পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব-৪৭

0
547

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ৪৭
(নূর নাফিসা)
.
.
৪৪.
মেঘ নাফিসাকে নিয়ে রেলস্টেশনে এলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাকে নিয়ে মেঘ চিটাগংয়ের ট্রেনে উঠলো! স্টেশনে কেউ জিজ্ঞেস করলে মেঘ বললো, “রাঙামাটি যাচ্ছি”। নাফিসা একটু দূর থেকেই শুনে ফেলে অবাক হয়ে গেছে! মেঘ কি এখন রাঙামাটি যাবে! রাঙামাটি কেন যাবে! নাফিসার জানতে ইচ্ছে করছে খুব কিন্তু কিছু বলতে পারছে না! কেননা মেঘ তাকে ধমক দেয়ায় রেগে আছে মেঘের উপর! আজও একটা কেবিন বুক করে নিয়েছে মেঘ। নাফিসাকে বসতে বলে মেঘ দরজার সামনে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ফোনে কারো সাথে কথা বললো, সম্ভবত অফিসের কাজে। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, মেঘ এখনো দরজার সামনে দাড়িয়েই কথা বলছে। নাফিসা অপলক তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। ব্লাক জিন্স ও অফহোয়াইট শার্টে খুব সুন্দর লাগছে তাকে! গলার নিচে শার্টে আটকে রেখেছে সানগ্লাস! সিল্কি চুলগুলো বাতাসে হেলছে! সবদিক থেকে এতো স্মার্ট কেন সে! এতো ভালো লাগে কেন তাকে ভেবে পায় না নাফিসা! সারাজীবন দেখলেও যেন তৃপ্তি মিটবে না!
মেঘ কথা বলা শেষ করে কেবিনের দরজা আটকে দিয়ে নাফিসার পাশে এসে বসলো। হঠাৎ করেই মেঘের উপর রাগের কথা মনে হলো নাফিসার। তাই সে উঠে বিপরীত সিটে চলে গেলো। আড়চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ অবুঝের মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে! সে দৃষ্টি সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। মেঘ মুচকি হেসে ফোন হাত থেকে পকেটে রেখে নাফিসার পাশে এসে বসলো। নাফিসা আবার উঠে অন্যদিকে যেতে নিলে মেঘ এক টানে কোলে বসিয়ে দিলো। নাফিসা উঠার জন্য ছটফট করছে কিন্তু মেঘ তাকে চেপে ধরে রেখেছে। মেঘ বললো,
– আরে কি করছো তুমি! বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে তো! চুপচাপ বসো, এতো নড়াচড়া করলে জেগে যাবে।
নাফিসা ব্রু কুচকে তাকাতেই মেঘ ফিক করে হেসে উঠলো! নাফিসা অভিমান নিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। মেঘ কানে আলতো করে কামড় দিয়ে বললো,
– বাচ্চাদের মায়ের এতো রাগ এতো অভিমান কেন, হুম! আমি তো সেই ভয় পাচ্ছি, বাচ্চারা না জানি কতটা অভিমানী হয়! তখন আমার কি হবে! বাচ্চাদের মাকেই সামলাবো নাকি বাচ্চাদের!
মেঘের কথার সাথে তাল মিলিয়ে নাফিসার অভিমান যেন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিমানগুলো অশ্রু হয়ে দেখা দিচ্ছে! মেঘ বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে নাফিসার কাধে থুতনি রেখে বললো,
– ওগো, অভিমানী বউ আমার! এতো অভিমান কি কেউ করে! সব যদি আগেই বলে দেই, তাহলে সারপ্রাইজ দিবো কিভাবে! মেঘা, কথা বলো আমার সাথে।
– কোনো কথা বলবো না আপনার সাথে!
– বলেই তো ফেলেছো, এবার সমাপ্তি করো অভিমানের। চলো একটু একটু প্রেমালাপ করি!
