পার্থক্য
২৪ পর্ব।
#রিফাত_হোসেন।
তারিন কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল – এইসব কী?’
তারিনের কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না রিফাত। কী বা উত্তর দিবে। ও নিজেই বুঝতে পারছে না এইসব কেন করলো? মাঝে মাঝে কেন যে এইরকম করে রিফাত নিজেও জানেনা। রিফাতের চুপ করে থাকা দেখে তারিন আরো রেগে গেল। রিফাতের সামনে গিয়ে রাগি কন্ঠে বলল – ‘ তুমি মুখ খুলবে নাকি আমি বাবা কে ফোন করবো?’
রিফাত কে শায়েস্তা করার একমাত্র অস্ত্র আফজাল সাহেব। যেদিন থেকে তারিন এই বাড়িতে এসেছে, সেদিন থেকেই আফজাল সাহেব মেয়ে(তারিন) এর পক্ষে চলে গেছে। তারিন যা বলবে সব কথা শুনবে। আর রিফাত কিছু বললেই উল্টো ধমক দেয়।
এই তো সেদিন রাতে রিফাত তারিন কে একটা ধমক দিয়েছিলো। আর তারিন ও সেই লেভেলের বজ্জাত মেয়ে। রিফাত কে কিছু না বলে আফজাল সাহেবের কাছে গিয়ে নালিশ দিলো। আফজাল সাহেব তো রেগে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে। দুপুর থেকে রিফাত কে কিছু খেতে দেয়নি। শেষে তারিনের অনুরোধে ‘রিফাত কে খাবার দেয়। তবুও এত সহজে না। সবার সামনে রিফাত কে কানে ধরিয়ে রেখেছিলো।
রিফাত মাথা নিচু করে ভাবছে এখনই তারিন কে থামাতে হবে। তা না হলে যে কোন সময় ঝড় আসতে পারে। রিফাত উপরের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল – ‘আসলে তোমাকে নীল রঙের শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে। তাই ভেবেছিলাম আজকে তুমি নীল রঙের শাড়িটা পড়বে। কিন্তু কিছুতেই সেই শাড়িটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই সব জামা-কাপড় আলমারি থেকে বের করে সেই শাড়িটা খুঁজতে ছিলাম।’
– ‘নীল শাড়িটা তো আমি আগেই বের করে রেখেছিলাম।’
– ‘সেটা কী আমি জানতাম নাকি।’
তারিন হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। মাঝে মাঝে রিফাতের এইরকম ছেলেমানুষী দেখে ও নিজেই অবাক হয়ে যায়। এমনিতে এত রোমান্টিক, এত দায়িত্ববান কিন্তু মাঝে মাঝে একেকটা কাজ দেখে মনে হয় একটা বাচ্চা ছেলে।
তারিন রিফাতের পাশে বসে বলল – ‘ এত ছেলেমানুষী কেন কর?’
রিফাত একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল – ‘আমি ছেলেমানুষী করি তাই না।’
– ‘হুম’
রিফাত আর কোন কথা না বলে তারিন কে কোলে তুলে নিলো। তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘এখন আবার কোলে তুলে নিলে কেন?’
– ‘আরেকটু ছেলেমানুষী করি।’
– ‘হ্যালো মিঃ লুচ্চা, এখন এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমাকে কোলে থেকে নামান। গোসল করতে হবে আমাকে।’
– ‘আমিও গোসল করবো তোমার সাথে।’
– ‘তুমি না সকালে গোসল করে অফিসে গেলে।’
– ‘এইরকম সুন্দরী বৌ এর সাথে গোসল করার সুযোগ তো আর সব সময় পাইনা। তাই আজকের সু্যোগ টা কিছুতেই হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না।’
– ‘হুহ্, তোমার ধান্দা খারাপ। বেশি কথা না বলে আমাকে কোল থেকে নামাও।’
রিফাতের তারিনের কোন কথা না শুনে বাথরুমে চলে গেল।
৩৮.
গোসল শেষ করে দু’জনে রেডি হয়ে নিলো। রিফাত হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি আর তারিন নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে বাড়ি থেকে বের হলো। রিফাত জিজ্ঞেস করলো – ‘ কোথায় যাবে?’
