প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব-১৫

0
808

#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#১৫তম_পর্ব

চকলেটটি এগিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,
“দোস্তো, সরি। আসলে সব কিছু এমন ভাবে হয়েছে আমি বুঝতে পারছিলাম না। রাগ করিস না”

ধারা ভেবেছিলো কাজ হবে। কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে মাহি উঠে দাঁড়ালো। বিনাবাক্যে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিলো। গিয়ে বসলো ধারার অতীব অপছন্দের ক্লাসমেট মাধবীর পাশে। ধারা তাকে ডাকতে চাইলো কিন্তু থেমে গেলো। মানুষের একটা বাজে প্রবৃত্তি আছে, যে সকল মানুষদের তারা অপছন্দ করে তারা চায় না তাদের পছন্দের মানুষগুলো সেই অপছন্দের মানুষের আশেপাশে থাকুক কিংবা কথাও বলুক। ধারার মাঝে এই প্রবৃত্তিটি যেনো একটু মাত্রাতিরিক্ত ই। ভার্সিটিতে ভর্তিতে হবার থেকেই মাধবী নামক মেয়েটিকে তার অপছন্দ। সব কিছুতেই তার অতিরিক্ত বোঝা ভাব। ধারার মতে মেয়েটি অতিমাত্রায় স্বার্থপর। ভার্সিটির শুরুর দিকে যখন সিনিয়র ভাই-বোনেরা র‍্যাগিং করতো তখন সেই র‍্যাগিং থেকে বাঁচার জন্য সে নিজ ক্লাসমেটদের নামে কথা লাগাতো। ফলে তার সাথে সিনিয়রদের সখ্যতা হলেও ক্লাসের বাকিদের উপর চলতো র‍্যাগিং। ধারাও সেই র‍্যাগিং এর স্বীকার। এই মাধবী মেয়েটির জন্য অহেতুক কারণে এক আপুর কাছে বকা খেতে হয়েছিলো তার। সেখান থেকেই এই মেয়েটাকে অপছন্দ তার। ধারার অপছন্দ বিধায় মাধবীকে বন্ধুমহলেরও অপছন্দ। অথচ আজ সেই মাধবীর সাথেই গিয়ে বসেছে মাহি। ফলে প্রচন্ড রাগ জমলো মনের কোনে। আগুন জ্বলে উঠলো তার মস্তিষ্কে। নিজের বান্ধবীর উপেক্ষা হয়তো এতোটা কষ্ট দিতো না, যতটা তার শত্রুর সাথে সখ্যতায় দিচ্ছে। ধারা চেয়েছিলো মাহির সাথে সব ঠিকঠাক করে নিবে। কিন্তু মাহির এমন কার্যে সেই ইচ্ছে বর্জন করেছে সে। কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো সে, সে আর নিজ থেকে মাহির রাগ ভাঙ্গাবে না। তার রাগ করার ইচ্ছে থাকলে করুক। তার আর অনলের বিয়ে তো নিজের ইচ্ছেতে হয় নি। তখনের পরিস্থিতিও অনুকূলে ছিলো না। তাই সে মাহিকে কিছুই জানায় নি। অনল ভাইকে মাহি পছন্দ করতো সেখানেও তার কোনো দোষ নেই, অনল ভাই তাকে প্রত্যাখান করেছে সেখানেও তার দোষ নেই। তবুও ধারা তার রাগ ভাঙ্গাবার চেষ্টা করেছিলো। অথচ মাহি কি না তাকে উপেক্ষা করে, তার উপর রাগ দেখিয়ে মাধবীর সাথে বন্ধুত্ব করতে গেছে। যাক, চুলোয় যাক সে। ধারার দায় পড়ে নি তার রাগ ভাঙ্গানোর। চকলেট টা নিক ব্যাগে পুরে ফেললো সে। এদিকে দুজন প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে দুপ্রান্তে বসতে দেখে দিগন্ত, অভীক এবং নীরব প্রচন্ড অবাক। মাহি এবং ধারা ফেবিকলের আঠার মতো। দুজন যেনো দুজন ছাড়া অচল৷ অথচ একজন দক্ষিণে বসেছে তো অন্যজন বসেছে উত্তরে। দিগন্ত অভীককে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“চু’ন্নী দুটোর আবার কি হয়েছে? একটা টেকনাফে আর আরেকটা তেতুলিয়ায় কেনো?”
“কলিযুগ চলছে রে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। নয়তো দেখ, মাহি আর ধারার মাঝেও ঝামেলা হলো”
“গুরুতর কিছুই হয়েছে। নয়তো মাধবীর পাশে মাহির বসার কথা না। এদিকে ধারাও দেখ রেগে লাল হয়ে আছে। ওতো কথাও বলছে না। খোঁজ তো নিতেই হবে”

