পূর্ণিমাতিথি পর্ব-৮

0
3189

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৮

ভিতর থেকে কোনো সারা শব্দ নেই। ফোন বাঁজতে বাঁজতে কেটে গেলো। নতুন উদ্যমে আবার বাজতে বাজতে শুরু করে। ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে। আমি দ্বিধায় ভোগছি ফোনটা রিসিভ করবো নাকি না। রিসিভ করলে যদি উনি রাগ করেন। ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনের স্কিনে তাকাতেই চমকে ওঠলাম। আমার দৃষ্টি ফোনেই আটকে গেছে। অরি নামটা দেখেই বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো। আচমকা কেউ আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল। কারো রুক্ষ কন্ঠ কর্ণগোচর হলো। সামনে তাকিয়ে দেখি রুদ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। চোখগুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।

কী সমস্যা তোমার? আমার পিছনে না লাগলে তোমার শান্তি লাগে না? আমার পিছনে লাগা ছাড়া তোমার আর কোনো কাজ নেই? কারো পার্সোনাল জিনিস ধরলে যা তার কাছে থেকে
অনুমতি নিতে হয় সেটা জানো না? এই সিম্পল কার্টেসি কী তোমার মাঝে নেই? নেক্সট টাইম আমার কোনো জিনিস তুমি ছুঁবে না। আই হেইট দিস।

সরি। আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতোটা রেগে যাবেন। আমি আপনাকে ডেকেছিলাম। কিন্তু আপনি হয়তো শুনেননি। ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছিল। তাই

তাই কী? আমি তোমাকে আমার ফোন ধরার অনুমতি দিয়েছি? কী বুঝতে পারোনি? তুমি কী ছোট বাচ্চা নাকি অবুঝ শিশু।

দুঃখিত। আর কখনোই আপনার জিনিস আমি ধরবো না। আপনার জিনিসের ধারে কাছেও আমি যাব না।

কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। রুদ্রের করা অপমানে মুহূর্তের মাঝেই আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে। তীব্র আত্মসম্মানে উনার কথাগুলো চুম্বকের মতো আঘাত করলো। এর আগে কখনো কেউ আমাকে এভাবে বলেনি। উনি না জেনেই এমন একটা জায়গায় আঘাত করলেন যার কোনো ক্ষমা হয় না। কোনো কিছুর বিনিময়েই না।

আমি সোজা ছাদে চলে এলাম। চোখ দুটো জ্বলছে। কিন্তু আমি কাঁদবো না। কার জন্য কাঁদবো? যার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই। কান্না মানেই দুর্বলতা। আমি কারো সামনে দুর্বল হবো না। উনার সাথে কথা ও বলবো না উনার জিনিস স্পর্শও করবো না। কথা বলবো। যতটুকু না বললেই নয় ঠিক ততটুকু। আমি আত্নসম্মানহীন নই। আমারও আত্মসম্মান আছে।

মাথার ওপর বিশাল আকাশ। মিটিমিটি তারায় ছেয়ে আছে আকাশটা। দমকা হাওয়ায় আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। ঠিক তখনি আমার কাধে কেউ হাত রাখলো। আমি পিছনে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।

মন খারাপ?

নাহ।

আমি জানি তোর মন খারাপ। তুই সবার কাছ থেকে লুকাতে পারলেও আমার কাছ থেকে লুকাতে পারবি না। মন খারাপ কেনো?

মন খারাপের কারণ কাউকে বলতে নেই। কাউকে মন খারাপ এটা বলার চেয়ে আমি ভালো আছি এটা বলা ভালো। আমার মন খারাপের কারণটা হয়তো তার কাছে হাস্যকর মনে হবে বা উপরে উপরে সহানুভূতি দেখালেও ভিতরে ভিতরে আনন্দ পাবে।

তোর আমাকে এরকম মনে হয়?

উহু। তুমি তো আমার বেস্ট ভাইয়া। আমি তো যাস্ট এমনিই বললাম। আমার মন একদম ভালো। কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেলো। কতোদিন হলো বান্ধবীদের সাথে দেখা হয় না। পুরোনো দিনের কথাগুলো অনেক মনে পড়ছে।

এটার জন্য মন খারাপ করতে হয়? তোর সব ফ্রেন্ডরা মিলে কালকে একটু ঘুরে আয়। সবাইকে ফোন দিয়ে বল যে, তাদের সাথে দেখা করতে চাস। তাহলেই তো হয়। তুই ভালো আছিস তো?

এটা আবার কেমন প্রশ্ন? আমি ভালো থাকব না কেনো? আমাকে দেখে তোমার মনে হচ্ছে আমি খারাপ আছি?

চোখের দেখা সব সময় ঠিক হয় না। আমাদের চোখের সামনে যা ঘটে তা কী সব সময় ঠিক হয়। চোখে দেখাও অনেক সময় ভুল হয়। হয়তো তুই আমার সামনে ভালো থাকার অভিনয় করছিস। কিন্তু তুই ভালো নেই। রুদ্রের সাথে তোর সব ঠিক ঠাক আছে?

