উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ৪৩
(নূর নাফিসা)
.
.
চিঠি পড়া শেষ করে কাগজটা মুড়িয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো মেঘ! রাগে তার সর্বাঙ্গে কম্পন ধরেছে! নাফিসাকে কাছে পেলে হয়তো এখন গলা টিপে হত্যা করে ফেলতো! কি করে এসব ভাবতে পারলো তাকে নিয়ে! সে বুঝতে পেরেছে নাফিসাকে সময় দিতে পারছে না বলে নাফিসা রেগে আছে কিন্তু তার প্রতি যে এরূপ সন্দেহ রেখেছে সেটা তো কল্পনার বাইরে! এতো গভীরভাবে যাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিয়েছে আজ সে তার চরিত্রে আঙুল তুলেছে!
সমস্ত রাগ একদিকে ফেলে তার মাথায় এলো, নাফিসা এখন কোথায় আছে! আলমারি খুলে জামাকাপড় দেখলো। অনেক কিছুই আছে আবার কিছু কিছু নেই! বাসা থেকে যেসব কাপড়চোপড় নিয়ে এসেছিলো সেসব নেই! মেঘ মনে মনে বললো,
” সে কি তাহলে সিলেট চলে গেছে একা একা! ঢাকার পথঘাট কি তার চেনা আছে! যেতে পারবে ঠিকমতো! যতই বলুক ধৈর্যশীল, সে তো টিকতে পারবে না আমাকে ছাড়া! আর পাচজন মানুষের মতো স্বাভাবিক না সে, ধোকা দিয়েছি এই ভেবে সহ্য করতে পারবে না সে! কেউ সামলাতে পারে না তাকে আমি ছাড়া! কোথায় আছে কিভাবে আছে কে জানে!”
মেঘ নিজের ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় মোহিনী আর বৃষ্টি রুমে প্রবেশ করছিলো। মোহিনী বললো,
– পেয়েছিস নাফিসাকে?
– না, মা। নাফিসা রাগ করে চলে গেছে। আমি যাচ্ছি!
মোহিনী আর বৃষ্টি দুজনেই অবাক! মেঘ বেরিয়ে যেতে নিয়েও আবার রুমে এলো। মোহিনী পিছু পিছু এসে বললো,
– রাগ করে চলে গেছে মানে!
– হ্যাঁ, আমার সাথে রাগ করে চলে গেছে।
– কেন রাগ করেছে?
– মা, এতো কিছু বলার সময় না এখন। পরে বলবো তোমাকে।টেনশন করো না, আমি যাচ্ছি।
– আরে কোথায় যাচ্ছিস?
– সিলেট।
মেঘ তাড়াহুড়ো করে ল্যাপটপ আর সামনে থাকা কিছু জামাকাপড় ব্যাগে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। কেউ জানলে নেতিবাচক ভাবনা ভাবতে পারে তাদের নিয়ে। তাই ফ্লোর থেকে মোড়ানো কাগজটাও তুলে নিতে ভুলেনি মেঘ! রাস্তায় হাটতে হাটতে কাগজটা কুচি কুচি করে ছিড়ে ফেলে দিলো। রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে এলো। টিকেট কেটে বাসে উঠে বসে রইলো। দশ পনেরো মিনিট পর বাস ছাড়লো। জ্যামবিহীন রাস্তায় দ্রুত গতিতে বাস চলছে তবুও পথ যেন তার শেষ হচ্ছে না আজ! সারাক্ষণ নাফিসার কথা ভাবছে! কোথায় আছে, কি করছে! সে কি নিজের দিকে খেয়াল রাখছে! ফোনটাও তো সাথে নেয়নি! কি করে জানবে কোথায় আছে! সিলেট গিয়ে তার দেখা পাবে তো! আম্মিকে কি একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবে! না, আম্মি কিছু জানতে পারলে টেনশন করবে! সেখানে গেলে আম্মি নিজেই জানাতো কল করে। হয়তো সে এখনো রাস্তায়ই আছে, বাড়িতে পৌছাতে পারেনি!
