পার্থক্য পর্ব-১৪

0
913

পার্থক্য

১৪ পর্ব।

#রিফাত_হোসেন।

বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে স্টেজ সাজাতে কিছুটা সাহায্য করলো। আরিয়ান জিজ্ঞেস করলো – ‘কী রে জামাই আদর কেমন পেলি।

রিফাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘কীসের জামাই আদর?’
– ‘এই যে তারিনদের বাড়িতে গিয়ে জামাই আদর খেয়ে আসলি।’
– ‘তোরা আর মানুষ হবি না, যতসব আবোল তাবোল কথা।’

রিফাতের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।

রাতের খাবার শেষ করে ঘরে আসলো। তারপর তারিন কে ফোন দিলো । কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিলো। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও, রিফাতের চোখে ঘুম নেই। আর একদিন পর গানের পোগ্রাম। গান নিয়ে রিফাত যতটা খুশি তার থেকে বেশি মন খারাপ। কারণ গান গাওয়ার পরই তারিন কে ছেড়ে চলে যেতে হবে। এটা ভেবেই রিফাতের বুকটা কেঁপে উঠে। মনের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করে৷ রিফাত এখনো তারিন কে মনের কথা বলতে পারেনি। তবে কী তারিন জীবন থেকে হারিয়ে যাবে রিফাত। তারিন কী ভুলে যাবে রিফাত কে।
না এটা হতে পারে না। রিফাত তারিন কে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। জীবনের একটা অংশ করে নিয়েছে তারিন কে। সেই অংশ ছাড়া রিফাত বাঁচতে পারবে না। সারারাত আর রিফাতের ঘুম হলো না।
আরিয়ান সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিফাত। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে রিফাতের পাশে দাঁড়ায়। রিফাত বলে ডাক দেয়। কিন্তু রিফাতের কোন সারা পাওয়া যায় না। কাধে হাত রেখে রিফাত বলে ডাক দেওয়ার সাথে সাথে কেঁপে উঠে রিফাত। রিফাত যতটা অবাক হয়েছে, তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে আরিয়ান। কারণ রিফাতের চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে।

আরিয়ান ভয়ে শিউরে উঠে রিফাতের চোখ দেখে। রিফাতের দিকে হাজারো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আরিয়ান। কিন্তু কোন উত্তর পায় না। এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর রিফাত ও জানেনা। কীভাবে চোখ লাল হলো? কেন সারারাত এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো? এইরকম আরো অনেক প্রশ্ন রিফাতের মাথার উপর ঘুরপাক খাচ্ছে। কে দিবে এই প্রশ্নের উত্তর। রিফাত সারারাত একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো, তাই ও কিছু জানেনা।
রিফাতের অবস্থা বুঝতে পেরে আরিয়ান রিফাত কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে একটু ঘুমাতে বলল। কাল বিকেলে গানের অনুষ্ঠান। আরিয়ান আর বন্ধুরা সবাই মিলে স্টেজ, প্যান্ডেল, লাইটিং এর কাজে ব্যস্ত । সারারাত ঘুম হয়নি বলে রিফাত দুপুর পর্যন্ত ঘুমালো। ঘুম থেকে উঠে অনুভব করে মাথাটা ভারি হয়ে আছে। রিফাত মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে সারারাত ঘুম হয়নি বলে মাথা ভারি লাগছে, নাকি দিনে এতটা সময় ঘুমানোর জন্য।
“আজ ডাক্তার নই বলে এই প্রশ্নের কোন উত্তর পেলাম না”
রিফাত ফ্রেশ হতে হতে সবাই ঘরে চলে আসে। রানা বলল দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে। সবাই গোসল করে নিচে নামলো খাবারের জন্য। এখনও চেয়ারম্যান সাহেব নেই। আরিয়ান ও তার মা বসে আছে খাবার টেবিলে। বাবার এক সন্তান ছিলো চেয়ারম্যান সাহেব। তাই আরিফ সাহেবের কোন কাকা, ফুফু নেই। দাদা- দাদি ও অনেক আগে মারা গেছেন। এখন এই বাড়িতে শুধু আরিফ সাহেব আর তার বাবা- মা থাকেন।
আরিফ আরিয়ান কে রিফাতের কথা জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলো ও একটু অসুস্থ। তাই রিফাত নিচে নামার সাথে সাথে তিনি রিফাত কে জিজ্ঞেস করলো – ‘এখন কেমন আছেন রিফাত সাহেব?’

