#পুনরায়
#অরিত্রিকা_আহানা
#পর্বঃ৬
মাহমুদের বুকের কাছ ঘেঁষে শুয়ে আছে সুজান। মাহমুদ চিন্তিত মুখে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলের চুলের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ডাক দিলো,
—“সুজান?”
—“হুম!”
—“ঐ আন্টিটার সাথে কি তোমার আর দেখা হয়েছে?”
—“কে?… মা?”
মাহমুদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বললো,
—“হুম!”
—“হয়েছে। আমি আর মা অনেক জায়গায় ঘুরেছি। ”
—“তাই? তাহলে তো নিশ্চই তোমার খুব মজা হয়েছে?”
—“অনেক!”
—“কিন্তু এবার থেকে বাবাকে না বলে আর কখনো তোমার মায়ের সাথে কোথাও যাবে না কেমন?”
—“কেন বাবা? মায়ের সাথে কি তোমার আবার ঝগড়া হয়েছে?”
মাহমুদ চিন্তায় পড়ে গেলো। ছেলের ছোট মাথায় এসব ঝগড়া ক্যাচাল ঢুকানো একদম ঠিক হবে না। মেহরিন কেন এমন করছে? দুদিন বাদে তার নিজের বিয়ে, স্বেচ্ছায় কেন এসব ঝামেলায় জড়িয়েছে? তারওপর ছেলেটাকে মা ডাকতে শিখিয়েছে। কেন? মেহরিন কি জেনে গেছে এনা মারা গেছে? কিন্তু কার কাছ থেকে জানলো? সুজান বলেছে? তবে সুজানকে এই প্রসঙ্গে কোন প্রশ্ন করলো না সে। টেনে বুকের ভেতর নিয়ে গালে চুমু খেয়ে বললো,
—“তোমার মায়ের সাথে আমার ঝগড়া হয় নি বাবা। তোমার মা খুব ভালো।”
—“তাহলে আমি মায়ের কাছে যেতে পারবো?”
—“আমি তো তোমাকে যেতে নিষেধ করি নি। শুধু বাবাকে না জানিয়ে যেতে নিষেধ করেছি।”
—“ওকে।”
—“এবার ঘুমাও। চোখ বন্ধ করো। ওয়ান টু,থ্রি, চোখবন্ধ!”
সুজান চোখ বন্ধ করে ফেললো। অল্পকিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়েও পড়লো। কিন্তু মাহমুদের ঘুম হলো না। শেষরাতে বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় হাঁটাহাটি করলো কিছুক্ষন। নিজেকে অসহায় লাগছে। সুজানের মুখ থেকে মা ডাকটা শোনার পর থেকে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। সারাক্ষণ মাথায় একটা শব্দই ঘুরপাক খাচ্ছে মেহরিন মেহরিন! মেহরিন! নিজের ওপর অবাক হলো মাহমুদ। এতকিছুর পরেও কেন মেহরিনের প্রতি তার তীব্র আকর্ষন! সে তো নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে আর কখনো নিজের ভালোবাসার অধিকার নিয়ে মেহরিনের সামনে দাঁড়াবে না। তবে কেন বুকের ভেতরটা আবার হু!হু! করছে। নাহ! এবার আর মাহমুদ কোন আশা রাখবে না। আরো একবার সে নিজেকে সেই তীব্র যন্ত্রনায় মাঝে ফেলতে পারবে না। মেহরিন বিয়ে করছে! মাহমুদ চায় সে সুখি হোক।
★
আজকে সুজানকে একা ছাড়লো না মাহমুদ। আব্বাসের সাথে সে নিজেও বেরোলো। তাকে দেখে মেহরিন আড়ালে সরে গেছে। মাহমুদ অবশ্য ওকে দেখতে পায় নি। মনে মনে সে যতই প্রতিজ্ঞা করুক,যতই নির্বিকার থাকুক,কোথাও না কোথাও তার চোখ দুটো মেহরিনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
ঘন্টাখানেক বাদে যখন তারা ফিরে যাচ্ছিলো হুট করে মেহরিন সামনে এসে দাঁড়ায়। সুজান অভ্যাসবশত তার কাছে দৌঁড়ে গেলো। দুহাতে তাকে জড়িয়ে ধরলো মেহরিন। মাহমুদ আড়চোখে দেখেও না দেখার ভান করে রইলো। আহা! কি সুন্দর দৃশ্য! অতঃপর মেহরিন তাকে উপেক্ষা করে সুজানকে কোলে নিয়ে একটু দূরে সরে গেলো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না মাহমুদ। ফোনে কথা বলতে বলতে দূর থেকে ওদের লক্ষ্য করলো কেবল। সুজানের গালে ইতোমধ্যে কয়েকশো চুমু পড়ে গেছে। বেচারা কাচুমাচু চেহারা নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। না চাইতেও হাসি চলে এলো মাহমুদের। মুখ ফিরিয়ে নিঃশব্দে হাসলো সে। ফোন রেখে সুজানকে ডাক দিলো,
—“সুজান?”
