#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৪৮
রিদি আপু নিয়াম ভাইয়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে, তুমি মুখে লাগাম দিবে। ছোট ভাই-বোনদের সামনে কীসব কথা বার্তা বলছো।
ছোট ভাই বোনদেরই তো মনের দুঃখ শেয়ার করতে হয়। আমার মনে এতো দুঃখ আর আমি ওদের বলবো না।
হুট করেই রুদ্র বলে ওঠে, আপু তুমি কিন্তু কাজটা মোটেও ঠিক করো নাই।
রিদি আপু ভ্রু কুচকে বলে, আমি আবার কী করলাম?
তুমি নিধিকে কেনো বলছো রিয়াকে খালামনি ডাকতে? রিয়া আমার বউ। তাহলে নিধি তো রিয়াকে মামি ডাকবে তাই না?
নিয়াম ভাইয়া সুর টেনে বলে, এখানে উপস্থিত সকলেই জানে রিয়া তোমার বউ। তাই রিয়া আমার বউ এমন করে বলতে হবে না। রিয়া তোমার বউ হওয়ার আগে তোমার খালাতো বোন ছিল। সেই হিসেবে রিদিরও বোন। তাই রিদি নিধিকে বলেছিল রিয়াকে খালামনি ডাকতে।
সে যাইহোক আপু তুমি নিধিকে বলবা রিয়াকে মামিমনি ডাকতে।
রিদি আপু বিরক্ত হয়ে বলে, তুই এমন করছিস কেনো? নিধি রিয়াকে খালামনি ডাকুক আর মামিমনিই ডাকুক তাতে তোর কী? রিয়ার যদি সমস্যা না হয় তোর কী সমস্যা?
আমিও রিদির আপুর সাথে তাল মিলিয়ে বললাম, সেটাই তো আমার যখন সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে আপনার এতো সমস্যা কেনো হচ্ছে? আমি নিধির মামিমনি হওয়ার আগে খালামনি আর নিধির মুখ থেকে খালামনি ডাক শুনতে তো আমার বেশ লাগে।
নিয়াম ভাইয়া আলতো হেসে রুদ্রর পিঠে চাপ্পড় মেরে বলে, এই বেয়াদব মহিলাগুলো আমাদের মতো অসহায় প্রেমিক পুরুষের দুঃখ কোনোদিন বুঝবে না। ওরা বুঝতেই পারছে না তুমি যে ইনসিকিউর ফিল করছো।
আমি ভ্রু কুচকে বলি, খালামনি ডাকের সাথে ইনসিকিউর ফিল করার কী আছে?
ভাই সত্যিই বলছো। বউরা স্বামীর মন বুঝে না আর যদি হয় বাচ্চা বউ তাহলে তো কথায় নাই। যেখানে বুঝার দরকার নাই সেখানে ‘ক’ বলতেই কলকাতা বুঝে যাবে আর যেখানে বোঝার দরকার সেখানে কলকাতার ‘ক’ টাও বুঝবে না। রিয়া একদিন নিধিকে নিয়ে স্কুলে গেল। নিধিকে সবার কাছে রিয়াকে খালামনি বলে পরিচয় করিয়ে দিল। রিয়া যে বিবাহিত সেটা তো রিয়াকে দেখে মনে হয় না। নিধির স্কুলের কোনো টিচার যদি রিয়াকে প্রোপোজ করে বসে বা বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে তখন।
রুদ্রর কথা শুনে আমি কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লাম। একটা খালামনি ডাক থেকে উনি বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত চলে গেছেন। রিদি আপুর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে রিদি আপু রুদ্রর ওপর মহা বিরক্ত।
রুদ্র তোর মনে হয় না তুই একটু বেশিই অদ্ভুত আচারণ করছিস? বউ কী শুধু তোর একারই আছে? আর কারো বউ নেই?
সবার বউ থাকলেও আমারটার মতো এমন রসগোল্লা টাইপ বউ কারো নাই। তাই আমি কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।
____________
অফ পিরিয়ডে হুট করেই ইফাদ স্যার ডেকে পাঠায়। ইফাদ স্যার ডেকে পাঠিয়েছে এটা শুনেই আমার আত্না কেঁপে ওঠে। রুদ্র যদি জানতে পারে তাহলে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিবে। পরে ভাবলাম ত্রয়ীকে নিয়ে যায়। রুদ্রর কিছু বললে বলে দিব ত্রয়ী আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। আমার সেই আশাতেও জল ঢেলে দিল ইফাদ স্যারের এসিট্যান্ট। স্যার নাকি আমাকে একা যেতে বলেছে।
আমি ধুরু ধুরু বুকে ইফাদ স্যারের রুমের সামনে আসি। বার বার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি আশেপাশে কোথাও রুদ্র আছে কী না। যদি থাকে আর আমাকে যদি ইফাদ স্যারের কেবিনে যেতে দেখে। তাহলে আমার খবর আছে। কেবিনের দরজায় নক করতেই স্যার ভিতরে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেন। আমি পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলাম।
সিট ডাউন।
স্যার বলার সাথে সাথেই আমি বসে পড়লাম। আমি বসতেই স্যার ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেন। টিস্যু দিয়ে বার বার কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুচ্ছেন। উনি অস্বস্তিতে হাসফাস করছেন।
স্যার আপনি কী কিছু বলবেন?
