#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১১
দেখো রিয়া সব সময় জেদ ভালো লাগে না। তুমি আমার সাথে যাবে এটাই ফাইনাল।
আমি আপনার সাথে যাব না। কিছুতেই না। আমি কোচিংয়ে ভর্তিই হবো না।
উনি আমার দিকে দুই পা এগিয়ে আসলেন, আমি দুই পা পিছিয়ে গেলাম। উনি আমার বাহু দুটো শক্ত করে চেপে ধরলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
এই মেয়ে তোমার এতো কীসের জেদ? পুচকি একটা মেয়ে। তুমি জানো আমি কখনো কাউকে সরি বলি নাই, আর তোমাকে এখন পর্যন্ত কতোবার সরি বলেছি তার হিসেব নেই।
তুমি জেদী হয়ে থাকো, তাহলে আমিও জেদী। আমার জেদ তোমার থেকে কোনো অংশে কম নয়। ইউ নো সেচ্ছায় কোনো জিনিস পাওয়ার থেকে কষ্ট করে আদায় করে পাওয়া জিনিসের অনুভূতিই অন্যরকম।
উনি ফট করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি চমকে উনার শার্ট খামছে ধরলাম। আমি উনার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললাম,
আপনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন কেনো? নামান আমাকে। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
চিৎকার করেও লাভ নেই। তোমার চিৎকার শোনার মতো এই বাসায় কেউ নেই। আব্বু আম্মুকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছে। সন্নিতা দি পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছে। বর্তমানে বাসায় আছি আমি, তুমি আর রহিম কাকা। ইউ নো রহিম কাকা তোমাকে সহ্য করতে পারে না। আমি যদি তোমাকে মেরে ঘুম করে দেই তবুও রহিম কাকা কিছু বলতে আসবে না। এখনি চুপচাপ আমার সাথে চল। নাহলে সত্যি সত্যি আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো। তুমি আমার রাগ সম্পর্কে ভালো করেই জানো।
উনি আমাকে কোলে নিয়েই বাসা থেকে বের হয়ে এলেন। রহিম কাকা কেমন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলেন। লজ্জায় আমার মরি মরি অবস্থা ছিল। উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। সিট বেল্ট বেধে দিলেন। তারপর নিজেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে
পড়লেন।
ছটফট করলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিব। ওখানে গিয়ে একদম বেশি কথা বলবে না।
আপনি কী বলতে চাইছেন? আমি বেশি কথা বলি। আমি বাঁচাল।
সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো।
আমি বেশি কথা বলি। তাও ভালো। আপনার মতো মেপে মেপে তো আর কথা বলি না। আপনি হার্টের ডক্টর হলেও আপনার হার্ট নেই ডাক্তারবাবু।
এই একদম আমাকে ডাক্তারবাবু ডাকবে না। ডাক্তারবাবু নামটা শুনলেই চোখের সামনে ৬০ বছরের বৃদ্ধ ডক্টর ভেসে ওঠে।
আমি সয়তানি হাসি দিয়ে বললাম, আজকে থেকে তো আমি আপনাকে ডাক্তারবাবুই ডাকবো। প্রত্যেক লাইনে দুই বার করে ডাক্তারবাবু ডাকব। বুঝতে পেরেছেন ডাক্তারবাবু।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়লেন। আমি মুচকি হাসি দিলাম। উনি বেশ বুঝতে পেরেছেন কোনো জিনিস না করে আমাকে শুনানো যায় না। যেটা আমাকে না করা হয় সেটা আমি আরো বেশি করে করি।
______________
কিছুক্ষণ পরেই একটা হসপিটালের সামনে গাড়ি থামালেন উনি। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটাই উনার হসপিটাল।
আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসছেন? মেডিক্যাল পাস না করিয়েই ডক্টর বানিয়ে দিতে চাইছেন নাকি?
তুমি অলওয়েজ বেশি কথা বলো। একটু চুপ থাকতে পার না। একটু কাজ আছে। আমি পাঁচ মিনিটের মাঝেই আসছি।
উনি গাড়ি লক করে চলে যাচ্ছিলেন। আমি পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললাম,
এই আপনি গাড়ি লক করে যাচ্ছেন কেনো? গাড়ি লক খুলে দিয়ে যান।
ইম্পসিবল। তোমার ওপর আমার এক বিন্দু বিশ্বাসও নাই। আমি গাড়ির লক খুলে দিয়ে যাই আর তুমি লাফিয়ে লাফিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাও। তা তো আমি হতে দিব না। এখানেই বন্দি হয়ে থাক।
এই আপনি কিন্তু বেশি করছেন। মামুনি আসলে আমি বিচার দিব।
উনি আমার কথা না শুনে চলে গেলেন। ৫ মিনিটের জায়গায় ১০ মিনিট হয়ে গেলো। কিন্তু উনার আসার খবর নেই। বিরক্ত লাগছে। আমার ফোনটাও সাথে নেই। নাহলে ফোন টিপে সময় পার করতাম। উনার ফোনটা এখানেই পড়ে আছে। কিন্তু আমি তো ধরব না।
_______________
কিছুক্ষণ আগেই উনি আমাকে কোচিংয়ে ভর্তি করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে গেছেন। সারা বাড়ি জুরে আমি একলা। রহিম কাকাও একটু আগে বাজারে গেছে। রহিম কাকা আমাকে সহ্য করতে পারে না। বিষয়টা তেমন না। রহিম কাকার সাথে আমার একটু পর পর ঝগড়া লাগে। কারণ ছাড়াও ঝগড়া করি। মামুনি আর আংকেল আসতে অনেক দেরি।
_______________
রাত একটা বাজে। হুট করেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। আমার ঘুম একবার ভেঙে গেলে সহজে আসে না। কতক্ষণ রুম জুড়ে পায়চারি করলাম। তবুও ঘুম আসছে না, আর এদিকে উনি আহাম্মকের মতো ঘুমাচ্ছেন। আমি আস্তে আস্তে রুমের দরজাটা খুললাম। যেই রুম থেকে বের হতে যাবো উনার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
এই তুমি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?
