প্রিয়ংবদা পর্ব ২৭

0
897

#প্রিয়ংবদা
#লেখনীতেঃমৌশ্রী_রায়

২৭.

গোধুলী বেলা!প্রখর তেজস্বী সূর্য ম্লান হয়ে ধারণ করেছে কমলাটে বর্ণ!সমস্ত আকাশ রঙিন হয়ে উঠেছে তারই লালাভ আভায়!
হৃদিতাদের বাড়িটা সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর করে!টিমটিমে ফেইরি লাইট দিয়ে সেজে উঠেছে বাগানের প্রতিটা কোণ।সাদা-নীলের মিশেলে সাজানো হয়েছে বাগানের এককোণে বানানো ছাদনাতলা!প্রদীপের আলো জ্বলজ্বল করছে তারই চারদিকে।সিঁদুরআঁকা ঘটের ওপরে সিঁদুর আঁকা আম্রপল্লব,পান,সুপুরি!পাশেই রাখা রজনীগন্ধার মালা,শাখ,ফুল,ধান,দূর্বা!
পুরোহিত মশাই এসে গেছেন কিছুক্ষণ আগেই!সকল আয়োজন ঠিক আছে কিনা তা পরখ করছেন নিপুণ চোখে।
বাড়িতে তেমন একটা ভীড় নেই!হৃদিতার মা-বাবা কারোরই বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই,দুজনেই মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় আর কোন আত্মীয়ও নেই!কয়েকজন প্রতিবেশীই কেবল আমন্ত্রিত!
ঋতমবাবু তাদেরই প্রয়োজনীয়তার তদারকি করছেন!কার কি লাগবে,কোথায় বসবে, সেসব নিয়ে ওনার চিন্তার অন্ত নেই!যতই হোক মেয়ের বাবা তো!
.
“মেঘকুঞ্জ!” আদৃতের ঘরটাতে তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে অন্বেষা! আদৃত আজ পড়েছে সাদা রঙের পাঞ্জাবি, গলায় সোনালী রেশমি সুতোর কাজ করা, আর সোনালী পেড়ে খয়েরী ধুতি!
অন্বেষা কপালে একটা ছোট চন্দনের ফোঁটা দিয়ে তার মাথায় টোপরটা পড়িয়ে দিতেই সে ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো।বললো,
“হয়েছে!ছুটকি চল।আমাকে আর সাজাতে হবে না। দেরী হয়ে যাচ্ছে তো!”
অন্বেষা ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়! ফিচেল হেসে বলে ওঠে,
“ওহহহ্ হো!দেরী হয়ে যাচ্ছে? আহারে!তর সয়না তাইনা?”

আদৃত কিছুটা লজ্জা পায়! তবে প্রকাশ করেনা।বোনের কান ধরে টেনে আনে নিজের কাছে!তারপর কৃত্রিম রাগ নিয়ে বলে ওঠে,
“বেশি পেঁকে গেছিস!একটা চড় দেব!ছোট মানুষ, ছোটর মতো থাক।এত বেশি বুঝতে হবে না!চল!নিচে চল!”

অন্বেষা ভেংচি কাটে!তারপর দৌঁড়ে নেমে যায় নিচে!আদৃত তা দেখে হেসে ফেলে। সেও খানিকবাদেই নিচে নেমে আসে!
দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই মল্লিকা দেবী ছেলেকে বরণ করে নেন। তারপর ছেলের হাতে ধান-দূর্বা বাঁধা পিতলের আর্শিটা ধরিয়ে দিয়ে আদেশের স্বরে বলেন,
“এটা হাতছাড়া করবি না!”
আদৃত সম্মতিসূচক ঘাড় দোলায়! মল্লিকা দেবী ছেলেকে বিদায় জানাতে গিয়ে বলে,
“আমার জন্য বন্ধু, আর এ বাড়ির জন্য লক্ষ্মী নিয়ে আয়!কেমন?”
আদৃত সহাস্যে উত্তর দেয়,
“আচ্ছা!”