অভীক সহমত জানালো। নীরব চুপ করে রইলো। শুধু চোখ ছোট ছোট করে মাহি এবং ধারাকে দেখলো। দুজনের মাঝে একটা থমথমে আবহাওয়া। একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছেও না। কথা তো দূরে থাক। তবে কি ফাটল ধরলো বন্ধুমহলে! স্কুল কলেজের বন্ধুত্ব গুলো অন্যরকম হয়! তখন মানুষের মন টা থাকে ছোট, সেখানে নিজের স্বার্থ ততটা থাকে না। কিন্তু ভার্সিটির বন্ধুত্ব অন্যরকম। এই জীবনে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে মানু্ষ; স্বার্থ, উচ্চাকাঙ্খার মাঝেও কিছু কিছু মানুষের একটা দল তৈরি হয়। যারা সারাদিন ই একসাথে কাটায়। এই সারাদিন একসাথে থাকলেও সিজি, নোট, নম্বর, এসাইনমেন্ট, প্রেম সব মিলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। এমন কত গ্রুপ আছে যা ফার্স্ট ইয়ারে তৈরি হলেও ফোর্থ ইয়ার আসতে আসতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে। মনোমালিন্য, ঝগড়া, অভিমান, রাগ, ক্ষোভ বন্ধুত্বের মিষ্টি সম্পর্কটিকে করে তোলে তিক্ত। তারপর ভার্সিটি শেষ হয়। এক একেক জন এক একেক পথে। নিজেদের জীবন নিয়েই ব্যাস্ত। ফিরে থাকাবার সময়টিও হয় না। অবহেলায় পড়ে থাকে, ক্যাফেটেরিয়ায় কাটানো সময়, আড্ডা, গান, চায়ের কাপ। নীরব দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ইট, পাথরের এই ঢাকায় সে একা, আত্নীয়রা থাকে সদূর পঞ্চগড়। এই বন্ধুমহলটিই তার পরিবার। সে চায় না এই সুখময় জায়গাটা নষ্ট হোক। সে চায় না এই পাঁচজনের মাঝে কোনো ফাটল ধরুক। রাগ, ক্ষোভ তো থাকবেই, কিন্তু দিনশেষে না হয় এই বন্ধুত্বের মিষ্টতা দিয়ে তার সমাধান হোক________

ক্লাস শেষ হল। একে একে চারটে ক্লাস, মাঝে ব্রেক থাকলেও মাহি এবং ধারার মাঝে কোনো পরিবর্তন হলো না। ক্লাস শেষ হবার পর বন্ধুমহল অপেক্ষা করছিলো ধারা এবং মাহি হয়তো কথা বলবে। কিন্তু তাদের ভুল প্রমাণিত করলো তারা। মাহি হনহন করে বেরিয়ে গেলো। ধারাও ব্যাগ গুছালো। সে পাত্তা দিলো না মাহির উদাসীনতার। যেনো মাহির অভিমানে তার যায় আসে না। দিগন্ত বললো,
“তোরা ধারার সাথে কথা বল, আমি মাহিকে দেখছি”

বলেই পিছু নিলো মাহির। এদিকে অভীক আর নীরব মুখোমুখি হলো ধারার। ভনিতা ছাড়াই অভীক প্রশ্ন ছুড়লো,
“কি হয়েছে তোর আর মাহির মাঝে?”