রিফাত মৃদু হাসি দিয়ে বলল – ‘এখন ঠিক আছি।
খাওয়া শেষ করে আবার সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। দেখতে দেখতে এই দিনটা পাড় হয়ে গেল। পরেরদিন স্টেজে উঠার পর রিফাতের চোখদুটো শুধু একজন কে খুঁজে বাড়িয়েছে। আরিয়ান রিফাতের কানে কানে বলল গান শুরু করতে। তবুও গান শুরু করতে পারছে না রিফাত। চোখদুটো যেন অস্থির হয়ে যাচ্ছে। সামনে এত মানুষের ভিড়ে সেই মায়াবী মুখটা খুঁজে বের করা সত্যি খুব কষ্টের।

কিন্তু কোন এক কবি বলেছিল “মন থেকে ভালোবাসলে তার অনুপস্থিতি চোখে দেখার শক্তির থেকে অনুভব করার শক্তি বেড়ে যায়”

তেমনি তারিনের অনুপস্থিতি রিফাত বুঝতে পারে। এদিকে সামনে বসে থাকা মানুষেরা নানান কথা বলছে। তাদের কথা ভেবে রিফাত গীটারে সুর তুলতে শুরু করলো। হঠাৎ অসংখ্য মানুষের ভিড়ে সেই মায়াবী মুখটা দেখে রিফাতের মনে শান্তি ফিরে আসে। যাকে দেখলে সব রকম টেনশন কাবু হয়ে যায়। যার চোখের দিকে তাকালে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে প্রেমের জগতে। ইচ্ছে করে প্রেমের সাগরে ভাসতে। ইচ্ছে করে তার হাতটা স্পর্শ করে বলি “অদ্ভুত রকম ভালোবাসি তোমায়”।

ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে রিফাত আরিফ সাহেব কে বলল ওদের সামনে আনতে। আরিফ সাহেব গিয়ে তারিন আর তিশা কে সামনে নিয়ে আসলো। রিফাত গান শুরু করলো। চারদিকে সবাই হাত তালি দিচ্ছে। কিন্তু রিফাতের চোখদুটো শুধু একজনের দিকে থেমে আছে। সেখান থেকে নরছেই না৷ তারিন অবশ্য বুঝতে পেরেছে রিফাত ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রিফাত যতক্ষন গান গেয়েছে ততক্ষন তারিনের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
গ্রামের অনেক মানুষ ছিলো বলে গান শেষ হওয়ার পরেও রিফাত তারিনের সাথে কথা বলার সুযোগ পায়নি। সেদিন রাত তারিন তিশার বাড়িতে ছিলো। সারাদিন অনেক খাটাখাটুনি করতে হয়েছে বলে রিফাত এবং বাকি সবাই ক্লান্ত। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।
এদিকে তারিন রিফাতের ফোনের অপেক্ষায় বসে আছে। তারিনের খুব রাগ হলো। রিফাতের নম্বরে কয়েকবার ফোন দিলো তারিন। কিন্তু কোন লাভ হলো না, কারণ স্টেজে উঠার আগেই রিফাত মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।
শেষে কোন উপায় না পেয়ে তারিন ও ঘুমিয়ে পড়লো।

