পাগল_প্রেমিকা পর্ব-২১

0
388

#পাগল_প্রেমিকা
#sharmin_akter_borsha
#পর্ব_২১
__________
রিমন সবাই দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল…
” ওই লিপস্টিক এর কালার চেক করছিলাম এই কালারটা বেস্ট ”
রিমি রিমনের কথায় থুতনিতে হাত রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল!
” ওও আচ্ছা আচ্ছা! তুই কালার চেক করছিলি নাকি টেস্ট করছিলি? ”
রিমির কথায় পাত্তা না দিয়ে হনহনিয়ে রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করল। রুমের সামনে এসে প্যান্টের পকেট থেকে এক টুকরো টিস্যু বের করে ঠোঁট মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করতে যাবে তখনই রিমনের চোখ গেলো রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকচ্ছে বৃষ্টি পরোনে গোলাপী রঙের সিল্ক শাড়ি যা রিমনকে বৃষ্টির প্রতি আসক্ত করছে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রিমন রুমে ঢুকে বৃষ্টির হাত থেকে হেয়ার ড্রায়ার টা হিচকা টান দিয়ে নিয়ে নিলো আর বলল.
– তুই এটা ধরছিস কেন? এটা আমার আর তুই আমার জিনিসে হাত দিবি না।

রিমনের হাত থেকে ড্রায়ারটা হাত দিয়ে নিয়ে বৃষ্টি বলল।
– এই রুমের সব কিছুর উপর আমার 50% অধিকার আছে তুই না চাইলেও সব কিছু আমি ধরবো। আর তাছাড়া তোর উপর তো আমার একশো’র একশো’ই অধিকার আছে তুই পা থেকে মাথা পর্যন্তই আমার কিন্তু আমার তোকে চাই’না কারণ তুই একটা নষ্টা.!
বৃষ্টিকে বারবার বলেছে নষ্টা বলতে না কিন্তু এই ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে শোনছেই না। তাই রিমন বৃষ্টির হাত ধরে টান দিয়ে বৃষ্টি কে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। বৃষ্টি হাত দু’টো পেছনে নিয়ে চেপে ধরে আর ভ্রু নাচিয়ে বলে.

– তোকে না বলছি নষ্টা বলছি না তুই কি একবার বললে একটা কথা বুঝিস না নাকি আগের মতোই রয়ে গেছিস একটুও পাল্টাসনি!

বৃষ্টি ওর সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করছে রিমনের কাছ থেকে ছোটার কিন্তু হাতির মতো ছেলে তার উপর এত শক্তি কোথা থেকে যে আসে আল্লাহ জানে। বৃষ্টি’র ছোটাছুটি বন্ধ করানোর জন্য রিমন বলল.

– আমি না চাওয়া পর্যন্ত হাজারও বাদরের মতো লাফালে ছুটতে পারবি না চুপচাপ দাঁড়া কুত্তী।

কে শুনে কার কথা বৃষ্টি রিমনের মুখের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর হাত নাড়িয়ে ছোটবার চেষ্টা করছে। রিমন বৃষ্টির দিকে একটু ঝুঁকে বলল.

– রুমের জিনিস গুলো আমার টাকায় কেনা তাই 100% সবগুলাই একান্ত আমার তোর না। কেনার সময় 50% দিয়েছিলি যে এখন উড়ে এসে বলছিস 50% তোর একটা জিনিসেও হাত দিবি না।

বৃষ্টি কে কথাগুলো বলছে রিমন ওইদিকে দরজার সামনে থেকে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের রোমান্টিক মুহুর্ত এনজয় করছে রিমি।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ মনে পরলো রিমি এখানে বৃষ্টি কে ডাকতে এসেছে মুখের দুষ্ট মিষ্টি হাসি বন্ধ করে গলা ঝেড়ে কাশি দিয়ে বলল।

” উঁহু উঁহু! তোমাদের রোমান্স শেষ হয়ে গেলে নিচে চলে এসো সবাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ”

হঠাৎ দরজার সামনে থেকে রিমির কথা শুনে রিমন বৃষ্টি কে ওর থেকে সরিয়ে দিয়ে দরজার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো আর তাকিয়ে রিমিকে হাসতে দেখে বলল।

” আপু তুই এখানে কখন আসছিস? ”

রিমি হাল্কা দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল.
” যখন তোরা রোমান্সে ব্যস্ত ছিলি.!”
রিমির কথার প্রতিউত্তরে রিমন বলল।
“আমরা রোমান্স করছিলাম না আমি জাস্ট ওকে বুঝাচ্ছিলাম। ”
রিমন এর কথায় বিরক্ত হয়ে বৃষ্টি রিমান উদ্দেশ্যে বলল।
” কি যে বলো তুমি আপু রোমান্স আর ওর সাথে ওর মতো নষ্..”

