প্রিয়োসিনী পর্ব-৩২

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৩২
তিশার চিৎকারে তিয়াশ ছুটে এসে দেখে
তিশা মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।তিশা কলিং বেলের শব্দে, নিবিড় ভেবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে গেইট খোলার জন্য।গোটা একটা দিন নিবিড়ের সাথে তার কথা হয় নি।ছেলেটা বড্ড ব্যস্ত ছিলো।সেই সকালে বেড়িয়েছে সে।তিশার মনটা বড্ড উতলা হয়ে উঠেছিলো নিবিড়ের জন্য।

একরকম দ্রুত পায়ে আসতে থাকে তিশা।মেঝেতে পানি পড়ে ছিলো সেই পানিতে স্লিপ করে আছাড় খায় সে।নিবিড় বলে চেচিঁয়ে উঠে।যন্ত্রনায় ডুকরে উঠতেই তিয়াশে কানে আসে। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসে বাহিরে।বোনকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে বুকটা কেঁপে উঠে তার।নোহাও পিছু পিছু আসে তার।তিয়াশ তিশাকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

দরজায় তখনও কলিং বেল বেজেই চলছিলো।নোহা দরজা খুলতেই দেখে শ্বশুর শ্বাশুড়ি দাঁড়ানো। তিশা নিবিড়কে আশা করেছিলো,নিবিড়ের জায়গায় বাবা মাকে দেখে আরো জোরে কেঁদে উঠে।
বোনকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে
কিছুক্ষণের জন্য তিয়াশের মাথা পুরোটাই হ্যাং হয়ে যায়।পরিবারের সবাই তিশাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
তিশার পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে তিয়াশ আর তিয়াশের মা তিশাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।নোহাও পিছু পিছু ছুট লাগায়….

তিশার ইম্যারজেন্সি সিজার করাতে হবে।ওয়াটার ব্রেক করেছে।নোহা তখন থেকে নিবিড়কে কল করেই যাচ্ছে।হয় সে কেটে দিচ্ছে…নয় কল ধরছে না।
পর পর কয়েকবার কল করার পর অবশেষে নিবিড় কল রিসিভ করলে নোহা চেঁচিয়ে উঠে,
-ভাইয়া আপনার সমস্যা কি?কল ধরেন না কেন?কতোবার কল দিতেছি দেখেন না কেন..
নোহার এমন ব্যবহারে নিবিড় একটু বিরক্ত হয়।তখন সে সিকদার বাড়ির ড্রইং রুমে দাঁড়ানো। চোখের সামনে সাগর বাঁধা।তার উপর নোহার চিৎকারে গা জ্বলে গেলো,
-তোমার সাহস তো কম না…আমার সাথে…..
-ভাইয়া তিশা আপু পড়ে গেছে।আমরা হাসপাতালে প্লিজ চলে আসুন আপু আপনাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে গেছে….।

নিবিড় কথাটা শোনা মাত্র থমকে যায়।পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে যায়।আজকে তার তিশার কাছে যাওয়ার কথা ছিলো।অফিসের কাজ শেষ করে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হতে গেলেই সাগর ফোন দেয়।ইসরাক বোনকে নিয়ে গেছে শুনে মাথাটা ধপ করে গরম হয়ে যায়।
তখন নিবিড় আর বাড়ি না গিয়ে সোজা রওনা হয়ে যায় সিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।মাঝে কল পেয়েও সে পাত্তা দেয় নি।আফসোস হচ্ছে তার,

নিবিড় আমতা আমতা করে বলে উঠে,
-তিশা ঠিক আছে তো?আমাদের বাচ্চা?সবাই ঠিক আছে?
-আপনি প্লিজ তারা তাড়ি চলে আসুন।


নিবিড় খবরটা শোনা মাত্র ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সাগরকে সবটা বলে দ্রুত রওনা হয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে
সাগর আর স্নেহা ছুট লাগায় ইসরাকের ঘরের দিকে।খবরটা নওরিনকে দিতে হবে।
নিবিড় হাসপাতালে পৌঁছাতে দেখে তিয়াশের মা,বাবা আর নোহা বাহিরে বসা।তিশাকে একটু আগেই ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তিশা নিবিড়কে না দেখে যাবে না এদিকে অপেক্ষা করার মতো সময়ও ছিলো না।এমনিতেই তিশাকে আনতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছে তারউপর নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আরো দেরী।
এরপর দেরী করলে সমস্যা বাড়বে বয় কমবে না।তিয়াশ বোনকে বুঝিয়ে রাজি করায়