উনি দ্বিতীয় বারের মতো আরো এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেন। উনি আমতা আমতা করে বলেন,
একচুয়ালি তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল। কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। তুমি আমার ছাত্রী তোমাকে এই কথাগুলো বলা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না।
স্যার আপনি র্নিদ্বিধায় বলতে পারেন।
উনি কিছু বললেন না। কিন্তু বেশ কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেন। রুম জুড়ে পায়চারী করছেন। উনার কর্ম কান্ডে আমি অল্প বিস্তর বিরক্ত হলাম। এটা কোন ধরেন বিহেইভিয়ার বুঝতে পারছি না। রুমে ডেকে এনে বসিয়ে রাখলেন। আমার সামনেই একের পর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেন। এখন আমাকে বসিয়ে রেখেই রুমময় দৌড়াদৌড়ি করছেন। বিরক্ত হলেও নিজের বিরক্তিটা প্রকাশ করতে পারছি না। ইফাদ স্যার হালকা কাশি দিয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবার আমতা আমতা শুরু করলেন। এদিকে আমি অধির আগ্রহে স্যারের মুখপানে তাকিয়ে আছি।
একচুয়ালি ….. একচুয়ালি আমি ত্রয়ীকে পছন্দ করি। পছন্দ করি বললে ভুল হবে আমি ত্রয়ীকে ভালোবাসি।
কথাটা আমার কানের কাছে বজ্রপাতের ন্যায় বাঁজল। উনার কথাটা শোনা মাত্রই আমি চমকে ওঠলেন। হয়তো উনি আরো কিছু বলছিলেন সেগুলো আমার কর্ণগোচর হলো না। আমি নিরবে স্যার কক্ষ থেকে প্রস্থান করলাম। এদিকে আমি ভাবছি এই কথাটা ত্রয়ী জানলে কী হবে? ইফাদ স্যারের জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। স্কুল লাইফে ত্রয়ীর প্রাইভেট টিউটর ত্রয়ীকে প্রোপোজ করেছিল। সেটা নিয়ে ত্রয়ী যা কান্ড করেছিল। ইফাদ স্যারের কথা জানলে তো ইফাদ স্যারের কী অবস্থা করবে সেটা আল্লাহ ভালো জানে।
কীরে স্যার তোকে কী বললো? এতক্ষণ ধরে তোরা কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করলি?
ত্রয়ী আমার কাধে হালকা ধাক্কা দিয়ে কথাটা বললো। ত্রয়ীর কথা পাত্তা না দিয়ে আমি হাঁটতে শুরু করলাম।
কীরে বলবি না? এই ব্যাটায় তোরে প্রোপোজ টোপোজ করে ফেলেনি তো? আমার কী মনে হয় জানিস এই বেয়াদব ডক্টর তোকে পছন্দ করে। যদি তোকে প্রোপোজ করে তাহলে তুই ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় মারবি। তুই না পারলে আমাকে বলবি।
ত্রয়ীর কথা শুনো আমি থেমে গেলাম। ত্রয়ী তো আর জানে না তার বেয়াদব ডক্টর আমাকে না তাকে পছন্দ করে। তাকেই প্রোপোজ করার প্রিপারেশন নিচ্ছে।
__________________
বাসায় আসতেই আমার পুরো গোষ্ঠীকে ডয়িংরুমে বসে থাকতে দেখে আমি চমকে ওঠলাম। চমকা-চমকি সাইডে রেখে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।
তোমরা সবাই হুট করে একসাথে আমার শ্বশুরবাড়িতে হামলা করেছো। কাহিনী কী?
ভাইয়া একটু ভাব নিয়ে বলে, কাহিনী কিছুই না। তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই এই খানদানি ফকিরের দল খেতে আসছে।
এর মাঝে আমার বিয়ে পাগল কাজিন বলে ওঠে, আজকে অপমান করছো। কিছু বলবো না। বিশেষ ছাড় দিলাম। ছ্যাঁকা না খেয়েও ছ্যাঁকা খাওয়ার ফিলিংস হচ্ছে। আমাদের এক বারই বিয়ে হয় না। সেখানে রিয়া আমাদের ছোট বোন হয়ে দুই দুইবার বিয়ে করে ফেলবে।
সবার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সবাই এসব কী বলছে? আমার আবার বিয়ে মানে কী?
তোমরা এসব কী বলছো? আমার আবার বিয়ে এসবের মানে কী?
মামুনি এসে বলে, রিয়া তুই কলেজ থেকে এসেছিস রুমে যা। একটু ফ্রেশ হয়ে অল্প কিছু খেয়ে নে। এদের কথায় পাত্তা দিস না। বিয়ে হবে না তোর আর রুদ্রর রিসেপশন হবে।
মানে কী এসবের? বিয়ের এতদিন পর রিসেপশন। তোমার ছেলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
আমি কিছু জানি না বাবা তোদের ব্যাপার তোরাই বুঝে নে।
চলবে……..
(সমস্যা হয়তো কোনোদিনই আমার পিছু ছাড়বে না। কিছুদিন হাতে সময় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম গল্পটা এবার থেকে রোজ দিব। কিন্তু দুই দিন ধরে ফোন সমস্যা করছে। ফুল চার্জ করার পরও ২০ মিনিট চার্জ টিকে না। এই কয়েক দিনে অল্প অল্প করে লিখে আজকে পোস্ট করলাম। )