আকষ্মিক প্রশ্নে খানিকটা চমকে উঠলো ধারা। উত্তরটা গলায় আটকে থাকলেও বলতে পারলো না। শান্ত কন্ঠে বললো,
“কিছু না, ওর রাগ করতে ইচ্ছে হয়েছে করেছে”

বলেই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলো ধারা। অভীক এবং নীরব তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পথে______

****

অনেক কষ্টে দৌড়ে এসে মাহিকে থামালো দিগন্ত। হাপাতে হাপাতে বললো,
“এতো জোরে হাটছিস কেনো? ট্রেন ধরবি নাকি? কখন থেকে ডাকছি, শুনিস না নাকি!”

মাহি সত্যি শুনে নি। নিজ মনেই হাটছিলো সে। কালকের পর থেকে মস্তিষ্ক যেনো অচল হয়ে গেছে। মন এবং মস্তিষ্কের রেষারেষিতে ক্লান্ত হয়ে আছ্র। নিজের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর উপর প্রবল ক্ষোভ জন্মেছে, সেই সাথে নিজের কাজেও লজ্জা লাগছে। সেদিন যদি ধারা সত্যিটা বলে দিতো তবে নির্লজ্জের মতো অনলের কাছে প্রেম নিবেদন করতো না। এখন সে বেশ বুঝতে পারছে অনল কেনো বলেছিলো “এক হৃদয়ে দুই নারীর স্থান হয় না” —- কারণ সে বিবাহিত।ধারার সাথে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না সে। ফলে আজ মাধবীর পাশে বসেছে সে। অবশ্য অন্য জায়গায় জায়গাও ছিলো না। কারণ ধারার পাশে বসবে না। দিগন্তকে এমন পথ আটকাতে দেখে কিছুটা চমকে গেলো সে। অবাক কন্ঠে বললো,
“আমাকে ডাকছিলি কেনো?”
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“বাসায়, আর কোথায় যাবো!”
“তোর আর ধারার মধ্যে কি হয়েছে? ফেবিকলের জোর ভাঙ্গলো কেনো?”

দিগন্তের প্রশ্নে খানিকটা বিরক্ত হলো মাহি। এই ছেলের এতো কেনো মাথা ব্যাথা বুঝে না। বিরক্তিভরা স্বরে বললো,
“কেনো? ব্রেকিং নিউজ বানাবি! দশ হাত দূরে যা তুই। আমাদের ব্যাপার আমরা বুঝে নিবো। নিজের বান্ধবীর উপর রাগ ও করতে পারবো না কি? রেগে আছি। ক্ষোভ হয়েছে, কমলে যেয়ে কথা বলবো। তোর মাথা ঘামাতে হবে না”
“বাহ বা! যার জন্য করি চুরি সে বলে চোর। আমার চিন্তা হচ্ছিলো তাই এসেছি, আর আমার উপর চোটপাট করছিস। কি অদ্ভুত! শোন, আমি ব্রেকিং নিউজ করতে পারি ঠিক, কিন্তু বন্ধুদের খবর আমি পাঁচার করি না। আমার ও একটা নৈতিকতা আছে”

দুঃখভরাক্রান্ত কন্ঠে দিগন্ত বললো। মাহি এখনো ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা আস্তো নাটকবাজ। শুধু নাটক করে। বুক বাকিয়ে বললো,
“হইছে, থেমে যা। নাটক যতসব। তোর স্বভাব জানা আছে।”
“বিশ্বাস করলি না তো, মনে থাকবে। আর একটা কথা, চুপ করে থাকলে রাগ বাড়ে। তখন সেটা অভিমানে পরিণত হয় এর বরং রাগ কমিয়ে নেই। দরকার হলে কটা গা”লি দিয়ে নিস। তবুও এতোকালের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাস না”

বলেই হাটা দিলো দিগন্ত। দিগন্তের কথাটা মস্তিষ্কে গেঁথে গেলো মাহির। সত্যি ই তো রাগ মনে পুষে রাখলে অভিমান জন্ম নেয়। রাগ ভাঙ্গা সহজ, অভিমান বড়ই বিচিত্র।