নিবিড় মাথায় দুহাত রেখে সেখানে রাখা একটা ব্রেঞ্চিতে বসে পড়ে।নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।এই ক দিন নওরিনের বিষটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে তিশাকে ঠিক মতো সময় দিতে পারে নি সে।একদিকে কাজের প্রেসার অন্যদিকে নওরিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা সব মিলিয়ে তার বেহাল দশা।তিশার প্রপার কেয়ার সে নিতে পারছে না।
নিজের উপর রাগ থেকেই, তার গাল বেয়ে দুইফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
নিজের গালে নিজেকেই চড় মারতে মন চাইছে তার

নোহা নিবিড়ের কাছে এগিয়ে আসে,
-ভয় পাবেন না ভাইয়া আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।দোয়া করেন

এরই মাঝে সাগড়,ইসরাক আর নওরিন উপস্থিত হয়।সাগর কিছুক্ষণ দাড়িয়ে বাড়ি চলে যায়,খালা খালুকে জানাতে হবে।

সবাই ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তিয়াশ একটু পর তোয়ালে পেঁচিয়ে কোলে করে একটা ছোট্ট ছেলে বাবু নিয়ে বার হয়।সর্বপ্রথম বাচ্চাকে তার নানীর কোলে দেওয়া হয় তারপর নিবিড়ের কোলে।নিবিড় অস্থির হয়ে তিশাকে দেখতে চায়।তিয়াশ অসহায় গলায় উওর দেয়,
তিশাকে কেবিনে শিফট করার পরই তার কাছে যাওয়ার পার্মিশান দেওয়া হবে,


তিশা ওপাশ মুখ করে শুয়ে আছে।নিবিড়ের সাথে সে কিছুতেই কথা বলবে। নিবিড় সেই কখন থেকে তিশার সামনে কান ধরে বসে আছে অথচ তার কোনো হেল দোল নেই।
দুজনের বেশ কড়া মান অভিমানের পালা চলছে।
এমন সময় তিয়াশ রুমে ঢুকে সাথে ইসরাক, নোহা, নওরিন।তিয়াশ বাচ্চাটার দোলনায় দোল দিতে দিতে বলতে থাকে,

-তোমর নাম আমি দেবো জুনিয়র হাড্ডি।মা সিনিয়র হাড্ডি আর তার ছেলে জুনিয়র হাড্ডি।কাবাব মে হাড্ডি হওয়া তাদের স্বভাব।
তিশা ভাইয়ের দিকে চোখ মুখ কুচকে তাকায়,
তিয়াশ মুচকি হেসে উওর দেয়,
-এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই সিনিয়র হাড্ডি শুধু মাত্র জুনিয়র হাড্ডির জন্য আজ বিয়ের দ্বিতীয় দিনেও আমি ভার….
তিয়াশ বলতে গিয়েও থেমে যায়।ইসরাকের দিকে তাকায়।ইসরাক তখন উঁচু হয়ে বাচ্চাকে দেখছিলো।
তিয়াশের চোখে চোখ পড়তেই বলে উঠে,
-আমার দিকে তাকায়ে লাভ নাই।আমার পুরানো বিয়ে এক দুইদিন মিস হইলে কোনো সমস্যা নেই।
তিয়াশ বোকার মতো তাকিয়ে আছে,
নোহা মুচকি হাসে উল্টো দিকে ফিরে তাকায়।
ঘড়িতে ২ টা বেজে কুড়ি মিনিট।
তিশা আর বাবু ঘুমিয়ে আছে।তিশা মেডিসিনের কারনে বেহুশের মতো ঘুমোচ্ছে। নিবিড় পাশের সোফায় বসা।ইসরাক নোহা আর তিয়াশ তাদের চেম্বারে বসা।তিয়াশের বাবা মা বাড়ি চলে গেছে।

