প্রিয়োসিনী পর্ব -৪

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৪
কফি সপে ইসরাক আর তার এক্স নীলাঞ্জনা মুখোমুখি বসে আছে,নীলাঞ্জনা বেশ জোরে জোরেই কাঁদছে।নাক মুখ লাল হয়ে গিয়েছে তার।আশে পাশের লোক জন হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
ইসরাক কফিতে একটা চুমুক দিয়ে নীলাঞ্জনার দিকে তাকায়,ধমকের সুরে বলে উঠে,
-কান্না থামাও
-(..)
-বললাম না কান্না থামাও
নীলাঞ্জনা ইসরাকের হাতটা ধরতে নিলে ইসরাক হাত সরিয়ে নেয়।
-ধরবা না আমাকে।
-আমার ভুল হয়ে গিয়েছে ইসরাক মাফ করে দাও প্লিজ।আমি আজই এ্যাবোর্শান করিয়ে নেবো।

ইসরাক কিছু বলছে না আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে কফি খাচ্ছে
-কিছু বলছো না কেন?
-কি বলবো?
-আমার ভুল হয়ে গিয়েছে!
-সজলকে বিয়ে করে নাও।
নীলাঞ্জনা সজলের নাম শুনে কেঁপে উঠে।কান্নার বেগ বেড়িয়ে দেয়।
-তুমি নিজে থেকে না বললোও আমি সব জানি বাচ্চাটা সজলের তাই না?তুমি আমায় ঠকিয়েছো!

নীলাঞ্জনা মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে।

[ইসরাক আর নীলাঞ্জনার সম্পর্ক প্রায় সাড়ে চার বছর হতে চললো।ইসরাকের খুব কাছের বন্ধুদের একজন সজল।নীলাঞ্জনা ইসরাকের ভার্সিটিতে ১ বছরের জুনিয়র ছিলো।ভার্সিটির কালচ্যারাল অনুষ্টানে প্রথম দেখা নীলান্জনার সাথে।হালকা নীল রঙের শাড়ি।হাত ভর্তি চুড়ি।চোখে ঘন কালো কাজল।মাথায় ঢিলে খোপায় গোঁজা বেলী ফুলের মালা।সব মিলিয়ে যেন পরমাসুন্দরী। প্রথম দেখায় ইসরাকের বুকটা ধক করে উঠে।প্রথম দেখায় ভালোবাসায় বিশ্বাসী ইসরাক মনে মনে এই মেয়েটিকেই নিজের প্রিয়োসী হিসেবে মেনে নিয়েছিলো।সেদিনই এক গোছা ফুল হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরে নীলাঞ্জনার সামনে….প্রকাশ করে নিজের মনের লুকানো অনুরক্তি।

-তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?আমায় বলো বিয়ে করে আমায় ভালোবাসবে নাকি ভালোবেসে বিয়ে করবে?কোনটা চাও?তুমি যা চাও তাই হবে কথা দিলাম।

নীলাঞ্জনা ইসরাকের এমন প্রস্তাবে আকাশ থেকে পরে।সচরাচর প্রেমিক পুরুষরা প্রেমের প্রস্তাব দেয়।কিন্তু এ কেমন পুরুষ?

ক্যাম্পাসে সব মেয়েরা যার জন্য পাগল সেই ইসরাক ইমতিয়াজ তার সামনে বসা।নীলাঞ্জনা মুচকি হেসে ইসরাকের হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে চলে যেতে থাকে।
-এই যে মিস….
-নীলান্জনা…
ইসরাক মুচকি হাসে
-উওরটা তে দিয়ে যাও?
-মৌনতা সম্মতির লক্ষন।

নীলান্জনার না বলার কারণও উপায় কোনোটাই নেই ইসরাক নীলাঞ্জনার দেখা প্রথম পুরুষ যে প্রথম দেখায় প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে আছে ।

তারপর চলে দুজনের প্রেমের পালা।মাঝে অনেক বার মনমালিন্য হলেও কখনো ছাড়া ছাড়ি হয় নি।ইসরাক অনার্স কমপ্লিট করে দেশের বাহিরে চলে যায় হায়ার এডুকেশনের জন্য।নীলাঞ্জনা বড্ড একা হয়ে যায় ইসরাককে ছাড়া।

এই সময়ের মাঝেই ইসরাকের আড়ালে নীলাঞ্জন আর সজলের সম্পর্ক গড়ে উঠে।সম্পর্ক মন থেকে শরীর পর্যন্ত চলে যায়।ইসরাক ফেরার পর ব্যাপ্যারটা একটু একটু করে উপলব্ধি করতে থাকে।তার নীলাঞ্জনা আর তার নেই।নানা রকম সন্দেহ মাথা চাড়া দিতে থাকে ইসরাকের বুকের ভেতর।
তবুও ইসরাক নিজেকে সামলে রেখেছিলো।বিশ্বাসই যে সম্পর্কের মূল ভিত্তি।সেই বিশ্বাসের খুটিই যদি নরভরে হয়ে যায় তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে কিসের জোড়ে।