– ধমক দিয়েছেন কেন আমাকে! আর কখনো কোনো কথা বলবেন না আমার সাথে।
– হায়! হায়! এক সপ্তাহের খাবার বন্ধ করে দিও, তবুও এতো বড় শাস্তি দিও না মোর বেগম সাহেবা ! এটা সম্ভব না! পানিশমেন্ট চেঞ্জ করো।
নাফিসা চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে আছে। মেঘ আবার বললো,
– কি হলো, কিছু বলো! ও, আমি তো ভুলেই গিয়েছি, এ তো বাচ্চাদের মায়ের আদর পাওয়ার বাহানা! এখনই পুষিয়ে দিবো সব!
নাফিসা বড় বড় চোখ করে তাকালো মেঘের দিকে! মেঘের মাথায় যে এখন দুষ্টুমির জাহাজ চলছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে নাফিসা! মেঘকে থামানোর জন্য বললো,
– ছি! ছাড়ো! মেঘ, প্লিজ স্টপ!
মেঘ হাহা করে হেসে উঠলো এবং নাফিসার কথায় থেমে গেলো। নাফিসাকে পায়ের উপর বসিয়েই জানালার দিকে আরেকটু চেপে বসলো। নাফিসা মেঘের বুকে হেলান দিতে গেলে সানগ্লাসটা বাধা দিলো। নাফিসা সানগ্লাস হাতে নিয়ে আরাম করে বসলো এবং সানগ্লাস নিয়ে খেলতে খেলতে বললো,
– রাঙামাটি কেন যাচ্ছি আমরা?
– কে বলেছে রাঙামাটি যাচ্ছি?
– তুমি বলেছো।
– ওহ! শুনে ফেলেছো! আমার সারপ্রাইজটা আর রইলো না!
– চিটাগংয়ের ট্রেনে উঠেই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছি! এবার বলো?
– মেঘা, বিয়ে হয়েছে আমাদের দুমাসেরও বেশি হয়ে গেছে! বাচ্চারাও আসতে চলেছে অথচ কাজের চাপে আমাদের মধুচন্দ্রিমায় যাওয়া হলো না! কাজের চাপমুক্ত হয়ে আজ সাজেক যাচ্ছি মধুচন্দ্রিমায়!
নাফিসা অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকালো! সে তো ভেবে নিয়েছিলো হয়তো কারো বাসায় দাওয়াত পড়েছে তাই বেড়াতে যাচ্ছে! এ তো দেখছে প্রেমরাজ! উনার এতো কাজ ফেলে মধুচন্দ্রিমা নিয়ে পড়েছে! মেঘ ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে?
নাফিসা আবার আগের ন্যায় হেলান দিয়ে বললো,
– তুমি খুব খারাপ এবং জঘন্য একটা লোক! এতো কাজ ফেলে মধুচন্দ্রিমা নিয়ে পড়ে আছো! এখন এটা মাথায় আসছে না, বাবা মা মধুচন্দ্রিমার কথা শুনলে কি ভাববে!
– ঘোড়ার ডিম!
– কি!
– ঘোড়ার ডিম বুঝো না! মানে কিছুই ভাববে না বাবা মা। উনারাই তো এখনো বছর দুএক পর পর হানিমুনে যায়!
– কিইই!
– জ্বিইই! বিয়ের পর যেদিন বাসায় গিয়েছি সেদিন বাবা জিজ্ঞেস করেছে হানিমুন টানিমুন সেড়ে ফেলেছি কি-না!
– ছি! এসব নিয়েও বাবা ছেলের মাঝে কথা হয়, আজ প্রথম শুনলাম! যেমন বাবা তেমন ছেলে!
– যেমনটা কেমন?
– রোমাঞ্চ গুরু!
মেঘ হাহা করে হেসে বললো,
– মেঘা, তুমি এখনো বুঝেই উঠতে পারোনি! রোমাঞ্চ নামক ভাইরাসটা আমাদের পরিবারের রক্তেই মিশে আছে! চিন্তা করো না, অতি শীঘ্রই তোমার মাঝেও ছড়িয়ে পড়বে ভাইরাসটা!