২৭.
এদিকে সকালের ট্রেনে রিফাত আর বাকি সবাই ঢাকা ফিরে যাবে। রাতে কিছু গোছানো হয়নি বলে সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি করে সবাই প্যাকিং করতে শুরু করলো। রিফাত এখনো ঘুমাচ্ছে। আরিয়ান অনেকবার ডাকার পরে-ও উঠে নি রিফাত। রিফাতের খুব ক্লান্ত, এটা ভেবে আরিয়ান নিজেই রিফাতের জামা-কাপড় গুছিয়ে দিলো। আরিফ সাহেব এসে দেখে সবার গোছগাছ প্রায় শেষ। কিন্তু রিফাত এখন ঘুমিয়ে আছে। তাই তিনি গ্লাস থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে রিফাতের মুখে ছিটিয়ে দিলো।
মুখে পানি পড়তেই রিফাত লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে সেখে সবাই হাসছে, আর আরিফ গ্লাস হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রিফাত ঘুম জড়ানো চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তিশার নম্বর থেকে অনেকগুলো মিসকল এসেছিলো। মনে মনে কালকে রাতের কথা ভাবতে লাগলো। স্টেজে উঠার আগে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম। আর ক্লান্ত শরীর থাকার কারণে কালকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রিফাত সেই নম্বরে আবার ফোন করতে যাবে তখন আরিয়ান বলল – ‘এখন আবার ফোন নিয়ে পড়লি কেন?’
– ‘রাতে তিশার মোবাইল দিয়ে তারিন অনেকগুলো ফোন দিয়েছিলো, কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে বুঝতে পারিনি। এমনিতেও রাতে ঘরে আসার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
– ‘আমাদের তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শেষ করে স্টেশনে যেতে হবে। পরে কথা বললেও হবে।’
– ‘কিছুক্ষন পর তো চলে যাবো, যাওয়ার আগে একবার দেখা করবো না।’
– ‘এখন দেখা করার সময় নেই।’

এতক্ষন আরিফ সাহেব চুপ করে ছিলো, কিন্তু এবার বলল – ‘কোন চিন্তা কর না। তারিন এখন আমাদের বাড়ির পাশেই আছে।’

সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘মানে?’
– ‘মানে, কালকে রাতে তারিন তিশাদের বাড়িতে ছিলো। আর যাওয়ার আগে তোমার সাথে তারিনের দেখা করিয়ে দেওয়া দ্বায়িত্ব আমার।’

আরিফ সাহেবের কথা শুনে সবাই খুব খুশি হলো। সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে রিফাত।
আরিয়ান বলল – ‘এবার যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে যে, আর তোর প্যাকিং আমি করে দিয়েছি।’

রিফাত আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলল – ‘থ্যাংকু দোস্ত।’.

আরিয়ান রিফাত কে ধাক্কা দিয়ে বলল – ‘যা হারামি, আগে দাঁত মেঝে আয়৷ তারপর জড়িয়ে ধরিস।’

আরিয়ানের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। রিফাত ফ্রেশ হতে চলে গেল। আরিফ সাহেব বলল – ‘আপনারা দু’জন কী শুধুই বন্ধু, নাকি ভাই।’
– ‘আসলে আমার বাবা আর রিফাতের বাবা খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলেন। ছোটবেলায় মা মারা যায়। ব্যবসার কাজে বাবা সব সময় বাহিরে থাকেন। ছোট থেকে “মা” মানে রিফাতের মা আমাকে মায়ের আদর, ভালোবাসা, স্নেহ দিয়ে বড় করে তুলেছেন। বাবা বলেছিলো আমাকে হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করাবে। কিন্তু রিফাতের মা আমাকে যেতে দেননি। তার কাছে রেখে দিয়েছিলেন। তাই আমি রিফাতের সাথে ওদের বাড়িতে থাকি। রিফাত কে নিজের বন্ধু নয় নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসি। রিফাত ও আমাকে খুব ভালোবাসে। তাই আমরা একে অপরকে সব সময় সাহায্য করি। দু’জনে একসাথে থাকি। আপনার মতো অনেকেই এই প্রশ্ন করে। যে বন্ধুত্বের আড়ালে আমাদের কোন সম্পর্ক আছে কিনা। তখন আমাদের দু’জনের একটাই উত্তর থাকে আমারা একে অপরের “ভাই”।

