পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব-৫৩

0
525

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ৫৩
(নূর নাফিসা)
.
.
৪৯.
নাফিসা মেঘের কাছে আসতেই দেখলো মেঘ অটোরিকশা থামিয়ে দাড়িয়ে আছে। দুজনেই রিকশায় উঠে বসলো। হিমেল হাওয়া বইছে, শরীরে কম্পন তোলার মতো শীত। কিন্তু মুহুর্তটা খুব উপভোগ্য! মেঘ নাফিসাকে টেনে আরও জড়ো করে নিয়েছে তার সাথে। নাফিসাও পরম আবেশে মিশে আছে মেঘের উপর হেলান দিয়ে।
পথে থাকতেই আম্মি কল করেছে তারা এখনো বাড়ি ফিরছে না কেন সেটা জানার জন্য। মেঘ বললো তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে যাবে। রিকশায় থেকে নাফিসা কসমস বিস্কুট খেতে লাগলো, নিজ হাতে মেঘের মুখেও দিচ্ছে। এক প্যাকেট শেষ করলো দুজন আর অন্যটা রেখে দিলো।
কিছুক্ষণ পর তারা বাসায় ফিরে এলো। মেঘ শার্ট পাল্টানোর জন্য জ্যাকেট খুলছিলো, নাফিসা জুতা খুলে একপাশে রাখছিলো এমন সময় হইচই শুনতে পেল তারা! মেঘ শার্টের বোতাম যা খুলেছিলো তা আবার লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে এলো। নাফিসাও পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো। রোকসানাও বেরিয়ে এসেছে উঠুনে। দুতিন বাড়ি পরে পাশের বাড়িতে হইচই সাথে কান্নার রোল পড়ে গেছে।
– কি হয়েছে আম্মি!
– জানিনাতো!
– মেঘা, আমি দেখে আসছি।
মেঘ চলে গেলো, নাফিসা আম্মিকে বলে সেও ছুটলো মেঘের পিছু পিছু। খালি বাড়ি রেখে রোকসানা যেতে পারছে না!
মেঘ নাফিসা উভয়ই এ বাড়িতে এসে দেখলো, গাছের উপর একটা ঘর ছিলো সেটাতে অসাবধানতা বশত আগুন লেগে গেছে! দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে সিড়ির দিকে। উপরের দিকে এখনো তেমন জ্বলছে না। লোকজনের কাছে জানতে পারলো, একটা বাচ্চা আছে ঘরে, তার মা বাচ্চাকে রেখে নিচে এসেছিলো কোনো প্রয়োজনে। চুলা থেকে আগুন লেগেছে তাদের ধারণা। পাগলের মতো চিৎকার করছে মহিলাটি। পানি নিয়ে ছুটাছুটি করছে সবাই। আগুন নেভার বদলে যেন আরও জ্বলে উঠছে! মেঘ লক্ষ্য করলো ঘরে পুরোপুরি আগুন লাগেনি। সে পেছন দিকে দৌড়ে গেলো। গাছ বেয়ে অনেক চেষ্টা করে সে ঘরে উঠে পড়লো পেছন দিক দিয়ে। আগুন এক দিক থেকে অন্যদিকে প্রায় পুরো ঘরেই ছড়িয়ে পড়ছে। মেঘ দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে দুতিন বছরের বাচ্চাটাকে দেখতে পেল, বিছানার উপর বসে কাদছে! বিছানার এক কোনে আগুন লেগেও গেছে! মেঘ দ্রুত তাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এলো। সামনে অল্প পরিধির যেই রোয়াক ছিলো সেখানে এসে চেচিয়ে বললো বাচ্চাটাকে ধরতে। সে উপর থেকে ঢিল দিবে আর কেউ ধরবে। সবাই অবাক! আর নাফিসা হতবাক! কাঠ পুড়ে পুড়ে