উফ ভাইয়া তুমি আমাকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করছো। আমি একদম ঠিক আছি। উনার সাথে আমার সব ঠিক ঠাক আছে।

____________

এখন মনটা বেশ ভালো। ভাইয়ার সাথে কথা বলে মন খারাপ ভাবটা কেটে গেছে। আব্বুকে আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে। আম্মুর কোলে মাথা রেখে আব্বু আম্মুর সাথে কতশত কথা বললাম। কালকেই ও বাড়ি ফিরে যেতে হবে। এটা ভেবেই মন খারাপ হচ্ছে। উনার সাথে ফিরে যেতে আমার একদমিই ইচ্ছে করছে না।

রুমে এসে দেখি উনি শুয়ে পড়েছেন। প্রথম দিনের মতো আজকেও উনি বিছানার মাঝ বরাবর কোল বালিশ দিয়ে শুয়ে আছেন। উনি চোখের ওপর হাত রেখে শুয়ে আছেন। দেখে বোঝা যাচ্ছে না সজাগ নাকি ঘুমিয়ে গেছেন। আমি আর কিছু না ভেবে রুমের লাইটটা অফ করে কোল বালিশের অপর পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লাম উনার দিকে পিঠ দিয়ে।

______________

সকালে উনি আমার আগেই ঘুম থেকে ওঠলেন। ঘুম থেকে ওঠেই উনি মর্নিং ওয়াকে চলে গেছেন। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ব্রেকফাস্ট করতে বসলাম। উনি ফিরে আসার আগেই আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হবে। আমি উনার সাথে ঐ বাসায় ফিরবো না। সত্যি বলতে আমি উনার গাড়িতে ওঠতে চাই না। উনার কোনো জিনিস আমি ইউস করতে চাই না। আমি নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তো উনার সাথে যেতে পারি না।

আম্মু আমাকে আজকে একটু কলেজে যেতে হবে?

কেনো?

আজকে সব ফ্রেন্ডরা একসাথে হওয়ার জন্য কলেজে আসছে। আমাকেও যেতে বলছে।

কখন যাবি?

এই তো এখনি। ব্রেকফাস্ট করেই চলে যাব।

একা একাই যাবি?

হ্যাঁ।

রুদ্রর সাথে গেলেই তো পারতি।

উনার সাথে গেলে দেরি হয়ে যাবে। আম্মু আমি আসছি। উনাকে তুমি বলে দিও আমি চলে গেছি। আমি মামুনিকে ফোন করে বলে দিব।

তারপর আব্বুর কাছে গেলাম।

আব্বু আমি আসছি।

এখনি চলে যাবি?

হুম। কলেজে একটু দরকার ছিল।

আচ্ছা চল তোকে আমি গাড়িতে তুলে দিয়ে আসি।

আচ্ছা চল।

এডমিশন কোচিংয়ে কোনদিন ভর্তি হবি?

আগামীকাল। তুমি নিয়ে যাবে?

অবশ্যই। তোর জীবনের এমন কোনো স্পেশাল দিন আছে যেদিন তোর সাথে আমি ছিলাম না। তুই ডক্টর হ এটা যেমন তোর স্বপ্ন তেমন আমার ও। আগামীকাল ১০ টার সময় তোকে নিয়ে যাব। রেডি হয়ে থাকবি আমি তোকে ঐ বাসা থেকে নিয়ে যাব।

আচ্ছা।

আব্বু আমাকে একটা রিকশায় তুলে দিল।

সাবধান যাস আর নিজের খেয়াল রাখিস।

তুমিও নিজের খেয়াল রেখো।

__________________

কিছুক্ষণ আগেই সেই পুরোনো কলেজে এলাম। কতদিন পর কলেজে এলাম। কলেজ ক্যাম্পাসে পা রাখতেই মনে পড়ে গেলো কত শত স্মৃতি। এই তো কদিন হলো এই কলেজ থেকে বিদায় নিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে কতো বছর হয়ে গেছে কলেজটা দেখি না, কলেজের প্রিয় মুখগুলো দেখি না। এই কলেজের সাথে জড়িয়ে আছে কতশত মধুর স্মৃতি। যেগুলো ফিরে আসার না। প্রিয় বান্ধবীদের ফোন দিলাম। তাদের আসতে আরো ১০ মিনিট। বান্দরগুলো অলয়েজ লেইট করে। এবারও যে ব্যতিক্রম হবে না এটা ভাবাই ভুল। সবাই আসলে এক সাথেই স্যারদের সাথে দেখা করতে যাব।

হাঁটতে হাঁটতে কলেজের পিছনের দিকে চলে এলাম। এদিকটায় বেশি মানুষজন আসে না। টিফিন টাইমেই একটু আধটু মানুষের আনাগোনা হয়। হঠাৎই উড়নায় টান পড়ে। পিছন ফিরে দেখি এনাম ভাইয়া আমার উড়না টেনে ধরেছে। এই ছেলেটা যেদিন থেকে কলেজে ভর্তি হয়েছি সেদিন থেকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে তো উড়না টেনে ধরেছে। হঠাৎই জুড়ে উড়না টান দেয়।

চলবে…..

[দুঃখিত আগামীকাল গল্প না দেওয়ার জন্য। হঠাৎই জ্বর ঠান্ডা লেগে যাওয়ায় গল্পটা দিতে পারিনি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here