নিজেকে চুর মনে হচ্ছে। চুরি করে ধরা পড়লে মানুষের অবস্থা যেমন হয় আমার অবস্থাও ঠিক তেমন। আমি পিছনে ঘুরে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,
এই তো রাস্তায় হাঁটতে যাচ্ছি।
কথাটা বলেই জিহ্বাই কামড় দিলাম। ভুল মানুষের সামনে ভুল কথা বলে ফেলছি।
আর ইউ ম্যাড? এতো রাতে তুমি একা রাস্তায় হাঁটতে যাচ্ছো? তোমার কমনসেন্স নেই।
আমি কী করবো? ঘুম আসছিল না তো। আগে ঘুম না আসলে আব্বু আর ভাইয়ার সাথে হাঁটতে যেতাম। এখন তো আব্বু আর ভাইয়া নেই। আপনাকে তো বলে লাভ নেই। আপনি জীবনেও যাবেন নাহ।
এতো কথা না বলে চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ো।
একদম না। আমি এখন কিছুতেই শুবো না। আপনার ঘুমানোর ইচ্ছে থাকলে আপনি ঘুমান।
উনি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললেন,
দেখো রিয়া আমাকে রাগিও না। চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ো। আমি যদি এখন উঠে আসি সেটা তোমার জন্য ভালো হবে না।
আমি চুপচাপ এসে শুয়ে পড়লাম উনার দিকে পিঠ দিয়ে। উনার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললাম,
আপনি একজন হার্টলেস ডাক্তারবাবু। কারো অনুভূতির মূল্য আপনার কাছে নেই।
আবার মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লাম। উনার দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
________________
সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে রেডি হচ্ছি আমি। ৯টা থেকে কোচিং। উনি আমাকে কোচিংয়ে ড্রপ করে দিয়ে হসপিটালে যাবেন। এতক্ষণ ব্যস্ত হয়ে রেডি হলেও। খাওয়ার সময় আমার আলসেমি শুরু হয়ে গেলো। এদিকে উনি আমাকে তাড়াতাড়ি খাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। খাবার শেষ না করেই টেবিল ছেড়ে ওঠে পড়লাম। উনি গম্ভীর গলায় বলছেন খাবার শেষ করার জন্য।
আমি উনার কথা পাত্তা না দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে এসে বসলাম। একটু পর উনিও আসলেন। এসেই লেকচার দেওয়া শুরু করলেন। আমি উনার কথা পাত্তা না দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি দাঁড় করালেন। আমি নামতে যাব উনি থামিয়ে দিলেন।
আমি চাই না তুমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা কাউকে বলো। কাউকে বলবে না যে তুমি আমার স্ত্রী। তুমি….
আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আপনাকে এতো টেনশন করতে হবে না। আমি কাউকে বলবো না আমাদের বিয়ের ব্যাপার। আমি সুবিধা বাধী মেয়ে না, আর না আত্মসম্মানহীন। যে আমাকে পরিচয় দিতে চায় না তার কাছ থেকে জোড় করে নিজের পরিচয় আদায় করে নিব।
তুমি তো আমাকে কথাটা সম্পুর্ণ করতে দিবে। অর্ধেক কথা শুনে এর উল্টো মানে বের করছো।
আমি কোনো উল্টো মানে বের করছি না। আমি নামক বোঝা আপনাকে বেশিদিন আর বইতে হবে না। আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি আমি নামক দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে দিব।
চলবে……..
[আপনারা পাঠক আপনাদের মন্তব্য করার অধিকার আছে। সেটা ভালো হোক বা খারাপ। আপনাদের কয়েকজনের মতামত রুদ্র একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে। রিয়ার সাথে একটু বেশিই রুড বিহেইভ করছে। আপনাদের বুঝতে হবে সবাই এক না। একেক জনের ভালোবাসা একেক রকম হয়। কারো ভালোবাসাটা রাগের মাঝেও লুকিয়ে থাকে। ওদের মাঝে যদি এখনি ভালোবাসা দিয়ে দেই তাহলে গল্পটা এক দুই পর্বের মাঝেই শেষ হয়ে যাবে। আমি গল্পটা যেভাবে লিখবো ভেবেছিলাম, সেভাবে আর লেখা হবে না। ]