নাফিসা কিছু বললো না। মেঘের কাছে রোমাঞ্চকর কিছু শুনলে কখনো শিহরিত হয় আবার কখনো খুব বেশি লজ্জা পায়! এখন লজ্জা পাচ্ছে তাই চুপ হয়ে আছে! মেঘ লজ্জা পেতে দেখলে আরও বেশি লজ্জা দিবে! একমাত্র তার আশ্রয় ছাড়া লজ্জায় এখানে কোথাও লুকানোরও জায়গা নেই!
তীব্র গতিতে ট্রেন চলেছে। জানালা দিয়ে প্রবেশ করছে তীব্র বাতাস! ঠান্ডা লাগলেও বেশ ভালো লাগছে উভয়ের কাছে! মেঘ আগেই পাতলা কম্বল নিয়েছিলো সাথে। নাফিসাকেসহ সে কম্বল মুড়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। নাফিসা হঠাৎ বাইরে কিছু দেখে অবাক হয়ে বললো,
– দেখো! দেখো! দৃশ্যটা চমৎকার না!
মেঘ বাইরে তাকিয়ে দেখলো মাঠের ওপারে কিছু লোক পুকুরে মাছ ধরছে। অল্প পানিতে জাল ঘেরাও করেছে বিধায় মাছগুলো খুব বেশি লাফালাফি করছে যা এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে! মেঘ নাফিসাকে পরম আবেশে জড়িয়ে বললো,
– মেঘা, এর চেয়েও বেশি চমৎকার দৃশ্য দেখাবো তোমাকে।
– কোথায়? সাজেক?
– হুম। সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে পাবে প্রকৃতির সাজ! প্রায় আঠারো’শ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া, যেন প্রকৃতির এক মিনার। সেই চূড়ার চারপাশে ঘন সবুজ অরণ্যের ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি। সেই সারি সারি পাহাড়ের ওপর কুয়াশার মতো উড়ে বেড়ায় ধূসর এবং সাদা রঙের মেঘ। আর সেই মেঘের গা ছুঁয়ে আসা বাতাস শীতল পরশ বুলিয়ে যায় দেহে। মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ সাজেক!
মেঘের মুখে এটুকু বর্ননা শুনেই যেন নাফিসা হারিয়ে গেছে সেই বৈচিত্রময় জগতে! মেঘের মুখে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ যেন বাস্তব হয়ে তার চোখের সামনে ভাসছে! অতি উৎফুল্ল হয়ে নাফিসা জিজ্ঞেস করলো,
– সেই মেঘই কি ছোয়া যায়?
– হুম। তুমি মেঘ ছুতে পারবে না কিন্তু মেঘ তোমাকে ঠিকই ছুয়ে যাবে। এবং তোমার অনুভুতিতে সাড়া দিয়ে যাবে!
নাফিসা মেঘের শার্ট খামচে ধরে বললো,
– মেঘ, জানি না এসব কতটা সত্য! তবে কেন জানি অতি উৎফুল্ল করে তুলছে আমায়! প্লিজ থেমে যাও তুমি! না হয় সবটা ঘুমন্ত স্বপ্নের মতো হারিয়ে যাবে!
– ওকে, থেমে গেলাম! স্বপ্ন নয়, তোমাকে বাস্তবিক উপলব্ধির সম্মুখীন করতে চাই আমি। সরি।
এমন সময় মেঘের মুখ থেকে “সরি” শব্দটা শুনে নাফিসা চরম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– সরি কেন?
– বিনা কারণে ধমক দিয়ে তোমার মুড নষ্ট করার জন্য।
– বিনা কারণ না। সারপ্রাইজটা ই সেটার কারণ ছিলো। বাদ দাও। আম্মি কি জানতো বেড়াতে যাওয়া সম্পর্কে কিছু?
– হুম।
– এজন্যই আমি বলার পরও কিছু বলেনি!
– হুম, ঘুমাবে একটু?
– উহুম।
– তাহলে কি করবে?