৪১.
মেঘ বাড়িতে ফিরে দেখলো নাফিসা দরজার সামনে আম্মিকে জড়িয়ে ধরে কাদছে! মাটিতে ব্যাগ পড়ে আছে। মাত্রই এসেছে তাহলে! ঠিকঠাক মতো এখানে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো মেঘ। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। কান্না জড়িত কন্ঠে নাফিসার একটাই আওয়াজ ভেসে আসছে, “আম্মি মেঘ একটুও ভালো না! চিনতে তাকে ভুল করেছি আমরা। সেও ধোকা দিয়েছে আমাকে।” আম্মির চোখেও পানি। আম্মি শুধু বলে যাচ্ছিলো নাফিসাকে চুপ করতে। হঠাৎ আম্মির চোখ আটকে গেলো মেঘের দিকে! সাথে সাথেই আশ্চর্য কন্ঠে বললো,
– মেঘ!
আম্মির মুখে মেঘের কথা শুনে নাফিসা আম্মিকে ছেড়ে পেছনে তাকালো। মেঘকে দেখে সে চরম অবাক! মেঘ আম্মিকে সালাম দিলো। আম্মি সালামের জবাব দিয়ে বললো,
– দেখো কেমন পাগলামি শুরু করেছে! সামলাও তাকে! বুঝাতে বুঝাতে অস্থির আমি!
নাফিসা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে! মেঘ কিছু না বলে চুপচাপ দ্রুত পায়ে ঘরে চলে গেলো। নাফিসা চোখ মুছতে মুছতে মেঘের পিছু পিছু এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো,
– কেন এসেছেন আপনি? মুক্ত করে চলে এসেছি তো। আর কোনো বাধা পাবেন না আমার জন্য! তাহলে কেন এসেছেন আবার?
মেঘ চেয়ারে ব্যাগ রাখলো। ল্যাপটপটা বের করে চার্জে লাগালো। কোনো উত্তর না পাওয়ায় নাফিসার খুব রাগ হচ্ছে! জেদ নিয়ে মেঘকে তার দিকে ঘুরিয়ে জোর গলায় বললো,
– কিছু জিজ্ঞেস করছি, জবাব দিচ্ছেন না কেন! এখানে কেন এসেছেন আপনি?
সাথে সাথে মেঘ নাফিসার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো! নাফিসা নিস্তব্ধ হয়ে গালে হাত রেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো মেঘ পানে! এবার মেঘের মুখ ফুটলো!
– সাহস কি করে হলো একা একা সিলেট চলে আসার? বলেছিলাম না, আমি নিজেই সিলেট নিয়ে আসবো! আর দুইটা দিন সহ্য হলো না তোর! এতো সাহস কোথায় পাস? কি করে ভাবতে পারলি আমি মারিশার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়েছি! এতো নিচু তোর ভাবনা! ছি! ভাবতেও পারিনি আমি এমন একজনকে ভালোবেসেছি! এখনো ভাবতে পারছি না, আমার মেঘা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে! হারিয়ে ফেলেছি আমার মেঘাকে! হারিয়ে ফেলেছি আমি! অবহেলা করেছিলাম তোকে? বলেছিলাম না আমি এখন একটু কাজে ব্যস্ত! লুকিয়ে লুকিয়ে মারিশার সাথে দেখা করতে যাই? মারিশা যে আমার ফ্রেন্ড, বলেছিলাম না তোকে? মারিশার সাথে রাত বাইরে কাটাই? আম্মির কাছে জিজ্ঞেস করে আয়, এই ক’দিন আমি কতবার সিলেট এসেছি! যা জিজ্ঞেস করে আয়, তাহলেই