#প্রণয়_প্রহেলিকা
#৩য়_পর্ব
নতুন স্যার প্রসন্ন চিত্তে বললেন,
“গুড মর্নিং”
কিন্তু গুড মর্নিংটি ধারার চিন্তার জোয়ারে আঘাত হানলো। বাস্তবে ফিরতেই দারুণ বিস্ময় তাকে ঘিরে ধরলো। যথারীতি তার মাথায় বজ্রপাত হলো। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকলো সামনের মানুষটির দিকে। অস্পষ্ট স্বরে মুখ থেকে অজান্তেই বের হলো,
“অনল ভাই”
ধারার মস্তিষ্ক অকেজো লাগছে। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট পরিহিত ফিটফাট ব্যাক্তিটি হোয়াইট বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার সাদামাটা মুখশ্রীতে স্মিত হাসি। হাতে মার্কার। মোটা ক্যালকুলাসের বই টি খুলে অংক তুলতে লাগলো। এদিকে ধারার মস্তিষ্ক শূন্য, তার স্নায়ুকোষে রেষারেষি চলছে। অনল নামক ব্যাক্তিটি এখানে! শুধু এখানে নয় সে তার কোর্স টিচার। ব্যাপারখানা ভাবতেই মাথাটা ঘুরে উঠলো। অজস্র চিন্তা মস্তিষ্ক হানা দিলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগল। ধারার মনে হলো সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। অনল তার বহুদিনের প্রাইভেট চাকরিটি ছেড়ে একটা নতুন চাকরি নিয়েছে; ব্যাপারটা ধারার অবগত ছিলো। কারণ যেদিন অনলের চাকরির এপয়েন্টমেন্ট লেটার এসেছিলো সে পুরো পরিবারকে জম্পেশ বিরিয়ানি খাইয়েছিলো। মহা আনন্দিত অনলকে সেদিন স্বাভাবিক মানুষের ন্যায় হাসতেও দেখেছিলো সে। অবশ্য হবে নাই বা কেনো! বড় মা বলেছিলো, এই চাকরিটি নাকি অনলের স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু এই চাকরি যে শিক্ষকতা এবং তাও তার ভার্সিটির; সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি ধারার। বাড়িতে একই ঘরে লোকটির সাথে থাকাটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। হাড় মাং’স জ্বা’লি’য়ে দিচ্ছে তথাকথিত প্রিন্স উইলিয়াম। গতরাতের কথাই ধরা যাক, হিংসুটে লোকটি ঘরের লাইট জ্বালিয়ে রেখেছিলো। এদিকে লাইটের তীব্র আলোটা পড়ছিলো সরাসরি ধারার চোখে। ধারা যখন বিনয়ী স্বরে বলেছিলো,
“অনল ভাই, লাইট অফ করো। আমি ঘুমাবো”
অনল তখন ল্যাপটপে কাজ করছিলো। চোখ স্থির রেখেই ঠোঁট বাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো সে। যার অর্থ “আসো, এবার খেলা হবে”। অনলের নির্বিকার মুখশ্রীর এই মিছকে হাসিটি ধারার অতিপরিচিত। ধারা বুঝলো সে অসহায়। এই মানুষটি হাতে না মে’রে তাকে ভাতে মা’র’বে। কাজ করতে করতেই অনল ঠেস মারা স্বরে বললো,
“আমি কাজ করছি। আর আমার ঘরের লাইট সারা রাত অন থাকে”