নিয়ম পালনের মাঝেই আনন্দবাবু আর আশুতোষবাবু তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন,
” চল,বেরোই!লগ্ন শুরু হয়ে গেল বলে!”
আদৃত আর অন্বেষা বাবা-দাদুর সাথে বেরিয়ে যায়!
মল্লিকা দেবী পেছনে থেকে দুহাত জোড় করে বলে ওঠেন,
“দুগ্গা দুগ্গা!”
উনি তো মা!ওনার ছেলের বিয়ে দেখতে নেই,আর ওনাকে একা রেখে কাদম্বিনী দেবীও যেতে চাননি!তাই দুজনই থেকে গেলেন বাড়িতে।রাত পেরোলেই কাল নববধূ আসবে বাড়িতে,সেই উত্তেজনাতেই একের পর এক বধূবরণের আয়োজনে মত্ত হলেন শাশুড়ী-বৌমা!
.
টাপুর দেবী হৃদিতার ঘরে!মেয়েকে আজ তিনি নিজের হাতে সাজাচ্ছেন একদম মনের মতো করে!লাল টুকটুকে বেনারসী,বিশাল কালো খোপায় জড়ানো জুঁইফুলের গাঁজরা,হাত ভর্তি চুরি,শাখা,পলা, কপালে লাল টিপ,তারই পাশ ঘেষে শ্বেত চন্দনে কল্কি আঁকা,নাকে নোলক,কানে ঝুমকো,গলায় কন্ঠহার,সীতাহার,সিঁথিতে টিকলি সব মিলিয়ে একতম যেন শিল্পীর তৈরী কোন প্রতিমা!কৃষ্ণরঙে রাঙা স্বর্ণের প্রতিমা!
টাপুর দেবী মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে দুগালে হাত রাখেন, মাতৃসুলভ স্নেহময় কন্ঠে বলেন,
“খুব সুন্দর লাগছে তোকে হৃদ!ভীষণ সুন্দর! ”

হৃদিতা হাসে!সে জানে মায়ের কাছে সন্তান সবসময়ই সুন্দর! তবে নিজেকে একটিবার আয়নায় দেখে নেবার ইচ্ছেটা সামলানো যায় না!বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দাঁড়ায় আয়নার সামনে!টাপুর দেবী দূর থেকে দেখে হাসেন!
হৃদিতা আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে অবাক হয়!তার নিজের চোখজোড়াও আজ বলছে, তাকে সুন্দর লাগছে, ভীষণ সুন্দর!আদৃতের ভাষায়, পুতুল বউ!

হৃদিতা লজ্জা পায়!লাজুক মন ভেবে পায়না,আদৃত তাকে এভাবে দেখে কি বলবে!খুশি হবে না? হৃদিতা আর ভাবে না। সে জানে খুশি হবে!খুশি না হয়ে তো উপায়ই নেই!সে যে নিজেই হৃদিতাকে লাল টুকটুকে পুতুল বউ সাজতে বলেছিল!
ভাবনার মাঝেই নিচ থেকে শোরগোল কানে আসে,
“বর এসেছে বর এসেছে!”
টাপুর দেবী চকিতে তাকান। বরবরণ করতে যেতে যেতে মেয়েকে বলেন,
“চুপচাপ বসে থাক।একটু বাদেই তোকে নিয়ে যাবে!আমি যাই,জামাইকে বরণ করে আসি!শান্ত হয়ে থাকিস মা!”
হৃদিতা মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে অস্ফুটে বলে,
“হু!”
টাপুর দেবী বেরিয়ে যান!
আর হৃদিতা!সে তো বদ্ধ ঘরে চোখ বুজে কল্পনা করে,তার প্রেমিকপুরুষটির বরবেশ!
.
ছাদনাতলা!চারিদিকে মুখর হচ্ছে, সানাইয়ের সুমধুর ধুন!থেকে থেকে বেজে উঠছে শঙ্খ!থেমে থেমেই কানে ভেসে আসছে উলুধ্বনি!
ঋতমবাবু আর আদৃত বসেছে মুখোমুখি! পুরোহিত মশাইয়ের সাথে একের পর সংস্কৃত মন্ত্রের উচ্চারণে পালন করে যাচ্ছেন বিবাহের যাবতীয় বিধি-বিধান!আশুতোষবাবু আর আনন্দবাবু দাঁড়িয়ে আছেন মন্ডপের পাশেই!অন্বেষা বসে আছে দাভাইয়ের কাছে!খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে প্রতিটা কাজ!
নিয়ম রক্ষা হলে পুরোহিত মশাই’ই বলে উঠলেন,
“এবার মেয়েকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন রায় মশাই!”

