#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#২৬তম_পর্ব
এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে নতমস্তক দাঁড়িয়ে রইলো ধারা। অনলের রাগ উগরানোর অপেক্ষা করতে লাগলো সে। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটলো না। বরং অনল তার হাত টেনে বক্ষস্থলে মিশিয়ে নিলো। শক্ত বেষ্টনীতে নিবিড়ভাবে আবদ্ধ করে রাখলো। ললাটে উষ্ণ পরশ দিয়ে বললো,
“তোর কেনো মনে হলো আমি তোর উপর রাগ করবো যেখানে আমি সবটা জানি!”
অনলের কথাটা বুঝতে সময় নিলো ধারার মস্তিষ্ক। মাথা উঁচিয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে চাইলো সে। অনলের শান্ত মুখশ্রীর স্নিগ্ধ মনোমুগ্ধকর হাসি কিছুটা হলেও অবাক করলো ধারাকে। ভেবেছিলো অনল আক্রোশ উগরাবে। সে প্রস্তুত ও ছিলো, দোষ করলে তো শাস্তি মাথা পেতে নিতেই হয়। কিন্তু অনলের মোলায়েম কন্ঠ এবং স্নিগ্ধ স্নেহ তাকে বিস্মিত করলো। অবাক কন্ঠে বললো,
“তুমি জানতে? তুমি রাগ করো নি?”
“না করি নি, না জানা থাকলে হয়তো রাগ করতাম। তুই যখন দীপ্তকে নিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাস, সেই ফাঁকে মাহি আমার রুমে আসে। দীপ্তের সম্পূর্ণ কথাটা বলে আমায়। তখন ই বুঝতে পারি ওর সাথে যাবার কোনো তো কারণ অবশ্যই আছে। কারণ, আমার ধারা না ভেবে কোনো কাজ করে না”
“এতোটা বিশ্বাস করো আমায়?”
“অবিশ্বাস করা উচিত বুঝি?”
অনল হাসলো; অমলিন, স্নিগ্ধ মোলায়েম হাসি। ধারা মাথা ঠেকালো অনলের বলিষ্ট বুকে। দু হাত ধরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। নিস্তব্ধ ঘর, পুরোনো ফ্যানের শব্দ ব্যাতীত কোনো শব্দ নেই। বাহিরেও নিস্তব্ধতা। যেনো সারা শহর ডুবে আছে কোনো ঘোরে। অনল ভাঙ্গলো নিস্তব্ধতা, নরম স্বরে বললো,
“আর কটা দিন, এর পর তোর সেমিস্টার শেষ আর আমার কোর্স ও। ইনশাআল্লাহ এর পর আর লুকোচুরি করতে হবে না। আমি আর তোদের কোর্সও নিবো না। তখন তুই নির্ভয়ে বলতে পারবি, আমি তোর; শুধু তোর”
“সেই দিনটির অপেক্ষা। আমি চাই না, আমার জন্য তোমাকে গায়ে কোনো কলঙ্ক লাগুক”
ধীর কন্ঠে কথাটা বললো ধারা। অনলের হাসি প্রাসারিত হলো। দুহাতে আলতো করে তুলে ধরলো তারা মুখশ্রী। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
“মাঝে মাঝে প্রশ্ন হয়, কেনো এই ছোট মেয়েটির প্রেমে পড়লাম। কেনো এতো মায়ায় জড়ালাম। পরমূহুর্তে না চাইতেই উত্তর পেয়ে যাই। আজ তোর কাছে একটা আবদার করলে রাখবি?”
“বলেই দেখো”
“মনটা বেহায়া হয়ে উঠছে। অনুভূতিগুলো হাহাকার শুরু করেছে। অন্তস্থলে জমিয়ে রাখা এক বিন্দু শীতল প্রণয় এখন প্রহেলিকার রুপ নিয়েছে। অবাধ্য ইচ্ছেরা জোয়ার তুলেছে ধারা। আমার মন কাননের ভেজা প্রণয় গোলাপটি তোমায় দিলাম, তুমি কি ফিরিয়ে দিবে নাকি রেখে দিবে নিভৃত যতনে?”
