#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_০২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
অপূর্ব বর্ষার দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো তারপর বর্ষা আবারও ওর চাচ্চুকে খুজতে লাগল।
বাড়ির বাহিরে প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে চাচ্চু সেখানে দাঁড়িয়ে ডেকোরেশনের লোকদের সব কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে বর্ষা চাচ্চুকে দেখে দিলো দৌঁড় বর্ষাকে এভাবে দৌঁড়াতে দেখে মিঃ জয়নাল শেখ বর্ষার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো বর্ষা ওর চাচ্চুর সামনে এসে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে সেটা দেখে ওর চাচ্চু জিজ্ঞেস করল। কি হয়েছে মামনি এভাবে দৌঁড়াচ্ছো কেনো? বর্ষা এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উত্তর দিলো। চাচ্চু তোমার বৃষ্টির সাথে কথা হয়েছে ও কেমন আছে ঠিক আছে তো ওর কিছু হয়নি তো চাচ্চু? বর্ষার করা এতগুলো প্রশ্ন শুনে ওর চাচ্চু ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল। ব্যাপার কি মামনি আজ তুমি সকাল সকাল বৃষ্টির অবস্থা জিজ্ঞেস করছো? বর্ষা বলল। তো আর কাকে জিজ্ঞেস করবো ৭মাস হয়ে গেলো বৃষ্টি কে দেখি না ওর সাথে কথাও হয় না ও তো শুধু তোমার সাথেই কথা বলে আর কারো সাথে কথা বলে না। জয়নাল শেখ আবারও জিজ্ঞেস করল। আসল ঘটনা টা কি ওইটা বলো। বর্ষা করুণ দৃষ্টিতে তাকায় আর বলে। চাচ্চু আমি আজ ভোরে বৃষ্টি কে স্বপ্নে দেখেছি আর স্বপ্নটা ভালো ছিলো না তাই আমার খুব টেনশন হচ্ছে বৃষ্টির জন্য ও কখন আসবে? জয়নাল শেখ চাচ্চু বর্ষা’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল। চিন্তা করিস না মা বৃষ্টি আল্লাহর রহমতে সম্পূর্ণ সুস্থ ও ভালো আছে আজ সকালেই কথা হয়েছে আর আমি ওকে বলেও ছিলাম তনির বিয়ের কথা আমি ওকে আনতে যাবো নাকি ও একাই আসবে কিন্তু বৃষ্টি বলে ও আসবে না আর আমাদের কাউকে যেতেও বারণ করেছে ও হোস্টেলেই থাকবে এখানে কেউ গেলেও আসবে না শুধু শুধু কাউকে আসতে হবে না। তুই তো জানিস বৃষ্টি ছোটো থেকেই যা বলে তাই করে একবার বলেছে আসবে না আমি গেলেও আসতো না এদিকে কত কাজ সে দিক ও তো দেখতে হবে সেজন্য আমি আর যাইনি। দুঃখ করিস না যা তোরা তোদের মত আনন্দ কর তোদের তাপ্পির বিয়ে যা। বর্ষার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল বর্ষা ওর চাচ্চুর সবগুলো কথা মন দিয়ে শুনল করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তারপর মন খারাপ করে চলে গেলো। বাড়ির ভেতরে এসে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাবে তখনই সিঁড়ি দিয়ে নাচতে নাচতে সিটি বাজাতে বাজাতে নামছিলো কাব্য বর্ষার মন খারাপ দেখে দাঁড়িয়ে বর্ষার হাত ধরে মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করে। বর্ষা প্রথমে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকে বর্ষার চুপ থাকা দেখে কাব্য চোখ গরম করে রাগী কন্ঠে বলে। কি হলো চুপ করে আছিস কেন বলবি তো মন খারাপ কেন? বর্ষা এখনও চুপ করে আছে সিঁড়ির সামনে থেকে রিমা বলল। আমি বলছি তোকে ভাইয়া। কাব্য রিমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আর বলল। এখন তুই আবার কি বলবি? রিমা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে বলে। ওই যে যেটা জানতে চাচ্ছিস ওর মন খারাপ কেনো? হ্যাঁ বল ও তো কিছু বলছে না এখন তুইই বল ওর কি হয়েছে? রিমা বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল। কাব্য