প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব-১৬

0
834

#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#১৬তম_পর্ব

চোখ বুজে গান শুনছিলো অনল। ধারা মুখে হাত দিয়ে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে অনলের দিকে। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের কিরণে প্রিন্স উইলিয়ামকে যেনো আরোও সুন্দর লাগছে। হঠাৎ চোখ খুললো অনল। চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করলো,
“কি দেখিস?”
“তোমাকে”

ধারার “তোমাকে” টুকু মস্তিষ্কে ধাবণ করতে সময় নিলো অনলের৷ মস্তিষ্ক জুড়ে যেনো মেয়েটির ঘোর লাগানো স্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ক্ষণিকের জন্য স্তদ্ধ হয়ে গেলো সে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ধারার দিকে। পড়ন্ত বিকেল, পশ্চিমে লাল আভা গাঢ় হচ্ছে। প্রস্তুতি হচ্ছে ব্যস্ত দিনের সমাপ্তির। ঈষৎ লালচে আলো আছড়ে পড়ছে ধারার ঘোর লাগা চোখে। তার দৃষ্টিতে অদ্ভুত মাদকতা। অনল চোখ রাখলো ধারার সেই মাদকতাপূর্ণ চঞ্চল চোখে। দুজনের মাঝে কোনো কথা নেই। শুধুই নীরবতা। সময়টা যেনো থেমে গেছে। আশেপাশের কোলাহল যেনো তাদের ছুতে পারছে না। অনল অনুভব করলো তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে। একবার ইচ্ছে করলো প্রশ্ন করতে, “কেনো?” কিন্তু প্রশ্নটি করা হলো না। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। লালচে রঙ্গে নীলাম্বরে ছেয়ে গেছে। পাখিরা যে যার ঘরে ফিরছে। অনল চোখ সরিয়ে নিলো। আশেপাশের গান থেমে গেছে। আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। অনল হাটু ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো। নরম গলায় বললো,
“বাসায় যেতে হবে”

ধারার ঘোরে পড়লো ছেদ৷ স্বম্বিত ফিরলো তার। উপলদ্ধি করলো এতো সময় নির্লজ্জের মতো শুধু অনলকেই দেখেছে সে। তার থেকেও বেশি লজ্জা পেলো যখন স্মরণ হলো একটু আগের বলা কথাটা, সে অকপটেই অনলকে লোলুপ দৃষ্টিতে দেখার কথাটা স্বীকার করে নিয়েছে। না জানি অনল ভাই কি ভাবছে! কি চলছে তার মনে! সে কি রাগ করেছে! নাকি লজ্জা পেয়েছে! নাকি বিরক্ত হয়েছে! ধারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। দিনের আলো মিলিয়ে গেছে, নদীর পাড়ে আঁধার নেমে গেলো এসেছে। এখন বাড়ি ফিরতে হবে। অনল অপেক্ষা করলো না ধারার জন্য। অনলকে চলে যেতে দেখে পিছু নিলো ধারা। কিশোরী মনে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিলো। তখনের কথা এবং কাজে কি সে রাগ করেছে! কেনো করেছে রাগ! নিজের স্বামীকে দেখা তো খারাপ নয়! আর যদি রাগ না করে থাকে তবে এমন এড়িয়ে যাচ্ছে কেনো! উত্তর পেলো না ধারা।

সারাটা রাস্তা কোনো কথা হলো না তাদের মাঝে। ধারাও কোনো কথা বলে নি, অনল ও নয়। শুধু বাইকে উঠতে উঠতে বলেছিলো,
“সাবধানে বসিস, আমি একটু জোরে চালাবো”

এটুকুই তাদের মাঝে কথা হয়েছে। এক অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হলো। ধারা বুঝলো না, অনলের আচারণের কারণ। হয়তো অনল নিজেও জানে না এই কারণ। অন্য চারটে সম্পর্কের মতো তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়, এক অদ্ভুত জড়তা দুজনের মনেই উঁকি দিচ্ছে। অনলের মনে হচ্ছে তাদের দুজনের মাঝে একটা কাঁচের দেওয়াল আছে, যা ভেদ করাটা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। সে ধারাকে আঘাত করতে চায় না। নিজেও আঘাত পেতে চায় না। তাই দ্বিধাবোধ হয়। তাদের সম্পর্কের কি আদৌও ভবিষ্যৎ আছে! নাকি এটা শুধুমাত্র দাদাজানের একটা জেদ হয়েই থেকে যাবে! এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানাই রয়ে গেছে। তাই নিজ থেকে দু কদম এগোলেও দু কদম পিছিয়ে আসে সে। ফলে তার অবস্থানটা একই জায়গায় আছে। ধারাও আগায় নি! ফলে সম্পর্কটা এখনো একমাস পূর্বের মতোই আছে______