অনলের ঘোরলাগা কন্ঠের “তুমি”টুকুর মাঝে এতো মাদকতা থাকবে জানা ছিলো না। যেনো সম্মোহনী ডাক। এই প্রথম অনলের কন্ঠে তুমি টুকু শুনলো সে। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো অনলের মুখশ্রীর দিকে। তার নেশাগ্রস্থ চাহনী, অস্থির মুখশ্রীর পানে তাকিয়ে থাকা গেলো না। গলা শুকিয়ে এলো, হৃদস্পন্দন হয়ে উঠলো লাগামহীন। ঠোঁট ভেজালো ধারা। বলতে ইচ্ছে হলো,
” রেখে নিবো যতনে”
কিন্তু মুখ থেকে কথা বের হলো না। শুধু মাথাটা উপর নিচ নামিয়েই মুখ লুকালো অনলের বক্ষস্থলে। অনল নিঃশব্দে হাসলো। বাহিরে আজ পূর্ণচন্দ্র, তবে নিকষকালো মেঘের আড়ালে রুপালী চাঁদটি যেনো ঘা ঢাকা দিয়েছে। তাই স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নাটি শুধু মেঘের মাঝেই আবদ্ধ। অনলের মনে হলো তার একান্ত চন্দ্রটি আজ নিজেকে অনলের মাঝে লুকিয়ে রেখেছে। তাই সেই জ্যোৎস্নাটিও তার মাঝে আবদ্ধ। নিষিদ্ধ ইচ্ছের জোয়ারকে আজ বাঁধা দিলো না অনল। কোলে তুলে নিলো নিজের শশীকে। তারপর সে প্রস্থান করলো বিছানার দিকে।
নিগূঢ় রাত, নিস্তব্ধতায় ডুবে আছে শীতল ঘরটি। ফ্যানটির ক্যাচর ক্যাচর শব্দ কিছুটা ক্ষীণ। মাঝে কিছু তপ্ত নিঃশ্বাস, কিছু নিষিদ্ধ বাসনা এবং এক বিন্ধু স্নিগ্ধ প্রণয়। একে অপরের মাঝে লেপ্টে আছে মানব মানবী। নিজের ছোট বউটিকে পরম স্নেহে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখে অনল। ক্লান্ত ধারা ঘুমেমগ্ন। কিন্তু অনলের চোখে ঘুম নেই। সে চিন্তিত। চিন্তিত দুজন মানুষের জন্য, দীপ্ত এবং সেলিম সাহেব। এই দুজনের উদ্দেশ্য অজানা। ভোরের আলো ফুটতে বহু দেরি। কেবল রাতের শেষ প্রহর। অনল ও ক্লান্ত। ধারাকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরলো সে। শুভ্র কপালে উষ্ণ পরশ ছুঁয়ে বললো,
“তুই চিন্তা করিস না, যে যাই করুক আমি তোকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না”
এরমাঝেই ঈষৎ কেঁপে উঠলো ধারা। অনল বুঝলো তার বউ এর ঠান্ডা লাগছে। কাঁথাটা টেনে দিলো সে৷ তারপর ঘুমে ক্লান্ত চোখজোঁড়া বুঝলো। সাথে সাথেই রাজ্যের ঘুম তাকে ঘিরে ধরলো।
*******
সকাল কো’টা বাজে জানা নেই। মোটা পর্দায় ঘেরা ঘরটিতে এখনো সূর্যালোক ঢুকে পারে নি। ফলে ঘরটি এখনো আঁধারে ঘিরে আছে। ধারার চোখ খুললো। পিটপিট করে চাইলো আশেপাশে। সর্বপ্রথম যা নজরে পড়লো তা হলো অনলের ঘুমন্ত মুখশ্রী। শান্ত, স্নিগ্ধ, শীতল মুখশ্রী। পরমূহুর্তেই গতরাতের কথা স্মরণ হলো। তীব্র লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠলো তার গাল। তবুও ঠোঁটের হাসি টুকু যেনো এখনো প্রাণবন্ত। সে উঠে ওয়াশরুমে গেলো। মিনিট পনেরো বাদে যখন বের হলো তখন অনল গভীর ঘুমে। হুট করেই মাথায় চাপলো দুষ্ট বুদ্ধি। ধীর পায়ে তার পাশে বসলো। গামছায় বাধা ভেজা চুলগুলো ঝাড়া দিলো ঠিক অনলের মুখের উপর। পানির ছিটা মুখে এসে পড়তেই ঘুমটা নড়বড়ে হলো অনলের। ভ্রু কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করলো সে। কিন্তু চোখ খুললো না। ধারা মিটিমিটি হেসে পুনরায় একই কাজ করলো। এবার অনল চোখ খুলে তাকালো। ধারা উঠে যেতে নিলেই খপ করে হাতটা ধরে নিলো অনল। হ্যাচকা টানে ধারাকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শান্ত কন্ঠে বললো,
“ঘুমন্ত আমাকে জ্বালিয়ে তো বিশাল এভারেস্ট জয় করেছিলি, তা থামলি কেনো?”