ধারা তীর্যক চাহনীতে তাকিয়ে রইলো নিষ্ঠুর মানুষটির দিকে। প্রচন্ড ক্রোধ তখন ভর করলো সমস্ত শরীরে। ক্রোধের অগ্নিতে যেনো লোমকুপ অবধি জ্বলছিলো। কিন্তু সে নিরুপায়, কারণ এই ঘরটি সত্যি ই অনলের। তার রাজত্ব এখানে। লোকটি এতোটা স্বার্থপর কেনো! প্রশ্নের উত্তরটি সৃষ্টির উষালগ্ন থেকে খুঁজছে ধারা। গতরাতে ঘুম না হবার আরোও একটি মুখ্যম কারণ এই ক্রোধও। বাড়িতে অশান্তির পর ভেবেছিলো যাক ভার্সিটির কয়েক ঘন্টা জীবন শান্তিময় হবে৷ কিন্তু সেখানেও এই মানুষটির আগমণ৷ অনল মৃদু হেসে পড়াতে ব্যাস্ত, এদিকে ধারার মন পড়াতে নেই। সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনলের দিকে। অনল তাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। যেনো ধারার অস্তিত্ব নেই। এর মাঝেই মাহি ধাক্কা দিলো তাকে। চিন্তার প্রহরে বাধা পড়লো। পাশে ফিরতেই সে ফিসফিস করে বললো,
“অনল ভাই এখানে চাকরি নিয়েছে বলিস নি কেনো? আগে জানলে আমি সেজেগুজে আসতাম”
“হ্যা, প্রিন্স উইলিয়াম আমার অনুমতির জন্য যেনো বসে ছিলো। এতো বড় ধাক্কা খাবো জানলে আজ ক্লাসেই আসতাম না”
“আচ্ছা, তোর সমস্যা কি বলতো? অনল ভাই এর কথা আসলেই তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠিস কেনো?”
“কারণ তোর প্রাণপ্রিয় অনল ভাই এর জন্য আমার জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আর তোকেও বলিহারি, আটাশবার প্রেমপত্র দিয়ে ছ্যা’কা খেয়েছিস। তাও কিভাবে ভাই এখনো লেগেই আছিস? আমি হলে তো কচু গাছে গ’লা দ’ড়ি দিতাম অপমানে। ন্যা’ড়া একবার বেলতলায় যায়৷ আমার তো মনে হচ্ছে তুই বেলতলার বাসিন্দা, তাও পারমানেন্ট।”
“ও তুই বুঝবি না। শেক্সপিয়ার বলেছেন ফেইলিউর ইজ দ্যা কি অফ সাক্সসেস”
“তোকে পার্সোনালি বলেছে? আর এটা শেক্সপিয়ার না রবার্ট ব্রুস বলেছে”
“হলো, কেউ তো বলেছে। একবার না পারিলে দেখো শতবার। মাত্র তো উনত্রিশ বার দেখেছি। এখনো শ হতে বহুদেরি”
“উনত্রিশ বার মানে?”
মাহি ধারার প্রত্যুত্তোরে কোনো কথা বললো না। বরং শুভ্র দাঁতগুলো বের করে হাসি মুখে ধারার দিকে তাকালো। যার অর্থ “আজ তুমি আবারো আমার প্রেমকবুতর হবে”। ধারার অস্থির কন্ঠে বললো,
” না, আলবত না”
“প্লিজ”
“পারবো না আমি”
“তপনের সামুচা খাওয়াবো, সাথে তরমুজের ঠান্ডা শরবত”
“না, নো, নেভার, কাভিনেহী”
“প্লিজ দোস্ত, বান্ধবীর জন্য এতোটুকু করতে পারবি না। ভাব, একবার তোর ভাবি হয়ে গেলে জীবন জিঙ্গালালা। প্লিজ, আমি তোর এসাইনমেন্ট ও করে দিবো”
অন্য সময় হলে এসাইনমেন্টের লোভটি হয়তো ধারার নৈতিকতাকে নাড়িয়ে দিতো। চট করে নিয়ে নিতো মাহির চিঠি। শত রিস্ক নিয়ে হয়েও বা’ঘে’র ডে’রায় ফেলে আসতো। এরপর প্রিন্স উইলিয়াম বুঝে বেড়াতো। কিন্তু আজ কেনো যেনো সাহস হচ্ছে না, ইচ্ছেটাও নেই। সাহস না হবার কারণ ধারা এখন অনলের ওই ডে’রাতেই থাকে আর ইচ্ছে না হবার কারণটা ধারার নিজেও জানা নেই। গাল ফুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। অধৈর্য হয়ে বলে,
