প্রিয়োসিনী পর্ব-৩৪(দ্বিতীয় অংশ) অন্তিম পর্ব

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৩৪(দ্বিতীয় অংশ)
…অন্তিম পর্ব….
হাসপাতালের মেঝেতে কান্না করতে করতে গড়াগড়ি খাচ্ছে নওরিন।পাশে নোহা বসা।নওরিন যে এভাবে কান্না করতে পারে তা তার কল্পনারও বাহিরে।নোহা ভেবে পাচ্ছে না নওরিনকে কি করে থামাবে।থামাবে নাকি আরেকটু উসকে দেবে?

তিয়াশ অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে নোহার দিকে।সে একবার নওরিনকে দেখছে একবার নোহাকে দেখছে।
শেষ মেষ বন্ধুর জন্য তাকে মিথ্যেও বলতে হলো নাহ্ বন্ধুর জন্য নয় বউয়ের জন্য।

নিবিড় এসে নওরিনকে মেঝে থেকে তুলে।চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
তিয়াশের দিকে গভীর চোখে তাকায়।
তিয়াশ মাথা নিচু করে বলে উঠে,

-আসলে ইসরাক বলেছে,না মানে ইসরাকের এক্সিডেন্ট হয়েছে।ভোর বেলা কি একটা কাজে বার হয়েছিলো সে হাইওয়ে ক্রস করতেই একটা ট্রাকের সাথে।ও আসলে নওরিনের সাথে দেখা করতে চায়…জীবনের শেষ ইচ্ছে। তাই নওরিনকে ফোন করেছিলাম।
নিবিড় একটু উদ্বীগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-জামাই এখন কেমন আছে?
তিয়াশ মুখ কাচুমাচু করে,তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে..।দুলাভাই যে পড়ে তাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে।
তিয়াশকে কিছু বলতে না দিয়ে
পাশ থেকে নোহা ফট করে বলে উঠে,
-খুবই খারাপ ভাইয়া।যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। বড় আম্মুকে এখনো জানানোই হয় নি…..!
জানলে হয় তো…… নোহা অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে।
নওরিন একটু লাফিয়ে উঠে,
-প্লিজ ভাইয়া ওনাকে দেখবো…কোথায় ওনি?
তিয়াশ হাত উঁচু করে একটা কেবিন দেখিয়ে দেয়
-ঐযে ঐখানে
নওরিন এক মুহূর্ত দেরী না করে ছুট লাগায় সেদিকে।
কেবিনে ঢুকতেই দেখে ইসরাক শোয়া।মাথায় ব্যান্ডেজ সারা শরীর চাদরে ঢাকা।

নওরিন ছুটে গিয়ে ইসরাককে জড়িয়ে ধরে,
ইসরাকের কপালে গালে মুখে অজস্র চুমু খায়।
-কে বলেছিলো এতো সকালে বার হতে?
-(…)
-প্লিজ কথা বলুন।আমাকে ছেড়ে যাবেন না স্বামী। মানছি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু আপনিও তো আমাকে কম কষ্ট দেন নি।এবার তো কাটা কুটি হয়ে গেছে বলুন?এখন তো সব ঠিক করার পালা তাই না?কি হলো স্বামী কথা বলেন না কেন?
-(…)
-আমি ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম রূপকথার রাজপুত্রের মতো বর হবে আমার।সাগরকেও তেমনই মনে করতাম।কিন্তু।বিশ্বাস করুন প্রথম যেদিন শুনেছিলাম আপনি সব জেনে আমায় বিয়ে করেছেন আপনার প্রতি আমার সন্মান সেদিনই কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছিলো।নতুন করে জীবনটা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু……
নওরিন একটু থামে
-পরে সবটার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।তবে আমার অভিমানগুলো তো আর আমার বসে নেই।আমার চাওয়া পাওয়ার হিসেবগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই।আমি চাইলেই হয়তো সব ঠিক করতে পারতাম।কিন্তু মনের জোর হয়তো ছিলো না তাই পারি নি।
-(…)
-প্রেমিক পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো দূরত্ব আমি শুধু আপনাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম।আমি চেয়েছিলাম আপনি ভালোবেসে সব দূরত্ব কাটিয়ে আমাকে যত্ন করুন…আপনি যা যা করেছেন তার বিচার করতে বসলে সারা জীবনের দূরত্ব আপনি ডিসার্ভ করেন।কিন্তু এই দূরত্বের নিজেরও কষ্ট হচ্ছে। বিশ্বাস করুন আমিও তো আপনাকে ভালোবাসি।আপনাকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারি না।যেদিন আপনি মেজো ভাইকে বললেন আমাকে তালাক দেবেন সেদিন আর সামলাতে পারি নি নিজেকে।অভিমানগুলো আর সেদিন আমার বসতা স্বীকার করে নি।তাই যা তা একটা ডিভোর্স পেপার বানিয়ে সই করিয়েছে।আপনিও তো দেখলেন না….
তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি

ইসরাক ধপ করে বিছানায় উঠে বসে,
-ভালোবাসো সত্যিই???
নওরিন হা করে তাকিয়ে আছে।ইসরাককে এভাবে উঠতে দেখে নওরিন কয়েক মুহূর্ত হতভম্বের মতো বসে থাকে তারপর ফট করে নওরিনকে জড়িয়ে ধরে,
ইসরাক নওরিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
-আমাকে আর লজ্জা দিও না নওরিন….অনেক অন্যায় করেছি।অনেক ভুল করেছি। প্লিজ ক্ষমা করো।অনেক তো হলো….
-আপনি ঠিক আছেন স্বামী?
-ঠিক নেই তোমার বিরহে সয্যা নেওয়ার অবস্থা হয়েছে আমার দেখো না….
নওরিন ইসরাকের বুকে দুই চারটা কিল দেয়,
-সব তাহলে নাটক হচ্ছিলো?
-কে বলেছে সব নাটক?তোমাকেই দেখতে যাচ্ছিলাম। মাঝে ছোট্ট একটা এক্সিডেন্টে বেশি না।তবে সব নোহার প্লান ছিলো।

নওরিন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।যাই হোক মানুষটা তো ভালো আছে।
-তবে নোহা যে বললো?নাটক করছিলেন এভাবে
ইসরাক নওরিনের হাত ধরে,টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে
-কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে তোমাকে কখনো কষ্ট দেবো না।এখন তোমাকে কষ্ট দেওয়ার মানে নিজের সত্তাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া। প্লিজ আমাকে আর ফিরিয়ে দিও না নয়তো এভাবেই মরে যাবো।

পুরোটা সময় ইসরাক নওরিনকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো।
নোহার ডাকে ইসরাক নওরিনকে ছেড়ে দেয়,
-কনফিউশান দূর হয়েছে নওরিন?
-কি?
-হুম্ম।ভালোবাসা না বাসার কনফিউশান।ভালোবাসা হারিয়ে ফেললেই ভালোবাসার মূল্য বোঝা যায়।হারিয়ে ফেলার ভয় বন্ধনগুলোকে আরো দৃঢ় করে।যদিও আমি সবটা জানি না তবুও তোমাকে যতটুকু চিনি সংসার ত্যাগ করে চলে যাওয়ার মতো মেয়ে তুমি না।ঠিকিই ফিরতে আসতে।তবে আমি শুধু চেয়েছিলাম তুমি দাভাইয়ের প্রতি ভালোবাসাটা অনুভব করেই ফিরে এসো।
প্লিজ এবার আর কোনো ড্রামা না।
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায় বোনের দিকে,
-ওকে ওকে ড্রামা নয় টম এন জেরির ভালোবাসা হলো তো

নিবিড় নোহার কথা শুনে আনমোনেই হেসে দেয়।
____________
নওরিনের রেসাল্ট খুব ভালো না হলেও মোটামুটি ভালোই হয়েছে বললেই চলে।ইসরাক হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে গেছে।সঙ্গে নোহা আর তিয়াশও…
আর নওরিন নিবিড়ের সাথে বাড়ি চলে এসেছে।সন্ধ্যায় ইসরাকের পরিবারের লোকজন আসবে। অনুষ্ঠানের দিন তারিখ ঠিক করতে।জিনাত সিকদার বউমাকে ঘরে তোলার জন্য এক পায়ে দাড়িয়ে আছে।
নওরিন রাজি না থাকায় নিতে পারেনি।আজ নওরিন রাজি তার খুশি দেখে কে?