ভেঙে পড়ছে নিচে! নাফিসার মনে ভয় আরও বেড়ে গেছে! মেঘ সেখানে গেলো কিভাবে! মাত্রই না তার পাশে দাড়িয়ে ছিলো! দুতিনজন লোক মেঘ বরাবর নিচে দাড়ালো বাচ্চাকে ধরার জন্য। মেঘ উপর থেকে ছেড়ে দিলো আর নিচ থেকে ধরে ফেললো বাচ্চাকে! মেঘ দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেলো! নাফিসা সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলো মেঘের নাম ধরে! কোথায় গেলো সে! লোকজন নাফিসার দিকেই তাকিয়ে আছে আর অপেক্ষায় আছে যে মানুষটা বাচ্চাকে বাচালো তার দেখা পাওয়ার জন্য! বাচ্চার মা বাচ্চাকে কোলে পেয়ে শান্ত কিন্তু মেঘের ভয়ে এদিকে নাফিসা অশান্ত! মেঘ সেখানে গেলো কিভাবে! আর এখন আসবেই কিভাবে! বাচ্চা তো এসে পড়েছে মেঘ এখনো আসছে না কেন! মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো নাফিসা! আগুন জ্বলতে জ্বলতে প্রায় পুরো ঘরেই ছড়িয়ে পড়েছে। আর এদিকে সবাই মেঘের প্রত্যাশায়! মেঘ কি ঘর থেকে বের হতে পেরেছে! বের হলে এখনো আসছে না কেন সবার সামনে! তার কিছু হয়নি তো!
হঠাৎ করেই পুরো ঘর উপর থেকে মাটিতে আছড়ে পড়লো! ভেঙে একেবারে চুরমার! আগুন আরও তেজে জ্বলছে! নাফিসা “মেঘ” বলে চিৎকার করে আগুনের দিকে দৌড় দিলো! লোকজন যারা আগুনে পানি দিচ্ছিলো তারা নাফিসাকে আটকে ধরলো। নাফিসা মেঘের নাম ধরে চিতকার করছে আর হাউমাউ করে কান্না করছে! মেঘ এখানে আছে! বাচ্চাকে বাচাতে গিয়ে সে নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছে! এতো রিস্ক নিয়ে গেলো কেন সেখানে! লোকজন তো আরও ছিলো, তারা কি কম বুঝে! তারা তো কেউ যাওয়ার সাহস পায়নি! সে কেন গেলো, আগুনের সাথে কি যুদ্ধ করা যায়!
রোকসানা ঘর তালা দিয়ে ছুটে এসেছে এ বাড়িতে। নাফিসাকে কাদতে দেখেছে কিন্তু তার কারণ জানতে পারছে না! মেঘকেও দেখছে না! কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না! দৌড়ে এসে নাফিসাকে থামানোর চেষ্টা করছে আর কথা বলার চেষ্টা করছে।
এদিকে নাফিসা সবাইকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, সে মেঘের কাছে যাবে! তার মেঘ এই ঘরের ভেতর আছে! মেঘ জ্বলে যাচ্ছে আগুনে! তাকে রক্ষা করতে হবে, এটাই নাফিসার প্রচেষ্টা! কিন্তু কাউকে ছাড়াতে পারছে না! এতোজন মিলে তাকে ধরে রেখেছে কেন!
হঠাৎ কেউ এসে সবাইকে ছাড়িয়ে নাফিসাকে টেনে পেছনে ঘুরানোর চেষ্টা করছে। সবাই নাফিসাকে ছেড়ে দিয়ে শান্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে আর কেউ কেউ পানি নিয়ে ছুটাছুটি করছে আগুন নেভানোর জন্য। কিন্তু নাফিসার শান্তি নেই! সে আগুনের দিকে ছুটে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেই যাচ্ছে! অন্যকোনো খেয়াল নেই তার!