সপ্তাহ খালিক আগেই ইসরাক নীলাঞ্জনা আর তার এক কোমন ক্লোজ ফ্রেন্ডের মাধ্যমে জানতে পারে নীলাঞ্জনা প্রেগনেন্ট।ব্যাস ইসরাকের আসমান জমিন এক হয়ে যায়।
সে ঠকে গিয়েছে।ভলোবেসে ঠকেছে।ইসরাক এখন মনে প্রানে বিশ্বাস করে ভালোবাসলেই ঠকতে হবে।]

নীলাঞ্জনার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে ইসরাকের
-কিছু বলছো?
-আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো
-তুমি ভুল করো নি যা করেছো জেনে বুঝে করেছো।আর সেটা অন্যায়। যদি তুমি রাস্তায় কারো কাছে ধর্ষিত হতে। হয়ে যদি প্রেগনেন্ট হতে আই সোয়ার ওন গড আমি সেই মুহূর্তে তোমায় বিয়ে করে নিতাম।কোনো কিছুর
পরোয়া করতাম না। গোটা পৃথিবী থেকে তোমায় লুকিয়ে রাখতাম কারো পরোয়া করতাম না বাট….
-আমি এ্যাবোর্শান….
ইসরাক টেবিলে কয়েকটা বারি দেয়।জোরে জোরে কথা গুলো বলে উঠে,

-আর একবার এবোর্শ্যানের নাম মুখে নীলে এখানেই মেরে পুতে ফেলবো তোকে।নোংরামি করবি তোরা আর ফল ভোগ করবে এইসব অনাগত বাচ্চারা।
তাদের কি দোষ?

সবাই তাদের দিকে তাকায়।নীলাঞ্জনা লজ্জা পায়।ইসরাক নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করে
-সজলকে জানিয়েছো?
-হু?
-বিয়ের কথা বলোনি?
-তুমি ছাড়া আমি কাওকে বিয়ে করবো না।মরে যাবো আমি
ইসরাক হো হো করে হেসে উঠে,
-ছলনা কাকে বলে কতো প্রকার ও কি কি তা তোমাদের মেয়েদের কাছ থেকে শেখা উচিত।সোজা উওর দিলেই পারতে সজল বিয়ে করতে চাইছে না।ভগিজগি কাকে বুঝাও তুমি?

নীলাঞ্জনা আবারও শব্দ করে কেঁদে উঠে।ইসরাক নীলান্জনাকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে,
-আমি সজলকে বুঝিয়ে বলবো।সজলের সাথে তোমার বিয়ের দায়িত্বটা আমি নিলাম।নিজের আর নিজের অনাগত বাচ্চার খেয়াল রেখো!

ইসরাক নীলাঞ্জনা কে বাড়ি পৌছে দেয়।ইসরাকের গাড়ি থেকে নামার সময় নীলান্জনা ইসরাককে জড়িয়ে ধরে,
-প্লিজ ক্ষমা করে দাও না আমায়।তুমি ছাড়া আমি আর কিছু চাই না কাওকে চাই না।প্লিজ!চলো না বিয়ে করে নিই।তোমার বাড়ির এক কোণে পড়ে থাকবো

-আমি অলরেডি বিবাহিত।নিজের খেয়াল রেখো।মাতৃত্বর সাথে অনেক দায়ত্ব আর সন্মান রয়েছে।প্লিজ নিজেকে এতো ছোট করো না যে মাটিতে মিশে যাতে হয়।

ইসরাক চলে যায়।
নীলাঞ্জনা ইসরাকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

“এই পৃথিবীতে সবচেয়ে লাকি পারসোনটা ছিলাম আমি যে তোমার মতো কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম।এখন সবচেয়ে আন লাকি পারসোনটাও আমি যে তোমাকে পেয়েও হারিয়ে ফেললাম।নিজের বিবাহিত জীবনে সুখি হও।তোমার পথের কাটা আমি কখনোই হবো না!