“ছাড়ো, লাগছে”
“ছাড়বো কেনো? আমিও দেখি আমার বউটির পেটে কত দুষ্টুবুদ্ধি”
বলেই ধারা কোমড়ের হালকা চাপ দিলো অনল। ধারা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো, তবে ব্যর্থ হলো। তখন অসহায়ের ন্যায় বললো,
“ভুল হয়েছে, আর করবো না”
“তা বললে তো হচ্ছে না শাস্তি তো পাওনা”
“কি শাস্তি?”
“বেশি কিছু না, শুধু একটা শীতল চুমু”
বলেই এগিয়ে আসতে নিলেই ধারা তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে। এক মূহুর্ত ঘরে থাকা ভয়ংকর তাই দেরি না করেই ঘর থেকে পালিয়ে যায় সে। অনল মুখে বাঁকা হাসি টেনে বলে,
“শোধ তো আমি নিবোই”
খাবার টেবিলে পৌছাতেই জম্পেস খবর পাওয়া গেলো। যা অনলকে বেশ অবাক করলো। দীপ্ত সকাল হতেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। লাগেজ তার এমনিতেও ছিলো না। ফলে সকাল হতেই নিজের সেই প্রথম দিনের শার্ট এবং প্যান্টটি পড়ে বেশ ফিটবাবুর মতো সে তৈরি হয়ে গেলো। অনল ধারা ব্যতীত সকলকেই বসার ঘরেই পেলো সে। তাদের কাছে বিদায় নিয়ে বললো,
“সকালে বাবাকে ফোন করেছিলাম, উনি আমার সব জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছেন তার এসিস্ট্যান্টকে দিয়ে। সুতরাং এ বাড়িতে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। ভাগ্যে থাকলে আমাদের আবার দেখা হবে”
ছেলেটি নাকি খায় ও নি। ভদ্রতার খাতিরে সুভাসিনী বলেছিলো,
“তুমি একদিন থেকে যাও, কাল যা হলো। তোমার মাজার ব্যাথা তো সাড়ে নি”
প্রত্যুত্তরে হেসে বললো,
“আপনাদের আপ্প্যায়নে আমি সত্যি স্যাটিসফাইড, অজানা ছেলের প্রতি এতো ভালোবাসা কেউ দেখায় না। আর মাজার ব্যাথা এখন নেই। রাতে ঔষধ খেয়েছিলাম। আমাকে নিয়ে ভাববেন না৷ আসি আমি”
বলেই দীপ্ত চলে গেলো। ছেলেটি ঝড়ের মতো এসেছিলো, আবার দক্ষিণা বাতাসের মতোই চলে গেলো। এতে অবশ্য জামাল সাহেব বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ছেলেটি সেলিমের পরিচিত না হলে তার সাথে ভালো খাতির ই হতো তার। কিন্তু আফসোস সে সেলিম সাহেবের পরিচিত। দীপ্তের যাওয়াতে সবচেয়ে বেশি দুঃখী মনে হলো জমজদের। সে দ’স্যিরা শান্ত থাকে না তাদের দেখা গেলো পা ছড়িয়ে বসার ঘরের কার্পেটের উপর বসে থাকতে।মুখজোড়া লম্বাটে হয়ে আছে। অনল তাদের মুখ দেখেই বললো,
“কি রে! এমন বাংলার পাঁচের মতো মুখ ঝুলিয়ে আছিস কেনো?”
উত্তরে এশা উদাস কন্ঠে বললো,
“দীপ্ত ভাইয়ের স্বাগতমে কতোকিছু ভেবেছিলাম, কিন্তু উনি বিনা নোটিসেই চলে গেলেন। কষ্ট লাগবে না?”
“তুমি বুঝবে না অনল ভাই, পাষাণরা বুঝে না। মানুষটাকে তো ভালো করে খাতির ই করা হলো না। ধ্যাত, এমন ভালো মানুষ কি পাওয়া যায়?”