বাসায় পৌছালো রাত নয়টার দিকে। ধারা বিনা বাক্যে ভেতরে চলে গেলো। মনে থেকে গেলো তার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের উৎপন্ন প্রশ্ন। বাসায় প্রবেশ করতেই আশা এবং এশা ছুটে এলো অভিযোগের পুটলি নিয়ে। তাদের ছাড়া কেনো ঘুরতে যাওয়া হলো। ধারা ক্লান্ত স্বরে বললো,
“আরেকবার নিয়ে যাবো”

অনল কারোর সাথে কথা বললো না। সোজা নিজ ঘরে চলে গেলো। এশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুসময় তাকিয়ে রইলো অনলের যাবার দিকে। তারপর বলে উঠলো,
“অনল ভাইরে কি কু’ত্তায় কামড়াইছে? মুখটা এমন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো করে রাখছে কেনো?”
“জিজ্ঞেস করে আয়”

ধারা ওর চুলটা খানিকটা টেনে কথাটা বললো। এশা বা হাতে মাথা ঢলতে ঢলতে বললো,
“বলবা না বলে দিলেই হয়। ভয় দেখাও কেনো!”

ধারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুবি দুটোর কান ধরে বললো,
“মেয়েটা মাত্র বাড়ি আসছে, একটু শান্ত দে। আর তোদের পড়া নেই! সারাক্ষণ টো টো কোম্পানির ম্যানেজারি করিস? যা নিজের রুমে পড়তে যা”

ধারা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ব্যাগটা নিয়ে নিজ ঘরে চলে গেলো। এশা এবং আশাও বাধ্য হয়ে নিজ ঘরে গেলো। মায়ের কান মলায় ফর্সা কান লাল হয়ে গেছে। তবে এশা ক্ষান্ত হলো না। ফিসফিসিয়ে বলল,
“কুছ তো গারবার হ্যা দায়া, পাতা লাগাও”

অপরদিকে ঘরে প্রবেশ করে অনলকে দেখতে পেলো না ধারা। বাথরুম থেকে ঝর্ণার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তাই আন্দাজ করা কঠিন হলো না মানুষটি কোথায়। ধারা নিজের ব্যাগটা রেখে দিলো। গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। এতো লম্বা সময় বাইকে বসে মাজা ধরে এসেছে। মিনিট বিশেক বাদে অনল বের হলো টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে। বের হতেই তার চোখ গেলো শুভ্র বিছানায় গুটিসুটি মেরে ঘুমন্ত কিশোরীর দিকে। অনলের পা জোড়া এগিয়ে গেলো তার কাছে। বসলো কিশোরীর পাশে৷ ঘোর লাগা চোখে দেখছে কিশোরীকে। এক সময় বা হাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা অবাধ্য চুলগুলো সরিয়ে দিলো। ধীর গলায় বললো,
“আমাকে আর পাগল করিস না ধারা, একটা মানুষ বারবার ম’র’তে পারে না”