আরিফ সাহেব স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন আরিয়ানের চোখের কোণে জল জমা হয়ে গেছে। তাই তিনি টপিক চেঞ্জ করার জন্য বলল – তা মিঃ আরিয়ান, আপনার বন্ধু তো একজন কে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু আপনি কাকে ভালোবাসেন বললেন না তো?’

হঠাৎ বাথরুম থেকে রিফাত বের হয়ে বলল – ‘ ও একজন কে ভালোবাসে, আঙ্কেল মানে ওর বাবা দেশে ফিরেই ওর বিয়ের কথা বলবে।’
– ‘বাহ্, এটা তো খুব ভালো খবর। কনগ্রাচুলেশনস মিঃ আরিয়ান।
– ‘ধন্যবাদ।’
– ‘এবার তাড়াতাড়ি সবাই রেডি হয়ে নিচে আসুন। নাহলে ট্রেন মিস করবেন।

পাশ থেকে রিফাত বলল – ‘তাহলে আমার সাথে তারিনের দেখা হবে কীভাবে?’
– ‘বলছি তো আমি দেখা করিয়ে দিবো। আপনি তো দেখি বিয়ের আগেই বৌ পাগল হয়ে গেছেন।’

আবার সবাই একসাথে হেসে উঠলো। আরিফ সাহেব নিচে চলে গেল। ওরা সবাই রেডি হয়ে নিচে নামলো। খাবার টেবিলে বসে ছিলো আরিফ সাহেবের বাবা, মানে চেয়ারম্যান সাহেব। সবাই তাকে সালাম দিলো। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। হঠাৎ করে আরিফ সাহেব কে বলে উঠলো – ‘তোমার আর তিশার মধ্যে কী সম্পর্ক?’

ওনার এইরকম কথা শুনে রীতিমতো সবাই থতমত খেয়ে গেল। রিফাত আরিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখে, তিনি ভয়ে চুপসে গেছে। মাথা নিচু করে বসে আছে।
ওনার চুপ করে থাকা দেখে চেয়ারম্যান সাহেব আরো রেগে গিয়ে বলল – ‘কী হলো চুপ করে আছো কেন?’

চেয়ারম্যান সাহেবের এইরকম কথায় পুরো বাড়ি থমকে গেল। চারদিক কেমন স্তব্ধ হয়ে গেছে। আরিফ সাহেব কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল – ‘আসলে বাবা, আমি তিশা কে ভালোবাসি।’

এইকথা বলেই আরিফ সাহেব চুপ হয়ে গেল। হয়তো বুঝতে পারছেন এখন একটা ঝড় উঠবে। আর সেই ঝড় কে মোকাবেলা করার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রিফাত চেয়ারম্যান সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখে, তার মুখে দুষ্টুমির ছাপ ফুটে উঠেছে। রিফাত বুঝতে পারলো চেয়ারম্যান সাহেব ছেলেকে ভয় দেখানোর জন্য একটু মজা করছেন।

কিছুক্ষন নীরব থাকার পর চেয়ারম্যান সাহেব জোরে জোর হাসতে শুরু করলো। সবাই তাকে দেখে অবাক হলেও রিফাত তেমন অবাক হননি। কারণ রিফাত জানতো এখন এইরকম কিছু একটা হবে।
আরিফ সাহেব কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘বাবা আপনি এভাবে হাসছেন কেন?’
– ‘কাল সকালে খাওয়া দাওয়া করার পর রিফাত আমার ঘরে আসে। তারপর আমাকে তোর আর তিশার ভালোবাসার কথা জানায়। প্রথমে আমি বিশ্বাস করিনি। তারপর আমি নিজে তিশার বাবার সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে বলেন রিফাত যা বলেছে সব সত্যি কথা। যেহেতু তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো, তাই আমি আর না করিনি। আর ছেলের বৌ হিসেবে তিশা কে আমার খুব পছন্দ। দেখতে ও সুন্দর, আর ভদ্র একটা মেয়ে। তাই আমি ঠিক করেছি তিশার সাথেই তোমার বিয়ে দিবো।

