো আর রিমন ও নিলয় এর উদ্দেশ্যে বলল.

“ভাই সামনে থাকা। ”

সামিয়া, তিয়ার মুখে ভাই শুনে রিমন, নিলয় সহ বাকিরা সামনের দিকে তাকালো তাদেরও চোখ কপালে উঠে গেলো। এত সুন্দর একটা মেয়ে কি করে হতে পারে দেখে তো ওকেই বউ মনে হচ্ছে। মেয়েটাকে আসতে দেখে বর্ষা, রিমা, জুম্মা তিনজনে হাসি দিয়ে বলল।

” বৃষ্টি তোকে Just Awesome লাগছে ”

ওদের তিনজনের কথা শুনে বৃষ্টি দুগাল ভরে হেঁসে দেয়। বৃষ্টি হাসলে ওর গালে টোল পরে তখন ওকে আরও বেশি কিউট লাগে। বৃষ্টির হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে দুজন ব্যক্তি তাকিয়ে আছে তারা হলো নিলয় ও রিমন।
বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তখনই পেছন থেকে বৃষ্টির কাঁধের সাথে কাঁধ লাগিয়ে ধাক্কা দেয়। বৃষ্টি ধাক্কা খেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে নিরব..
নিরব কে দেখে বৃষ্টি আরও হেসে দেয়। যা দেখো রিমন এর প্রচুর রাগ হচ্ছে। ঠিক তখনই অন্য পাশ দিয়ে মাহিম এসে বৃষ্টির টমেটোর মতো দুই গাল ধরে গাল টেনে দেয়। যেটা দেখে রিমন রাগে চোখ বন্ধ করে নেয় আর রাগ কন্ট্রোল করার বৃথা চেষ্টা করছে। চোখ খুলে বৃষ্টি কে ওদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে দেখে রিমন এর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই এটা ওরই বিয়ের আসর। রিমন এর এখন ইচ্ছে করছে ছেলে দু’টোকে সুট করতে কিন্তু সেটা করতে পারবে না ঠিক সেম ইচ্ছে নিলয় এর ও করছে।
রিমা, বর্ষা, বৃষ্টি, মুন্নী, সামিনা, জুম্মা, কাব্য, নাহিদ, অপূর্ব, নিরব ও মাহিম সবাই একসাথে স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে। এমন সময় রিমা রিমন এর দিকে তাকিয়ে বলল. আজ ভাইয়াকে মিষ্টি খাওয়াবো।
(বৃষ্টির রাইটার বাবুই যে রিমন সেটা রিমা এখনও জানে না।)
রিমার কথা শুনে বৃষ্টি রিমন এর দিকে তাকিয়ে বলল!
“আজ মিষ্টি আমি খাওয়াবো ” বলেই বৃষ্টি এক হাত দিয়ে চোখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে স্টেজে উঠলো আর রিমনের সামনে দাঁড়িয়ে হাল্কা হেঁসে রিমার দিকে তাকিয়ে বলল।

” উনি আমাদের দুলাভাই, আর আমি উনার বড় শালী তাই উনাকে মিষ্টি খাওয়ানোর অধিকার টাও প্রথম আমার। ” কথাটা বলে বৃষ্টি রিমন এর দিকে তাকালো আর রিমনের উদ্দেশ্যে বলল.

“তাই না দুল্লা ভাই”

রিমন বৃষ্টির মুখের কথা শুনে এক দৃষ্টিতে বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় রিমার কানে কানে বর্ষা সবটা ওকে বলে দিলো যা শুনে এখন রিমারও রাগ হচ্ছে রিমা বর্ষা কে বলল।

” এমন একটা বাজে লুচ্চা চরিত্রহীন ছেলের সাথে আমরা আমাদের তাপ্পির বিয়ে কি করে হতে দিবো আমাদের সবটা তাপ্পিকে জানানোর দরকার। এই বিয়ে কিছুতেই হতে দিতে পারি না আমরা”

রিমার কথা শুনে জুম্মা রিমাকে চুপ থাকতে বলে কারণ মান সম্মানের বিষয় আর ওদের কাছে কোনো প্রমান নেই যে রিমন ভালো না খারাপ।
রিমা সামনে তাকিয়ে দেখল অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে যা দেখার পর রিমা বলল।
ওই যেমন লুচ্চা ওর সাথের সাঙ্গু পাঙ্গু গুলাও তেমন লুচ্চা দেখ বর্ষার দিকে নীল পাঞ্জাবি পরা ছেলে কেমনে তাকিয়ে আছে আর ওই কালো পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা বৃষ্টির দিকে। রিমার কথা শুনে যা বলল মুন্নী-

” লাভ নাই ওদের টাইম নাই পাত্তা পাবে না.”