কথাটা নিস্তব্ধ ঘরেই আটকে রইলো। ঘুমন্ত কিশোরীর সেটা শোনা হলো না______

******

ক্যাফেটেরিয়ায় বন্ধুমহলের মধ্যে বসে আছে ধারা। শফিক স্যারের লিনিয়ার এলজ্যাবরা ক্লাস আজ হবে না। তাই বন্ধুমহল জড়ো হয়েছে ক্যাফেটেরিয়ায়। অবসর সময় কিভাবে কাটাতে হয় তা দিগন্ত এবং অভীকের কাছ থেকে শেখা উচিত। তাদের মধ্যে লেবু খাবার প্রতিযোগিতা চলছে। যে হারবে সে অপরজনের বাকি খাতা পরিশোধ করবে। রফিক মামা দশটা কাগজী লেবু কেটে দিতে বলেছেন। অভীকের বাকি খাতায় জমেছে ২৫৬৭ টাকা, দিগন্তের বাকি খাতায় জমেছে ২৪৬৮ টাকা৷ যেই জিতুক না কেনো তার বাকী টাকা পরিশোধ হবে। সেই আনন্দে রফিক মামার মুখ চকচক করছে। সে এই দশখানা লেবুর টাকা নিবে না। কারণ ২০০ টাকার বিনিময়ে তার যদি বাকি পরিশোধ হয় সেটাও বা কম কিসে! নীরব অতিউৎসাহীত ভাবে তাদের সাপোর্ট করছে। মোবাইল ফোনে ভিডিও ও করছে। ভার্সিটির গ্রুপে শেয়ার করবে সে। ধারার এদিকে খেয়াল নেই। দুটো দামড়া ছেলে লেবু খাবে এটা দেখার কি হলো! মাহিটা যদি থাকতো তাহলে আর খারাপ লাগতো না। কিন্তু জনাবা এখনো ক্যাম্পাস ই আসে নি। মাহির সাথে বন্ধুত্বটা আজকের না। সেই ছেলেবেলার, শুধু ধারা এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে বিধায় সেও ভর্তি হয়েছে। দুজন দুজনকে ছাড়া চলতে পারে না। যতই দিগন্ত, অভীক, নীরব তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোক না কেনো! মাহির সাথে যেনো মনের টানটাই আলাদা। এই যদি আজ মাহি থাকতো তবে মনের মাঝে জন্ম নেওয়া নবাগত ঝড়ের কথাগুলো তাকে বলতে পারতো। অনল ভাইয়ের প্রতি জন্মানো দূর্বলতাগুলোও বলতে পারতো। কিন্তু সে তো নেই, রাগ করে মাধবীর সাথে ঘুরছে। ধারা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এদিকে সামনের দুটো বা’দ’রের মুখ টকের কারণে বিকৃত হয়ে গিয়েছে। তবুও হাল ছাড়ছে না। আজ একজনের বাকি পরিশোধ হবেই। এর মাঝে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায় মাহি। গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“কথা আছে”

মাহির কথাটা শুনতেই কিছুটা বিস্মিত হয় ধারা। কিছুসময় ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকে। অপরদিকে অভীক এবং দিগন্তে নিজেদের প্রতিযোগিতা থামিয়ে দেয়। মাহি এবং ধারার ভেতরে বরফ গলছে। আজ তিনদিন পর মাহি ধারার সাথে কথা বলছে! এ যেনো আশ্চর্য! ধারা মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। ধারা দাঁড়াতেই মাহি বেড়িয়ে যায়। ধারাও পিছু নেয় মাহির। দিগন্ত লেবুর সপ্তম পিছ মুখে তুলতে তুলতে বলে,
“যাক, মাহি চু’ন্নীর সুবুদ্ধি হইছে”

বিল্ডিং পাশের সিড়িতে এসে বসে মাহি। ধারা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে বারবার ব্যাগের ফিতা টানছে। মাহি তীর্যক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। তারপর তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,
“কিছুই বলার নেই তোর?”
“কি বলবো?”

উলটো তেজ দেখিয়ে কথাটা বলে ধারা। মাহি ভ্রু কুচকায়। বিরক্তি যেনো বাড়লো। কন্ঠ আরোও ঝাঁঝালো করে বললো,
“বিয়ের কথাটা লুকালি কেনো? তুই তো জানতি আমি অনল ভাই এর প্রতি দূর্বল। উনত্রিশ বার তাকে চিঠি দিয়েছি।আর প্রতিবার সেটা ব্যার্থ হয়েছে। তুই যদি না লুকাতি সেটা আঠাশ বার ই হতো। ন্যাড়ার মতো সরাসরি আমি অনল ভাইকে প্রপোজ করতাম না”
“সেটা বলার জন্য তো ফোন করেছিলাম, ধরেছিলি! যেয়ে বসেছিলি মাধবীর পাশে। তা এখন শুনবি কেন?”