সুজান একা এলো না। ওকে নিয়ে এগিয়ে এলো মেহরিন। বললো,
—“সুজান আজকে আমার কাছে থাকবে!”
স্বাভাবিক ভাবেই কথাটা বললো মেহরিন। যেন মাহমুদের মতামত জানা অনাবশ্যক!
—“সুজান আমাকে ছাড়া কোথাও থাকতে চায় না। কান্নাকাটি করবে।”
—“তাহলে তুমিও চলো।”
এমন প্রস্তাবে তাজ্জব বনে গেলো মাহমুদ। এই মেয়েটা বদরাগী, মাথামোটা সে আগে থেকেই জানে। এখানে এসে কি মাথাটা খারাপও হয়ে গেছে? নিজেকে সামলে নিয়ে সুজানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—“সুজান? তুমি না আইস্ক্রিম খাবে বলেছিলে? আব্বাসের সাথে যাও। বাবা একটু পরে আসছি।”
সুজান চলে গেলে মাহমুদ খুব শান্ত স্বরে বললো,
—“সেটা নিশ্চই খুব সমীচীন হবে? আফটার অল আর কিছুদিন পরেই তুমি অন্য একজনের বউ হতে যাচ্ছো!”
—“ঠিক আছে তাহলে সুজানকে নিয়ে যাই।”
—“কেন? সুজানকে তোমার কি দরকার?”
—“অনেক দরকার। ও জানে আমি ওর মা! আমার ছেলে আমার কাছে থাকবে।”
মাহমুদ হাসলো। মেহরিনের চোখেমুখে কোন পাগলামি নেই। মা-মা টাইপ একটা সত্ত্বা ফুটে উঠেছে। ওকে হাসতে দেখে মেহরিন কঠিন গলায় বললো,
—“হাসছো যে? আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”
বলতে বলতেই আচমকা কেঁদে ফেললো মেহরিন। মাহমুদ হতবম্ভ হলো। তার হাসিটা মেহরিনের মাতৃসত্তায় খানিকটা আঘাত দিয়েছে বোধহয়! কিছুটা নরম হল। বললো,
—“ঠিক আছে নিয়ে যাও। তবে ওর অভ্যস্ত জীবন থেকে বিচ্যুতি ঘটানোর চেষ্টা করো না। ছোট মন পরবর্তীতে ইফেক্ট পড়তে পারে। ”
মেহরিন চোখ মুছে শান্ত হলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সুজানকে দেখলো। মাহমুদ ঠাট্টার সুরে বললো,
—“সুজান বললো তুমি নাকি আজকাল ওকে বাংলা ট্রেনিং দিচ্ছো? এটা কিন্তু ঠিক নয়। এইবয়সে যা শিখবে তাই মাথায় ঢোকাবে!”