সন্ধ্যায় সিকদার পরিবারের সবাই আসে।কাল দিন পড়েই তারা বড় করে আয়োজন করে নওরিনকে উঠিয়ে নেবে।প্রথমে নওরিনের বাবা মা আমতা আমতা করলেও পড়ে সবাই রাজি হয়ে যায়।

জিনাত সিকদার নিজে হাতে নওরিনের জন্য শাড়ি গয়না সবকিছু দিয়ে যায়।যাওয়ার সময় নওরিনের কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দেয়,
-তুমি ছোট্ট মেয়েটা কতো কি সহ্য করেছো।পৃথিবীর সব সুখ তোমার প্রাপ্য।
নওরিন মুচকি হাসি দেয়,
এই মানুষটাই তাকে এক সময় কতো অপমান করতো।অথচ আজ এই মানুষই তাকে আপন করে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
_________
নওরিন বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেছে।মেয়েটার চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে গিয়েছে কান্না করতে করতে,
ইসরাক নওরিনের দিকে রুমাল এগিয়ে দেয়,
-বউ তুমি বলছিলা না আমার চোখের পানি নাকে পানি এক করেই ছাড়বে এদিকে দেখো তুমি নিজেই নিজের চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছো।
নওরিন চোখ মুছতে মুছতে ইসরাকের দিকে রাগী চোখে তাকায়।তারপর কিছু একটা ভেবে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে তোলে,
-সাগর ভাইয়ের বিয়ের দিনে কে যেন রাস্তার মাঝখানে বসে বসে কান্না করছিলো।সেই চোখ সেই নাক সেই কান লোকটা বোধহয় দেখতে একেবারে আপনার মতোই ছিলো না সরি সরি আপনিই ছিলেন তাই না?

ইসরাক ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়।কতোটা পাগল সে৷কি না কি ভেবে কান্নাকাটি করেছে তাও বউয়ের সামনে।বউ এখন তাকে খোঁটা দিবে।শুধু বউ কেন ভবিষ্যৎ বাচ্চা কাচ্চাকে দিয়েও হয়তো খোঁটা দেওয়াবে
________
নওরিন সাওয়ার সেরে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
ইসরাক এসে একবার নওরিনের দিকে তাকায়
-সাজ উঠায়ে ফেলসো?
-হুমম। বলা তো যায় না আমার স্বামী নামক আস্বামী হুট করে এসে আবারও আমাকে সং বলে দিলো।তাই রিস্ক নিতে চাই নি।

ইসরাক নওরিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
-সরি বড়। এখনো ক্ষমা করতে পারো নি তাই না?
-বাদ দিন
নওরিন ইসরাককে ছাড়িয়ে নেয়।তোয়ালেটা বারন্দার দিয়ে ঘরে আসে।
ইসরাক বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
-নওরিন
-কবে কখন কিভাবে তোমাকে এতোটা ভালোবেসেছি জানি না আমি।কিছুই জানি না।তবে যেদিন থেকে বুঝেছি তোমাকে আমার লাগবে সেদিন থেকে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করেছি।প্লিজ এই অগোছালো ইসরাক সিকদারকে নিজের সাথে মিশিয়ে একটু গুছিয়ে দাও

নওরিন ইসরাকের পাশে বসতে বসতে বলে উঠে,
-আমি নিজেই তো বড্ড অগোছালো। আমার জীবনের গল্পটাও বড্ড অগোছালো এলোমেলো। আপনার জীবন কি করে গুছাবো আমি?
ইসরাক নওরিনলে কাছে টেনে নওরিনের কপালে চুমু খায়।
-আমরা একজন আরেক জনকে গুছিয়ে নেবো।ভালোবাসায় আগলে রাখবো দেখো কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবো না।
ইসরাক কথা বলতে বলতে নওরিনের নাকে নাক ঘষে।
-এবার চলো বংশের বাত্তি জ্বালানোর কথা চিন্তা করি….বউ তুমি অনুমতি দিলে
নওরিন ইসরাককে থামিয়ে দেয়,
-যদি না দিই?
ইসরাক উঠে বসে,
-ইট’স ওকে!
-তাহলে যান বেরিয়ে যান।প্রথম দিনের মতো সারারাত ছাদে কাটিয়ে দিন।
নওরিন দরজার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখায়।
ইসরাক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গায়ে একটা টিশার্ট জড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
নওরিন হেসে কুটি কুটি হয়ে কিছুক্ষণ বিছানায় গড়া গড়ি খায়।
তারপর সেও পেছন পেছন ছুট লাগায়।
-ইস্ লোকটা কি রাগ করলো?

