#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১৩
সবার সাথে দেখা হয়ে এখন অনেক ভালো লাগছে। আমার ফ্রেন্ডরা সবাই ভর্তি হয়েছে এখন আর একলা একলা লাগে না। কোচিং থেকে বের হতেই বিহানকে দেখতে পাই। বিহানকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিলেই বিহান আমাকে ঢেকে ওঠো।
রিয়া একটু দাঁড়াও। তোমার সাথে আমার কথা আছে।
আমি দাঁড়াতেই কেউ একজন টেনে আমাকে গাড়িতে তুলে নিল। আমি চমকে তাকাই। আমার অবস্থান এখন রুদ্রের কোলে। আমি ঝট করে উনার কোল থেকে নেমে পাশের সিটে বসে পড়লাম। তারপর রাগী গলায় বললাম,
কী সমস্যা আপনার? এভাবে কেউ টেনে গাড়িতে তুলে?
প্রাক্তনের সাথে কথা বলতে পারনি দেখে খারাপ লাগছে?
লাগলেই আপনার কী?
উনি হুট করেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমাকে সিটের সাথে চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে বলেন,
আমাকে রাগিয়ো না। তুমি আমাকে যতোটা ভালো মানুষ মনে করো আমি ততটা ভালো মানুষ নই। আমি নিজের জিনিস নিয়ে কতোটা পজেসিভ তার সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাও নেই।
আমি উনার রাগকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, আপনি কী জেলাস?
উনি ফট করেই আমাকে ছেড়ে দিলেন। উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার করা প্রশ্নে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন। উনি ঠিক ঠাক হয়ে নিজের সিটে বসে পড়লেন। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললেন,
আমি কেনো জেলাস হতে যাবো? তোমাকে জেলাস হওয়ার মতো সম্পর্ক আমাদের মাঝে নেই। ইউ আর মাই রেসপন্সিবিলিটি। তোমার ভালো মন্দ সবকিছু দেখার দায়িত্ব আমার। যে জিনিস থেকে তোমার ক্ষতি হতে পারে তার থেকে তোমাকে দূরে রাখাও আমার দায়িত্ব।
‘দায়িত্ব’ শব্দটা শুনে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। উনার মুখে বার বার দায়িত্ব শব্দটা শুনে নিজেকে বোঝা মনে হয়। দম বন্ধ হয়ে আসে। কবে যে এই জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। আমি প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারবো। কারো কাছে শুধু মাত্র তার দায়িত্ব হয়ে পরে থাকতে হবে না। কারো মুখ থেকে আর ‘দায়িত্ব’ শব্দটা শুনতে হবে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে গা এলিয়ে দিলাম।
_________________
রাত ৯টা বাজে। উনি মাত্রই বাসায় ফিরলেন। আমি উনার দিকে নজর না দিয়ে বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলাম। আজকে কোচিংয়ে প্রচুর পড়া দিয়েছে। সব শেষ করতে করতে হয়তো রাত ১২টা বেজে যাবে। উনি এসেই ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। ফ্রেশ হয়ে এসে উনি ডিনার করতে চলে গেলেন। আমি সন্ধ্যার দিকে খেয়েছি। এখন আর খাব না। এতক্ষণ ধরে পড়ছি। কিন্তু একটা পড়া কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না।
উনি ডিনার সেরে রুমে আসলেন। আমি উনাকে পড়া বুঝানোর কথা বলবো নাকি বলবো না তা নিয়ে দ্বিধায় আছি। পড়া বুঝানোর কথা বললে যদি উনি রেগে যান। দ্বিধা দন্ড পাশে রাখে আমি উনাকে আমতা আমতা করে ডাকলাম,
এই যে শুনছেন!
উনি চমকে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন। আমি নিজেও চমকে গেলাম। আমি উনাকে আগে কখনো এভাবে ডাকিনি। উনি কী রেগে গেলেন এভাবে ডাকায়। উনি ভ্রু কুচকে বলেন,
আমার বউ হওয়ার চেষ্টা করছো নাকি? বউ বউ টাইপ ডাক দিচ্ছো।
সরি। আমি এভাবে আপনাকে ডাকতে চাইনি। নিজের অজান্তেই মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। এগেইন সরি।
কেনো ডেকেছো সেটা বলো।
আমি ইতস্তত করে বললাম, আমাকে একটু এই পড়াটা বুঝিয়ে দিবেন? অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করছি। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছি না।
এটা বলার জন্য এতো আমতা আমতা কেনো করছো?
না মানে আপনি যদি রাগ করেন। তাই আরকি।
আমি কী সবসময় তোমার সাথে রাগরাগিই করি?