ঋতমবাবু সম্মতি জানালেন!যারা বিয়ের পিড়ি ধরবে তাদেরকে ইশারায় যেতে বললেন হৃদিতার ঘরের সামনে।
তারা সে মতোই কাজ করলো!
খানিকবাদেই পিড়িতে বসে মুখখানি পানপাতায় আড়াল করে লাল টুকটুকে হৃদিতা প্রবেশ করলো ছাদনাতলায়!
আদৃত উঠে দাঁড়ালো! কম্পমান হৃদয় নিয়ে অপেক্ষা করে গেল প্রিয়তমার বধূসাজখানি দেখার!
হৃদিতাকে পিড়িতে করে একে একে সাতবার ঘোরানো হলো আদৃতের চারিপাশ দিয়ে!তারপরে দাঁড় করানো হলো আদৃতের মুখোমুখি !
পুরোহিত মশাই এবারে বললেন,
“এবারে শুভ দৃষ্টি হবে!পানপাতাটা মুখ থেকে সরাও মা!”

হৃদিতা কথা শুনলোনা।বরং হাতের তাম্বুলপত্রদুটিকে আকড়ে ধরলো আরো শক্ত করে।
ঋতমবাবু এবার মেয়ের কাছঘেষে দাঁড়ালেন !স্নেহসুলভ কন্ঠে বললেন,
“এমন করেনা মা!পানপাতাটা নামাও মুখ থেকে!”

হৃদিতা আর অমত করতে পারেনা।ধীর হস্তে পানপাতাদুটো সরিয়ে নেয় মুখের ওপর থেকে! দৃশ্যমান হয় তার বধূবেশা মুখখানি!
আদৃত সেদিকে তাকিয়েই নিজের কয়েকটা হৃদস্পন্দন হারায় বলে মনে হয়!
হৃদিতা চোখ মেলে দেখেনি তখনো!লজ্জা,ভয়,দ্বিধা সব মিলিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে খিঁচে বন্ধ করে আছে দুই নয়নের পাতা!বদ্ধ আঁখিপল্লব কম্পিত হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে!
ঋতমবাবু আবারো মেয়েকে চোখ মেলে চাইতে বলেন।হৃদিতা বরাবরের মতো শোনে বাবার কথা! কাজলরেখা আঁকা দীঘল আঁখিজোড়া মেলে তাকায় সরাসরি আদৃতের চোখের দিকে!চারচোখ বাঁধা পড়ে একই সুতোয়!দুজনেই যেন হারিয়ে যায় দুজনের নয়নপুস্কুরিনীর গভীরতায়!
প্রণয়রঞ্জিত এই দৃষ্টিবিনিময়ের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় শুভ দৃষ্টি!

তারপর পুরোহিত মশাই সাজানো মালা দুটো একে একে হৃদিতা আর আদৃতের হাতে তুলে দিয়ে বলে ওঠেন,
“এবারে মালাবদল করো দুজন!পরপর তিনবার!একজনের মালার ভেতর দিয়ে অপরজনের মালা গলিয়ে পড়িয়ে দাও পরস্পরের কন্ঠে!”

এবারে আর বিলম্ব হয়না!আদৃত আর হৃদিতা একত্রে মালা পড়িয়ে দেয় একে অপরের গলায়,পরপর তিনবার!
পুরোহিত মশাই সন্তুষ্ট কন্ঠে জানান,
“মালাবদল সম্পন্ন হলো!”