তারিন কিছুক্ষন ভেবে বলল – ‘বই মেলায় যাবো।’
– ‘বই মেলায় গিয়ে কী করবো।’
– ‘আমি ছোট থেকেই বই পড়তে ভালোবাসি। এইজন্য আমার ফ্রেন্ডরা সবাই আমাকে বই পাগলি বলে ডাকে।’
– ‘বাহ্, ভালোই তো।’
– ‘হুম। তাই এখন আমরা বই মেলায় যাবো। আমি কখনো বই মেলায় যাইনি।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে চলো।’
রিফাত তারিন কে নিয়ে বই মেলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। রিফাতের বাড়ি থেকে বই মেলা বেশি দূরে নয়। তাই খুব তাড়াতাড়ি মেলায় চলে এসেছে। তারিন হা করে চারদিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো এখানে এত মানুষ আশা করেনি।
রিফাত তারিন কে জিজ্ঞেস করলো – ‘কেমন লাগছে বই মেলা?’
– ‘খুব ভালো লাগছে। চোখের সামনে যে কখনো এইরকম দৃশ্য দেখতে পারবো ভাবতে পারিনি।
এত বই একসাথে দেখে সত্যি আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আর আশেপাশে এত মানুষ। জাস্ট ফাটাফাটি।
– ‘প্রতি বছরই এইরকম এত মানুষ হয় এখানে। অনেক জায়গা থেকে মানুষ আসে এই বই মেলাতে।’
– ‘আমি কিন্তু অনেকগুলো বই কিনবো।’
রিফাত হাসতে হাসতে বলল – ‘ঠিক আছে তোমার যতগুলো ইচ্ছে ততগুলো কিনো।’
রিফাতের কথা শুনে তারিন খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। লাফালাফি করতে করতে রিফাতের গালে একটা চুমু দিয়ে বসলো। তারিনের এইরকম কাজ দেখে রিফাত হা হয়ে গেল। তারিন লাফালাফি থামিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। লজ্জায় তারিন মাথা নিচু করে ফেললো।
রিফাত তারিনের হাত ধরে সেখান থেকে অন্যদিকে চলে এলো।
তারিন বলল – ‘আমার জন্য তোমাকে সবার সামনে লজ্জায় পরতে হলো।’
– ‘আরে বাদ দেও তো। এখন বই কিনো তুমি।’
– ‘হুম ঠিক আছে।’
তারিন রিফাতের হাত ধরে একটা একটা স্টলে গিয়ে ওর পছন্দের লেখকদের বই কিনলো। আবার অন্য স্টলে গিয়ে আরেকটা কিনলো। এভাবে অনেকগুলো বই কেনার পর তারিন বলল – ‘সন্ধ্যা হয়ে আসছে এবার বাড়ি চলো।’
– ‘হুম ঠিক আছে।’
কিছু বই রিফাতের হাতে দিল আর কিছু বই তারিন হাতে গিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। সামনে গোল করে দেওয়াল দেখে বলল – ‘আচ্ছা এটার ভিতরে কী আছে। এভাবে গোল করে বাউন্ডারি করা কেন?’
– ‘এটাকে বলে মুক্তমঞ্চ। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষ্ঠান এখানে হয়।’
– ‘কিন্তু আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’
– ‘হা হা, তুমি তো আমার পিচ্চি বৌ। তাই তুমি দেখতে পাচ্ছো না।’
– ‘সবাই তো আর আপনার মতো লম্বা না। তাহলে তারা কীভাবে অনুষ্ঠান দেখে?’
তারিনের কথা শুনে রিফাত পাগলের মতো হাসতে শুরু করলো।
তারিন জিজ্ঞেস করলো – ‘এত হাসার মতো কী বলেছি আমি।’
রিফাত তারিনের নরম গাল দু’টো ধরে বলল – ‘পাগলি বৌ আমার। সবাই কী এখানে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখে।’
তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – তাহলে কোথায় দাঁড়িয়ে দেখে।’
– ‘ভিতরে অনেক বড় জায়গা আছে। আর বসার ব্যাবস্থা করা ও আছে।’
– ‘বাহ্, দারুণ তো। আজ কী কোন অনুষ্ঠান আছে?’