—“শিখাবো। বেশ করবো। তুমি বলার কে? তুমি ওকে আমার কাছ থেকে কেন আড়াল করে রেখেছো?”
অবাক হলো মাহমুদ। মেহরিন নিছক ছেলেমানুষির বশে কথাগুলো বলছে না। যেন সুজানের ওপর তার অনির্ধারিত অধিকার আছে, তার বলেই বলছে। মাহমুদ আর কিছু বলার সাহস পেলো। এই সম্পর্ক তো প্রেমিক প্রেমিক সম্পর্ক নয় যে ঠাট্টা মশকরা করা যায়। মা-ছেলের সম্পর্ক! মোলায়েম কন্ঠে বললো,
—“আমি বলার কেউ নই বুঝি?”
মেহরিন লজ্জা পেলো। বললো,
—“আমি ওভাবে মিন করে বলি নি।”
—“ঠিক আছে বাদ দাও। রায়হান সাহেবের কি খবর?”
রায়হানের কথা বলতেই মেহরিনের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
—“ভালো।”
মাহমুদ সরু চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করলো। মেহরিনের অস্বস্তি হচ্ছে। অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহমুদ বললো,
—“ভালো হলেই ভালো। তাকে সত্যি সত্যি বিয়ে করবে তো? নাকি তার জন্যেও আমার মত পাত্রী রেডি করে রেখেছো?”
রাগে, দুঃখে, অপমানে, মেহরিনের কান্না পাচ্ছে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
—“আমি ওকে ভালোবাসি না।”
—“কেন বাসো না। বাসা উচিৎ! সে নিশ্চই আমার মত চরিত্রহীন নয়? ”
—“তাকে ভালোবাসা নিয়ে তোমার এত মাথাব্যথা কেন?”
—“আমার কোন মাথাব্যথা নেই। তবে ভালোবাসার যন্ত্রনা খুব কষ্টের হয়। তাই আমি চাই না আর কেউ তার শিকার হোক!”
—“কেন তুমি কি খুব যন্ত্রনা ভোগ করেছিলে? ভালোই তো সুখে আছো। বিয়ে করেছো, সংসারী হয়েছে, ছেলে আছে। আমার কে আছে?”
—“তুমি করে নাও না। বিয়ে করো, সংসারী হও। তোমাকে তো কেউ বেধে রাখে নি। এর মধ্যে আমাকে টানছো কেন? আমি তো চরিত্রহীন! তাই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে।”
—“রায়হানকে সত্যি বিয়ে করবো বলছো?”
—“মানে?”
—“তোমার গলায় ঝুলে পড়বো ভেবে তুমি সরে পড়তে চাইছো তাই না?”
—“তার সুযোগ কি আর আছে আমার? আমি চরিত্রহীন হলেও বিবাহিত!
—“বারবার এক কথা বলছো কেন?”
—“এই কথাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি! তাই।”
দু কদম এগিয়ে এলো মেহরিন। মাহমুদ থমকে গেলো। মেহরিন রাগে চেঁচিয়ে উঠে বললো,
—“আমি সব জানি।”
—“কি জানো?”
—“এনা মারা গেছে।”
—“তাতে তো সত্যিটা পাল্টে যায় নি? আমি বিবাহিত! আমার ছেলের আছে।”
—“তাহলে তুমি কি করতে বলছো আমাকে?”
—“আমি কিছুই বলছি না। ইটস আপ টু ইউ। তুমি বিয়ে করবে, নাকি চিরকুমারী থাকবে পুরোটাই তোমার ব্যাপার। আই অ্যাম নট বোদারর্ড অ্যাট অল!”