নিবিড় নওরিনের দিকে তাকায়,
নওরিন তিশার পাশে বসে আছে।পড়নে লাল রং-এর জামদানী শাড়ি। খোপায় বেলীফুলের মালা।হালকা সাজ।নিবিড় ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করেছে,
-এমন সেজেছিস কেন?
নওরিন লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়,
নিবিড় চোখ মুখ শক্ত করে প্রশ্ন করে,
-তুই কি সিকদার বাড়িতে ফিরতে চাস?
নওরিন কিছু বলে না,শুধু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে
-কি হলো পরিস্কার করে বল,কি চাস তুই?
-আ…
-আ আ না করে ক্লিয়ার করে বল কি চাস?সিকদার বাড়ির মানুষগুলো তোর সাথে যা করেছে সেগুলো কি ঠিক?তোর গোটা জীবনটায় তো নষ্ট হয়ে গেছে নওরিন…!বাবা মায়ের কথা বাদ দে তারা কখনোই তাদের চিন্তা ভাবনা থেকে বার হতে পারবে না,তুই নিজের কথা ভাব।কি চাস তুই?
-আমি জানি না!
-এতো কনফিউশান নিয়ে ভালো থাকা যায় না রিনি আমি বলছিনা ইসরাক তোর যোগ্য নয় আমি শুধু বলছি ইসরাক আর তুই সম্পূর্ণ আলাদা মেন্টালিটির দুইজন মানুষ।একই চুম্বকের দুইটি আলাদা মেরু।আমি জানি তুই এখন মানিয়ে নিবি সহ্য করে নিবি, কিন্তু দুদিন পর কি হবে?যখন বড় হবি তখন কি করবি?
-তুমি সাগর ভাইকে কেন ডেকেছো?আমাদের মধ্যে মিল করাতে?বিয়ের দিনই তো ওনি আমায় অবিশ্বাস করে পালিয়ে গিয়েছিলো,আমাকে ত্যাগ করেছিলো…
-ইসরাকের সাথে আমার কথা হয়েছে।ইসরাককে আমি প্রশ্ন করছিলাম এই বিয়ে নিয়ে ও আমায় সরাসরি উওর দিয়েছে এই বিয়েটা ও শুধু মাত্র পরিবারের চাপে করেছে।ভালোবেসে নয়।তোকে ডিভোর্সের কথা বলেছিলাম ও বলেছে তুই নিজে থেকে চাইলে দিয়ে দেবে……যদি ভালোবাসা থাকতো তো বলতে পারতো আমার স্ত্রী কে আমি ডিভোর্স দেবো না।ভালোবাসলে আগলে রাখতে হয় নওরিন!যেটা ও করেনি।
নওরিন বড়বড় চোখ করে তাকায়,
-সত্যিই ওনি এমনটা বলেছে আপনাকে?
-হু!আমি সাগরকে সেজন্য ডাকি নি,আর সত্যিই বলতে সাগর নিজের ইচ্ছেতে যায় নি…ইসরাক সিকদার তাকে যেতে বাধ্য করেছিলো।মেজো খালার মাথায় বন্দুক রেখে সাগরকে বাধ্য করেছিলো চলে যেতে।সাগরের কলিজা ছোট ছিলো তাই পালিয়ে গিয়েছিলো ব্যাস!
নওরিন চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়,বার বার ইসরাকের কর্মকান্ড তাকে কষ্ট দিচ্ছে।ভীষণ রকম কষ্ট দিচ্ছে।
নওরিন ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে,
-তুমি কি চাও?
-তুই সবসময় কেন প্রশ্ন করিস তুমি কি চাও?আপনি কি চান…..!
নিবিড় আরেকটু থেমে উওর দেয়,
-আমি তোর আর সাগরের মাঝে কোনো সম্পর্কের সূচনা করার জন্য সাগরকে আনিনি।আমি চাই তুই পরীক্ষার পর দেশের বাহিরে চলে যা।সব কিছুর থেকে দূরে।একা ছাড়তে পারবো না তাই সাগরের হেল্প চায়। এর বেশি কিছু নয়।তবে তুই চাইলে তোদের মাঝে সম্পর্ক হলেও হতে পারে।আমি শুধু আমার বোনের নিড এন্ড ক্লিন একটা ফিউচার চাই।যেখানে তাকে অসন্মান করার মতো কোনো সিকদার ই থাকবে না।

