প্রেমদণ্ড (০৮)💚

0
312

#প্রেমদণ্ড (০৮)💚

সময়টা বিকাল, আসরের পরে। ফাতিমা বেগম এক হাতে তসবিহ জপছেন। আরেকটি হাত ইজহানের মাথায়। সে পাশেই সোফায় শুয়ে কুশনের ওপর মাথা রেখে চোখ বুজে আছে। ফাতিমা বেগম ছেলের চুল টেনে দিচ্ছেন। টুকটাক গল্প হচ্ছে মা-ছেলের মধ্যে। অনুজা গিয়েছে কিচেনে। বিকেলের জন্য কিছু নাস্তা বানাতে। যদিও ফাতিমা বেগম নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, “তোমার কিছু করতে হবে না। সারা দুপুর পড়েছ এখন একটু রেস্ট কর।”

অনুজা শাশুড়ি মায়ের নিষেধাজ্ঞা অমান‍্য করে বলেছিল, “না আম্মা আমি পারব। সমস্যা নেই। রান্নাবান্না করতে আমার খারাপ লাগে না।”

তারপর আর ফাতিমা বেগম কিছু বলেননি। আসরের নামাজ আদায় করে সোফায় বসে তসবিহ জপছেন।

ইজহান হঠাৎ বলে উঠল, “আচ্ছা আম্মা! আব্বাকে কে বলেছিল আমি একটা মেয়েকে নিয়ে কাজি অফিসে গিয়েছি বিয়ে করতে? আর কে ই বা বলল বিয়ে করে বউ নিয়ে পালিয়েও যাচ্ছি। এসব বায়োনট কথা কিভাবে বলে মানুষ?”

ফাতিমা বেগম প্রতিত্তোরে বলল, “কাজি অফিসের খবর দিয়েছে জাফর নামের লোকটা।ওইযে তোর বাবার সাথে আগে শেয়ারে ছিলেন না? আর তোরা যে পালিয়ে যাচ্ছিস এ খবর দিয়েছে আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় ভাবি। হঠাৎ করে ফোন দিয়ে বলছেন,আপা আপনার ছেলেটাকে দেখলাম চারতলার ভাড়াটিয়ার মেয়েটাকে নিয়ে কোথাও যেতে। কাধে ব‍্যাগও দেখলাম। একটু খোঁজ খবর করুন। এখন যা দিনকাল। এদিকে তোর আব্বাও ওই খবর শুনে তড়িঘড়ি করে বাসায় ফিরে জানালাম। আমি তোর বাবাকে সবটা বললেন। তারপর তিনি বললেন, আইরিন আপাকে একটা ফোন দাও। শুন মেয়েটা কোথায় এখন। শুধু শুধু অন‍্যের কথায় সন্দেহ করতে পারিনা। আইরিনকে ফোন দিয়ে জানলাম অনুজা বাসায় নেই। দুপুরের পরে অনন‍্যার সাথে বেড়িয়েছে। হঠাৎ করে এভাবে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করাই ও কিছুটা অবাক হয়েছিল। বারবার জিজ্ঞাসা করাতে ওকেও বলে দিলাম। তারপর আর কি তোর বাবা গিয়ে তোদের নিয়ে এলেন।”

“তারপর কোন কথা না শুনে বিয়ে দিয়ে দিলেন।”

“আচ্ছা, সত্যি করে বলতো তোরা কোথায় যাচ্ছিলি?”

“মেট্রোরেলে। অনুজা বলেছিল ও নাকি এখনো মেট্রোরেলে ওঠেনি। ওদিকটায় আর কখন যায় না যায় তাই আমিই নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। ওদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো। টেস্টের আগে আন্টি ওকে কিছুদিন পড়ালেন আমার কাছে। সেক্ষেত্রে এটুকু বন্ধুসূলভ সম্পর্ক থাকা কি অন‍্যায় আম্মা? কিন্তু এরবেশি কিছুই ছিল না। ভাবিনি ওভাবে কখনোই। তবে আইরিন আন্টি এতটা চটে যাবেন ভাবতে পারিনি আমি।”