বুঝতে পারবি আমি মারিশার সাথে ছিলাম নাকি সিলেট এসে থেকেছিলাম! আম্মিকে বাজার করে দিয়েছে কে? আরও দু-তিনজন ভাইবোন আছে তোর, আম্মির দেখাশোনা করার জন্য, বাজার করে দিয়ে যাওয়ার জন্য? এখানে যে নতুন বাসার একটা কাজ ধরেছি সেটা কি তোর অজানা ছিলো! তাহলে কি করে ভাবতে পারলি আমার সম্পর্কে এমনটা! হ্যাঁ, মারিশা আমাকে চেয়েছিলো, আমি পরপর অনেক বুঝিয়েছি তাকে! ঘুরতে আমি এমনিতেই যাইনি তার সাথে, তোকে যাতে বিরক্ত না করে, কষ্ট না দেয় আর আমকে ভুলে যায় সেটা বুঝাতেই দুদিন ঘুরতে বেরিয়েছি তার সাথে! অবশেষে গতকাল নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে সে এবং নিজেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবে বলেছে ! সিলেট আসি এ কথা আম্মিকে জানাতে নিষেধ করি, কারণ জানতে পারলে তুইও চলে আসতে চাইবি আমার সাথে! নতুন বউ একমাসও যদি শ্বশুর বাড়ি না কাটাতে পারে তাহলে বাবা মা কি ভাববে সেটা তোর মাথায় আছে! এর বাইরেও কি আমি তোকে সময় দেইনি একটুআধটু! সবদিকের চাপ সহ্য করে সবটা সামলে নিয়ে আমি দিন রাত পাড় করছি তবুও তো মর্যাদা পেলাম না আমার জীবনসঙ্গীর কাছেই! এতো সন্দেহ ছিলো যখন একবার জিজ্ঞেস করে নিতে পারতি সত্যটা! নিজের কাছে নিজেকেই পিশাচ মনে হচ্ছে এখন! ভেবেছিলাম আর দুদিন পর এখানে নিয়ে এসে একেবারে নতুন বাড়িতে উঠে সারপ্রাইজ দিবো তোকে। সেটা আর হলো কোথায়! আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি আজ! বাহ! দারুণ সারপ্রাইজ দিয়েছিস আমাকে!
নাফিসা গালে হাত রেখেই এতোক্ষণ হা হয়ে মেঘের কথা শুনে যাচ্ছিলো! মেঘ সিলেট এসে থেকেছে! এদিকে যে একটা কাজ ধরেছে সেটা তো সে ভুলেই গিয়েছিলো! মায়ের বাজার করার কথা তো তার কখনো মাথায়ই আসেনি! আবার সেদিকেও মেঘ ব্যবসা সামলিয়েছে বাবার সাথে! দিন শেষে যেটুকু সময় বাসায় ছিলো সেটুকু তো সত্যিই তাকে সময় দিয়েছে! মেঘ যে সত্য বলছে সেটা বিশ্বাস করতে একটুও বাধা পাচ্ছে না নাফিসার! মিথ্যে হলে মেঘ কখনো পিছু পিছু ছুটে আসতো না সিলেট! এতো কিছু না জেনে, না বুঝে উল্টাপাল্টা ভেবেছে এই নিখুঁত, মার্জিত মানুষটার সম্পর্কে! এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মনের অজান্তে! এতোকিছু একসাথে সামলায় কিভাবে এই মানুষটা! তাকে কি মাফ করবে কখনো মেঘ!
নাফিসার অশ্রু কোনোভাবেই থামছে না! চোখের পাতা কাপছে, ঠোঁট জোড়া কাপছে, বুকের ভেতরটা থরো থরো কাপছে! তবুও মনে সাহস নিয়ে হাতটা বাড়িয়ে মেঘের একটা হাত ধরতেই মেঘ ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলো!
– সর, একদম স্পর্শ করবি না আমাকে!