কথাটা বলে মেয়েরা সবগুলা হাসতে শুরু করল। ওদিকে বৃষ্টি কাটা চামচ দিয়ে রিমন এর মুখে মিষ্টি দিতে যাবে তখন সাইড থেকে নিরব বলল.!

” তুই কি এখনই যাবি নাকি বিয়ে শেষ হলে যাবি? ”

নিরবের কথা শেষ হলে মাহিম বলে।

” এখন গেলে আমরা গাড়ি বের করছি ”

নিরব ও মাহিমের কথা শুনে বৃষ্টি ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল।

” তোরা গাড়ি বের কর আমি আসছি এখনই যাবো। ”

কথাটা বলতে নিরব মাহিম চলে গেলো সাইড থেকে শুভ বৃষ্টির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে।

” কোথায় যাবে তুমি? ”

বৃষ্টি ভ্রু কুঁচকে শুভর দিকে তাকিয়ে বলল!

” আমি হোস্টেল ফিরে যাচ্ছি শুভ ভাইয়া ”

বৃষ্টির কথা শুনে তিয়া বলল।

” তোমার বোনের বিয়ে থাকবে না চলে যাচ্ছো কেনো? ”

বৃষ্টি তিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।

” আমার সামনে এক্সাম তাই চলে যাচ্ছি ”

বৃষ্টির কথা শুনে সামিয়া বলল।

“আমরা ভাবলাম অন্য কারণ…”

সামিয়া কথা শেষ না করতেই বৃষ্টি সামিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল।

” আপনাকে এত ভাবতে কে বলেছে? ”
বৃষ্টির কথা শুনে সামিয়ার একটু রাগ হলো একটু রাগান্বিত দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকালো এতে বৃষ্টির কোনো কিছুই যায় আসলো না। বৃষ্টি ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে রিমনের মুখে মিষ্টি পুরে দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে চলে গেলো। বর্ষা আর বাকিদের কাছে ও চলে যাচ্ছে সেটা জেনো সময় করে ওর আব্বু আম্মুকে বলে দেয় বলতে ঠিক তখনই দৌড়ে এসে অপূর্ব বলল.

” তাপ্পিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তোরা কোথাও দেখছিস? ”

অপূর্বর কথা শুনে আশেপাশের সবাই অপূর্বর দিকে তাকালো স্টেজে বসা লোকগুলো দাঁড়িয়ে পরলো।
বৃষ্টি বলল

” খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি আমি একটু আগেই তো রুমে দেখে আসছি তুই সব জায়গায় খুঁজে দেখছিস? ”

অপূর্ব বৃষ্টির কথার প্রতিউত্তরে বলে।

“আমি সব জায়গায় দেখেছি কোথাও নেই ”

সবাই দৌঁড়ে বাড়ির ভেতরে গেলে দেখতে পায় তনিমার বাবা মাঠিতে বসে কপালে এক হাত দিয়ে রেখেছেন অন্য হাতে একটা চিরকুট। রিমন এর বড় ভাই ও বোন তনিমার বাবার কাছে গিয়ে ঘটনা সত্য কি না জিজ্ঞেস করেন সাথে বাড়ি সদ্য লোকজন সবাই জিজ্ঞেস করে।
তনিমার বাবা উঠে দাড়িয়ে বলল।

” তনি চিরকুটে লিখে গেছে ও এই বিয়ে করতে চায় না তাই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে ”

কথাটা বলেই তনিমার বাবা কাঁদতে শুরু করেন। আর বারবার রিমন এর বড় ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে লাগল।