ভাইয়া বর্ষা রাতে বৃষ্টি কে স্বপ্নে দেখেছে আর তারজন্য চাচ্চুর কাছে গিয়েছিল ও কখন আসবে জানতে কিন্তু বৃষ্টি সকালেই চাচ্চু কে কল দিয়ে বলেছে ও আসবে না আর ওকে জেনো কেউ আনতে না যায় এ জন্যই মন খারাপ মুখ ফুলিয়ে উপরে চলে যাচ্ছিল। কাব্য এতক্ষণ রিমার দিকে তাকিয়ে ওর কথাগুলো শুনছিল ওর কথা শেষ হতেই বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল। রিমা যা বলছে সেটা কি সত্যি এটাই কারণ? বর্ষার চোখের কার্নিয় বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে নিচে পরার আগেই কাব্য ওর থুতনির সামনে হাত রাখে পানির ফোটা কাব্যর হাতের উপর পরে হাত সরিয়ে বর্ষার গালের পানি মুছে দেয় সাথে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় জরিয়ে ধরে বলল।
আমার লক্ষী বোনের চোখে পানি মানায় না আমার কলিজার টুকরা এক ফোঁটা জল ও শুধু শুধু খরচ করবি না চোখের জলের তো অনেক দাম চিন্তা করিস না চাচ্চু তো বলল বৃষ্টি ঠিক আছে আর ওই আসতে চায় না ওর কাছে ওই ছেলেই সব তাই শুধু শুধু কষ্ট পাস না তনির বিয়ে তাই মন খুলে বিয়ে এনজয় কর বৃষ্টি পরেও আসতে পারবে আর তুইও বৃষ্টির হোস্টেলে গিয়ে দেখা করতে পারবি কিন্তু তনির বিয়ে কিন্তু একবারই হবে বারবার হবে না তাই বিয়ে টা এনজয় কর কিছুক্ষণের মধ্যে ভাইয়া ও তার ফ্যামিকির সবাই আমাদের এখানে চলে আসবে তাই তোর এই কাঁদো কাঁদো ফেস হাসিখুশি ফেসে পরিনত কর আর নয়তো তোকে দেখে সবাই বলবে আজ তোর বিয়ে আর তুই বিদায়ের জন্য কাঁদছিস। কাব্যর কথা শেষ হলে মুচকি হেসে বর্ষার কপালে চুমু দেয় নিচ থেকে নাহিদ এসে রিমাকে জরিয়ে ধরে সব শেষে অপূর্ব এসে ওদের চারজনকে জরিয়ে ধরে. এই ভাবে ভাইবোন দের ভালোবাসা বিতরণ করতে দেখে একটা হিংসুটে মেয়ে সিঁড়ির উপর থেকে বলল। আরে আমিও তোদের মন আমাকেও তোদের দলে সামিল কর আমারও তো ইচ্ছা করে ছোটো ভাই বোনদেরকে জরিয়ে ধরতে।
তাপ্পির কথা শুনে সবগুলা তনিমার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিলো এক হাত করে করে পাঁচ টা হাত তনিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে পাঁচ জনে তনিমা সিঁড়ির উপর থেকে দৌড়ে এসে ওদের পাঁচজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ওদেরকে জরিয়ে ধরে।
পাঁচজনের চোখ ছলছল করছে পানিতে এরই মধ্যে কাব্য বলল। আমাদের মধ্যে এখন শুধু আমাদের বৃষ্টির অভাব। কাব্যর কথা শুনে তনিমা বলল। আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর বৃষ্টি আসবে না। তনিমার কথা শেষ হলে নাহিদ বলে! আসবেই বা কি করে ওইদিন কাব্য ওকে যেভাবে পরপর চারটা থাপ্পড় মারছিলো ইশশ আর একটা মারলে হয়তো ওর দাঁতই পরে যেত তারপর তো বৃষ্টি তিনদিন কিছু খেতেও পারেনি আর কথাও বলতে পারেনি বৃষ্টি তো হেবি রেগে আছে কাব্যর উপর তাইতো হোস্টেলে চলে যাওয়ার পর আর বাড়িতে আসেনি আর সবার সাথে যোগাযোগ ও বন্ধ করে দিছে সব দোষ কাব্যর আজ বৃষ্টি আসবে না কারজন্য কাব্যর জন্য শুধু শুধু ওই ছেলের উপর দোষ চাপাচ্ছে ওর জন্য আসবে না। নাহিদের কথা শেষ হতে না দিয়ে কাব্য বলল। তোকে কে বলছে আমি আমার দোষ ঢাকছি। কাব্যর কথা শেষ করতে না দিয়ে তনিমা বলল। ওইদিন তোর ওর উপর হাত তোলা উচিত হয়নি কাব্য। তনিমার কথা শুনে কাব্য তনিমার দিকে তাকিয়ে বলল। তনি তুইও বলছিস এই কথা আরে ওইদিন বৃষ্টি যা করেছিলো তারপর তো ওর আরও বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত ছিলো ওইদিন তুই ওকে ওমন অবস্থায় দেখলে তুইও নিজেকে সামলাতে পারতি না তনি এখন তো সবাই আমার দোষই দিবি আমি তো বৃষ্টির শত্রু তাই না।