ইসরাক ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে রাস্তার দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে।নওরিন পা টিপে টিপে ইসরাকের কাছে যায় ইসরাককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
-এলে কেন?
-এমনি।রাগ করেছেন?
ইসরাক সামনে ফিরে তাকায়,নওরিনের কপালে ছোট্ট করে চুমু খায়…
-কোই না তো
-ঘরে চলুন।আমাদের ফিচার বেবি আমাদের জন্য ওয়েট করছে।
_____
প্রাশ বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।শিউলি পারভিন বিছানা শয্যা নিয়েছে।স্নেহার এভাবে চলে যাওয়া সে মেনে নিতে পারে নি।
তারউপর আমানের বাবা মায়ের ঘটনার জন্য জিনাত সিকদার তাকে বেশ কথা শুনিয়েছে।

জীবনের হিসাব কষতে কষতে হটাৎ একদিন ঘুমের মাঝেই স্ট্রেক করে সে।ভাগ্য ভালো থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরের জোড় সে ফিরে পায় নি।
মনই যে শরীরের চাবিকাঠি। মনে জোড় না থাকলে শরীরে জোড় কি করে পাবে।দিন যেতে থাকে আর শিউলি পারভিনের শরীর আরো খারাপ হতে থাকে।সে না নিয়ম করে খাবার খায় না অসুধ।
জিনাত সিকদার শিউলির পাশে বসে আছে।শিউলি পারভিনের অবস্থা বেশি ভালো না।জিনাত সিকদার বাবা মাকে খাবর পাঠিয়েছে।সাথে এ্যাম্বুলেন্সও ডেকেছে সে,
শিউলি হাপাতে হাপাতে বোনকে কাছে ডাকে
-আপা মরার আগে সত্যি বলতে চাই
জিনাত সিকদার চারপাশে তাকিয়ে ঘর ফাকা করে।বোনের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে বোনকে প্রশ্ন করে,
-কিসরে সত্যিই?
-আমানের বাবার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো না বুবু।
-কি বললি?
-আমাকে থামিও না বলতে দাও।হয়তো আর কখনো সুযোগ পাবো না।,সেদিন ইসারাক বাবা খাবেনা বলে ছুটাছুটি করছিলো।ছুটতে ছুটতে ঐ ঘরে যায়।ইসরাক বেরিয়ে যায় আমার ওর পিছু যেতে গেলে আমার মাথা ঘুরে যায় নিচে পড়ে যেতে নিলে আমানের বাবা আমাকে ধরে ফেলে।ঐ মুহূর্তেই প্রিয়োতা চলে আসে।আর আমাদের ঐভাবে দেখে ফেলে।বুবু বিশ্বাস করো আমাদের কোনো দোষ ছিলো না।আমি বুঝিয়ে বলতে চেয়েছিলাম।আমানের বাবাও চেয়েছিলো, প্রিয়োতা সুযোগ দেয় নি।
জিনাত সিকদার থমথমে মুখ করে বসে আছে,
-আমার সিফাত ভাই (আমানের বাবার ম্যানেজারের) সাথে সম্পর্ক ছিলো।কিন্ত এক পর্যায়ে সে আমিকে অস্বীকার করে।তখন দিশে হারা হয়ে আমানের বাবার কাছে সাহায্য চাই।আমানের বাবা শুধু আমাকে করুণা করতো।এক ডিভোর্সি প্রতারিত নারী হিসেবে।সেটাকেই প্রিয়োতা অন্য চোখে দেখেছে।ওর সন্দেহ প্রবণ মন ওকে যা দিখিয়েছে ও তাই দেখেছে।আমানের বাবার অতীতটা হয়তো সে পুরোপুরি ভুলতে পারে নি।