মেঘ নাফিসাকে হেচকা টান দিয়ে ঘুরিয়ে “মেঘা!” বলে খুব জোরে ধমক দিলো! নাফিসা এবার সজাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেঘকে খেয়াল করলো! মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার তাকিয়ে ঝাপটে পড়লো মেঘের উপর। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে মেঘকে চেপে ধরে হুহু করে কাদতে লাগলো! খুব ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরে মেঘও জড়িয়ে ধরলো। বড়সড় এক নিশ্বাস ফেলে নাফিসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু স্বরে বললো,
– এই, কাদছো কেন তুমি! এই যে আমি তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি! কিছু হয়নি আমার। আমি ঠিক আছি। মেঘা শান্ত হও! কান্না থামাও বলছি!
– মেঘ, তুমি কেন গেলে সেখানে! একবার আমার কথা ভাবলে না! একবার আমাদের বেবির কথা ভাবলে না! আরেকটু দেড়ি হলে তো আমি মরে যেতাম! এক মুহূর্তও চলে না আমার, তোমাকে ছাড়া! তোমার কিছু হলে বাচবো না আমি! সত্যিই, মরে যাবো!
– মেঘা চুপ করো। আমি ঠিক আছি তো! কিছু হয়নি আমার, দেখো! তাকাও আমার দিকে। সোজা হও।
– উহুম!
মেঘ কানের কাছে মুখ এনে বললো,
– এই সোজা হও, সবাই দেখছে তো!
– দেখুক!
– মেঘা! পাগলামি বন্ধ করো! সোজা হও!
নাফিসা চুপচাপ এভাবেই আছে! মেঘ আবার বললো,
– মেঘা, সবাই দেখছে তোমার লজ্জা লাগছে না! আমার কিন্তু লজ্জা লাগছে! ছাড়ো, সোজা হও!
নাফিসা চুপচাপ এভাবেই আছে। কোনো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে না! মেঘ ব্যর্থ হয়ে নিজেই হাল ছেড়ে দিলো! খুব ভয় পেয়েছে, এখন তাকে একটুও কথা শুনানো যাবে না!
আগুন নিভিয়ে দেয়া হয়েছে পানি ঢেলে! পরিবেশ অনেকটা নিরব। বাচ্চাটার বাবা বাচ্চাটার মায়ের গায়ে হাত তুললো সবার সামনেই। এমন অসাবধানে চলাফেরার জন্য! তিনি আগুন লাগার পরেই বাড়ি ফিরেছেন। মহিলা নিজের দোষ স্বীকার করছে তাই নিরবে কান্না করতে করতে বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে আছে। বাচ্চাটাও মায়ের কোলে মিশে আছে! লোকজন নানান আলোচনা আর সমালোচনা করছে। মেঘের প্রশংসাও করছে। বাচ্চার বাবা-মা এসে মেঘের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। নাফিসা এখনো মেঘকে ছাড়েনি, সেই আগের মতোই আছে! অনেকে জানতে চাইলো মেঘ কিভাবে উদ্ধার করেছে বাচ্চাকে, মেঘ সংক্ষেপে বলে সেখান থেকে চলে এলো নাফিসাকে নিয়ে! রোকসানাও এসে পড়েছে বাড়িতে। রুমে এসে মেঘ নাফিসাকে খাটে বসালো। নাফিসা আবার মেঘকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো আর মেঘ ধমক দিয়ে চুপচাপ বসতে বললো! জোরে ধমক দেওয়ায় নাফিসা চুপ হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু কান্না থামেনি! চোখ থেকে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে! মেঘ জগ থেকে পানি এনে নাফিসার মুখের সামনে ধরলো। না চাইতেও নাফিসা অল্প একটু পান করলো। মেঘ তার পাশে বসে মুখখানা দু’হাতে ধরে বললো,
– এতো পাগলামি করছিলে কেন! তোমার মাঝে যে অন্য কেউ সেটা কি তোমার অজানা! কোথায় নিজের খেয়াল রাখবে, তা না করে পাগলের মতো আচরণ করছিলে!