তনিমা পালিয়েছে শুনে রিমা খুশি হয়ে বলল।

“আল্লাহ ভালোই হয়েছে আমার বোন টা পালিয়েছে এই লুচ্চা ছেলের হাত থেকে তো বেঁচেছে ”

যা শুনে বৃষ্টি রিমার দিকে চোখ বড়সড় করে তাকালো বৃষ্টির তাকানে দেখে রিমা ভয় পেলো।
সবাই বলছে এখন কি করবে মান সম্মান তো দুই পরিবারেরই ধুলোয় মিশে যাবে এমন সময় ফুপা রিমন এর বড় ভাই সোহানকে বলল।

“তোমাদের যদি কোনো সমস্যা না থাকে তোমরা যদি রাজি থাকো তাহলে আমাদের দ্বিতীয় মেয়ের সাথে তোমার ভাইয়ের বিয়ে দাও”

ফুপার কথা শুনে সবাই অবাক হয় দ্বিতীয় মেয়ে বলতে কে? ফুপা সবার সামনে থেকে এসে হঠাৎ বৃষ্টির হাত ধরে নেয় আর টেনে সোহানের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় আর বলে।
আমাদের আদরের মেয়ে বৃষ্টি তোমরা রাজি থাকলে রিমনের সাথে ওর বিয়ে হবে। যা শুনে সবাই অবাক হয় বৃষ্টি ওর ফুপার হাত ছাড়িয়ে বলল।

” মানে কি ফুপা? আমি কেনো বিয়ে করতে যাবো ওই চর চর (বলতে গিয়েও বৃষ্টি চুপ হয়ে যায় আর কথা ঘুরিয়ে বলে) আমি কেনো বিয়ে করতে যাবো উনাকে আমি উনাকে চিনি না জানি না আর বললেই হুট করে কি বিয়ে করা যায় নাকি আমি উনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না। ”

সোহান আর রিমি দু’জনে রিমনের বড় ভাই-বোন বাবা নেই মারা গেছে তাই মা’র পরে ওরা দু’জনেই ওর গার্জেন। রিমি আর সোহান দুজনে একটু একা কথা বলতে সবার থেকে একটু দূরে যায়। এদিকে বৃষ্টি বলছে।
আমি বিয়ে করবো না উনাকে এখানে আমি ছাড়াও অনেকেই আছে তাদেরকে বলো বিয়ে করতে আমি না কিছুতেই না ওই বর্ষা বা রিমাকে বলো বিয়ে করতে আমি করবো না। ফুপা বাড়ির সবার সাথে কথা বলে সবাইকে রাজি করিয়ে ফেলে এদিকে সোহান ও রিমি এসে ফুপাকে বলে।
বৃষ্টি কে রিমন এর বউ বানিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই আমরা রাজি।
যা শুনে সবাই রাজি শুধু বৃষ্টি ছাড়া বৃষ্টির একই কথা বিয়ে করবে বা আর ওকে তো বিয়ে করবেই না। বৃষ্টির বাবা মা, দাদা দাদী, চাচারা ও চাচীরা সবাই নিজেদের আর ওদের ফ্যামিলির মান সম্মানের কথা ভেবে বৃষ্টি কে রাজি হতে বলছে কিন্তু বৃষ্টি রাজি হচ্ছে না এমন সময় ফুপা বৃষ্টির পায়ে হাত দেওয়ার কথা মুখ দিয়ে বাহির করলে বৃষ্টি ওর ফুপার মুখে হাত দেয় আর বলে।

” কি বলছো কি তুমি ফুপা এর থেকে তো আমার মরে যাওয়া ভালো। ”

বৃষ্টির দুই গালে হাত রেখে ফুপা বলল,

মা আমাদের প্লিজ তুই রাজি হয়ে যা আমাদের সবার সম্মান এখন তোর হাতে আমাদের অপমানিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে নে তুই আর নয়তো সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না।
বৃষ্টি ওর ফুপার কথা শুনে সবার দিকে চোখ বুলাচ্ছে সবাই মাথা নাড়িয়ে হাবোধক ইশারা করতে। বৃষ্টি মাথা ঘুরিয়ে একবার রিমন এর দিকে তাকালো আর দাঁতে দাঁত চেপে দাঁত কটমট করতে করতে বলল।