—“তোমার কিচ্ছু আসে যায় না? সত্যি করে বলো।”
মাহমুদের মিথ্যে বলতে পারলো না। তবে সত্যিটাকে খুব সাবধানে এড়িয়ে গেলো সে।
—“হুম! যায় আসে কারণ আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি চাই তুমি সুখি হও। অযথা আমাকে নিয়ে ভেবো না। আমি ভালো আছে।”
মেহরিন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো। মাহমুদ এতটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পারলো। মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইলো সে। আব্বাস সুজানকে নিয়ে ফিরে এসেছে। মাহমুদ সুজানকে কোলে তুলে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—“তোমার মাকে বায় বলো সুজান।আমরা ফিরে যাচ্ছি।”
—“কেন বাবা? আমি মায়ের সাথে যাচ্ছি না? ”
—“না। তোমার মা অসুস্থ।”
সুজান বাবার নির্দেশমত মেহরিনকে বিদায় জানালো। মেহরিন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুজানের কথা তার কানে গেলো না। সে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখলো,মাহমুদ সুজানকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেছে। গাড়ি চালু হয়ে গেছে! সব শেষ হয়ে যাচ্ছে!
আবারো থমকে গেলো মাহমুদ! নিজের কঠিন আবরণটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলো না মাহমুদ। মেহরিন উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি তার ভেতরটাকে তছনছ করে দিচ্ছে। ফিরে এসে সুজানকে মেহরিনের কোলে দিয়ে গেলো। পাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পায় সে ভয়েই কিছু না বলেই গেলো। সে চলে যেতেই সুজানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মেহরিন।
কাছেপিঠে কোথাও দাঁড়িয়ে সবই লক্ষ্য করেছে সোহাগ। মাহমুদ চলে যেতেই দ্রুত মেহরিনের কাছে এগিয়ে এলো সে। আশ্বস্ত কন্ঠে বললো,
—“এখন কাঁদার সময় নয় মেহরিন। আগে বাসায় চলো। অনেক কাজ বাকি আছে।”
★
বাসায় ফিরেছে অবধি মেহরিন টানা কেঁদে চলেছে। সোহাগ সুজানকে ভিডিও গেমস খেলতে বসিয়ে দিয়ে মেহরিনকে নিয়ে আড়ালে সরে এলো। সুজানের সামনে এসব আলোচনা করা ঠিক হবে না। ওর নিরুদ্বেগ চেহারা দেখে মেহরিন ফুঁপিয়ে উঠে বললো,
—“আমি ভুল ছিলাম সোহাগ। ও আমাকে আর ভালোবাসে না। ওর লাইফে আমার আর কোন ইম্পর্টেন্স নেই।”
বলতেই না বলতেই আবার ফুঁপিয়ে উঠলো মেহরিন। সোহাগ বিরক্ত কন্ঠে বললো,
—“বোকার মত কথা বলো না তো মেহরিন। বললেই হলো? ওয়ালেটে এখনো তোমার ছবি নিয়ে ঘুরে! ইম্পর্টেন্স না থাকলে কেন তোমার ছবি নিয়ে ঘুরবে?”
সাথে সাথে মেহরিন কান্না থামিয়ে দিলো। উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
—“সত্যি বলছো?”
সোহাগ হেসে ফেললো। বললো,
—“হান্ড্রেড পার্সেন্ট! এবার চোখ মোছো। শোনো, সবার আগে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে রায়হানের সাথে কথা বলা। বিয়েটা ক্যান্সেল করতে হবে।”
—“রায়হান যদি না মানে?”
—“মানবে না কেন? জোর করে বিয়ে করবে? এত সোজা নাকি? ”
—“আমার ভয় করছে।”
—“ও কি তোমাকে ভালোবাসে?”
–“জানি না। তবে যদি রেগে যায়?”
—“ভয়ের কিছু নেই। ওকে পুরোটা বুঝিয়ে বলতে হবে। বেশি ঝামেলা হলে মাহমুদ ভাই তো আছেই, যতই রাগ থাকুক সে নিশ্চই তোমাকে কোন ঝামেলার মাঝে ফেলে যাবে না!”