– ‘যেহেতু পাশেই মেলা হচ্ছে, তাই প্রতিদিনই কিছু না কিছু হয়ে থাকে।’
– ‘তাহলে আমিও দেখবো।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে চলো।
দু’জনে ভিতরে গেল। আজ নাটকের সংলাপ হচ্ছে ভিতরে। ফাঁকা এক জায়গায় বসে পড়লো দু’জনে। তারিন মন দিয়ে নাটকের কথা শুনছে।
কিছুক্ষন পর রিফাত বলল – ‘তারিন তুমি এখানে দু’মিনিট বসো।’
– ‘তুমি কোথায় যাবা?’
– ‘ওই যে সামনে দু’টো মেয়ে বসে আছে। ওরা আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড। অনেকদিন ধরে দেখা হয়না। আজ হঠাৎ করে এখানে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি রিফাত।’
তারিন রিফাতের দিকে তাকিয়ে রাগি দৃষ্টিতে বলল – ‘শুধু ফ্রেন্ড নাকি অন্য কিছু।’
– ‘আরে না শুধু ফ্রেন্ড।’
– ‘ঠিক আছে।’
রিফাত বসা থেকে উঠে মেয়ে দু’টোর কাছে গেল।
রিফাত কে দেখে ইতি বলল – ‘ আরে রিফাত তুই এখানে।’
– ‘আমার ও তো একি প্রশ্ন তোরা এখানে?’
– ‘কিছু বই কিনতে এসেছি। বই কিনে বের হওয়ার সময় মিম বলল এখানে আসতে। তাই এখানে আসলাম।’
রিফাত পাশের ছেলেটা কে দেখিয়ে বলল – ‘ওনি কে?’
– ‘ও আমার মামাতো ভাই।’
দু’জনে হাত মিলালো। মিম বলল – ‘ভাবি কোথায়?’
– ‘ওখানে বসে বসে এই নাটক দেখছে।’
– ‘বিয়ের সময় তো দেখতে পারলাম না। আর বিয়ের পরেও সেই সুযোগ পাইনি। তাই আজকের সুযোগটা আর মিস করবো না। চল আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি।’
– ‘ঠিক আছে আয়।’
সবাই মিলে তারিনের কাছে গেল। রিফাত তারিন কে বলল – ‘ তারিন এই হলো আমার ফ্রেন্ড।’
তারিন হাসি মুখে ওদের সাথে পরিচিত হলো। রিফাত আবার বলল – ‘তবে মিম শুধু আমার ফ্রেন্ড না। ওর আরেকটা পরিচয় আছে।’
তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘কী?’
– ‘মিম আর আরিয়াম একে অপরকে ভালোবাসে। কিছুদিন পর আঙ্কেল মানে আরিয়ান এর বাবা দেশে ফিরলেই মিম আর আরিয়ান এর বিয়ে হবে।’
– ‘তাহলে তো খুব ভালো হবে। এখানেও তিশার মতো আরেকজন বন্ধু হবে আমার।’
তারিনের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। রিফাত বলল – ‘তোর মামাতো ভাই কোথায় গেল।’
– ‘ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।’
– ‘ওনি কী সব সময় চুপচাপ থাকে?’
– ‘না আগে এইরকম ছিলো না। হঠাৎ একটা এক্সিডেন্টের পর থেকেই চুপচাপ হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে আজ এখানে নিয়ে আসলাম।’
– ‘এখানে আসতে বল। আমাদের সাথে কিছুক্ষন কথা বললেই ঠিক হয়ে যাবে।’
ইতি ওর মামাতো ভাই কে ডাক দিল। ছেলেটা আস্তে আস্তে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। লোকটা কে দেখেই তারিনের হাসি মাখা মুখটা মলিন হয়ে গেল। অবাক হয়ে সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা কাছে আসতেই তারিন যা বলল। তা শুনে রিফাত, মিম ও ইতি সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো।
চলবে……….?
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
সরি কালকে কোন গল্প দিতে পারবো না কারণ কালকে আমি কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে যাবো।