নাফিসার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে মেঘ আবার বললো,
– কিছু হয়নি আমার। একদম ঠিক আছি। এবার স্বাভাবিক হও।
নাফিসা উঠে দাড়িয়ে মেঘকে টেনে দাড় করালো। অত:পর মেঘের শার্ট খুলতে লাগলো। মেঘ বললো,
– কি করছো তুমি! বললাম তো আমার কিছু হয়নি!
নাফিসা পেটে, পিঠে দেখলো কোনো ক্ষত নেই , হাতে দেখলো অল্প একটু আঁচড় পড়েছে। তারপর বললো,
– প্যান্ট উপরে তোলো।
– হোয়াট! এখন কি প্যান্ট খুলেও দেখাতে হবে তোমাকে! তাছাড়া প্যান্ট আবার উপরে তোলে কিভাবে! আগুনের কোনো স্পর্শ লাগলে তো সেটা বাইরে থেকেই বুঝা যায়!
নাফিসা কোনো জবাব না দিয়ে নিচে বসে পড়লো। নিজ হাতে মেঘের হাটু পর্যন্ত প্যান্ট উঠিয়ে দেখলো কোনো ক্ষত নেই।
– মেঘা, কি করছো তুমি এসব! বারবার বলছি আমার কিছু হয়নি তাও বিশ্বাস করছো না কেন!
নাফিসা উঠে দাড়ালো এবং হাত বাড়িয়ে মেঘের দু গালে ধরে বললো,
– ভয় হয় আমার! খুব ভয় হয় মেঘ! এজন্য বিশ্বাস করতে পারিনা সহজে! খুব ভালোবাসি যে!
মেঘ তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– পাগল বানিয়ে দিবি আমাকে নাকি মেরে ফেলবি! তোর এতোসব পাগলামি দেখে তো আমি নিজে ঠিক থাকতে পারি না! আর একবার কাদলে মাইর শুরু করবো!
নাফিসা তার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে আছে। মেঘ বললো,
– মেঘা, ঠান্ডা লাগছে আমার।
– গোসল করবে?
– করা প্রয়োজন।
– কম্বল নিয়ে একটু বসো, আমি পানি গরম করে দিচ্ছি।
মেঘ গোসল সেড়ে এলে নাফিসা খাবার নিয়ে এলো। মেঘ বললো,
– শাড়ি চেঞ্জ করবে না?
– না।
– মেঘা, পৃথা আপ্পিদের বাসায় যে খেয়েছি সেটা কি খাবার ছিলো?
– কোরল। চেনো?
– হ্যাঁ, কচি বাশ।
– হুম।
– মজা লেগেছে খুব। নাম জানি কিন্তু খাইনি কখনো।
– আবার খেতে চাও?
– খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে মিস নেই।
– চা টা কেমন ছিলো?
– চুমকিটা অনেক ডেঞ্জারাস ছিলো!

জিজ্ঞেস করলো একটা আর উত্তর দিলো আরেকটা! তাই নাফিসা হেসে উঠলো। মেঘেরও ভালো লাগছে তাঁর হাসি দেখতে। একটু হাসানোর জন্য ইচ্ছে করেই বলেছে। দুজনেই খাওয়াদাওয়া শেষ করলো। ঘুমানোর সময় নাফিসা কম্বলের নিচে মেঘের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে বললো,
– মেঘ তুমি সেই ঘরে গেলে কিভাবে?
– বলেছি তো একবার শুনোনি?
– কখন?
– ও বাড়িতে থাকতেই বলেছিলাম।
– জানিনা, আবার বলো।
– যদি পড়ে যাই তাই আমাকে হেল্প করার জন্য একটা ছেলেকে সাথে নিয়ে ঘরের পেছন দিকে গিয়েছি। তাকে নিচে দাড় করিয়ে গাছ বেয়ে ঘরে উঠেছি। সেদিকে তখন আগুন পৌছায়নি। ওইযে, বারান্দার বাঁ দিকটায়। বাচ্চাটাকে দ্রুত বের করে নিচে ফেলে আবার সেই গাছেই উঠেছি।
– উঠতে তো দেড়ি হয়নি, নামতে এতো দেড়ি হয়েছে কেন?