*****

ভার্সিটির গেট পেরিয়ে একটু সামনে আসতেই ধারা থমকে গেলো। পড়ন্ত দুপুর, সূর্য মাথার উপর। জ্বালাময়ী রোদে পিচের রাস্তার উপর থেকেও ধোঁয়া উড়ছে যেনো। অথচ এই রোদের মধ্যেও একটা দোকানের সামনে বাইকের উপর হেলান নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনল। তার হাতে একটা পেপসির আড়াইশো এম.এল এর বোতল। সে একটু পর পর পেপসি খাচ্ছে আর ঘড়ি দেখছে। অনল ধারাকে নিতে আসবে এটা কল্পনা করে নি সে। আজ অনলের ছুটিও ছিলো। ক্লাস নেই বিধায় সে আজ ভার্সিটি যায় নি। ধারা কিছুটা এগিয়ে যেতেই অনল সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বাইকে উঠে স্টার্ট দিতে দিতে বললো,
“তোর আজকে ফাইন হবে, বিশ মিনিট রোদে দাঁড়িয়ে আছি”
“আমি বলেছি আসতে? এসেছো কেনো?”
“তুই তো মানুষ ভালো না, কোথায় দাঁড়িয়ে আছি জিজ্ঞেস করবি আমি ঠান্ডা কিছু খাব কিনা! আমার কষ্ট হয়েছে কি না! তা নয়, মুখে মুখে তর্ক জুড়ে দিচ্ছিস”
“ধন্য করেছো এসে। এখন প্রিন্স উইলিয়ামের জন্য কি করতে পারি”
“তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে আমাকে উদ্ধার করতে পারিস”

ধারা মুখ বেকিয়ে ভেঙ্গালো অনল কে। মনটা ভালো লাগছে না। মাহির উপর চরম রাগ হচ্ছে। অকারণ যদিও, তবুও হচ্ছে রাগ। তার বেস্ট ফ্রেন্ড কেনো ওই কু’ট’নী মাধবীর পাশে বসবে! ধারা বাইকে বসতে বসতে বললো,
“বাড়ি যাবো না”
“তা এই ভরদুপুরে কই যাবি? রোদ দেখেছিস, জ্বলছে যেনো শরীর”
“আমি জানি না, তুমি জানো কই যাবা! আমি বাড়ি যাবো না এখন ব্যস”

অনল মুখ ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মাঝে মাঝে মেয়েটাকে মাথায় তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারে না, ছোট বিধায় দয়া হয়। আর যদি বাসার হিটলার জানে তার ধারারাণীর গায়ে আচড় পড়েছে তাহলে অনলের জীবন দূর্বিষহ। অনেক ভেবে একটা জায়গা পেলো। যদিও পকেট গরম নয় তবুও মনে করে কার্ডটা এনেছিলো অনল। বাইক চলতে লাগলো। পিচের রাস্তা চিরে এগিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। গতি বাড়ার কারণে উষ্ণ বাতাসে উড়ছে ধারার অবাধ্য চুল। ধারা মাথা কাত করে ঠেকালো অনলের পিঠে। শক্ত হাতে তার কোমড় চেপে বসলো। ধারার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আঁছড়ে পড়ছে অনলের পিঠে। ঠোঁট বেকিয়ে স্মিত হাসলো অনল। এই মেয়েটাকে নিয়ে কি করবে! যত দূরে থাকতে চায় ততই যেনো মায়ার তরী তাকে টেনে নিয়ে আছে________