” শুধু তোমাদের সম্মানের জন্য আমি রাজি হলাম ”

বৃষ্টির কথা শুনে সবাই সুস্তি পেলো ফুপা বৃষ্টির কপালে একটা চুমু একে দিলো পরিবেশ আগের মতে হয়ে গেলো। বৃষ্টি কে বধূ বেসে সাজাতে নিয়ে গেলো রিমনকে স্টেজে নিয়ে গেলো। নিলয় এর কথা কি বলবো বলার বাহিরে বেচারা নিলয়কে সামলাচ্ছে তিয়া ও অভ্র।
কিছুক্ষণ পর কাজী ও চলে আসেন. বৃষ্টি আগে থেকেই রেডি ছিলো এখন একটু বউ বউ লুকে সাজানো হচ্ছে ফিনিশিং টাচ যাকে বলে। পাশে দাঁড়িয়ে বলছে বর্ষা রিমা জুম্মা.

” যাক আলহামদুলিল্লাহ তোর চরিত্র হীনকে তুইই পেলি তোর কালকের কান্না সফল হয়েছে”
বলেই ওরা হাসতে শুরু করল ওদের হাসি দেখে বিরক্ত লাগছে বৃষ্টির বিয়ে করতে চায় না ওই নষ্টা কে তবুও পরিবারের জন্য এক প্রকার বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। বৃষ্টিকে সাজানো হলে ওকে নিয়ে স্টেজে বরাবর রিমন এর সামনে বসানো হয়। রিমন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হালকা হাসছে যা দেখে বৃষ্টির রাগ চরম মাত্রাই বেড়ে যাচ্ছে।
কাজী সাহেব শুরুতে রিমন কে কবুল বলতে বলে তিনবার রিমন কাজীর সাথে সাথে কবুল বলে, রিমনের কবুল বলা শেষ হলে কাজী বৃষ্টি কে কবুল বলতে বলে।
কিন্তু বৃষ্টি চুপ করে বসে থাকে তা দেখে সবাই কয়েকবার বৃষ্টি কে কবুল বলতে বলে তারপর বৃষ্টি কবুল বলে। বৃষ্টি কবুল বলার পর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে আমিন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পর রিমন ও বৃষ্টি সবার পায়ে ধরে সালাম করছে. রিমন ও বৃষ্টি যখন বৃষ্টির বাবার পায়ের সামনে নিচু হলে রিমন বৃষ্টিকে ধাক্কা দেয় যার ফলে বৃষ্টি ওর আব্বুর পায়ের সামনে পরে যায়। বৃষ্টি পরে গিয়ে রিমন এর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায় যা দেখে রিমন অনেক কষ্টে ওর হাসি চেপে ধরে রেখেছে। কিন্তু তবুও ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসছে যা দেখে বৃষ্টির ইচ্ছা করছে সোজা নাকের মধ্যে একটা ঘুসি মারতে কিন্তু কিছু করার উপায় নাই। বৃষ্টি কে ধরে তুলে বৃষ্টির বাবা আর বলে।
” সারাদিন কিছু খাসনি তো তাই দূর্বল হয়ে গেছিস যাওয়ার আগে নিজের হাতে একবার খাইয়ে দিবো খাবি? ”

বৃষ্টি ওর আব্বুর কথা শুনে কেঁদে দেয় আর সাথে সাথে ওর আব্বুকে জরিয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর সবাই একসাথে একটা রুমে বসে আছে রিমন আর বৃষ্টি কে ঘিরে। সামনে বৃষ্টির বাবা ও মা বৃষ্টি কে আর রিমনকে নিজের হাতে দুধ ভাত খাইয়ে দিলো এটা নাকি নিয়ম (সঠিক আমিও জানি না)
খাওয়ানো শেষে দু’জনে মেয়েকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয় আর নিজেদেরকে সামলিয়ে রুমে থেকে চলে যায়।
তখন রিমন বৃষ্টির দিকে একটু ঝুকে কানে কানে বলল।

” বড় শালীকা এখন বউ হয়ে গেছে ”

কথাটা বলে রিমন জোরে শব্দ করে হেঁসে দেয় সবাই রিমনের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। কেনো হাসছে রহস্য জনক। বৃষ্টি রিমনের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে দীর্ঘ মাস পর এই হাসিটা দেখছে বৃষ্টি ফোনে শুনতো এখন সামনাসামনি দেখছে রিমনের হাসির মায়ায় মুগ্ধ হয়ে সব রাগ জেনো বাতাসে হাওয়া হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথায় এলো ও নষ্টার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে সামলে বৃষ্টি রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল!