একটুর জন্য বৃষ্টির মুখ দিয়ে সত্যি কথা টা বেরিয়ে যাচ্ছিল। কি বলতে যাচ্ছিল বৃষ্টি বুঝতে পেরে জিহ্বার মাথায় হাল্কা দাঁত দিয়ে চেপে ধরে কামড় দেয়। বৃষ্টি কথা সম্পূর্ন করেনি কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেছে দেখে রিমি বৃষ্টি কে প্রশ্ন করল।

” রিমন একটা কি..? ”

বৃষ্টিকে রিমির করা প্রশ্ন শুনে রিমন করুণ দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি রিমন এর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে রিমনকে বলল।

” রুমের সব কিছুর উপর আমার ৫০% অধিকার তুমি যদি না দাও তাহলে আপুকে এখনই সব বলে দেবো। ”

বৃষ্টির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রিমন ফিসফিস করে বলল.

” ব্লাকমেইল! আচ্ছা সমস্যা নেই আমারও দিন আসবে ”

বৃষ্টি রিমন এর সামনে দাঁড়িয়ে রিমন এর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো আর সামনে এসে থাকা চুলগুলো এক হাত দিয়ে পেছনে ফেলে দিয়ে স্টাইল নিয়ে রিমির সাথে চলে গেলো। বৃষ্টির যাওয়ার দিকে রিমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। আয়নায় একবার নিজেকে থেকে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে ওই দিকে রিমি বৃষ্টি কে নিয়ে নিচে যাওয়ার পর সবার সাথে এক এক করে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগল বৃষ্টি সবার পা ধরে সালাম করতে শুরু করে সবার আগে রিমি ওর মা’র সাথে বৃষ্টির পরিচয় করিয়ে দেয়। বৃষ্টি সালাম করতেই উনি বৃষ্টি কে ধরে উঠিয়ে উনার পাশে বসিয়ে বৃষ্টির দুই গালে হাত রেখে কপালে চুমু দিয়ে বললেন।

” তুমি হচ্ছো আমার আরেক মেয়ে! এই বাড়িতে বিয়ে করে আসার কথা ছিলো তোমার বোনের কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস দেখো তুমি হয়ে আসছো আমার ছোট ছেলের বউ খুবই আদরের আমার ছেলের দায়িত্ব এখন তোমার খুবই ভালো ছেলে আমার তোমাকে কখনো কষ্ট দেবে না। ”
শাশুড়ী মা’র কথা শেষ না হতেই বৃষ্টি মনে মনে বলতে শুরু করল. ” কত ভালো খুব ভালো করেই জানি ভালো তো নয় পুরাই নষ্টা আর কষ্ট দিবে কি কষ্ট দিয়া তো উল্টাই ফেলছে কষ্ট দিয়া তো জীবন টা আমার কষ্ট কষ্ট বানাই ফেলছে ” কথাগুলো মনে মনে বলছে আর মা’র মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে।
বৃষ্টির এই হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন। ” তুমি আমার লক্ষী তোমার মুখের এই হাসিটা জেনো সব সময় বজায় থাকে, আর আমাদের এখানের নিয়ম বিয়ে পর বউয়ের দায়িত্ব বাড়ির সবার জন্য রান্না করা। তাই এখন রিমি তোমাকে কিচেনে নিয়ে যাবে তোমাকে কিন্তু কোনো হেল্প করবে না সব রান্না তোমাকে একা হাতে করতে হবে পারবে তো.?”

বৃষ্টি ওর শাশুড়ী মার দিকে তাকিয়ে হাল্কা মৃদুস্বরে বলল। ” আমি পারবো মা! ”
তারপর রিমি সবার সাথে বৃষ্টি কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কিচেনে নিয়ে চলে যায়। রিমি বলছে কি কি রান্না করতে হবে বৃষ্টি সব কিছু খাতায় নোট করে নিচ্ছে। রিমি কোথায় কি কি আছে সব কিছু বৃষ্টি কে দেখিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়া আগে এটা বলে যায় রিমন এর পায়েস খুব পছন্দ সব শেষে পায়েস বানানোর জন্য বৃষ্টি ও হাসি দিয়ে বলল বানিয়ে দেবে আর সবার জন্যই বানাবে। কথাটা বলেই মনের মধ্যে মনকলা খাচ্ছে বৃষ্টি আর ডেভিল মার্কা হাসি দিচ্ছে।

দীর্ঘ তিন ঘন্টা পর সবার জন্য রান্না শেষ করে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখছে বৃষ্টি কম বেশি সব কিছুই রান্না করেছে যাবতীয় সব কিছুই রান্না করছে। (এত কিছুর নাম লিখতে পারলাম না সরি খাবারের নাম লিখতে লিখতে আমার খেতে ইচ্ছে করে তাই😅)
কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই ডাইনিং টেবিলে এসে বসে আত্মীয় স্বজনরা সবাই। টেবিলে বসার পর বৃষ্টি সবাই কে খাবার সার্ভ করছে। সবাই ভেবেছে প্রথম বার রান্না করছে ভালো হবে না। এটা রিমনও ভেবেছিলো কিন্তু যেই না এক লোকমা মুখে দিলো সবার ভাবনায় জল না পুরো সমুদ্রের পানি এসে পরল। অনেক মজা হয়েছে খাবার সবাই খেয়ে প্রশংসা করছে শুধু রিমন ছাড়া রিমনকে চুপ করে থাকতে দেখে বৃষ্টির একটু রাগ হচ্ছে। রিমনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে মারে রিমি আর বলে.