-বুবু বাচ্চাটাও সিফাতভাইয়ের ছিলো।সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেলো।আমানের বাবাও চলে গেলো।আমার শেষ ঠিকানা ছিলো সিকদার বাড়ি।বাবা মা যে আমাকে ওভাবে রাখবে না তা তো তুমি জানতে।ভেবেছিলাম বাচ্চার উছিলায় একটা ঠিকানা পেয়ে যাবো।সিকদার বাড়ির চিলেকোঠায় হলেও একটা আশ্রয় পাবো।তারপর হয়তো সিফাত ভাই সেই বাচ্চার টানেই ফিরে আসবে। তাই কিছু বলিনি বুবু।খুব কি অন্যায় করে ফেলেছি?
তিনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠেন
-হ্যা অন্যায় করেছি।একজন মৃত মানুষকে বদনাম করেছি।তবে বিশ্বাস করো বুবু আমি সেদিন প্রিয়োতাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম সে সুযোগ দিলো না।ওরা কি আমাকে ক্ষমা করবে না?
শিউলি পারভিন সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

জিনাত সিকদার হতবাক।হয়ে বোনের পাশে বসে আছে।সে যেন কান্না করতেও ভুলে গেছে।
শিউলি পারভিনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।ডাক্তার শিউলি পারভিনকে মৃত ঘোষনা করে।মারা যাওয়ার আগে একমাত্র মেয়ে স্নেহার মুখটাও তার দেখা হলো না।
____________
মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।আজো জিনাত সিকদারের আফসোস হয়, ইস্ এতোগুলো বছর ধরে বোনকে কতোই না অপমান করেছে সে।প্রিয়োতার সংসার ভাংগার সব দোষ তাকে দিয়েছে।আচ্ছা সেদিন যদি প্রিয়োতা একটু ঠান্ডা মাথায় সবটা বিচার করতো, শুনতো তাহলে কি আজকে এই দিনটা দেখতে হতো?নাহ্ হয়তো আমান তার বাবা মাকে নিয়ে সুখে থাকতো!জিনাত সিকদার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জায়নামাজ বিছায়।আজকাল দিনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি ইবাদতে মশগুল থাকেন।সংসারের সব দায়িত্ব ছোট চাচী আর নওরিনের।নওরিন পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সংসার সামলাচ্ছে।সব মিলিয়ে সুখেই আছে সে।আপাতোতো সে এই সিকদার বাড়ির রাণী।ইসরাক চাকুরি ছেড়ে পারিবারিক ব্যবসায়ে যুক্ত হয়েছে।
______
ইশা আজও আমানের অপেক্ষায় আছে।আমান রোজ তাকে কল করে।খোঁজ নেই।মাঝে মাঝে ভিডিও কলও দেয়।তবে দিন শেষে সে অপূর্ণ। আমান ফিরে আসে নি।এতোগুলো বছরেও সে ফিরেনি।সব পেয়েও আজ সে নিঃস্ব।তবুও সে আশায় বুক বেঁধে বসে আছে হয়তো কোনো দিন আমান ফিরবে…ভালোবেসে তাকে আগলে নেবে।তারও একটা সংসার হবে।আমানের সাথে সে ঘর বাঁধবে। পূর্ণতা পাবে তার জীবনও

…………………সমাপ্ত………….
(অনেক ভুলভ্রান্তির মাঝে গল্প শেষ করলাম।প্রথমবার এতো বড় গল্প লিখেছি ভুল করেছি অনেক এটাই স্বাভাবিক। কাঁচা হাতের লিখা ভেবে ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন প্লিজ।ইশার গল্পটা ওপেন ইন্ডিং রাখলাম যেমন খুশি তেমন ভাবে সমাপ্তি টানতে পারেন।হয়তো আমানের সাথে তার কখনো মিল হয়েছে নয়তো অপেক্ষায় মাঝের তার গল্পটার সমাপ্তি হয়েছে।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here