” নষ্টা ”

বৃষ্টির ফিসফিস করে বলা কথা রিমন শুনে নেয় আর বৃষ্টির দিকে ঝুঁকে ভ্রু কুঁচকে বলে।

” কি বললে? ”

রিমনের কথা শুনে বৃষ্টি সামনের দিকে তাকিয়ে বলল!

“শুনেন নাই যখন তাহলে আবার শুনতে চাচ্ছেন কেনো? ”

রিমন বৃষ্টির কথায় রেগে গেলো আর কঠোর কন্ঠে বলল।

“শুনেছি তুমি আমাকে নষ্টা বলেছো? ”

রিমনের কথা শুনে বৃষ্টি হেঁসে পাল্টা প্রশ্ন করলো।

“শুনেছেন যখন তাহলে আবার কেনো জিজ্ঞেস করছেন বারবার শুনতে চান নাকি আর যা বলেছি ঠিক বলেছি নষ্টাকে নষ্টা বলেছি হুম ”

কথাটা বলে সামনের দিকে তাকালো রিমন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর.

পুরো বাড়িতে কান্নার বন্যা বয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির বিদায় ওর রাইটার বাবুর সাথে। শতশত ফুলে সজ্জিত গাড়ি গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এদিকে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সবাইকে জরিয়ে ধরে অঝোড়ে কেঁদে যাচ্ছে বৃষ্টি রিমন পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে।
রিমা একটু দূরে নিলয়কে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হেঁটে নিলয় এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো একটু কাশি দিয়ে বলল.

কে জেনো কাল বলে ছিলো Are you jealous? ওওও তার জন্য এক বালতি সমবেদনা। বলেছিলাম আগেই লাভ নেই পাত্তা পাবেন না হলো তো এখন বিশ্বাস। বৃষ্টি নিজের সবটা দিয়ে শুধু রিমনকে ভালোবেসে ছিল আর আজ ওর ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পেলো। আর আপনি কি পেলেন না জানা আমি যাইহোক ফুল হওয়ার জন্য আমার তরফ থেকে আপনার জন্য এই ফুল। কথাটা বলে নিলয়ের সামনে থেকে আসতে যাবে তখন অভ্র রিমাকে থামিয়ে বলল।
“কাটা গায়ে নুনের ছিল দিতে বাধছে না তোমার? ”
অভ্রর কথা শুনে রিমা বলল, না বাধছে না যা সত্য তাই বলেছি আর এই রিমা সত্য বলতে ভয় পায় মা আর সত্য কথা বলার জন্য গলায় বাধেও না আর আপনাকে একটা কথা বলি আপনাকে ভুলেও বর্ষার পেছনে ঘুরঘুর করবেন না তাহলে ফল ভালো হবে না বলে দিলাম হুহহ। কথাটা বলে রিমা হনহনিয়ে চলে আসে বৃষ্টির কাছে.! বৃষ্টি রিমা বর্ষা জুম্মাকে সবাইকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে ওদের এখন যেতে হবে। অনেক দেরি হয়ে গেছে কাল সকালে পৌঁছাবে বাড়ি সারারাত গাড়ি তেই থাকতে হবে। সবার কথাশুনে বৃষ্টি ওর আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে গাড়ির দরজার কাছে যায়। গাড়িতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই বৃষ্টির চোখ গেলো ওর ফুপার রুমের জানালা ভেদ করে রুমের ভেতরে।
যা দেখে বৃষ্টি অনেক অবাক হলো, কারণ সবাই বলেছে তনিমা পালিয়েছে তাহলে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে কিভাবে বৃষ্টির মনের মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,
ওর তাপ্পি (তনিমা) পালিয়ে গেলে ফুপার রুমের মধ্যে গেলো কিভাবে আর যদি পালিয়ে না যায় তাহলে অভিনয় টা কেনো করলো কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগে বৃষ্টির আব্বু ওকে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে সিটে বসিয়ে দেয় আর দরজা আটকে দেয়। পাশে বসেছে রিমন যা বিটকেলের মতো হাসছে হারামী লুচ্চা. ওর হাসি দেখে বৃষ্টির আরও মেজাজ খারাপ হচ্ছে মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাপ্পি কেনো করলো এটা। রিমনের বড় বোন রিমি ও ভাই সোহান বাড়িতে কল দিয়ে সবটা ওদের আম্মুকে আগেই বলে দিয়েছে বউ চেঞ্জ হয়েছে তাতে শুরু শুরু আপত্তি করলে পরে মেনে নেয়।
গাড়ির সিটে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে শুধু একটা কথাই ভাবছে বৃষ্টি তনিমা কেনো করলো এমন যার উত্তর ওকে শুধু ওর তাপ্পিই দিতে পারবে জানতেই হবে ওর। এমন সময় পাশ থেকে রিমন ওর থুতনিতে হাত রেখে বৃষ্টির দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলল।