– গাছে উঠে ভালো করে লক্ষ্য করলাম কোথায় কোথায় ঘরটা আটকানো হয়েছে। পরক্ষণে দুইটা বাধ দেখতে পেয়েছি। ছেলেটাকে দা আনতে বলে আমি গাছেই বসেছিলাম। পরে দা দিয়ে কুপিয়ে ওগুলো ছুটিয়ে দিয়েছি যাতে উপরে বৈদ্যুতিক সংযোগে স্পর্শ না করতে পারে। দুইটা বাধ ছেড়ে দিতেই অপরদিকে ঢাল হয়ে ঘর পড়ে গেছে।
– আর কখনো এসবে যাবে না! আগুন পানির সাথে যুদ্ধ করা যায় না! ভয় হয় খুব!
– ভয় হলেও তো পাগলের মতো আগুনের উপর চলে যাচ্ছিলে! আমি এসেও কতবার ডাকলাম তুমি শুনছোই না!
নাফিসা চুপ হয়ে আছে তাই মেঘ বললো,
– মেঘা?
– হুম?
– বাবুদের নাম কি রাখবে?
– মেঘনা, মেঘু, মেঘী, মেঘাই।
মেঘ হাহা করে হেসে উঠে বললো,
– মাত্র তো এক হালি হলো, বাকিগুলো কি?
– আপাতত এক হালিই থাক, বাকিগুলো আগামী বছর।
– অনেক দুষ্টু হয়ে গেছো তুমি, মেঘা! এসো, এবার একটু কমিয়ে দেই দুষ্টুমিটা!
নাফিসা হিহি করে হেসে উঠলো!
কিছুদিন পরই নাফিসা ও আম্মিকে নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠলো মেঘ। আম্মি আসতে চায়নি কিন্তু মেঘ রাগারাগি, জোরাজোরি করে মানিয়ে নিয়ে এসেছে। থাকার জন্য দোতলায় ফ্ল্যাট দুটি শুধু পরিপূর্ণ হয়েছে আর বাকিটার কাজ চলছে। বাড়ির স্থান ও ডিজাইন খুবই পছন্দ হয়েছে নাফিসার। তাদের রুমের দুই দেয়ালে কাচ লাগানো। সাথে বারান্দা আছে। চমৎকার দৃশ্য দেখা যায় এখান থেকে। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ দৃশ্য! বৃষ্টির ফ্ল্যাটও একই ডিজাইনের।
নাফিসা বারান্দায় দাড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলো। মেঘ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– পছন্দ হয়েছে?
– ভীষণ!
মেঘ তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশের দেয়ালের দিকে এলো এবং সম্পূর্ণ দেয়ালের পর্দা টেনে দিয়ে বললো,
– মেঘা, আজকের পর থেকে আমি না বলা পর্যন্ত এই পর্দা সরাবে না।
– কেন?
– ইনশাআল্লাহ, উত্তর পরে জানবে। আর এখন শুধু মানবে।
– আচ্ছা।
এখন আবার দুজন একসাথে প্রকৃতির সাথে প্রেমালাপ করতে লাগলো বারান্দায় দাড়িয়ে। তারা নতুন বাড়িতে উঠার পর রায়হান চৌধুরী, মোহিনী ও বৃষ্টি এসেছে সিলেট। তিন চারদিনের মতো কাটিয়ে আবার ঢাকা ফিরে এসেছে। বৃষ্টির আরও থাকার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু মেডিক্যালের এডমিশন রেজাল্ট পাবলিশিংয়ের কারণে চলে এসেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here