“বাবা রে, এত অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে একা থাকে। একে তো সঙ্গী হারা। তারওপর ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে মানুষ করার চিন্তা মাথার মধ্যে। নিজে হাতে সবটা করে। এমন কথা শুনে ও মেজাজ ঠিক রাখতে পারেনি। সেদিন অনুজাকে নিয়ে যখন কোচিংয়ে গিয়েছিলি ও এসেছিল। কান্নাকাটি করল। বারবার বলল, কি ভুল করলাম আপা। মেয়েটার কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম। আমি ঠিকমতো খেয়াল রাখতে পারলাম না। মানুষটাকে কি জবাব দিব আমি? কত করে বুঝিয়ে শান্ত করলাম। একমাত্র ছেলের বউ তাকে কি যে সে ভাবে রাখতে পারি? রানির হালাতে থাকবে আমার ঘরে।”

ইজহান শোয়া থেকে উঠে বসল। মায়ের দিকে ফিরে হেসে দিয়ে বলল, “দেখি তোমার রানী সাহেবা কি রান্নাবান্না করছেন। সেই কখন গিয়েছে।”

অনুজা ব‍্যাস্তহাতে রান্না করছে। তিন চুলার গ‍্যাসস্টোভে চা পাতা ফুটছে, বড়া ভাজা হচ্ছে, আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।

কোমরে কারো হাতের স্পর্শ কেঁপে উঠল অনুজা। চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, “কে কে?” ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা।

হাতের বন্ধন আরও শক্ত হলো। গলায় ঠোঁট ঠেকিয়ে নেশালো কন্ঠে বলল, “এত ভয় কেন ষোড়শী? আমি ছাড়া কে আছে এভাবে ধরার? নাকি আমার স্পর্শ মনে থাকছে না?”

অনুজা নিজেকে ধাতস্ত করে বলল, “ছাড়ুন তো। ঢঙ দেখাতে হবে না। দেখি সরেন। দুধটা উতলে উঠছে। হিট কমাতে হবে।”

ইজহান অনুজাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার ভাজা কতদূর? সুন্দর ঘ্রাণ বেড়িয়েছে।”

“এইতো চুলার গুলো নামিয়ে নিলেই হয়ে যাবে।”

ইজহান কথা না বাড়িয়ে ট্রে নিয়ে আসল। কাপে চা ঢেলে, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইগুলো হাপ প্লেটে উঠিয়ে নিল। অনুজা গরম ডালের বড়া প্লেটে উঠিয়ে ট্রে সাজিয়ে বলল, “এগুলো নিয়ে যেতে পারবেন না? আমি এদিকটা গুছিয়ে আসছি।”

ইজহান অনুজার ঘামে ভেজা কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলল, “অবশ‍্যই রানী সাহেবা।”

ইজহান আর দাড়াল না ট্রে হাতে করে ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল। অনুজা সেদিক তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল, “বেড়া মানুষ এমন খবিশ টাইপের কেন হয়?”

অপ্রত্যাশিত ভাবে আজ বিকালের নাস্তায় রমিজ উদ্দিনও হাজির হয়েছেন। চায়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তিতে চোখ বুজে ফেললেন। গরম গরম ডালের বড়া এক কামড় দিয়ে বললেন, “মাশা আল্লাহ! মা জননির হাতের চা ও বড়ার তো জবাব নেই। এত সুন্দর রান্না জানো আগে জানতাম না তো। মাশা আল্লাহ!”

শশুর বাবা থেকে প্রশংসা বাক‍্য শুনে অনুজা মুচকি হাসল। ফাতিমা বেগমও বললেন, “অনেকদিন পরে এমন সুন্দর ডালের বড়া খেলাম। বেসন দিয়ে পেয়াজু খাওয়ার যুগে এখন আর ডালের বড়া কেউ খেতে চাই না। ঠিক এভাবে আগে আমার মা বানাতো। তুমি বোধহয় সিল পাটায় বেটেছো তাই না? তা এ রান্না কোথায় শিখলে মা?”