এশার কথার সাথে তাল মিলিয়ে আশা বলে উঠে। বোনেদের এমন কথায় রীতিমতো অবাক অনল এবং ধারা। অনল ভ্রু কুচকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো জমজদের দিকে। তাদের মুখ এখনো তেমন ই। তারা যেনো সত্যি মর্মাহত। তাদের দুঃখ যেনো অতুলনীয়। থেকে থেকে তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। দীপ্তের পালিয়ে যাওয়ার হরেক কারণের মাঝে একটি যে জমজরা ছিলো সেটা বুঝতে ভুল হলো না অনলের। তারা যে বেচারার স্বাগতমে আর কতো কি রেখেছিলো শুধু উপর ওয়ালাই জানেন। ভাগ্যিস পালিয়ে গেছে সে। তবে দীপ্তের এমন ভাবে চলে যাওয়াটা বেশ অবাক ই করলো ধারা এবং অনলকে। অনলের হুমকিতে চলে গেছে এমনটা হবার সম্ভাবনা কম। তবে কি তার স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গিয়েছে! অনল বেশি মাথা ঘামালো না, লোকটি গিয়েছে সেটা স্বস্তির ব্যাপার। কারণ ধারাকে হারাবার ভয়টা এখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীনতর হয়ে যাচ্ছে। অনলের মুখে একচিলতে হাসি দেখে ধারা শুধালো,
“কি হয়েছে? হাসো কেনো?”
“কিছু না, এমনি”
*****
অবশেষে এক এক করে শেষ হলো ধারার পরীক্ষা, বিশদিনের টানা পরিশ্রমের পর শেষ হলো পাঁচটি পরীক্ষা। আজ শেষ পরীক্ষা। এই পরীক্ষার খ’ড়া’র থেকে মুক্তি পাবার আনন্দ ই আলাদা। এখন তারা আর ফার্স্ট ইয়ারে নেই। হয়ে গিয়েছে সিনিয়র। অবশ্য জুনিয়রদের ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে। তবুও বেশ দাপটে ভাব চলে এসেছে। বন্ধুমহলে বেশ উৎসাহ। ভেবেছিলো অনল স্যার তাদের নাকানি চুবানি খাওয়াবে কিন্তু তেমন কিছু হয় নি। লেকচারের মধ্যেই তার প্রশ্ন হয়েছে। অন্য সকল কোর্স ও মন্দ যায় নি। নীরবের পাশাপাশি সবার পরীক্ষাই ভালো গিয়েছে। তবে বেশি ভালো গিয়েছে ধারার। প্রিন্স উইলিয়ামের কড়া শাসনের মাঝে ধারার পরীক্ষা খারাপ হবার কারণ নেই। ধারাও অনেক কষ্ট করেছিলো যেনো সিজিটা ৩.২৫ এর বেশি হয়। তাহলে প্রিন্স উইলিয়ামকে যেয়ে বলবে,
“চলো, এবার ঘুরতে নিয়ে চলো”
ব্যাপারটা ভাবতেই মন খুশি হয়ে উঠলো ধারার। অভীক তো পারলে নীরবকে মাথায় তুলে নেয়। আবেগী স্বরে বললো,
“দোস্ত তোর জন্য এ যাত্রায় আমি পার হয়ে যামু। তোরে তো একুশটা তোপের সালামি দিতে মন চাচ্ছে। বল দোস্ত কি চাই তোর?”
“কিছু না তুই এবার নিজের বাড়ি যায়ে আমাকে স্বাধীন কর”
হতাশ কন্ঠে বললো নীরব। বলবে নাই বা কেনো। এই পরীক্ষার উছিলায় গত বিশদিন যাবৎ অভীক তার মেসেই পড়ে রয়েছে। খাচ্ছে, দাচ্ছে, ঘুমোচ্ছে। ছোট খাটে বিশাল দেহী মানুষটা হাত পা ছুড়ে যখন শোয়, তখন জীর্ণকায় নীরবকে বাধ্য হয়ে মাটিতে ঘুমাতে হয়। শুধু তাই নয়, রীতিমতো নীরবের পরিপাটি ঘরটিকে একটা গোয়াল ঘর বানিয়ে রেখেছে নিজের ময়লা কাপড়ে। উপরন্তু রাত বিরাতে ভরপেট খেয়ে বায়ুদূষণের কথা নাই বা তুললো। এয়ার ফ্রেশনার কিনতে কিনতে নীরব ফকির প্রায়। বন্ধু বিধায় লা’থি মেরে বের করতে পারলো না নীরব। ফলে এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার আনন্দের থেকে অভীকের অত্যাচারের ইতি হবার আনন্দটাই নীরবের মাঝে বেশি। বন্ধুমহলের সকলের মাঝে উৎসাহ দেখা গেলেও দিগন্তকে দেখালো শান্ত। কেউ ব্যাপারটা আমলে না তুললেও মাহি ঠিক ই তুললো। হুট করেই বলে উঠলো,
“কিরে বিবিসি, তোর মুখ শুকনো কেনো? কোনো নতুন খবর টবর নেই নাকি?”
