পার্থক্য পর্ব-২৩

0
951

পার্থক্য

২৩ পর্ব।

#রিফাত_হোসেন।

সকালে দরজা ধাক্কায় তারিনের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে দেখে রিফাতের বুকে শুয়ে আছে। আর রিফাত তারিন কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
তারিন কয়েকবার রিফাত বলে ডাক দিল। কিন্তু রিফাতের কোন সারা নেই। কোন উপায় না পেয়ে নিজেই রিফাতের হাত দু’টো ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে উঠলো। তারপর বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে দরজা খুললো। দরজার ওপাশে তিশা দাঁড়িয়ে ছিলো। তিশা বলল – ‘সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি দরজা খোলার কোন খবর নেই।’
– ‘আরে রাতে একটু ঘুমাতে দেরি হয়েছে তাই আরকি।’

তিশা একটু হাসি দিয়ে বলল – ‘সে তো হবেই, বাসর রাত বলে কথা।’
– ‘বাসর রাত তো কী হয়েছে।’
– ‘বাসর রাতে কী আর ঘুমানোর সময় আছে বল।’
– ‘হুহ্, তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না। এমনি গল্প করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে।’
– ‘দেখলাম তো সব।’

তিশার কথা শুনে তারিন টাস্কি খেয়ে গেল। মনে মনে ভবছে না জানি কী দেখছে আর কতটা দেখছে। তারিন বেশ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘কী দেখেছিস?’
– ‘অনেক কিছুই তো দেখলাম।’

তারিন একটু রাগ দেখিয়ে বলল – ‘সত্যি করে বল কী দেখেছিস।’
– ‘সবার চোখের আড়ালে চুপিচুপি ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে থাকা। কোলে মাথা রেখে গল্প করা আরো কত কী?’

তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘তুই কেমনে দেখলি?’
– ‘শুধু আমি না, আরিফ ও দেখেছে।

তিশার কথা শুনে তারিন মাথায় হাত দিয়ে বলল – ‘বেশি কিছু দেখিস নাই তো।’
– ‘না। বেশি কিছু দেখার আগেই আমরা চলে এসেছি।’
– ‘কিন্তু তোরা আমাদের কীভাবে দেখলি।’
– ‘তোরা ছাদে যাওয়ার আগে থেকে আমি আর আরিফ ছাদে ছিলাম।’
– ‘কই আমরা তো দেখলাম না’
– ‘ঘুমানোর আগে আমি আরিফ কে বললাম চলো একটু ছাদে যাই। ও না করেনি, সাথে সাথে রাজি হয়ে গেছে।। তারপর আমরা ছাদে গিয়ে গল্প করছিলাম। হঠাৎ কারোর ছাদে উঠার আওয়াজ পাচ্ছিলাম আমরা। তাই বসা থেকে উঠে গিয়ে একটু আড়ালে লুকিয়ে পড়ি। কিছুক্ষন পর দেখি রিফাত ভাইয়া তোকে কোলে নিয়ে ছাদে আসছে। আর ছাদে এসে আমরা যেখানে বসেছিলাম। ঠিক সেখানেই তোকে বসিয়ে দিয়ে তিনি তোর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। তারপর রিফাত ভাইয়ার রোমান্টিক কথা বলতে শুরু করলো। আমরা দু’জনে আড়ালে লুকিয়ে সব কথা শুনছিলাম আর হাসছিলাম। তোরা দু’জনে দু’জনের দিকে এতটাই মগ্ন ছিলি যে, তোদের সামনে দিয়ে আমরা দু’জন খুব সহজে হেঁটে আসার পরেও টের পাস নি।’
– ‘তোরা তো খুব শয়তান।’

তারিনের কথা শুনে তিশা হো হো করে হেসে উঠলো। কিছুক্ষন পর বলল – ‘অনেক হাসাহাসি হয়েছে। এবার তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়। তোর শ্বশুর মশাই বললেন কিছুক্ষন পর তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে নিতে।’
– ‘ঠিক আছে তুই যা আমরা আসছি’

তিশা চলে গেল। তারিন ঘরে এসে রিফাত কে ডাকতে লাগলো।
কিন্তু রিফাত উঠছে না। তারিন আর দেরি না করে গোসল করতে চলে গেল।
গোসল শেষ করে ঘরে এসে দেখে এখনো রিফাত ঘুমিয়ে আছে। তাই কোন উপায় না পেয়ে বিছানায় বসে রিফাতের কপালে একটা চুমু দিল। রিফাত এতক্ষন জেগে জেগে এটার অপেক্ষায় ছিলো। চোখ খুলে দেখে তারিনের মুখ ওর কপাল ছুঁয়ে আছে। দু’হাত দিয়ে তারিন কে জড়িয়ে ধরলো রিফাত। রিফাত এতক্ষন জেগে ছিলো এটা ভেবেই তারিনের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। নিজের কোমর থেকে রিফাতের হাত দু’টো ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করলো তারিন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি বরং রিফাত আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। শত চেষ্টা করলেও রিফাতের হাত থেকে এখন ছাড়া পাবে না তারিন। তাই আর জোড়াজুড়ি না করে রিফাতের বুকের উপর শুয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর তারিন বলল – ‘সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।’