নওরিন ভাইয়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়,
নিবিড় বোনের মাথায় হাত বুলায়,
-যেই জীবনটা তুই ডিসার্ভ করিস সেটা সিকদার বাড়িতে থেকে তুই কখনোই পাবি না।আমি ব্যক্তি ইসরাক সিকদারকে পছন্দ করি কিন্তু আমার বোনের বর ইসরাক সিকদারকে একদম পছন্দ করি না…….প্লিজভেবে দেখ
-কিন্তু
-এবার অন্তত ভাব…ইসরাক কি আদোও তোকে ভালোবাসে?নাকি সব মায়া?

নিবিড় কথাটা বেশ জোরেই বলে উঠে।তিশার ঘুম আলগা হয়।নিবিড় তিশার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,

নওরিন ভাইয়ের কথায় মাথা নাড়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে।ইসরাক কেবিনের সামনে পায়চারি করছে।নওরিনকে দেখে দুকদম এগিয়ে আসে।নওরিনের গালে হাত দেয়,

-ইস মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে।ভাবির বেবি নিয়ায় নিজের এমন হাল বানায়ছো নিজের বেবি হওয়ার সময় কি করবা…?আমার তো ঘুম হারাম করে দিবা তুমি!

নওরিন রাগী চোখে তাকায়,
-আমাকে সবসময় ছোট না করলে আপনার হয় না?
ইসরাকের মুখটা ছোট হয়ে যায়,হাসিটা মিলিয়ে যায়,
-মজা করেছি নওরিন এভাবে বলো কেন?আমি কখনো তোমাকে ছোট করি না
-আপনার কাছে গোটা আমি টাই একটা মজা তাই না?
ইসরাক নওরিনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
-আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই।
-একটু আগেই তো তুমি ঠিক ছিলা নওরিন…ভাইয়া কি কিছু বলেছে?
নওরিন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
-আপনার সবসময় কেন মনে হয় আমি অন্যের কথায় চলি?
-তুমি এমনই নওরিন।নিজেকে চেনো না নিজের মনের কথা বুঝো না।আমি চিনি তোমায়।
-আপনি ভাইয়াকে বলেছিলেন আমাদের বিয়েটা শুধু দায়ের বিয়ে?পরিস্থিতির চাপে বিয়ে করেছিলেন?আমি চাইলে ডিভোর্স ও নাকি দিয়ে দেবেন
ইসরাক মাথা নিচু করে নেয়,
-তোমার ভাইয়া সত্যি জানতে চেয়েছিলো।তবে বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
-তাহলে ডিভোর্স? মানা করতে পারলেন না কেন?
-আমি জোর করে তোমাকে আটকে রাখতে চাই নি?
-আপনি জোর করতে চান নি?আপনি? রিয়েলি?
নওরিন আর কিছু বলে না।ইসরাক নওরিনের হাত ধরে,কিছু বলতে চাইলে
নওরিন হাতটা ছাড়িয়ে নেয়,
-কোনো এক্সপ্লেনেশন চাই না প্লিজ!
ইসরাক একটু দমে যায়।
-বেশ কিছু বলবো না।বাড়ি যাবে না?
নওরিন মুচকি হাসে
-যাবো
-চলো
-ভাইয়া আজ রাত এখানেই থাকবে।সকালে বাবা মা ভাবি আর বাবুকে দেখতে আসবে তারপর তাদের সাথে যাবো।আমার বাবার কাছে চলে যাবো
ইসরাক অবাক চোখে তাকায়,
-আমি চাই না তুমি…
-আপনার চাওয়া না চাওয়ায় কিছু যায় আসে না।প্লিজ আমাকে জোর করবেন না।আপনি তো নিজেই বললেন জোর করতে চান না।এখন কেন করছেন?প্লিজ করবেন মা ফল কিন্তু ভালো হবে না।