মাহির হাসির ছলে বলা কথাটা দিগন্ত যে অন্যভাবে নিবে জানা ছিলো না কারোর ই। সে বিচিত্রভাবে হাসলো। তারপর নিস্প্রভ কন্ঠে বললো,
“খবর তো অনেক ই আছে। কিছু খবর তো এমন যা মাটি কাঁপিয়ে দিবে। কিন্তু তোরা সেই খবরটা শুনতে চাস কি না সেটা হচ্ছে ফ্যাক্ট”
“এভাবে বলছিস কেনো? তোর মন খারাপ বিধায় আমি কথাটা তুললাম”
“ওহ! তাই বুঝি”
টিটকারির স্বরে বললো দিগন্ত। ধারার বিয়ের খবরটি শুনবার পর থেকেই দিগন্তের মাঝে একটা অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষয় করা গেছে। সে তুলনামূলক শান্ত এবং মনমরা হয়ে গেছে। প্রাণঞ্জ্বল, চো’গ’ল’খো’র দিগন্তটি যেনো কোথাও মিলিয়ে গেছে। দীপ্ত কথাটি ফাঁস করার পরদিন ধারা সকলকে খুলে বললো ঘটনা। হুট করে বিয়েটা নিজের ই মানতে আপত্তি হচ্ছিলো তাই কাউকেই জানায় নি সে। ধারার স্বীকারোক্তিতে সকলে মেনেও নিলো। ধারাকে বরের নাম শুধাতেই সে বললো,
“সময় হলে ঠিক পরিচয় করিয়ে দিবো। একটু সময় দে”
অভীক বা নীরব ধারার সিদ্ধান্তে ভেটো দিলো না। কিন্তু এর মাঝে দিগন্তকে দেখা যায় মৌন। তার যেনো কোনো কিছুতেই কোনো গুরুত্ব নেই। ব্যাপারটা নীরব ঠিক ই বুঝতে পারে। কারণ দিগন্তের মনের ব্যাপারটা তার অজানা ছিলো না। দিগন্তকে বোঝাবার চেষ্টাও করে সে। দিগন্ত তখনও থাকে শান্ত। তবে আজ তার কথার সুর যেনো অন্যরকম। ফলে মাহির সাধারণ কথায় তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। অভীক খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলে,
“আচ্ছা, গোলগোল না ঘুরিয়ে ঝেড়ে কাশ। তোর ঝামেলাটা কোথায় হচ্ছে?”
“আমার কি ঝামেলা হবে! আমি তো মাহির কথার উত্তর দিয়েছি। কি মাহি! আমি কি বলবো খবরটা? অবশ্য ধারার আপত্তি না থাকলে বলতেই পারি”
দিগন্তের কথার ভোল সন্দীহান ঠেকলো। ধারাকে ঠেস মেরে যখন কথাটা বললো, তখন ই বন্ধুমহলের উত্তেজনা বাড়লো। ধারার ভ্রু কুচকে এলো, শান্ত কন্ঠে বললো,
“দিগন্ত তোর এই কথাগুলো সত্যি আমরা বুঝছি না। যা বলার বলেই ফেল না, অহেতুক কথা প্যাচাচ্ছিস কেনো?”
“আমি প্যাচাচ্ছি নাকি তুই রীতিমতো ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস! তোর মিস্ট্রি বরটি যে অনল স্যার সেটা বলতে কিসের আপত্তি বলতো!…………….
চলবে
(আগামীকাল গল্প পাবেন না, পরীক্ষা থাকায় লেখার সময় পাবো না। ইনশাআল্লাহ পরশুদিন যথাসময়ে গল্পটি পাবেন)
মুশফিকা রহমান মৈথি