মেঘের কথায় অভিমান স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে নাফিসা। তাই আবার দু’হাত বাড়িয়ে মেঘের একটা হাত ধরলো এবং টেনে এনে তার পেটে চেপে রাখলো!
মেঘ এমন কান্ডে হতবাক! কি বুঝাতে চাইছে তার মেঘা! একবার নাফিসার পেটের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার নাফিসার মুখের দিকে তাকাচ্ছে! গলা ধাধিয়ে আসছে মেঘের! কাপা কাপা কন্ঠে নাফিসার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– বে..বেবি?
সাথে সাথে নাফিসার অশ্রুতে মাখামাখি এই মুখে মুচকি হাসির ঝলক ফুটে উঠলো! নাফিসা চোখের পাতা এক করে পানি ফেললো এবং মাথা নেড়ে মেঘের প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব দিলো! এদিকে মেঘের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে! মুহূর্তেই অভিমানগুলো বিলীন হয়ে রাগান্বিত মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আবার জিজ্ঞেস করলো,
– কখন জেনেছো?
– গত পরশু দিন।
– কি! পরশু দিন জেনে তুমি আজকে আমাকে জানাচ্ছো! এখন তো আরেকটা লাগাতে ইচ্ছে করছে!
নাফিসা অন্য গাল পেতে বললো,
– লাগাও!
– এখন লাগালে তো আমি অপরাধী হয়ে যাবো!
কথাটা বলে মেঘ নাফিসাকে কাছে টেনে অন্য গালে কামড় বসিয়ে দিলো! নাফিসা গালে মেসাজ করতে করতে বললো,
– এর চেয়ে তো থাপ্পড়ই ভালো ছিলো! দুই গাল সেইম টু সেইম হয়ে যেতো!
মেঘ হেসে তার উভয় গালে ছোট ছোট কামড় দিয়ে লাল করে দিলো! এটা কামড় না, ভালোবাসার উপহার! অসংখ্য অজানা অনুভূতি মিশে আছে এই স্পর্শে! মেঘ বললো,
– এবার হয়ে গেছে সেইম টু সেইম! মেঘা, কিভাবে পারলে ঢাকা থেকে একা চলে আসতে! তাও আবার এ অবস্থায়!
– সরি, আর কখনো এমন কিছু হবে না! কখনো তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে সন্দেহ করবো না! একবার মাফ করে দাও!
মেঘ তার চোখের পানি মুছে দিয়ে দু’হাতের বন্ধনে শক্ত করে বেধে নিলো। অত:পর নাফিসার কপালে গভীর চুমু একে কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। নাফিসা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে মেঘকে! তার কর্মকান্ডের জন্য সে অনুতপ্ত! নিজেকে নিজেই ক্ষমা করতে পারছে না অথচ মেঘ তাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিয়েছে!
হঠাৎ তার মুখে অতিরিক্ত পানির স্পর্শ পেলো! নাফিসা চমকে উঠে চোখ খুলে তাকালো! মাথা উঁচু করে মেঘের দিকে তাকাতেই দেখলো মেঘের চোখে পানি! ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে নাফিসার! মেঘের চোখে পানির কারণ একটাই! সে মেঘের চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে! মেঘ তার চোখে তাকিয়ে আছে আর মুখে লেগে আছে হাসি! মেঘের চোখের পানি দেখে নাফিসা মেঘকে জড়িয়ে ধরে আরও জোরে কান্না করে দিলো! কান্না করতে করতে বললো,
– মেঘ, মাফ করে দাও আমাকে। বিশ্বাস করো, আমি বাধ্য হয়েছি এমনটা ভাবতে! মারিশা এসে আমাকে নানান কটু কথা শুনিয়ে যেত তাছাড়া আমি তোমাকে কাছে পাচ্ছিলাম না তাই বাধ্য হয়েছি এমনটা ভাবতে!
– মেঘা, স্টপ ক্রায়িং!
– আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো। প্লিজ একটা সুযোগ দাও আমাকে! প্লিজ!