ইসরাক নওরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে নওরিনের চোখ অন্যরকম লাগছে।প্রচুন্ড ক্ষোভ, অভিমান,রাগ সবকিছুর সংমিশ্রণ!
-প্লিজ চলে যান……বাঁকি বোঝা পড়াটা কাল হবে।
ইসরাক কি বলবে ভেবে পায় না।নওরিনের এমন দৃঢ় কণ্ঠস্বর সে প্রথমবার শুনছে….
ইসরাক মাথা নিচু করে সেখান থেকে বেড়িয়ে যায়।নিচে নেমে গাড়িতে বসে পড়ে,
সিটে গা এলিয়ে দেয়।একটু আগেই তো নওরিন ঠিক ছিলো।পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো।সব কিছুর সুন্দর একটা সূচনা হতে চলেছিলো।নওরিন তার দেওয়া পছন্দের শাড়িটাও পড়েছিলো।মাত্র কয়েক মিনিটে সবটা পাল্টো গেলো কিন্তু কিভাবে!সৃষ্টি কর্তা কি নিজেই চায় না তাদের মাঝে ভাব হোক?সব ঠিক হয়ে যাক এতো কিসের বাঁধা তাদের মাঝে?

ইসরাক গাড়ির স্টিয়ারিং এ সজোরে কয়েকটা বাড়ি মারে।অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলো সে….হটাৎ যেন আকাশ থেকে মাটিতে কেউ তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে……
_________

আমান গভীর রাতে পা টিপে টিপে দুই তালায় এসেছে।মায়ের ঘরটা এখানেই।সকালে সে যখন বাবা- মায়ের ঘরের তালাটা ভাঙ্গছিলো তখন জিনাত সিকদার সেখানে এসে উপস্থিত হয়।একরকম হন্তদন্ত হয়েই সে সেখানে এসেছে…
-তালা কেন ভাঙ্গছো বাবা?
আমান মুখ কাচুমাচু করে উওর দেয়,
-মায়ের ঘরে দরকার ছিলো!
জিনাত সিকদার উদ্ধিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-কি দরকার?কিসের দরকার?
আমান মুখছোট করে উওর দেয়,
-আসলে বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছিলো তাই ভাবলাম ঘরে গিয়ে তাদের জিনিস দেখলে একটু ভালো লাগবে।
জিনাত সিকদার আমানের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
-বাবা মায়ের জিনিসগুলো দেখলে তোর আরো মন খারাপ হবে বাবা।এই ঘরে আর আসিস না চল।কখনো আসিস না…

জিনাত সিকদার কথাগুলো বলেই আমানের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়,
আমান ততোক্ষণে তালা ভেঙ্গেই ফেলেছিলো তা অবশ্য জিনাত সিকদারের চোখে পড়ে নি…পড়লে হয়তো তালাটা পাল্টে দিতো।

আমান সারাদিন আর ঘরের ওমুখো হয় নি।রাতে সবাই ঘুমানোর পর সে পা টিপে টিপে এই ঘরটাতে এসেছে।কোনো রকম শব্দ না করেই সে ঘরে প্রবেশ করে,
বাবা মায়ের ঘরের পাশের ঘরটাতেই জিনাত সিকদাররা থাকে।শব্দ করলেই তারা জেগে যাবে হয় তো….

আমান ঘরে ঢুকেই ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দেয়,বেডের সামনের দেয়ালটাতে বড় একটা ছবি লাগানো।বাবা মায়ের বিয়ের ছবি।কি মিষ্টি লাগছে দুজনকে,

আমানের চোখে পানি চলে আসে,যদি বাবা মা বেঁচে থাকতো!আমান ছবিটাতে হাত বুলায়।ধুলো জমে গেছে।

আমান নিজেকে সামলে নিয়ে একটা কিছু খুঁজতে থাকে…এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতে বেড সাইডের পাশের ড্রয়ারে একটা ডায়েরি খুঁজে পায়,
ডায়েরির উপরে লিখা “প্রিয়োতার প্রিয়োকথা…”
আমান ডায়েরিটা বার করে হাত বুলায়।এটা মায়ের ডায়েরি মায়ের হাতের ছোয়া লেগে আছে এটাতে…আমান ডায়েরিটা খুলে,
ডায়েরির প্রথম পাতায় লিখা,
“এই যে ম্যাড্যাম শুনছেন,মেয়েদের এতো অহংকার ভালো না….”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here