“দাদুর থেকে। আগে যখন গ্রামে যেতাম দাদু ডালের খুদ বেটে, আতপ চালের গুড়ো মিশিয়ে বানাতেন। এতে বেশি মুচমুচে হয়। আব্বুর খুব পছন্দ ছিল।”

ইহজান এক পিস ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সসে চুবিয়ে এক বাইট নিয়ে বলল, “এটাও তো ভালো বানিয়েছ।”

সবার এত এত প্রশংসায় অনুজার খুব খুশি খুশি লাগছে। ঠিক এভাবেই তার বাবা বলতেন। বাবার কথা মনে পড়তেই দীর্ঘশ্বাস নির্গত হলো। অনুজা নিজেকে স্বাভাবিক করে ফাতিমা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল, “আজ রাতে আমি রান্না করি আম্মা?”

ফাতিমা বেগম পুত্রবউয়ের আবদার নাকচ করে বললেন, “একদম ই নয়। তুমি মাগরিবের নামাজ শেষে সোজা পড়তে বসবে। কোন কাজ নয় আর। দুদিন বাদে পরিক্ষা। এসবের দরকার নেই।”

অনুজা বলল, “জামিলা খালা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। আপনার হাটুতে ব‍্যাথা। এ অব‍্যস্থায় কিচেনে দাড়িয়ে রান্না করা ঠিক হবে না। তারচেয়ে বরং আমিই রান্না করি। রাতে পড়তে বসব ইনশাআল্লাহ।”

রমিজ উদ্দিন ডালের বড়ার শেষ পিসটি মুখে নিয়ে বললেন, “বেশ তো কর। তা আজ কি রান্না করবে আমার মা জননি?”

অনুজা লাজুক হেসে বলল, “সারপ্রাইজ আব্বা।”

রমিজ উদ্দিন হেসে দিলেন। চোখের কোনায় দুটো ভাজের সৃষ্টি হলো। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, “বুড়ো বয়সে এরকম সারপ্রাইজ পেলে মন্দ হয় না। কি বল ফাতু?”

ফাতিমা বেগম রাগান্বিত স্বরে বললেন, “খবরদার আমাকে ফাতু বলবেন না।”
_________________________
“আসসালামু আলাইকুম ম‍্যাম। দয়াকরে বলবেন আপনার বাসার এড্রেস কি দশ নম্বর গেটের বা পাশের তিন নম্বর বাড়িটা?”

আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসতেই দ্বিধাদ্বন্দ নিয়ে রিসিভ করেছিল ইসরাত। ফোন কানে দিতেই উক্ত কথাগুলো কানে ভেসে আসল। অবাক হল সে। সে তো কোন অর্ডার করেনি।

ওপাশ থেকে পুনরায় ‘হ‍্যালো ম‍্যাম শুনতে পাচ্ছেন?’ বলতেই ভাবনার সুতো কাঁটল ইসরাতে। উত্তর দিল, “জি হ‍্যাঁ।”

ওপাশ থেকে ফের বলল, “তাহলে গেট থেকে পার্সেলটি রিসিভ করুন। আমি নিচে দাড়িয়ে আছি।”

ইসরাত একপ্রকার বিস্ময় নিয়ে নিচে এল। পার্সেল হাতে ডেলিভারি ম‍্যান দাড়িয়ে আছেন। ইসরাত যেতেই পার্সেলটি হাতে দিয়ে তিনি চলে গেলেন। বেশ বড়সর সাইজের পার্সেল। পার্সেল নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এল। ভাগ‍্যিস আজকে সে ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই। নাহলে কি জবাব দিত আম্মুকে? সে তো অনলাইনে কোন অর্ডার ই করেনি।”