কথাগুলো শেষ করে কাব্য ওদের কাছ থেকে চলে যায়।
তারপর ওরা পাঁচ জন একে অপরের দিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। তনিমা উপরে ওর রুমে চলে গেলো। ওরা চারজন এখন দাঁড়িয়ে আছে তখনই সিঁড়ির সামনে এসে বড় আম্মু বলল। তোরা চারজন এসে নাস্তা করে নে তারপর আমাদের অনেক কাজ তারাতাড়ি আয়। আমরা আসছি বড় মামী তুমি যাও। (অপূর্ব)
আজ কিন্তু অপূর্বর বড় বোন তনিমা ও আমাদের তাপ্পির গায়ে হলুদ আপনাদের সকলের হলুদের দাওয়াত আসবেন হলুদ দিবেন বিরিয়ানি খাবেন শেষে চলে যাবেন আসবেন কিন্তু সবাই।
এক ঘন্টা পর তারপর সবাই এক সাথে খেয়ে উঠে সাদে গিয়ে গল্প করছে এদিকে নিচে বাচ্চা ছেলে পোলেরা চেচামেচি করছে। বর এসেছে বর এসেছে মনে হচ্ছে বিয়ে করতে আসছে উফফ অসহ্য। কিন্তু আসেক গে আমাদের কি আমরা বসে গল্প করি ওখানে তো আর আমাদের কোনো কাজ নেই যা হবে সন্ধ্যা হবে এখন উনারা এসেছে নাস্তা করুক রেস্ট করুন তারপর সন্ধ্যায় মজা হবে তাই না বল। (রিমা)
কিছুক্ষণ পর ওরা সাদ থেকে নেমে রুমে চলে যায়। নিচ থেকে বর্ষাকে ওর আম্মু ডাকছে বর্ষা ওর আম্মুর ডাক শুনে রুমে থেকে বেরিয়ে নিচে চলে যায় গিয়ে জিজ্ঞেস করে ওকে কেনো ডাকছে। ওর আম্মু বলে উপরে ছেলের ফ্যামিলির বড়দের কাছে গিয়ে খাবারের ট্রে টা দিয়ে আসতে ওর আম্মুর কথা শুনে বর্ষা রীতিমতো শকট চোখ দু’টো ছোটো-ছোটো করে বলে।
আমি পারবো না অত গুলো মানুষের সামনে যেতে পরে তাপ্পির সাথে আমাকেও বিয়ে দিতে হবে অন্য কাউকে বলো গিয়ে দিয়ে আসতে আর হয়তো কাব্য ভাইয়াকে বলো আজাইরা হল রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে আমি গেলাম। কথাগুলো বলে বর্ষা সিঁড়ির সামনে আসতেই দেখল একটা ছেলে নামচে সিড়ি দিয়ে নামছে। বেশ ফর্সা, অনেক লম্বা 6 ফিটের ও বেশি হবে, একটা নেভি ব্লু টি শার্ট পরছে, আর কালো জিন্স, তারউপর গাঢ় এস কালার লেদার জ্যাকেট, ব্লু আর এস এর কম্বিনেশনে কেচ পরেছে চুলগুলো কালো সিঁড়ি দিয়ে যেভাবে নামছে লম্বা লম্বা চুলগুলো কপালের উপর এসে বাড়ি খাচ্ছে । কী চমৎকার দৃশ্য বর্ষা হাজার চেষ্টা করেও চোখ ফেরাতে পারছেনা ছেলেটাকে অমায়িক সুন্দর ও কিউট লাগছে। বর্ষা ছেলেটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে বর্ষার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ও যে একটা ছেলেকে এভাবে দেখছে। ছেলেটা সিড়ি দিয়ে নেমে বর্ষার সামনে দিয়ে যেতে যেতে বলল। এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না আমার নজর লেগে যাবে।
ছেলেটার কথায় বর্ষার ধ্যান ভাঙে বর্ষা ভেবাচেকা খেয়ে বেআক্কেলের মতো ছেলেটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কি হলো কিছুক্ষণ আগে এটা? আনমনে ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাবে ঠিক তখনই ওা হোচট খেয়ে পরে গেলো। না মানে পরে যায়নি পরে যেতে নিলো ঠিক তখনই ওই হ্যান্ডুসাম ছেলেটা (হ্যান্ডসাম ছেলেটা) পেছন থেকে বর্ষার হাত টেনে ধরল বর্ষাকে পরা থেকে বাঁচিয়ে নিলো আর বলল। Be careful mam. এখনই তো হাত পা ভাঙতো। ছেলেটার কথা শেষ না হতেই বর্ষা বলল। ভাঙলে ভাঙতো আপনাকে কে বলছে আমাকে বাঁচাতে আর আমাকে টাচ করার সাহস কোথায় পেলেন মেয়ে দেখলেই টাচ করতে ইচ্ছা করে যতসব ফাউল পোলা। কথাগুলো বলা শেষ হলেই বর্ষা হনহনিয়ে ছেলেটার সামনে থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।
এখন এই অবস্থায় ছেলেটা বেআক্কেলের মতো তাকিয়ে আছে বর্ষার যাওয়ার দিকে আর বলতে লাগল…
#চলবে….?