এরপর হৃদিতার পিড়ি নামানো হয় নিচে। তাকে আর আদৃতকে বসানো হয় মুখোমুখি!তারপর মঙ্গলঘটের ওপরে দুজনের হাত একে অপরের হাতের ওপরে রেখে তার ওপরে রাখা হয় ফুলের মালা।ঋতমবাবু বসেন পাশে!পুরোহিত মশাইয়ের কথামতো কাজ করে সমাপ্ত করেন কন্যা সম্প্রদানের অনুষ্ঠান!
এরপর হৃদিতা আর আদৃতকে দাঁড় করানো হয়!বেঁধে দেয়া হয় দুজনের গাটছড়া!মন্ত্রের তালে তালে সাতবার প্রদক্ষিণ করে অগ্নিকুন্ড!সম্পন্ন হয় সপ্তপদী!
তারপর অগ্নিদেবতার উদ্দেশ্যে দুজন মিলে অর্পন করে খই-পান-সুপুরি!
এরপর আসে একদম সর্বশেষ নিয়ম। সিঁদুরদান।
আদৃতের হাতে ধরে রাখা আর্শিটায় সিঁদুর ভরিয়ে তা আবারও তার হাতে দেন পুরোহিত মশাই!বলেন,
“সিঁদুরটা মা জননীর সিঁথিতে পড়িয়ে দাও বাবা!তবে না দেখে!”

আদৃত সায় জানালো।একপলক হৃদিতার মুখের দিকে তাকিয়ে আন্দাজ করে নিল মাঝসিঁথির স্থান।তারপরে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে পড়িয়ে দিল সিঁদুরটুকু!
হৃদিতার শূণ্য সিঁথিখানি খনিকেই ভরে ওঠে রক্তিম সিঁদুরে!রাঙা সিঁথির ঠিক বরাবর নাকেও ছুঁয়ে গেল খানিকটা সিঁদুর!
হৃদিতার সিঁদুর রাঙা মুখশ্রী আড়াল করা হলো লজ্জাবস্ত্র দিয়ে!
অন্বেষা এসে এবার তার পাশে বসে!কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তোমার নাকে সিঁদুর পড়েছে হৃদ!এর মানে কি জানো? দাভাই তোমায় অনেক আদর করবে হৃদ!ভীষণ আদর করবে!”
হৃদিতা লজ্জা পায়!তবে লজ্জাবস্ত্রে ঢেকে থাকা মুখখানির লজ্জা চোখে পড়ে না কারোরই!
পুরোহিত মশাই এবারে বলেন,
“দুজন দুজনকে স্পর্শ করো,তারপর একত্রে উচ্চারণ করো,
যদেতৎ হৃদয়ং তব
তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম,
তদস্তু হৃদয়ং তব!

অর্থ্যাৎ,
তোমার হৃদয় আমার হোক,আর আমার হৃদয় হোক তোমার!”

আদৃত হৃদিতা তাই’ই করে। গোধুলী বেলার কনে দেখা আলোয় বিবাহের সর্বোত্তম মন্ত্রখানি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে দুজন আজীবণের তরে বাঁধা পড়ে দুজনের সাথে!
পুরোহিত মশাই প্রসন্ন কন্ঠে বলেন,
“বিবাহ সুসম্পন্ন হলো!আজ থেকে তোমরা দুজন স্বামী-স্ত্রী হলে!তোমাদের বন্ধন অটুট হোক!ওঁ তৎ সৎ!”

আর তারপর!তারপরে শঙ্খ-উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠল চারিপাশ!সবকিছুর মাঝেই দৃশ্যমান হলো এক প্রেমিকযুগলের শুভপরিণয়ের শুভবার্তা!
.
আকাশে তখন একাদশীর অপূর্ণ শশী!কৃষ্ণবিবর সেজে উঠেছে তারই রুপোলী স্পর্শে।বাইরে থেকে তখনও ভেসে আসছে অতিথীদের শোরগোল!আশ্বিনের শীতল হাওয়ায় ভেসে আসছে বাগানের হাসনা-হেনার ঘ্রাণ!সেই সুগন্ধি মন ভরিয়ে দিলেও বাতাসে গোটা দেহে ধরে যাচ্ছে কাঁপন!