ধারাও কম নয়, সে তার রাগ অক্ষত রেখে কথাটা বললো। মাহি মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর শান্ত গলায় বললো,
“ক্ষোভ হয়েছিলো। অপমানিত, লজ্জিত হবার ক্ষোভ। এখন সেটা ঠান্ডা হয়েছে তাই শুনতে চাচ্ছি। বান্ধবীর উপর এটুকু ক্ষোভ তো হতেই পারে! ভেবেছিলাম, রাগ করলে তুই ও ভাঙ্গাবী। কিন্তু উলটো তুই ও ভাব মারতেছিস। নেহাত হারাতে চাই না এই বন্ধুত্ব। তাই নিজের ক্ষোভের আগুনে পানিটাও নিজেই ঢাললাম। যতই হোক, আমার তো আর বান্ধবী নেই”

মাহির কথাটা শুনে নিজেকে আটকাতে পারলো না ধারা। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ভেজা কন্ঠে বললো,
“তুই ই তো আমার ফোন ধরিস নি, জানিস আমি কতো ফোন করেছি। তোর জন্য চকলেট ও নিয়ে এসেছিলাম৷ উলটো তুই মাধবীর সাথে গিয়ে বসলি। আমার ও রাগ হলো। সরি”

দুই বান্ধবীর মাঝে জমা অভিমান জল রুপে দুজনের চোখে জমলো। কন্ঠে ভার হলো। মাহিও গলে গেলো, ধারাকে জড়িয়ে ধরলো। কতসময় তারা কাঁদলো জানা নেই। একটা সময় মন শান্ত হলো। দুজন চোখ মুছলো। বান্ধবীদের মাঝে হয়তো অভিমান হবার কোনো যুক্তি থাকে না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারেও অভিমান হয়। মাহি নাক টেনে বললো,
“এবার কাহিনী বল”

ধারা সবটুকু খুলে বললো। নানাভাই এর অসুস্থতা, তার জেদ, অনল ধারার বিয়ে এবং সেই বিয়ে লুকানোর কারণ। মাহি শান্ত হয়ে শুনলো। আসলে পরিস্থিতিটাই এমন ছিলো যে ধারা চাইলেও কিছু বললো না। মাহি বিজ্ঞের মতো সব শুনলো, তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“তুই কি ভালোবাসিস অনল ভাই কে”

ধারা চুপ করে রইলো। নিজের মনটাকে অনেক উথাল-পাতাল করলো। মাহি অপেক্ষা করছে উত্তরের। কিছুসময় চুপ করে থেকে ধীর গলায় বললো,
“ভালোবাসা কি আমি জানি না, তবে এটুকু জানি মানুষটাকে কেন্দ্র করেই যেনো আমার সব কিছু। তেরোটা বছর যাকে বিরক্ত লাগলো, দুচোখের বিষ ছিলো। সেই মানুষটাকেই এখন সারাক্ষণ দেখতে ইচ্ছে করে। তার কঠিন মুখশ্রী, গম্ভীর কন্ঠ সব ই আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। অজান্তেই লজ্জা পাই, অজান্তেই হাসি। আবার অজান্তেই অভিমান হয়। প্রণয় আমার কাছে আজও প্রহেলিকা। আমি জানি না প্রণয় কাকে বলে, তবে এটুকু জানি আমি বাজে ভাবে ফেসে গেছি। অনল ভাই যেনো একটা উত্তপ্ত নেশা। আমি প্রতিনিয়ত শুধু ডুবছি আর ডুবছি”

মাহি ঠোঁট চওড়া করে হাসলো। প্রফুল্ল কন্ঠে বললো,
“বান্ধবী তুমি আসলেই ফেঁসে গেছো। যাক খুশি হলাম অবশেষে তোমার রুচি এবং চোখ ভালো হলো। আমি তো ভেবেছি এখনো ওই প্লাবন ভাইতেই আটকে আছিস। তা অনল ভাই জানে ব্যাপারটা!”
“নাহ, উনাকে দেখলেই তো সব ভাষা উড়ে যায়”

মাহি কিছুসময় ভাবলো৷ তারপর বললো,
“তোর জন্য আমি আমার ব্যর্থ হৃদয়ের জ্বালা ভুলতে রাজি। যাহ, দিলাম তোকে অনল ভাই। কিন্তু কথা হচ্ছে, যেহেতু অনল ভাই ও বিয়েতে ভেটু দিয়েছিলো তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে সে কি তোকে ভালোবাসে কিনা! তাই আমার মতো ভুল তুই করবি না। আমাদের আগে জানতে হবে অনল ভাইয়ের মনে স্থান নেওয়া সেই নারীটি কে!”
“কিভাবে জানবো! উনি তো উড়িয়ে দেয় কথা। আর আমি এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেই ক্যালকুলাস ধরিয়ে বলে অংক কর”
“এটাও আমাকে বলতে হবে? উফফ! আমার নাড়িনক্ষত্র যেমন তুমি জানো। তেমন অনল ভাইয়ের নাড়িনক্ষত্র জানে তার বন্ধুরা। অনল ভাইয়ের বন্ধুদের থেকে জানবি তার কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো কি না! সবার রুচি তো তোর মতো না। আমি শিওর অনল ভাই এর পেছনে মানুষ পাগল ছিলো।”