ওর কথার প্রতিউত্তরে মেহরিন কেবল মিষ্টি করে একটু হাসলো।
★
রায়হান স্বভাবগতভাবে কখনোই আক্রোমণাত্বক নয়। সব শুনে সে কেবল হেসে উঠে বললো,
—“মেহরিনের মুখে আমি আগেও তাঁর নাম শুনেছি। হি ইজ আ ভেরি নাইস গাই! আমার সাথে শপিংমলে দেখা হয়েছিলো। মেহরিনও সাথে ছিলো। আমি ওদের দুজনকে আলাদা করে কথা বলার সুযোগও করে দিয়েছিলাম।”
—“তাই নাকি?”
—“ইয়েস! প্রেম ভালোবাসার আনাড়ি হলেও মেহরিনের চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম, স্টিল নাউ সি লাভস হিম। তবে আমার রাগ হয়েছিল। মেহরিম আমার কাছ থেকে লুকালো কেন? আম তো ওকে ফোর্স করি নি।”
—“এনার মারা গেছে সেই খবর ওর জানা ছিলো না।”
রায়হান কিছুক্ষন ভেবে বললো,
—“আই থিংক মেহরিনের রোমিও সাহেব এখনো তাকে ভালোবাসে? ”
—“আপনাকে তো সবই বললাম! বিগত একযুগ ধরে মেহরিনকে ভালোবেসে এসেছে। কত ঝড়ঝাপটা গেলো তার ওপর দিয়ে তবুও ভালোবাসতে ভুল করেন নি। এখনো মেহরিনকে পাগলের মত ভালোবাসে। এবার তাদের এক হওয়ার সময়।”
★
দুদিন বাদে মাহমুদ নিজে গিয়ে হাজির হলো মেহরিনের বাসায়। দরজা খুলেই মেহরিন ভয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললো। মাহমুদ কি সুজানকে নিয়ে যেতে এসেছে? সুজানের পরনের নতুন জামাকাপড়! এখানে আসার সময় কোন জামাকাপড় নিয়ে আসা হয় নি। তাই মেহরিন সোহাগকে দিয়ে একগাদা জামাকাপড় কিনে আনিয়েছে তার জন্য। সুজান মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে তাদের পুরোনো ছবিগুলো দেখছিলো।এতদিন যাবত ছবিগুলোই মেহরিনের স্মৃতি হয়ে জমা ছিলো। অনেকবার ডিলিট করতে গিয়েও পারে নি। ছবিগুলোর দিকে মাহমুদের চোখ পড়তেই সচেতনভাবে মেহরিনের দিকে তাকালো। মেহরিন নতমুখে বসে আছে।
—“ওকে নিয়ে এসো। আগামী পরশু আমার ফ্লাইট।”
বিষন্ন গলা মাহমুদের, মুখটা অসহায়। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো মেহরিনের। বিস্মিত গলায় বলল,
—“হঠাৎ ?”
—“এখানের কাজ শেষ।”
তারপর পকেট থেকে সুন্দর একটা রিং বের করে নিলো মাহমুদ। মেহরিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—“সরি কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় তোমার বিয়েতে থাকতে পারছি না। তাই গিফট নিয়ে এলাম! অনেক খুঁজে পছন্দ করেছি। তোমার অপছন্দ হবে না আশাকরি! ”
রক্ত সরে গেলো মেহরিনের মুখ থেকে। ফ্যাকাসে হয়ে চেহারা। মাহমুদ মুখ ফিরিয়ে নিলো। আর দুর্বল হতে চায় না সে। মেহরিনের ওপর তার কোন অধিকার নেই। আর কয়েকদিন বাদে সে অন্য একজনের বউ হতে যাচ্ছে! সুতরাং মাহমুদকে শক্ত হতে হবে। সুজানকে ডেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে। ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটলো যে মেহরিনের মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোলো না। মানবমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কেবল।