বিস্ময় নিয়ে পার্সেলটি খুলতে লাগল ইসরাত। মনের মধ্যে কতশত ভাবনা এসে জড়ো হচ্ছে। পার্সেল খুলতেই এক এক করে খুব সুন্দর সুন্দর প্রোডাক্ট নজরে আসল।
একটা কাস্টমাইজ করা ডায়েরি। মলাটে দোলনায় বসা একটি মেয়ের ছবি। বোঝা যাচ্ছে আঁকা অথবা প্রিন্টের। তার ওপর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, ‘তোমায় দেখার দিনগুলো।’ বাসন্তি রঙের একটা জামদানি শাড়ি, পায়েল, দুমোঠ লাল-হলুদ চুড়ি। বেলিফুলের গাজড়া, ম‍্যাচিং হিজাব সঙ্গে বেশকিছু ফুলের পিন, আংটি। প্রত‍্যেকটা জিনিস ইসরাতের খুব পছন্দ হলো। পার্সেল বক্স পুরোটা ফাঁকা করতেই একটি ভাজ করা কাগজ পেল।

তাতে লেখা—
“ষোড়শী কিশোরী! সামনে পরিক্ষা। দশ বছরের সংগ্রাম। আশাকরি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবেন। আপনার জন্য ছোট্ট উপহার ষোড়শী। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করুন। আমাদের আবার দেখা হবে কোন এক প্রহরে।” —–আইমান……

পরিচিত নামটি চোখে পড়তেই ঠোঁট কোণে হাসি ফুটে উঠল ইসরাতের। মনে মনে বলল, “যাক শ‍্যামপুরুষ তাহলে ভুলেনি আমায়। এ উপহারসামগ্রী, শাড়ি, যেদিন আমাদের দেখা হবে সেদিনই পড়ব শ‍্যামপুরুষ। আমি অপেক্ষা করব।”

ডায়েরিটা রেখে বাকিগুলো খুব যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখল। অতঃপর কলম দানি থেকে একটা কলম নিয়ে ডায়েরিতে লিখতে শুরু করল মনের অব‍্যাক্ত কথন……।
____________________
আলমারির জামাকাপড় গুলো বড্ড এলোমেলো হয়ে থাকায় মুশফিকা সবগুলো জামাকাপড় বেড় করে ভাজ করতে বসেছে। আরু গিয়েছে দাদির কাছে। সে বেশকিছুদিন হয়েছে দাদু কোলের মধ্যে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। ডাকলেও আসে না। এ নিয়ে কিঞ্চিৎ মন খারাপ মুশফিকার। এত ছোট মেয়ে মায়ের কাছে থাকে না অথচ দিব‍্যি দাদির কোলের মধ্যে পড়ে থাকে। কিছুক্ষণ আগেই মায়ের সাথে কথা হয়েছে তার। আজ নাকি অনুজা রান্না করছে রাতের খাবার। শুনে ভালো লেগেছে মুশফিকারও। মা-বাবা, ভাই-ভাবি সবাই মিলেমিশে ভালো থাকলেই তার আলাদা শান্তি লাগে। নিজের আপনজন রেখে অনত্র থেকে সারাক্ষণ মন কেমন করে তাদের জন্য। মুশফিকা একমনে কাপড় গোছাচ্ছিল। সালাম দিয়ে হঠাৎ করে রুমে প্রবেশ করল আহিদ। ”আসসালামু আলাইকুম বউ।”

মুশফিকা সালামের জবাব দিয়ে বলল, “আজ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে!”

আহিদ হাতের ব‍্যাগগুলো বিছানায় রেখে মুশফিকাকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে বলল, “তোমার টানে বউ।”

“আমার টানে না ছায়। রাত দশটা না বাজলে তো এ মুখো হও না।”

“আরু কোথায়?”

“দাদুর কাছে। মেয়েটা কি হয়েছে বল তো! এত ছোট মেয়ে আমার, আমার কাছে না থেকে এখনই দাদুর কাছে থাকা শিখছে।”

“ভালোই তো। আরু সোনা আমাদের স্পেস দিচ্ছে বুঝলে? ওর হয়তো ভাইবোনের দরকার।”

মুশফিকা এ ঝটকায় আহিদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “আরুর কথা না ছায়। এই মতলব আটছো তাহলে?”

“সমস‍্যা কী? আরু বড় হয়েছে না?”

“সবে তিনে পা রাখল মেয়ে। এতই যখন দরকার তুমি পে”টে রাখলেই পারো। তখন বুঝবে কত গমে কত আটা।”

“সেসব বুঝে কাজ নেই আমার। নতুন মেহমান আসলে সমস্যা কোথায় মুশফিকা?”