– তুমি গল্প শোনাবে আর আমি শুনবো। তবে সাজেক নিয়ে কিছু বলবে না। সবটা নিজ চোখে দেখতে চাই!
মেঘ নাফিসা উভয়ই গল্প করে ট্রেনে সময়টা পাড় করলো।
একসময় তারা পৌছে গেলো রাঙামাটি। তারা সাজেকের দার্জিলিং রিসোর্টে উঠেছে। ফ্রেশ হয়ে তারা এখন বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত! পুরো একটা দিন কাটলো তাদের ভ্রমণ ও বিশ্রামে।
খুব সকালেই ঘুম ভাঙলো মেঘের। পাশে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে নাফিসা। মেঘ দুহাত মেলে আড়মোড়া ভেঙে পাশ ফিরে বালিশে কনুই ভর করে হাতে মাথা রাখলো। আধশোয়া অবস্থায় থেকে তাকিয়ে আছে তার মেঘার মুখপানে। কেমন যেন সূক্ষ্ম ভাজ পড়ে আছে কপালে। মেঘ দু আঙুলে নাফিসার ঠোঁটের দু কোনে টেনে প্রশস্ত করে দিলো। এবার ঠিক আছে! হাসিমাখা মুখখানাই তো দেখতে ভালো লাগে, সবসময় এমন সিরিয়াস মুডে থাকে কেন!
মেঘ নাফিসার কপালে আলতো কোমল স্পর্শ একে দিলো। অত:পর নাফিসার মাথা ঘেঁষে আবার শুয়ে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো তাকে।
– মেঘা, এই মেঘা?
– হুম?
– উঠো, ভোর হয়ে এসেছে তো!
নাফিসা চোখ না খুলেই মেঘের সাথে আরও জড়ো হয়ে ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,
– একটু পর!
নাফিসার ঘুম কাটেনি বুঝতে পেরে মেঘ মুচকি হেসে নাফিসাকে ছাড়িয়ে উঠে পড়লো। রুমের পর্দা টেনে সরিয়ে দিয়ে উঁচু গলায় বললো,
– মেঘা! দেখো কি চমৎকার সাজেকের সাজ!
ঘুমের মধ্যে উচ্চ কন্ঠ শুনে নাফিসা ধরফরিয়ে উঠে বসলো! তাকিয়ে দেখলো মেঘ রুমের একপাশে দাড়িয়ে আছে। এপাশের সম্পূর্ণ দেয়াল কাচের আবরণ! সে যে রাঙামাটি এসেছে আর হোটেলে ঘুমাচ্ছে তার মনেই ছিলো না! এখন মনে পড়লো সেটা! কাচের বিপরীতে ঘোলাটে পরিবেশ দেখে কম্বল সরিয়ে ধীর গতিতে কদম ফেলে এগিয়ে গেলো নাফিসা। হাত বাড়িয়ে কাচের উপর নাড়ালো। সাথে সাথে কুয়াশার আস্তরণ মুছে গ্লাস স্বচ্ছ হয়ে গেছে। বাইরে যতদুর চোখ যাচ্ছে হালকা কুয়াশায় আচ্ছন্ন আর উঁচুনিচু পাহাড় দেখতে পাচ্ছে! আকাশপানে তাকাতেই খুব নিকটে ঘন কুয়াশা দেখতে পাচ্ছে! প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে আকাশ পানে তাকিয়েই বললো,
– মেঘ, বায়ুমন্ডলের নিম্নভাগে হালকা কুয়াশা আর উপরিভাগে ঘন কেন?
মেঘ গ্লাসে কুয়াশার আস্তরণে আঙুল দিয়ে লিখলো “হেভ এ সুইট মর্নিং, বেবি’স মম!” অত:পর কাছে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– কেননা নিম্নভাগে কুয়াশা দেখতে পাচ্ছো আর উপরিভাগে মেঘ!
নাফিসা চমকে উঠে বললো,
– ওগুলো মেঘ!
– হুম।
– এতো নিকটে!
– হুম।
– এগুলোই কি স্পর্শ করা যায়?