নীলাঞ্জনা সেখানে দাড়িয়েই ইসরাকের নাম্বারে মেসেজটা সেন্ড করে দেয়।তারপর কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যায়।

মেসেজটা ইসরাকের কাছে না পৌছালেও নওরিনের কাছে ঠিক পৌছে গিয়েছে।নওরিন ফোনটা তুলে জোরে একটা আছাড় মারে…সাথে সাথে ফোন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
নওরিনের অবস্থা ভীষন খারাপ রাগে ক্ষোভে ঘেন্নায় তার যা ইচ্ছে তাই করতে মন চাইছে।
বাবা কি না শেষ পর্যন্ত তাকে এমন নোংরা অসভ্য ছেলের সাথে বিয়ে দিলো।যার না আছে চরিত্রের ঠিক না জানে সভ্য আচরন।।
” আচ্ছা ওনি কি সত্যিই ওনার প্রেমিকাকে প্রেগনেন্ট অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন?ছি ছি কি নোংরা লোক।এমন লোকের সাথে থাকবো কি করে”

নওরিন নিজে নিজেই কথা গুলো বলছিলো। এমন সময় পেছন থেকে ইশা আসে,
-কাকে নোংরা বলছিস?
-কাকে আবার আমার বুড়ো বরকে…!
নওরিনের কথায় ইশা ফিক করে হেসে দেয়।নওরিনের রাগে গা জ্বলছে।
-তোর ভাইয়ের কোনো গফ ছিলো?
ইশা একটু ভেবে উওর দেয়
-কেন?
-বল
-ছিলো তো…তবে এখন আর
-থাক বাদ দে

কিছু একটা ভেবে ইশা চোখ মুখ শক্ত করে দাড়ায়।কাঁদো কাঁদো মুখ করে নওরিনকে প্রশ্ন করে,
-আমান ভাইকি তোকে কখনো ফোন করেছে রিনি?কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কি?জানিস কিছু?

আমানের নামটা শুনেই নওরিনের হাত পা কাঁপতে শুরু করে।ইশা নওরিনের কাছে দুই ধাপ এগিয়ে আসে।নওরিনের হাতটা শক্ত করে ধরে
-সেদিনের পর থেকে এতোগুলো দিন কেটে গেলো বছর গড়িয়ে গেলো আমান ভাইয়ার কোনো খোজ নেই জানিস!মরে গিয়েছে না বেঁচে আছে আমরা সেটাও জানি না।

নওরিন তোক মুখ শক্ত করে হাপাতে থাকে।
-মরলে মরবে বাঁচলে বাঁচবে তাতে আমার কি।আমি এই লোকটার নামও শুনতে চাই না প্লিজ….এমন লোকের মরাই উচিত।
নওরিন কথা গুলো বেশ জোরে জোরেই বলে উঠে…..

পেছন থেকে ইসরাকের কানেও কথাগুলো চলে যায়।ইসরাক দরজার সামনেই ছিলো।ঘরে ঢোকার সময় আমানের নামরা কানে পৌছাতেই ইসরাক থেমে যায়।
দরজায় সজোরে একটা ঘুষি মারে।
নওরিন ইশা দুজনই দরজার দিকে তাকায়।ইসরাকের ইচ্ছে করছিলো নওরিনের গলাটা চেপে ধরতে যাতে মুখ দিয়ে আর একটা কথাও না বার হয়,

“লজ্জা করলো না কথাগুলো বলতে?ঘেন্না লাগে না নিজের উপর?তোদের মতো মেয়েরা শুধু ভালোবাসার নাম করে ছলনাই করতে পারে।একজন পুরুষের হৃদয় আত্তা সত্তা সবটা নিংড়ে নিয়ে তাকে মাটিতে মিশিয়ে ফেলতে পারে….. ”
ইসরাকের খুব ইচ্ছে করছে নওরিনকে কথাগুলো বলতে।কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেই।মনে মনে কথাগুলো বলেই ওয়াশরুমে চলে যায়।

ইশাও ভাইকে দেখে সেখান থেকে প্রস্থান করে।
ওয়াশরুম থেকে বার হয়ে ইসরাক নওরিনের সামনে আসতেই…নওরিন ইসরাকের কলার চেপে ধরে,
-আপনি যে অসভ্য একজন পুরুষমানুষ এটা কাল রাতেই বুঝে গিয়েছিলাম,কিন্তু এতোটা চরিত্রহীন সেটা আজকে আবিষ্কার করলাম

ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায় নওরিনের দিকে,
নওরিন ইসরাকের ভাঙ্গা ফোনটা ইসরাকের সামনে উচু করে ধরে….ইসরাক বড়বড় চোখ করে তাকায় ফোনের দিকে!
নওরিন ইসরাকের মুখের সামনে এসে তুড়ি বাজায়,
-আপনার মতো বুড়ো খোকাকে কি করে শায়েস্তা করতে হয় তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে।
ইসরাক নওরিনের হাতটা পেচিয়ে ধরে,
-কি বললে?
-বুড়ো বলেছি।চরিত্রহীন পুরুষমানুষ।ধরবেন না আমাকে। ঘেন্না লাগছে।আপনার সংসার তো আমি এমনিতেও করবো না….তবে যাওয়ার আগে আপনার শাস্তির ব্যবস্থা করেই যাবো!
–ওহ্ তাই নাকি তুমি আমাকে শাস্তি দেবে নাকি আমি তোমাকে দেবো?
–আমি আবার কি করলাম?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here