ভালোবাসার মানুষ কে বুকে আগলে রাখার মধ্যে যে আনন্দ। সেই আনন্দ আর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। এত আনন্দের মধ্যে হঠাৎ কেউ বাধা দিলে যে কেউ রাগ করবে। রিফাত ও তার ব্যাতিক্রম নয়। তাই রাগ করে তারিন কে বলল – ‘সবার বৌ পুরাতন হয়ে গেছে বলে তারা রোমাঞ্চ করে না। তাই বলে কী আমরা রোমাঞ্চ না করে বসে থাকবো।’
– ‘সবাই উল্টো পাল্টা ভাববে তো।’
– ‘কেউ কিছু ভাববে না। তারা যখন রোমাঞ্চ করেছে আমরা কী তখন উল্টো পাল্টা ভেবেছিলাম নাকি। যে এখন তারা উল্টো পাল্টা ভাববে।’

এইকথা বলেই রিফাত মুখ গোমড়া করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। রিফাতের মুখের দিকে তাকিয়ে তারিন হো হো করে হাসতে শুরু করলো। রিফাতের এই পাগলামি গুলো তারিন কে আরো বেশি আকর্ষন করে।
রিফাত মুগ্ধ হয়ে তারিনের হাসি দেখছে। মাথাটা এখনও ভিজে তারিনের। চুলগুলো থেকে কয়েক ফোটা জল রিফাতের মুখে এসে পড়েছে। তারিন হাসি থামিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে রিফাতের মুখ থেকে জল মুছে দিল। রিফাত এখনো তারিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারিন জিজ্ঞেস করলো – ‘এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
– ‘তুমি এত সুন্দরী কেন?’
– ‘তাই বুঝি।’
– ‘হুম’

তারিন একটু একটু করে রিফাতের মুখের দিকে এগুতে লাগলো। যত কাছে যাচ্ছে তত তারিনের নিঃশ্বাস রিফাতের উপর পড়ছে। আর ‘রিফাত কে উত্তেজিত করে তুলছে। তারিন রিফাতের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় দিতে যাবে আর তখনই রিফাত তারিনের হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল। তারপর নিজের ঠোঁট দিয়ে তারিনের গোলাপি রঙের ঠোঁট দু’টো ছুঁয়ে দিল। রিফাতের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে তারিন শিউরে উঠলো। পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো।

৩৭.
বিছানা থেকে উঠে রিফাত বাথরুমে চলে গেল। তারপর রেডি হয়ে দু’জনে নিচে নামলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তারিনদের বাড়িতে গেল সবাই।
আফজাল সাহেব এবং আমেনা বেগম কে সালাম দিল রিফাত। আফজাল সাহেব কান্না স্বরে বললেন – ‘তুমি তো জানো বাবা। আমার মেয়ে কিছুদিন আগে একটা অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। সেদিন তুমি না থাকলে আমরা আমদের মেয়েকে আর ফিরে পেতাম না। আজ ওর দায়িত্ব তোমার কাছে দিতে পেরে সত্যিই আমি নিশ্চিন্ত। কারণ আমি জানি ওকে একমাত্র তুমিই ভালো রাখতে পারবে।

রিফাত আফজাল সাহেব কে কথা দিল তারিন কে কখনো কষ্ট দিবে না।

আরিয়ান বলল – ট্রেন আসার সময় হয়ে গেছে। আমাদের এখনই স্টেশনে যেতে হবে।’

বাবা-মা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে তারিন খুব কান্না করছিলো। রিফাত অনেক বুঝিয়ে তারিন কে শান্ত করে স্টেশনের দিকে যেতে শুরু করলো। রিফাতের বাবা-মা বলল – তুই আর তারিন আমাদের গাড়িতে করে চলে যা। আমরা সবাই ট্রেনে করে আসছি।’
রিফাত বলল – ‘তোমরা দু’জনে গাড়িতে চলে যাও। আমরা বরং ট্রেনে আনন্দ করতে করতে চলে যাবো।’

ইকবাল হোসেন এবং আয়শা বেগম আর কোন কথা বলল না। তারা দু’জনে গাড়িতে উঠে ঢাকার দিকে রওয়ানা দিল। আর বাকি সবাই ট্রেনে উঠে গেল। সবাই গল্প করতে শুরু করলো। তারিন প্রথমে চুপ করে থাকলেও আস্তে আস্তে সবার সাথে গল্প তে মনোযোগ দিল।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে বাকিদের বাড়ি থাকলেও রিফাতদের বাড়ি অনেকটা দূরে। সবাই যার যার বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলো। আরিয়ান বলল – আমাকে একটু অফিসে যেতে হবে। তোরা বাড়িতে চলে যা।
– ‘ঠিক আছে।