বাইক থামলো একটা নদীরে তীরে রিসোর্টে। ঢাকার শহর থেকে প্রায় ষাট কিলো দূরে। রিসোর্টটি ইকোপার্কের মতো বানানো। বেশ কিছু রুম আছে। রিসোর্ট ঘিরে বিশাল জায়গা। পাশ দিয়ে চিকন নদী। ভার্সিটিতে পড়ার সময় একবার পিকনিক করতে এসেছিলো অনলেরা। নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখতে বড় সুন্দর লাগে। ঘরের বাহিরে ধারার তেমন কখনো যাওয়া হয় না। অনলের ছোট ফুপুর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। অনুষ্ঠান ব্যাতীত সেখানেও যাওয়া হয় না। যেহেতু জিদ করেছে সে বাড়ি যাবে না সেহেতু জোর করে লাভ নেই। উপরন্তু যদি বাড়িতে বলা হয় ধারা ঘুরতে চেয়েছে আর অনল তাকে নিয়ে যায় নি তবে সেদিন অনলকে ঘরেই ঢোকা বন্ধ করে দিবে জামাল সাহেব। একনায়কতন্ত্র এখনো চলছে কি না! একঅটা রুম ভাড়া করলো অনল। চাবি নিয়েই বললো,
“চল, ফ্রেশ হবি”

ধারা ঠোঁট চওড়া করে হাসলো। সবুজে আবৃত রিসোর্টে এসে মাহির কথাই ভুলে গেলো সে। অনলের পিছু পিছু রুমে গেলো। বেশ বড় তাদের রুমটি। রুমে ঢুকেই জানালা খুলে দিলো ধারা। জানালা থেকে পেছনের বয়ে যাওয়া নদীঈ স্পষ্ট দেখা যায়। অনল পকেটে হাত গুজে তাকিয়ে রইলো ধারার হাস্যজ্জ্বল মুখখানার দিকে। তারপর নরম গলায় বললো,
“মাহির সাথে বনিবনা হয় নি তাই না?”

অনলের প্রশ্নে নিঃশব্দে মাথা নাড়লো। তারপর রাগান্বিত গলায় বললো,
“আমি ওর রাগ ভাঙ্গাবো না। আমার উপর চেত দেখিয়ে মাধবীর পাশে গিয়ে বসেছে। ও মাধবীকে নিয়েই থাকুক”

অনল নিঃশব্দে হাসলো। তারপর কাছে এসে তার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
“হিংসুটে বউ আমার। ফ্রেশ হয়ে নে। এখানে হোটেল আছে। ভাত খেয়ে নিবো। তারপর রোদ কমলে বের হবো। আমি বাসায় জানিয়ে দিচ্ছি”

ধারা ঘাড় কাত করে সম্মতি দিয়েই ছুটলো বাথরুমে। অনলের মুখে “বউ” টুকু শুনেই তার ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠলো। হৃদয়টা এই বেড়িয়ে যাবে। বাথরুমে আয়নার সামনে নিজেকে একবার দেখলো। এই প্রথম একাকীত্বে অনলের সাথে কোথাও ঘুরতে এসেছে সে। মনের মাঝে এক অন্য শিহরণ জাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে বললো,
“এতো লজ্জা পাবার কি আছে? এটা তো অনল ভাই”

পরমূহুর্তে মন উত্তর দিলো, “হ্যা, অনল ভাই। তাই তো লজ্জাটা বেশি লাগছে”

ধারা দুহাত দিয়ে মুখ ডাকলো। পরমূহুর্তেই বললো,
“ধারা তুই পুরাই গেছিস”

********

পড়ন্ত বিকেল, সূর্য হেলে পড়েছে দিগন্তের সীমানায়। গোলাকার কমলা সূর্যটিকে নদীর পানিতে আরোও বড় লাগছে। সোনালী আলোতে চিকচিক করছে নদীর স্বচ্ছ পানি। মৃদু বাতাস বইছে। ধারা চুল খোলা। হাটু গেড়ে সে এবং অনল বসে আছে নদীর পাড়ে। এক পাশে বন্ধুদের একটা দল গান গাচ্ছে।
“প্রথমত আমি তোমাকে চাই,
দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই,
তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই,
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই…

নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই,
রাত ভোর হলে আমি তোমাকে চাই,
সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই,
সন্ধ্যের অবকাশে তোমাকে চাই…”

চোখ বুজে গান শুনছিলো অনল। ধারা মুখে হাত দিয়ে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে অনলের দিকে। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের কিরণে প্রিন্স উইলিয়ামকে যেনো আরোও সুন্দর লাগছে। হঠাৎ চোখ খুললো অনল। চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করলো,
“কি দেখিস?”
“তোমাকে………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here