“তোমার বিবেক কম আহিদ। সবে আরুর তিনবছর হলো। সিজারিয়ানের সময় কোমরে দেওেয়া ইনজেকশনের সূচ ফুটানোর ব‍্যাথাটা আমি আজও অনুভব করি আহিদ। তুমি বুঝবে না। এক ফোঁটাও না। দশটা মাস পেটে রাখা কত যে কষ্টের সে তুমি বুঝবে না। কারণ পেটে তো তোমার পেটে নয়, ছিল আমার পেটে। মাত্রাতিরিক্ত মুড সুয়িং, মর্নিং সিকনেস, তীব্র ঘ্রাণশক্তি এসব একটা মানুষকে কতটা কষ্ট দেয় জানো? কষ্টের কথা বাদ দিলাম। এখন একটা বেবি নিলে ঠিকমতো আরুর খেয়াল রাখতে পারব বলো? আমার নিজেরই তো তখন আলাদা যত্নের প্রয়োজন পড়বে। ও মাতৃস্নেহ থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হবে। ওরমধ‍্যে একটা শূন্যতা তৈরী হবে। ওর মনে হবে ওর ভাই বা বোন এসে ওর জায়গা দখল করে নিয়েছে। ওকে কেউ ভালোবাসে না। তখন পুরো পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু হবে নিউবর্ন বেবি। জানো একবার শুনেছিলাম ভদ্রমহিলা গ‍্যাপ না দিয়ে বেবি নেওয়াতে সবার আকর্ষণ গিয়ে পড়ে ছোট বেবির ওপর। পাঁচ বছরের মেয়েটা মেয়ের থেকে পূর্বের ন‍্যায় আদর ভালোবাসা থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হয়েছিল। কিভাবে যেন ওর মনে হয়েছিল মা আর ওকে ভালোবাসে না। অপ্রত্যাশিত ভাবে ছোট বেবির ওপর ওর হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। একদিন ভদ্রমহিলা বাচ্চাকে বিছানায় শুয়ে রেখে কোথাও একটা গিয়েছিলেন তখন সেই সুযোগে ওনার পাঁচ বছরের মেয়েটা বিছানা থেকে বাচ্চাটাকে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। সদ‍্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা। ফলে মৃত্যুই হয়েছিল ওর পরিণতি। বুঝতে পারছো? আমাদের আরুও যে ওরকম হবে না তার কি গ‍্যারান্টি আছে? বাচ্চাদের মত হয় কোমল। ছোট বয়সে যদি সেই কোমল হৃদয় ব‍্যাথার আচর লাগে তখন সেটা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। গেথে থাকে মনে। আমাদের আরু আরেকটু বড় হোক। তখন আল্লাহ চাইলে ওর ভাইবোন আসবে।”

আহিদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। সে এভাবে কখনও ভেবে দেখেনি। পুরুষ মানুষের বোঝার কথাও না। অনুভব না করলে বুঝবে কিভাবে? অপরাধবোধে ছেয়ে গেল আহিদের উজ্জ্বল মুখখানা। মুখফুটে কিছু বলল না। মৌন হয়ে বসে রইল।

মুশফিকা আহিদের মন খারাপ আঁচ করতে পারে। দ্রুত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড়গুলো গুছিয়ে আহিদের পাশে বসে বলল, “রাগ করেছ আহিদ?”

“তোমার ওপর রেগে থাকার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমায় দেননি। সরি বউ। এভাবে কখনও ভেবে দেখা হয়নি। তুমি রাগ করনা।”

মুশফিকা আহিদের কাধে মাথা রেখে হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, “রাগ করিনি। তুমি যখন আমার বোঝ না তখন দুনিয়ার সবার চেয়ে বেশি অসহায় মনে হয়।”

আহিদ মুশফিকার চোখেমুখে চুমুর ফোয়ারা ছুটিয়ে বলল, “চল আজ বাহিরে ডিনার করি। ফাল্গুনের শপিং ও তো করা হয়নি। আমি আম্মার কাছে যাচ্ছি। সবাই মিলেই যায় কি বল?”