‘রিফাত আর তারিন কে একটা গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আরিয়ান কাজে চলে গেল। আর রিফাত ও তারিন বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলো। রিফাতের কাছে ভিতরের দরজার এক্সট্রা চাবি ছিলো তাই বাড়িতে পৌঁছে সোজা ঘরে চলে গেল। ইকবাল হোসেন এবং আয়শা বেগম এখনো এসে পৌঁছাতে পারেনি।

রিফাত তারিন কে বলল – ‘বাড়িতে একটা ফোন করে জানিয়ে দেও আমরা পৌঁছে গেছি।’
– ‘ঠিক আছে।’

তারিন বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিল। বেশ কিছুক্ষন পর রিফাতের বাবা-মা চলে এলো। তারা এসে তারিন কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নিজেদের কোন মেয়ে না থাকায় তারিন কে নিজেদের মেয়ের মতো ভালোবাসতে শুরু করলো। সবাই খুব হাসি খুশি ভাবেই দিন পাড় করতে লাগলো। রিফাতের মতো একজন স্বামী আর এইরকম বাবা-মা পেয়ে তারিন সত্যিই খুব খুশি।

কিন্তু ভালো মানুষের কপালে তো আর সুখ বেশিদিন টিকে না। তারিন আর রিফাতের সুখের মাঝে চলে এলো এক কালো ছায়া। সেদিন সকালে রিফাত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। তখন তারিন এসে বলল – ‘আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসো।’
– ‘কেন?’
– ‘বিকেলে একটু ঘুরতে যাবো।’

তারিনের কোন কথা রিফাত ফেলতে পারে না। তাই তারিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল – ‘ঠিক আছে।’

খুশিতে তারিন লাফ দিয়ে উঠলো।
কিছু কিছু মেয়ের চাওয়াটা ও অল্প। তারা অল্পতেই অনেক খুশি হয়ে যায়। তারিন ও সেইরকম। তারিন রিফাতকে জড়িয়ে ধরে বলে – আমার অনেক অনেক চাই না। শুধু তোমাকে পাশে চাই সারাজীবনের জন্য।

তারিন কে বিদায় দিয়ে রিফাত অফিসে চলে যায়। অফিসে কাজ করতে ভালো লাগছিলো না বলে তারিনের দেওয়া সময় হওয়ার আগেই চলে আসে রিফাত। রিফাত কে দেখে তারিন বলল – আজ এত আগে চলে এলে কেন?’
– ‘তুমি তো বললে ঘুরতে যাবে।’
– ‘সেটা তো বিকেলে যাবো। কিন্তু এখন তো দুপুর।’
– ‘অফিসে কাজ করতে ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম বাড়িতে গিয়ে বৌ এর আদর খেয়ে আসি ।
– ‘ তাই তো বলি মিঃ লুচ্চা আজ দুপুরেই বাড়িতে হাজির।’

রিফাত একটু রাগ দেখিয়ে বলল – ‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। কোথায় ভাবলাম একটু আদর করবে। তা না করে আমাকে লুচ্চা বলছো।’
– ‘ঠিক আছে আর রাগ করতে হবে না।’

তারিন রিফাতের মাথাতা একটু নিচে নামিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল – ‘এর থেকে বেশি এখন দিতে পারছি না। আমার অনেক কাজ আছে। তুমি বসে বসে টিভি দেখো। আমি কাজ শেষ করে তারপর আসছি।’
– ‘ঠিক আছে।’

তারিন ঘর থেকে চলে গেল। এদিকে দুপুর পেড়িয়ে বিকেলে হয়ে যাচ্ছে তবুও তারিনের কাজ শেষ হচ্ছে না। রিফাতের ডাকাডাকি শুনে আয়শা বেগম বলল – ‘কি রে এত ডাকাডাকি করছিস কেন?’
– ‘এখন তারিন কে নিয়ে ঘুরতে যাবো। কিন্তু তারিনের এখনো কাজ ই শেষ হচ্ছে না।’
– ‘আচ্ছা তুই বস আমি দেখছি।

আয়শা বেগম তারিনের কাছে গিয়ে বলল – ‘তুমি যাও আমি এই কাজ গুলো করে দিচ্ছি।’
– ‘সমস্যা হবে না মা। আমি করে নিতে পারবো।’
– ‘সমস্যা হবে না আমিও জানি। তবুও তুমি এখন যাও অনেকদিন ধরে কোথাও যাও না। আজ একটু ঘুরে আসো।’
– ‘ঠিক আছে।

তারিন ঘরে এসে অবাক হয়ে গেল। রাগি চোখ নিয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। ভয়ে রিফাত মাথা নিচু করে ফেললো।

চলবে……….?

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক তাড়াহুড়ো করে লিখতে হয়েছে।

শব্দ সংখ্যা – ১৪০০+

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here