এসবের মাঝেই বিয়ের বাসরে বসে আছে আদৃত-হৃদিতা, আশুতোষবাবু, অন্বেষা আরও দু তিনজন প্রতিবেশী ছেলে-মেয়ে!
আসরের কেন্দ্রবিন্দু বর-কনে!সকলে তাদেরকে নিয়েই মেতে আছে!গান,কৌতুক,কবিতা সবকিছু দিয়ে মাতোয়ারা বিবাহ বাসর!
এক পর্যায়ে গিয়ে অন্বেষাই প্রস্তাব উত্তোলন করলো,

“এই দাভাই একটা গান গা!তুই আর হৃদ দুজন মিলে গা। ডুয়েট কর!করবি না?”

হৃদিতা একপলক অন্বেষাকে দেখে নিয়ে আদৃতের দিকে তাকালো।সেও হৃদিতার মুখপানেই চেয়ে ছিল। চোখাচোখি হওয়ায় চোখের ইশারায় শুধালো,
“গাইবে?”

হৃদিতাও একই কৌশলে সম্মতি জানালো!আদৃত বিস্তর হাসলো। তারপর একবার গলা ঝেড়ে নিয়ে সুর তুলল কন্ঠে,
“আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা
চাঁদ মোছায় অন্ধকার
আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা
চাঁদ মোছায় অন্ধকার
ওরে গান গেয়ে যা
যা সুর দিয়ে যা
অনেক দিনের হারানো সুখ
পেলামরে আবার
আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা
চাঁদ মোছায় অন্ধকার”

স্বলাজে নত আঁখি
দুটি চোখ ভরে দেখি
স্বলাজে নত আঁখি
দুটি চোখ ভরে দেখি
যে আঁখির তারায় তারায়
লেখা ছিল নামটি আমার
যে আঁখির তারায় তারায়
লেখা ছিল নামটি আমার
স্বপ্নের গাঁথা মালা
পরিয়ে দিলাম কণ্ঠে যে তার
স্বপ্নের গাঁথা মালা
পরিয়ে দিলাম কণ্ঠে যে তার

ওরে গান গেয়ে যা
যা সুর দিয়ে যা
অনেক দিনের হারানো সুখ
পেলামরে আবার
মিলন তিথির পূর্ণিমা
চাঁদ মোছায় অন্ধকার”

এটুকু গেয়েই সুর থামালো আদৃত!হৃদিতাকে চোখের ইশারায় বোঝালো,
“এবারে তুমি গাঁও!”

আদৃতের কথামতোই এবারে গাইলো হৃদিতা।আদৃত যেখানে সুর ছাড়লো, ঠিক তার পরের অন্তরাটাই,

“হৃদয়ের এত আপন
যে ছিলো সুদুর গোপন
হৃদয়ের এত আপন
যে ছিলো সুদুর গোপন
সে এসে আজ সহসা
প্রানের কুলে আনলো জোয়ার
সে এসে আজ সহসা
প্রানের কুলে আনলো জোয়ার
কি ভাষায় বলবো তারে
তুমি আমার আমি তোমার
কি ভাষায় বলবো তারে
তুমি আমার আমি তোমার

ওরে গান গেয়ে যা
যা সুর দিয়ে যা
অনেক দিনের হারানো সুখ
পেলামরে আবার
মিলন তিথির পূর্ণিমা
চাঁদ মোছায় অন্ধকার!”

গানশেষে সকলের হাততালির আওয়াজ উপচে পড়লো বর-বধূর চারিপাশ থেকে!
অন্বেষা ফিচেল হেসে বললো,
“বাহ্ বাহ্!গান দেখি একদম সিলেক্ট করা ছিল!কত ফার্স্ট রে তোরা!আমি শিওর আমি খুব দ্রুত পিসিমণি হয়ে যাব!তোদের ফার্স্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসনেসের ওপর আমার ভরসা আছে!”