মুশফিকার জবাবের অপেক্ষা করল না আহিদ। দ্রু পায়ে বেড়িয়ে গেল। কারণ সে জানে পিছন ফিরলেই বিছানার বালিশ সব তার গায়ে লাগবে।
________________________
টেবিলে লোভনীয় সব খাবারের আইটেম। ফাতিমা বেগম চেয়ান টেনে বসলেন। অনুজা এক এক করে খাবারের ডিশ গুলো কিচেন থেকে এনে টেবিলে সাজিয়ে রাখছে। ফাতিমা বেগম শশার খোসা ছিলছেন। গরুর চর্বিযুক্ত গোসত দিয়ে নরম করে খিচুড়ি সাথে বেগুন আর ডিম ভাজি। খাবারের ঘ্রাণে ম ম করছে চারিপাশ। রমিজ উদ্দিন এসে বসতেই অনুজা প্রথম ওনার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলেন। ইজহান বাসায় নেই। বন্ধুদের ফোন পেয়ে বেড়িয়েছিল। বলে গিয়েছিল, ”রাতে খাবার সময় উপস্থিত হবে।”

অনুজা কিঞ্চিৎ চিন্তিত। খিচুড়ি গরম গরম না খেলে আসল স্বাদ পাওয়া যায় না। এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। অনুজা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে নিয়েই গেল দরজা খুলতে। ইজহানের হাস‍্যজ্জ্বল মুখখানা নজরে আসতেই অনুজার মুখখানাও খুশিতে ঝলমল করে উঠল। কিন্তু ফ্রেশ হয়ে ডায়নিংয়ে উপস্থিত হতেই মুখ চুপসে গেল ইজহানের। ফাতিমা বেগমের পাশে বসেই আয়েশ করে বোনের রান্না করা খিচুড়ি খাচ্ছে অনিশা, ইয়াশ। মুখ ভোতা করে চেয়ার টেনে বসল ইজহান। অনুজা খাবার বেড়ে দিল। নাহ! খাবারে স্বাদ লাগছে না। ইজহান বিড়বিড় করে বলল, “শালা, শালি দুটোর বাসর ঘর যদি আমি পন্ড না করেছি তাহলে আমার নামও ইজহান নয়। ধলু মিয়া নাম ধারণ করব এই আমি বলে রাখলাম।”

অনুজা ইজহানের পাশে বসেই খাচ্ছিল। ইজহানের কথা শুনে হাসি পেলেও হাসি চেপে আস্তে করে বলল, “সমস‍্যা নেই আম্মু এসে ওদের নিয়ে যাবে। আম্মা গিয়েছিলেন সন্ধ্যায়। ওদের সাথে করে নিয়ে এসেছেন।”

ইজহানের মুখে পূনরায় হাসি ফুটে উঠল। খিচুড়ি মুখে নিতেই এবার বেশ স্বাদ লাগল। মাশা আল্লাহ! খাবারে এবার স্বাদ বেড়েছে।

শব্দ করে রমিজ উদ্দিনের ফোন বেজে উঠল। ভ্রু কুচকে গেল। বললেন, খাওয়ার সময় আবার কে ফোন করল?”
রিসিভ করে কানে ধরলেন। এপাশ থেকে তিনি জবাব দিলেন, “আচ্ছা আয়।”

ফাতিমা বেগম শুধালেন, “কি হয়েছে?”

প্রতিত্তোরে রমিজ উদ্দিন বললেন, “শায়লা আসছে ওর মেয়েকে নিয়ে। এখানে থেকে নাকি শহরের কোচিংয়ে পড়াবে।”

ছোটফুফুর নাম শুনতেই ইজহানের মুখ আধার নেমে এল। অনুজারও কেন যেন ভালো লাগল না।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

লেখায়~সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি

দুঃখিত এভাবে অনিয়মিত দেওয়াই। আজ দু পর্বের সমান এক পর্ব দিয়েছি।💚
রি চেক দেওেয়া হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here