আরিফ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না বাবা এত সহজে সব কিছু মেনে নিবে। সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আরিফ সাহেব বসা থেকে উঠে গিয়ে রিফাতের সামনে দাঁড়ালো। তারপর রিফাত কে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছে আরিফ সাহেবের। পরিস্থিতি সামাল দিতে রিফাত বলল – ‘আমাকে না ধরে হবু বৌ কে জড়িয়ে ধরুন গিয়ে।’

রিফাতের কথা শুনে আরিফ সাহেব সহ সবাই হেসে উঠলো। চেয়ারম্যান সাহেব বলল সবাই খাওয়া শেষ কর। রিফাত আর আরিফ সাহেব যে যার চেয়ারে বসে পড়লো। খাওয়া শেষ করে চেয়ারম্যান সাহেব ও তার স্ত্রী কে বিদায় জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো সবাই। আরিফ সাহেব তিশাদের বাড়ির কাছে গেল সবাইকে নিয়ে। তারপর তিশার নম্বরে ফোন দিলো। কিছুক্ষন পর তিশা আর তারিন আসলো।
রিফাত এক মনে তারিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ কেন জানি তারিনের মনটা ও ভালো নেই। রিফাতের সামনে এসে দাঁড়ালো তারিন। ওদের দু’জনকে রেখে সবাই একটু দূরে চলে গেল।
কেউ কোন কথা বলছে না, দু’জনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নীরবতা ভেঙে রিফাত বলল – ‘ভালো থাকবেন। আর নিজের যত্ন নিবেন।’

তারিন কোন কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ ইশারা করলো।
রিফাত আবারও বলল – ‘তাহলে আমি যাই।’

হঠাৎ তারিন কোন কথা না বলে রিফাত কে জড়িয়ে ধরলো। তারিনের এইরকম কাজ দেখে সবাই ‘হা’ হয়ে গেল। রিফাত নিজেও বুঝতে পারছে না তারিন এটা কেন করলো? রিফাত নিজেও বেসামাল হয়ে গেল, আরও শক্ত করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনেই যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। আশেপাশে কে আছে, কী হচ্ছে কারোরই খেয়াল নেই। দু’জনেই প্রেমে মাতাল হয়ে অন্য জগতে চলে গেছে। তারিনের নিঃশ্বাস বুকে পড়তেই আরো শক্ত করে তারিন কে নিজের বাহুডোরে অবদ্ধ করে নিলো রিফাত । ভালোবাসার এক অদ্ভুত আবেশে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।
রিফাতের বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তারিন।

হঠাৎ করে তারিন রিফাতের বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলো।
তারিনের চোখের জলে রিফাতের শার্ট বিজে গেছে। রিফাত নিজেও স্তব্ধ হয়ে গেল। কী হলো কিছুই বুঝতে পারছে না। তিশা তারিনের কাছে চলে গেল।

রিফাতের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কেউ কোন কথা বলল না। আরিয়ান রিফাতের হাত ধরে স্টেশনের দিকে যেতে শুরু করলো। আরিফ সাহেব কে বিদায় জানিয়ে সবাই ট্রেনে উঠে পড়লো। সারা রাস্তা রিফাত কারোর সাথে কোন কথা বলেনি। এক মনে জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছিলো। ঢাকা ফিরে যে যার বাড়িতে চলে গেল।

চলবে……….?

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

শব্দ সংখ্যা:- (১৯৩৩) প্রতিদিন এর থেকে বড় করে লেখা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here