অন্বেষার কথা শুনে হৃদিতার চক্ষু কোটরাগত হবার উপক্রম।পাশেই দাদু বসে!সবার মাঝে, তার সামনে এমন ঠোঁটকাটা কথা শুনে হৃদিতার লাজুক তনু আরো নুঁইয়ে গেল, একদম অবলম্বনহীন পুঁইশাকের ডগাটির মতো!
তবে আদৃত বিচলিত হলোনা। নিদারুণ শান্ত কন্ঠে সে বললো,
“গান আগে থেকে সিলেক্ট করার টাইম পাইনি!ওটা ইমিডিয়েটলি সিলেক্ট করে, এখুনি গাওয়া। সে আমাদের মনের মিল ছিল বলে তোর অমন মনে হয়েছে!বুঝতে হবে!
তাছাড়া তোর পিসি হবার চান্স আপাতত নেই!কাল ও বাড়িতে গিয়ে মা-ঠাম্মির সাথে দেখা করিয়ে ওকে আবারও এখানে রেখে যাব!
মাস পেরোলেই টেস্ট!সেটা কিন্তু তোরও। এমন পাকনামো না করে পড়ায় মনোযোগ দে!টেস্ট রেজাল্ট যদি খারাপ হয়, কান ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দেব!মনে রাখবি!”

অন্বেষা গাল ফুলিয়ে তাকায়! তার ভাইটি যে তাকে সবসময় এমন খোলামেলা হুমকি দেয় তা ভেবেই ফুলন্ত গাল আরো ফুলে থাকে।
সে আর কথা বলে না।বসে রয় ঠোঁট উল্টে!

আশুতোষবাবু এবারে তাড়া দিয়ে বলেন,
“অনেক গল্প-আড্ডা হলো!এবারে চল,খেতে যাবে!দাদুভাই,আমরা যাচ্ছি! তুমি এসো দিদিভাইকে নিয়ে আস্তেধীরে! ”
আদৃত সম্মত হলো। সকলেই বেরিয়ে গেল একে একে!আদৃত হৃদিতার হাত ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে বললো,
“সারাদিন না খেয়ে আছো,মাথা ঘুরে গেলে আমাকে বলবে ওকে?ধরে নেবে আমাকে শক্ত করে!”

হৃদিতা হেসে সম্মতি জানায়! আদৃতের হাত ধরেই এগিয়ে যায় খাবার প্যান্ডেলের দিকে!
আর চলতি পথে বারবার অবলোকন করে যায় তার জীবনের একমাত্র প্রণয়পুরুষটিকে,যে কিছুক্ষণ আগেই তার প্রেমিকপুরুষ থেকে তার জীবনসঙ্গী হয়ে গেল। যার অস্তিত্বের ওপর এখন কেবল তার রাজত্ব!
হৃদিতার ভাবতেই এক অভাবনীয় আনন্দ হলো!তার প্রেমিকপুরুষটি এখন তার স্বামী কথাটা মস্তিষ্কময় বিচরণ করতেই অদ্ভুত খুশির পুলক খেলে গেল গোটা দেহে!শিরায়-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়লো প্রিয়তমকে নিজের করে পাবার আনন্দানুভূতি!

#চলবে!

[আজ এক পর্ব!
বিয়ে হয়ে গেছে!নাও গিভ মি চক্কেত,আইত-কিম!😅

আমি বিয়ের নিয়ম সম্পর্কে যেটুকু জানি সেভাবেই লেখা।আমাদের অঞ্চলে এমন করেই বিয়ে হতে দেখেছি!যদি কারও ভুল মনে হয় তবে জানাবেন।আমি পরবর্তী সময় মাথায় রাখবো!

আর হ্যাঁ, লেখিকা নিয়মিত নিয়ম করে তিনবেলা ডিপ্রেশন খায়!🙃 শোনেননি তাই না!আমার কাছে শুনুন!

আমি অ্যাডমিশন সিকার।ঢাবির পরীক্ষা ১ তারিখ! আমার জন্য একটু দোয়া করবেন।😊

ধন্যবাদ সবাইকে!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here