মাহির কথায় ধারা খানিকটা হতাশ হয়ে পড়লো। মরা কন্ঠে বললো,
“যদি সত্যি অন্য কাউকে ভালোবাসে অনল ভাই? কি হবে?”
“তুই আমার বান্ধবী, আর নেগেটিভ কথা বলিস কেনো? বি পজেটিভ। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী— মনে রাখবি, তুই অনল ভাইয়ের বউ। যদি কেউ থেকেও থাকে তাকে খেদিয়ে জায়গা করে নিবি”

মাহির কথায় হেসে দিলো ধারা। মনের ভেতর জমা পাথর আজ নেমে গেছে। মনের যখন কথা খুলে বলে আর মনটা হালকা। হয়তো এজন্য এই মানুষগুলোকে বন্ধু বলে।

কেটে গেছে সপ্তাহ, ধারা বায়না ধরলো বাড়িতে প্লাবণ এবং স্মৃতিকে দাওয়াত করবে। সাথে ইকরাম এবং রবিন ও আসবে। বড়মার সম্মতি পেলেও অনলের প্রশ্নের সম্মুখীন হলো। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“মতলব কি তোর?”
“বারে তাদের বিয়ে খেলে, অথচ একটু দাওয়াত করবে না? ছি ছি কি কিপ্টে বন্ধু”

ধারার যুক্তির কাছে উত্তর পেলো না অনল। কিন্তু তার সন্দেহ হলো বেশ। ধারা সুবিধার নয়। যে মেয়ে হলুদের দিন বরের পেট খারাপ করতে পারে না জানি কি বুদ্ধি আটছে। তাই নিজ দায়িত্বে খাবারের উপর নজর দিলো সে। বলা যায় না! দেখা গেলো তার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের আবার কোনো ষড়যন্ত্র। অবশেষে শুক্রবারে সবাই দুপুরে জমায়াত হলো। আড্ডা, গল্পে মুখরিত বাড়ি। জামাল সাহেব রবিনকে দেখে বললো,
“কি রে, তোমার পাশ হইছে?”

রবিন এই বন্ধুমহলের ফেলু ছাত্র। জামাল সাহেবের কথায় লজ্জা না পেয়ে সরাসরি বললো,
“আপনার নাতি ছিলো, তাই তো এখন খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি”

খাবার পর ছাঁদে চায়ের আড্ডা বসলো। স্মৃতির সাথে বেশ সখ্যতা হলো ধারার। আড্ডা জমলো। ভার্সিটির কুকীর্তি, সুকীর্তি নানা গল্প উঠলো ধোঁয়ার সাথে। এর মাঝে অনলের ফোন বাজলো। কথা বললে সে একটু দূরে গেলো। সেই ফাঁকে প্রশ্ন করলো ধারা,
“আচ্ছা, অনল ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিলো না?”

ধারার প্রশ্নে হেসে দিলো প্লাবণ এবং ইকরাম। হাসি থামিয়ে প্লাবণ বললো,
“কেনো জলধারা, বরের তথ্য নিচ্ছো বুঝি!”
“নিতেই পারি”
“চিন্তা করো না, তোমার বরটি ছিলো কষা মানুষ, নিরস না’রী’বি’দ্বে’ষী। কোনো নারীর গা ঘেষা দূরে থাক কথাও বলতো না। তাই নিশ্চিন্তে থাকো। তার কোনো মেয়ে ঘটিত কেলেঙ্কারি নেই”

ইকরাম ও সহমত দিলো। কিন্তু এর মাঝেই রবিন গম্ভীর মুখে বললো,
“সব রটনা, অনন্যার কথা ভুলে গেলে চলবে। আরে ফিজিক্সের টপার অনন্যা……

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here