“দেখ মাহি, আমার সমস্যা চিঠি পৌছে দেওয়ায় না। সমস্যা খ’চ্চ’র মানুষটার ঠেস দেওয়া কথা শোনায়। ও ঠিক আমার সামনে আসবে, খচাৎ করে তোরে চিঠি ছিড়ে ফেলে দিবে। বান্ধবী হয়ে এটা কার দেখতে ভালো লাগে। এর চেয়ে বরং সুদর্শন পুরুষকেই যেহেতু মন দিবি, তাহলে দিগন্ত, অভীক, নীরব এদের দেখ৷ হ্যা হয়তো প্রিন্স উইলিয়াম না কিন্তু মনের দিক থেকে তারাও রাজা সিরাজ-উদ-দৌলা”
মাহির মনটা মিয়ে গেলো খানিকটা। সেই কিশোরী কাল থেকে একজন পুরুষের প্রতি ই সে আকর্ষিত হয়েছে। এটাকে কিশোরী মনের আবেগ বলে নাকি ভালোবাসা তার জানা নেই। তাই তো এতো প্রত্যাখ্যানের পর আবারো চিঠি পাঠাবার সাহস করছে সে। মাহি আবেগী কন্ঠে বললো,
“এভাবে হয় না ধারা, ওরা আমার বন্ধু। কিন্তু অনল ভাই ক্রাস। এই অনুভূতিটা অব্যক্ত। আমি বোঝাতে পারবো না। উনাকে দেখলে আমার সবকিছু কেমন যেনো রঙ্গিন লাগে। উনি আমার সাথে কালেভদ্রে যদি কথা বলে আমার লজ্জায় মিশে যেতে মন চায়। কথাও জড়িয়ে যায়। এই অনুভূতিটাকে বোঝাতে পারবো না। যেদিন তোর এমন টা অনুভূত হবে, সেদিন বুঝবি আমি কেনো বেলতলায় পারমানেন্ট বাসিন্দা”
ধারা চুপ করে গেলো। তর্কে হেরে গেছে সে। কারণ এই অনুভূতিটার পরিচয় সে পেয়েছে। তার মনের আঙ্গিনাতেও সুপ্ত ভালোলাগার বীজ যে সেও বুনে রেখেছে। এই ভয়টা তার ভেতরটাকে বারবার উথাল-পাতাল করে দিচ্ছে। মানুষটার সামনে লেগে কি শক্ত থাকতে পারবে নাকি তীব্র বেদনায় আচ্ছাদিত হবে তার সমস্ত হৃদয়। ভাবতেই পুনরায় মস্তিষ্ক যেনো দূর্বল হয়ে উঠলো। বিষন্নতা গ’লা চে’পে ধরলো। অবুঝ মন বুঝলো মাহির মনোস্থিতি। তাই হাত বাড়ালো চিঠি নেবার জন্য। কিন্তু বিধিবাম, তখন কঠিন কন্ঠ কর্ণপাত হলো,
“যদি ক্লাসে কথা বলতেই আসা হয়, তবে আমার ক্লাসে আসার প্রয়োজন নেই। আমি দুজন নিয়েও ক্লাস করতে রাজি। যদি তারা এটেনটিভ হয়”
কথাটা সে সরাসরি ধারার দিকে তাকিয়েই বললো। ফলে সারাক্লাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলো ধারা। পেছন বেঞ্চে বসে থাকা অভীক কলম দিয়ে খোঁচালো তাকে। ফলে ধারার স্বম্বিত ফিরলো। সামনে থাকাতেই মুখোমুখি হলো অনলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির, নির্বিকার শক্ত মুখশ্রীর। তাড়াতাড়ি মাথা নামিয়ে ফেললো। ভেবেছিলো হয়তো এখানেই ক্ষান্ত হবে অনল। কিন্তু না, সে রীতিমতো বললো,
“তুমি, সেকেন্ড কলাম, ফোর্থ রো, সেকেন্ড ওয়ান। দাঁড়াও। এতোক্ষণ যা বুঝিয়েছি বুঝেছো?”