না। আসলে আপনি মাত্রই হসপিটাল থেকে আসছেন। সারাদিন অনেক কাজ করছেন। নিশ্চয়ই এখন অনেক ক্লান্ত। আমি এই সময় আপনাকে পড়া বুঝানোর কথা বলছি। রেগে যাওয়ারই কথা।
উনি কিছু না বলে পড়া বুঝানো শুরু করলেন। উনি এতো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন যে, চট করে বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকে গেলো। আমি উনার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললাম,
ধন্যবাদ।
উনি প্রতিত্তরে কিছু না বলে একটা বই নিয়ে এসে আবারও আমার পাশের চেয়ারটাই বসে পড়লেন। আমিও নিজের পড়ায় মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই উনি আমাকে ডেকে উঠলেন।
রিয়া।
হঠাৎ করে ডেকে ওঠায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম নিজেকে ধাতস্থ করে উত্তর দিলাম, কী?
ডিনার করছো তুমি?
হ্যাঁ।
কখন?
ঐ তো সন্ধ্যাবেলায়।
তার মানে তুমি ডিনার করো নাই। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখছো? না খেয়ে খেয়ে নিজের অবস্থা কী করছো? ক্লাস সিক্সের একটা বাচ্চা মেয়ের ওজনও তোমার থেকে বেশি হবে। শরীরে হাড্ডি ছাড়া আর কিছুই তো দেখা যায় না। চল এখনি খাবে।
না এখন খাওয়ার সময় নেই। এখনো প্রচুর পড়া বাকি। খেতে গেলে সময় নষ্ট হবে। পড়া না পারলে সবার সামনে অপমানিত হতে হবে।
উনি কিছু না বলে ওঠে চলে গেলেন। আমি আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম। মুখের সামনে এক লোকমা ভাত দেখে চমকে গেলাম। পাশে তাকাতেই দেখতে পেলাম উনার হাতে এক প্লেট ভাত আর উনিই আমার সামনে এক লোকমা ভাত ধরে রেখেছেন। ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না। উনি আমাকে খাইয়ে দিবেন। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন টপ্ন দেখছি।
এভাবে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছো কেনো? এখন দেরি হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি খাবারটা খাও।
আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন?
সমস্যা কী? তুমি তো পড়ার জন্য খাওয়ার সময় পাচ্ছো না। শরীর যা অবস্থা করছো। দুই দিন পর দেখা যাবে রাস্তা ঘাটে অঙ্গান হয়ে পড়ে রয়েছ। কিছু না করেও আমি অপরাধী হয়ে যাব।
আমি আর কিছু না বলে খাওয়া শুরু করলাম। উনি খাওয়ানো শেষ করে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে এসেই আমার বই অফ করে দিলেন।
এই আপনি বই কেনো বন্ধ করে দিলেন?
অনেক পড়েছ। আর পড়াশোনা করতে হবে না। রাত জেগে পড়াশোনা করা ভালো না। বাকি পড়া সকালে শেষ করবে।
সকালে তো আমি ঘুম থেকে ওঠতে পারি না।
আমি ডেকে দিব। তুমি শুয়ে পড়।
______________
উনি উনার কথা রেখেছেন সকাল ৫টায় টেনে আমাকে ঘুম থেকে তুলেছেন। ঘুম থেকে তুলেই পড়তে বসিয়ে দিয়েছেন। ১ ঘন্টার মতো পড়ার পড়ে উনি আমার হাতে কফি ধরিয়ে দিলেন। আমি কফি দেখে অবাক হয়ে গেলাম।
আপনি এতো সকালে কফি কোথায় পেলেন? মামুনি তো এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠেন না।
আমি বানিয়েছি।
আপনি কফিও বানাতে পারেন? জীবনে তো কোনোদিন কিচেনে পা রাখতেও দেখি নাই।
শিখেছিলাম কারো জন্য।
আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, কার জন্য?
অরির জন্য।
আমি জানি অরি কে তবুও উনাকে জিঙ্গেস করলাম, অরি কে? কে হয় আপনার?
অরি কেউ না। কিছু হয় না আমার। অনেক কথা বলেছ। এখন পড়তে বসো।
উনি কফি মগ দুটো নিয়ে চলে গেলেন। আমি এবারও আশাহত হলাম। উনি এবারও এই বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন। আর কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব পড়ছিলাম। তখন উনার কথা শুনে চমকে যাই।
কোচিংয়ে যাবা আসবা। বাইরের কারো সাথে যেনো কথা বলতে না দেখি। একা একা আসার চেষ্টা একদম করবে না।
চলবে…….
[আমার অনুমতি ব্যতীত গল্প কপি করলে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গল্প কপি করবেন, কিন্তু আমার নাম দেন না /নিজের নাম বসিয়ে দেন। রিসেন্টলি একজন তো আমার পেইজের নামে আইডি খুলছে। আমার প্রোফাইল পিক নিয়েছে। আবার আমার গল্পই কপি করছে। ট্রেনিং প্রাপ্ত চুর। ]