” কি এত ভাবছো শালি কা ”

রিমন এর মুখে শালিকা শুনে বৃষ্টির জেনো পুরো গায়ে আগুন জ্বলছে চোখ দু’টো ছোটো-ছোটো করে কপাল ভাজ করে রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল।

” সেটা আপনার না জানলেও চলবে ”

অসভ্য, লুচ্চা, নষ্টা, ফাজিল বেডা..!

বৃষ্টির মুখে এত প্রশংসা শুনে রিমন এর হাসতে হাসতে বেহুঁশ হওয়ার মতো অবস্থা হাসি থামিয়ে রিমন বলল।

“এত সুন্দর সুন্দর গালী কোথা থেকে শিখেছো শালিকা “?

রিমনের মুখে আবারও শলিকা শুনে বৃষ্টি দুইহাতের মুঠি বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলল

অসভ্য পোলা নষ্টা জানি কোথাকার!

এদিকে দুওনের কথা সামনে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভার সব শুনছে সাথে পেছনে দেখছে বারবার।

ড্রাইভার কে পেছনে তাকাতে দেখে বৃষ্টি ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে ধমক দিয়ে বলল।

” আপনি সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করবেন সে তা না করে বারবার পেছনে তাকাচ্ছেন কেনো? ”

ড্রাইভারের সাথে এমন ভাবে কথা বলছে দেখে রিমন হাসতে হাসতে বলল।

“ভাইয়া আপনি ড্রাইভ করুন প্লিজ পেছনে আপনার তাকাতে হবে না। Actually ওর মাথায় একটু সমস্যা আছে তাই এমন করছে কিছু মনে করবেন না। ”

রিমনের কথা শুনে বৃষ্টি রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল।

“কি আমার মাথায় সমস্যা আছে? ”

“হ্যাঁ আছে হ্যাসট্যাগ পাগল প্রেমিকা” কথাটা বলে আবারও হাসতে থাকে এখন বৃষ্টি সবটা বুঝতে পারে কেনো ছাগলের তিন নাম্বার ছানার মতো লাফাচ্ছে সরি হাসছে। ওর পাগলামির গল্প শুনেছে তাই এমন ভাবে হাসছে বৃষ্টি আর কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে মনে মনে বলল।

” যত হাসার আছে হেঁসে নাও আমাকে বিয়ে করার ফল তুমি হারে হারে টের পাবে হুহ আমিও বৃষ্টি অনেক কাঁদিয়েছো এবার পদে পদে তুমি জ্বালা ভোগ করবে চান্দু ”

তার কিছুক্ষণ পর…

{রি-চেইক করতে পারিনি. ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! বিয়ে দিয়ে দিলাম পাগল প্রেমিকার এবার ঠেলা বুঝবে রিমন কত ধানে কত চাল}😅

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here