ধারা বুঝলো এটা প্রিন্স উইলিয়ামের অপমান করার ফন্দি। সারা ক্লাসের নজর তার দিকে। ছোটবেলায় ষাট সত্তর জনের ক্লাসে ভু’তের মতো দাঁড়িয়ে থাকাটা ততোটা গুরুতর ছিলো না যতটা না ভার্সিটি মাত্র পয়তাল্লিশ জন মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা। সকলের তীক্ষ্ণ, বিস্মিত দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার মতো বিব্রতকর পরিস্থিতি যেনো দ্বিতীয়টি নেই। ধারা কোনো মতে মাথা দুলিয়ে বললো,
“জ্বী”
“তাহলে পরের ইকোয়েশনটি কি হবে?”
অনলের নির্লিপ্ত প্রশ্নের উত্তর নেই ধারার কাছে। কারণ সে তার একটা কথাও শুনে নি, বোঝা তো দূরের কথা। ধারাকে মাথানিচু করে থাকতে দেখে অনল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কপাল ঘষলো। তারপর শান্ত কন্ঠে বললো,
“দেখো, তোমাদের পানিশমেন্ট দেবার বয়স নেই। যথেষ্ট বড় তোমরা, ভার্সিটিতে পড়ো। অনেকে এখানে এন.আইডি. ধারী। সুতরাং তোমাদের বোকাঝকা করা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। অন্য স্যাররা কেমন আমি জানি না, তবে আমার ক্লাস মাছের বাজার হবে এটা আমার পছন্দ নয়। এখানে কথা হবে ক্যালকুলাস বিষয়ক। আজ প্রথম দিন তাই কিছু বলবো না। তবে এর পর থেকে কথা বলার ইচ্ছে হলে সোজা বাহিরে চলে যাবে। আমি তোমাদের উপস্থিতির মার্ক কাটবো না। তবে যদি আমি দেখি আমাকে ডিসটার্ব করছো। তবে পরীক্ষায় বসা মুশকিল হয়ে যাবে”
নীরব ক্লাস। সকলের মুখে আতঙ্ক। সুন্দর মানুষের বাক্য এতোটা কঠোর হতে পারে সেটা যেনো অবিশ্বাস্য। এদিকে ধারা এখনো নতমস্তক দাঁড়িয়ে আছে। রাগ, ক্ষোভ, অপমান সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে যেনো একাকার হয়ে গেছে। নোনাজল রুপে চোখে বিদ্রোহ করছে। এখন ই যেনো তারা মুক্তি পাবে। অনল ভাই এমন টা না করলেও পারতেন! সে ইচ্ছে করে এমনটা করেছে, যেনো শোধ তুলতে পারে৷ অনল তাকে বসতে বললে সে বসে যায়। কিন্তু সারাটা ক্লাস নীরব ই থাকে। মাহিও গুটিয়ে যায়। বান্ধবীকে চিঠি দেবার জিদ ছেড়ে দেয়।
ক্লাস শেষে ধারাকে পাওয়া যায় না। নীরব, দিগন্ত, অভীক মাহিকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু মাহি উত্তর দিতে পারে না। ক্লাস শেষ হতেই ধারা হনহন করে বেড়য়ে যায়। তার পিছু নেবার চেষ্টা করলে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। অতিপ্রিয় বান্ধবী হবার কারণে ধারার কড়া নজরের অর্থ সে বুঝে যায়। ফলে বন্ধুমহল বিনা ধারায় ক্যাফেটেরিয়ায় যায়।
ক্লাস করে এসে বইটা অবহেলায় টেবিলের উপর রাখে অনল। পঞ্চাশ মিনিট টানা কথা বলার অভ্যাস নেই। বলে টেবিলের উপর রাখা বোতল থেকে এক নিঃশ্বাসে পানি পান করে সে। এক ঘন্টা পর আরো একটা ক্লাস আছে। মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে তবুও যেনো অসহনীয় উত্তাপে ঝা ঝা করছে শরীর। শার্টের হাতাটা গুটিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। তখন পিয়ন হাসেম মামা আসেন। বিনয়ী স্বরে বলে,
“স্যার কি কিছু লাগবে?”