– মেঘা, কান্না বন্ধ করতে বলেছি। আমি কোনো কষ্ট পাইনি! আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা ভেবেছো এজন্য থাপ্পড় দেই নি। থাপ্পড় দিয়েছি একা একা চলে এসেছো বলে! আজ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যেতাম! নিশ্বাস বন্ধ না হলেও আমি জীবন্ত লাশ হয়ে যেতাম, মেঘা!
– কষ্ট না পেলে তুমি কাদছো কেন!
– কোথায় কাদছি!
নাফিসা মেঘের চোখের পানি হাতে নিয়ে বললো,
– এই যে!
মেঘ নাফিসার নাক টেনে বললো,
– এটা কান্না নাকি, বোকা মেয়ে! এটা তো সুখ! আমি বাবা হবো সেই সুখ! কিছু বুঝো না তুমি! ভাবতেই অবাক লাগে তুমি মা হতে যাচ্ছো! নিজেই বুঝো না, বাচ্চাদের বুঝাবে কি!
– আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছো না? আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে কাদছো!
– তোমাকে বুঝানো দায়! আমি কষ্ট পাইনি, তোমার অবস্থান বুঝতে পেরেছি আমি। কষ্ট পেলে চিঠি পড়েই ছুটে আসতাম না এখানে! আচ্ছা বলো, কি করলে বিশ্বাস করবে যে আমি কষ্ট পাইনি এবং বাচ্চাদের জন্য সুখের অশ্রু এটা!
– তাহলে বাচ্চাদের মা কে আদর করছো না কেন?
মেঘ হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নাফিসার দিকে! মেঘের চাহনি এমন দেখে, কথাটা বলে এখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে নাফিসার! হঠাৎ করেই মেঘ তাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে যেতে যেতে বললো,
– স্বেচ্ছায় আদর চেয়ে নিয়েছো! বেগম, আজ তো তুমি শেষ!
নাফিসা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে! মেঘ তাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিতেই সে ঝটপট উঠতে গেলো কিন্তু পারলো না!
– মেঘ, বেশি ভালো হচ্ছে না কিন্তু!
– আচ্ছা, অল্প ভালো হলেই হবে!
– সকাল থেকে আমি কিছু খাইনি!
– আমিও তো খাইনি!
– মেঘ, ছাড়ো! নাহলে…!
– নাহলে কি?
– নাহলে, বাচ্চাদের কাছে বিচার দিবো!
মেঘ অবাক হয়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো! নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার হাতে মাথা ভর দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় থেকে বললো,
– মেঘা, ভালো এক বাহানা পেয়ে গেছো দেখছি! বাচ্চারা না আসতেই বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে দিচ্ছো!
নাফিসা ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো।
মেঘ তার হাতের একটা আঙুল নাফিসার চুলে নাড়াতে নাড়াতে বললো,
– মেঘা, আমি তোমাকে কখন বলেছি তোমার মধ্যে আরাম নেই সুখ নেই!
নাফিসার মুখ মলিন হয়ে এলো। মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,
– পরশু রাতে ঘুমানোর সময় তুমি বলোনি, আগের মতো আর আরাম নেই!
মেঘ অবাক হয়ে বললো,
– আমি তোমাকে নিয়ে এমন কিছু মিন করেছি! বৃষ্টির রুমে যখন বসেছিলাম তখন তোমার পা গরম ছিলো আর আমার পা ঠান্ডা ছিলো। পায়ে পা লাগাতে আরাম লাগছিলো তখন। পরে তো আমার পা গরম হয়ে গিয়েছিলো, গরম পা কি আর গরম পায়ে লাগাতে ভালো লাগে! আর তুমি!
নাফিসা আরও বেশি লজ্জিত ! চোখ দুটো ছলছল করছে! কাপা কাপা কন্ঠে বললো,
– সরি, মেঘ!