” কিরে ভাই তুই খাচ্ছিস কিছু বল খাবার টা কেমন হয়েছে ”

রিমন মাথা তুলে রিমির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল।

” এতে নতুন কি আছে আর ভালোই হয়েছে এটা আবার বলতে হয়। ”

খাবারের লোকমা মুখে দিতে গিয়ে থেমে যায় সোহান আর রিমনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে.!

” নতুন আছে আর এটা হলো আজকের সব রান্না বৃষ্টি একা রান্না করছে। ”

এইসব রান্না করেছে শুনে খাবার জেনো রিমনের গলায় আটকে গেলো সাথে সাথে আহ উহ করছে রিমনের অবস্থা দেখে বৃষ্টি টেবিলের উপরে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এক গ্লাস পানি রিমনের মুখের সামনে ধরল। রিমন বৃষ্টির হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে ধকধক করে সবটা পানি খেয়ে নিলো সাথে মাথা ঘুরে বৃষ্টির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না এতো টেস্টি খাবার বৃষ্টি রান্না করছে।
সব খাওয়া শেষে এখন মিষ্টি খাওয়ার পালা মানে পায়েস খাওয়ার পালা। বৃষ্টি ট্রে তে করে ১৫ টা ছোটো বাটিতে করে সবার জন্য পায়েস নিয়ে আসে তার মধ্যে একটা রিমনের। বৃষ্টি ওর শাশুড়ী মা’র থেকে দেওয়া শুরু করে একে একে সবাইকে পায়েস দেয় সবার পরে রিমনকে দেয়। আহা পায়েস দেখে রিমনের মুখে হাসি ফুটে উঠে রিমন মুচকি হেসে পায়েসের বাটিটা হাত নেয়। সবাই খেয়ে পায়েসেরও খুব প্রশংসা করছে সব শুনে রিমন এক চামচ পায়েস মুখে দিতেই পর জেনো মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা কিছুতেই গিলতে পারছে না। এমন অবস্থাতেই রিমন বৃষ্টির দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। বৃষ্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে সবাই রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল।

” কি রে তুই খাচ্ছিস না কেনো তোর তো পায়েস ফেভারিট আর যা মজা হয়েছে আমাদের তো ইচ্ছে করছে সব টা খেয়ে নিতে! ”

রিমন ওদের মুখে প্রশংসা শুনে ঠিক বুঝতে পারে এটা সম্পূর্ণ বৃষ্টি ইচ্ছে করে করেছে ।

” এটা পায়েস না অন্য কিছু, না আছে চিনি, না আছে দুধ, আছে শুধু চাল আর পানি ব্লে ভমি আসতেছে এর জন্য শাস্তি তোকে পেতে হবে কুত্তী আমাকে নিরামিষ পায়েস খাওয়ানোর জন্য শয়তান মেয়ে সবার টা ভালো করে বানিয়ে শুধু আমার টাই এমন পঁচা করে বানাইছিস তোকে যে কি করতে মন চাচ্ছে উফফ। ” (মনে মনে)

বৃষ্টির দিক থেকে চোখ সরিয়ে পায়েসের বাটি নিচে রেখে রিমন সবার উদ্দেশ্যে বলল.

” আমার এখন পায়েস খাওয়ার মুড নেই পরে খাবো আর পেটে জায়গাও নেই উঠছি আমি ”

কথাটা বলে রিমন চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো। যা দেখে বৃষ্টির পেটের মধ্যে থাকা ইন্দুর খুশিতে লাফাতে শুরু করে। এত মানুষের সামনে তো হাসা যাবে না তাই চুপ করে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির শাশুড়ী মা বৃষ্টি কে বললেন।

” মা তুমি এখানে আসো আমার পাশে বসে খাও আমার সাথে ”

বৃষ্টি উনার কথা শুনে হালকা মুচকি হেসে উনার পাশের চেয়ার টেনে বসলে আর খেতে শুরু করল যদিও সবার খাওয়া শেষ। এত ভালোবেসে আদর করে ডেকে বলেছেন এটাই অনেক এতেই খুশি বৃষ্টি।

ওইদিকে রিমন রুমে ঢুকতেই অবাক হলো ভ্রু কুঁচকে তাকালো….

চলবে?

আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছো সবাই? আশা করি ভালো আছো।
একটু সমস্যার জন্য গল্প বড় করে লিখতে পারছি না তাই দুঃখিত! গল্পটি যারা পড়বেন অবশ্যই মন্তব্য করবেন আপনাদের মন্তব্যেই আগ্রহ জাগে পরের পর্ব লিখার। রি-চেইক করা হয়নি ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আল্লাহ হাফেজ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here