“ঠান্ডা কিছু হবে?”
“ট্যাং দেই?”
“দিন”
হাসেম মামা চলে যাবার পর ডান বাহু চোখের উপর দিয়ে বসে থাকে। একটু শান্তি লাগছে। পরমূহুর্তেই ক্লাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা স্মরণে আসে। ধারার মূর্ছা যাওয়া ভারাক্রান্ত মুখশ্রী ভাসছে। এতোটা কড়া না হলেও হতো। কিন্তু মেয়েটা এতো কথা বলে। প্রথমে দু-তিন বার উপেক্ষা করলেও শেষমেশ ক্রোধ ধরে রাখতে পারলো না। আজ বুঝেছে তার রেজাল্ট কেনো বাজে! ক্লাসে খেয়াল না থাকলে কি রেজাল্ট ভালো হবে! এর মাঝেই সজোরে দরজা খোলার শব্দ আসে। অনল ভাবে হাসেম মামা হয়তো এসেছেন। কিন্তু ভুল, এতো ধারা। রক্তিম চোখে, রাগান্বিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনল সোজা হয়ে বসলো। হালকা কেশে, স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“কি চাই?”
উত্তরটা পাওয়া হলো না। বরং তড়িৎ বেগে তার নিকট ছুটে এলো ধারা। শার্টের কলার চেপে ধরে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“প্রশ্নটা আমারো কি চাই? বাড়িতে জ্বা’লি’য়ে শান্তি হচ্ছে না? এখানেও আমাকে জ্বা’লা’তে হবে? শোধ তুলছিলে তাই না? ক্লাসে আমাকে অপমান করে খুব মজা পেয়েছো? শোনো অনলভাই, এক মাঘে শীত যায় না। এখানে আমি তোমার ছাত্রী, কিন্তু বাসায় আমি তোমার বউ। তোমাকে কিভাবে তুর্কীনাচন নাচাই সেটা দেখো। আমার নাম ও ধারা, মনে রেখো”
অনল বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। “বউ” শব্দটি তার মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে পৌছাতে সময় নিলো। তার মুখে কোনো কথা নেই। সব কথা যেনো বাস্পায়িত হয়ে গেছে। চোখগুলো বিস্ফোরিত। অপলক দৃষ্টিতে শুধু রুদ্ররুপী ধারাকে দেখছে সে। ধারা বুঝলো না, সে কি ভয় পেয়েছে নাকি অতি শকে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তবে প্রিন্স উইলিয়ামকে এভাবে থামিয়ে দিতে পেরে নিজেকে বাহবা দিতে ইচ্ছে হলো তার। এক প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো যেনো। এটাকেই হয়তো আত্মশান্তি বলে। কিন্তু এই খুশি টেকসই হলো না। যখন একটা মৃদু স্বর কানে এলো,
“উপস, ভুল সময়ে চলে এলাম নাকি?”
ধারার প্রশান্তির ঢেউ তিক্ত বিষাদে পরিণত হলো। যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেইটাই হলো……..
চলবে
[গতকাল দেই নি, তাই বড় করে দিয়েছি। আশাকরি ভালো লাগবে]
মুশফিকা রহমান মৈথি