– হুম।
সাথে সাথে নাফিসার মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো! মেঘের হাত ছাড়িয়ে পেছনে ফিরে উচ্ছ্বাসিত হয়ে বললো,
– ও হে জনাব, আমি মেঘ স্পর্শ করিতে চাই!
মেঘ মাথা চুলকে বললো,
– তো করো, নিষেধ করেছে কে! আমি তো তোমার সামনেই দাড়িয়ে আছি! যত পারো স্পর্শ করো!
অসময়ে মেঘের এমন দুষ্টুমি দেখে নাফিসা কড়া কণ্ঠে বললো,
– আমি তোমার কথা বলেছি! আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের কথা বলেছি!
– যাক বাবাহ! আকাশের মেঘের জন্য এখন আমি পর হয়ে গেলাম! প্রকৃত মেঘের রূপে মুগ্ধ হয়ে এখন আমার কোন মূল্য নেই!
মেঘের হিংসে মাখা কথা শুনে নাফিসা মুচকি হেসে মেঘের খুব কাছে এগিয়ে গেলো। এতোক্ষণে খেয়াল করলো এই ঠান্ডার মধ্যে মেঘ খালি গায়ে দাড়িয়ে আছে! ঘুম থেকে উঠে কোনো শার্ট বা টিশার্ট কিছুই পড়েনি শুধু জিন্সের প্যান্ট পড়নে। তার নিজের গায়েও ওড়না নেই! সে বিছানায় ওড়না রেখেই নেমে এসেছে! এখন লজ্জা লাগছে খুব! কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভালো লাগছে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মেঘের রূপ! এ রূপ মুগ্ধ করেছে নাফিসাকে। তাই সেই মুগ্ধতায় লজ্জা আড়াল করে সে মেঘের উন্মুক্ত বুকের লোমে নাক ডুবালো! মাতাল সুরে বললো,
” হুম, নেই তোমার কোনো মূল্য!
তুমি আমার অমূল্য সম্পদ,
অমূল্যের মূল্য উঠালে তো যে কেউ করিবে ক্রয়!
হারিয়ে ফেলবো না তো কভু, সর্বদা থাকে মনে সংশয়!
ও হে জনাব,
প্রতি মুহূর্তে আমি তোমার উপর মুগ্ধ,
রঙিন আলো ছড়িয়ে করেছো তুমি, আমার জীবন স্নিগ্ধ!
ওগো, তুমি শুধুই যে আমার!
আমি সর্বদা কাতর, স্পর্শে তোমার!
জীবন ফুরিয়ে যাবে,
তবুও ফুরাবে নাকো তোমার প্রতি মোহ আমার!”
মেঘ খুব অনুভব করছিলো কথাগুলো! মেঘার কোমল স্পর্শ পেয়ে মেঘের মুখে উচ্চারিত হলো,
” ও হে বেগম সাহেবা ,
এ কেমন বুলি তোমার!
অসময়ে করো নাকো মাতাল,
হয়ে যাবো মাতোয়ারা!
আজ তোমার তরে দেখেছি আমি,
জাগ্রত হয়ে উঠেছে প্রেম, যা কেবল সর্বনাশা !”
নাফিসা লজ্জা পেয়ে মেঘকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
– এতো দুষ্টু কেন আপনি!
– তোমার সর্বনাশা প্রেমের জন্য!
নাফিসা খাট থেকে ওড়না তুলে দ্রুত বাথরুমে চলে গেলো। মেঘ শব্দ করে হাসতে লাগলো! নাফিসা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলে মেঘ বাথরুমে যেতে যেতে বললো,
– শীতের জামা পড়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নাও। ভোর কেটে গেলে মেঘের সাক্ষাৎ পাওয়া দুষ্কর!
নাফিসা উৎফুল্ল হয়ে তারাতাড়ি তৈরি হয়ে গেলো। দুজনেই শীতের জামা পড়ে বেরিয়ে গেলো সাজেকের মেঘের সাক্ষাতের সন্ধানে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here